নির্বাচনী মঞ্চে গুজবের ছায়া: জাকসুর অদেখা লড়াই

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গত ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক (জিএস), দুটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২০টি পদে জয় পেয়েছেন বাংলাদশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। তবে, সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হয়েছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের প্রার্থী। এই নির্বাচন ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা পরিলক্ষিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল কিংবা প্রার্থীকে ঘায়েল করতে ভুয়া তথ্যের প্রচারও ছিল লক্ষণীয়৷ এই ভুয়া তথ্য শনাক্তে নির্বাচনের শুরু থেকেই উক্ত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অনলাইন কনটেন্টে নজরদারি করে রিউমর স্ক্যানার টিম। যার ফলশ্রুতিতে এই নির্বাচন নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ১৪টি গুজব শনাক্ত হয়। প্রকৃতির দিক থেকে এগুলোর মধ্যে ১০টি (৭১.৪৩ শতাংশ) মিথ্যা এবং ৪টি (২৮.৫৭ শতাংশ) বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রচারণা চলাকালে ০৭ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রথম ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। এদিন ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, ডোপ টেস্টের পর জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাবেক সভাপতি ও বামপন্থীদের একাংশের সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। তবে দাবিটির সত্যতা পায়নি রিউমর স্ক্যানার। জানা যায়, অমর্ত্য রায়ের প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার কারণ ডোপ টেস্ট নয় বরং, নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় জাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে।

পরদিন ০৮ সেপ্টেম্বর অমর্ত্য রায়কে জড়িয়ে আরেকটি গুজব ছড়ানো হয়। তবে এই গুজবের উৎস সামাজিক মাধ্যম নয়, মূলধারার গণমাধ্যম থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অন্তত ৪০টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী অমর্ত্য রায় জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। তবে অনুসন্ধানে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। জানা যায়, জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে নয়, অমর্ত্য রায় তার বাতিল হওয়া প্রার্থীতা পুর্নবহাল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। 

ভোটের দিন সবচেয়ে বেশি গুজব

১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। ভোটার উপস্থিতি থাকায় দুইটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয় সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। এদিন অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ভোট গ্রহণের সময় শেষ হওয়ার আগে ও পরে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলসহ মোট পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দলীয় প্রভাবের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান। নির্বাচন ঘিরে এদিন সবচেয়ে বেশি (০৬টি) গুজব শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। দুপুরে ভোট চলাকালীন ছাত্রদলের প্যানেলের ভোট বর্জনের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিবিরের অ্যাকশনের ঘটনা এটি। ভিডিওতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে লাঠি হাতে অবস্থান করতে দেখা যায়। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে, ভিডিওটি ১১ সেপ্টেম্বরের নয় এবং ঐদিন জাবিতে এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের ১৬ জুলাইয়ের ঘটনা। সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। এটি সেই ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও।

ভোটগ্রহণ চলাকালে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি জাকসু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির চিত্র। ভিডিওতে দুই যুবককে অবৈধভাবে বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ঢুকাতে দেখা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি জাকসু নির্বাচনের নয়, ২০১৫ সাল থেকেই ইন্টারনেটে ভিডিওটির অস্তিত্ব রয়েছে।

এছাড়া, এদিন বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশি অ্যাকশনের একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “ভয়াবহ অবস্থা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শিবিরের পক্ষ নিল পুলিশ। বহু হতাহতের আশঙ্কা”। তবে যাচাই করে জানা যায়, দাবিটি ভুয়া। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও এটি।

একইদিন জাবিতে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। তবে অনুসন্ধানে ঐদিন এমন কোনো সংঘর্ষের প্রমাণ মেলেনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওকে জাবিতে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, একই দাবিতে প্রচারিত অন্য ভিডিওটি ২০২৩ সালে পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনার। 

ইউটিউবে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়েছে এবং নিবার্চন অবৈধ ঘোষণা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ভিডিওটি যাচাই করে দেখা যায়, এতে প্রচারিত দাবিগুলোর পক্ষে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। ভিডিওতে প্রদর্শিত ফুটেজগুলো ছাত্রদলের ভোট বর্জন ও কতিপয় শিক্ষকের নির্বাচন বর্জন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও থেকে নেওয়া। যেগুলোর সাথে প্রচারিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

নির্বাচনের ফল ঘোষণা বিলম্বে বাড়তে থাকে গুজবের পরিধি

১১ সেপ্টেম্বর রাতে শুরু হওয়া ভোট গণনা ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে শেষ হবে – এমন দাবি জাকসুর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে করা হলেও ১২ সেপ্টেম্বর রাতেও ভোট গণনা শেষ করতে পারেনি কমিশন। যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ভোট গণনার কাজে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জাকসু নির্বাচনে প্রীতিলতা হলের পোলিং অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করা চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা।

হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে ‍মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় অন্তত ২০টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা নামের ভিন্ন নারীর ছবি প্রচার করা হয়। ঐ নারী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত আছেন যা তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

এদিন ভোটে অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত তিনটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত জুলাইয়ে কক্সবাজারে এক বিএনপি নেতাকে হত্যার বিচার চেয়ে ঢাবিতে ছাত্রদলের মশাল মিছিলের একটি ভিডিওকে জাকসুতে শিবিরের ভোট চুরির প্রতিবাদের দাবিতে মশাল মিছিল দাবিতে প্রচার করতে দেখা যায়। পাশাপাশি জাবিতে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ হয়েছে দাবিতে ২০২২ সালে ঢাবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ এবং বরিশালে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যকার সংঘর্ষের সাম্প্রতিক ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, শিবির-ছাত্রদল মুখোমুখি অবস্থান এবং ক্যাম্পাসে পুলিশের অভিযান দাবিতে আরেকটি ভিডিও প্রচার প্রচার করা হয় যা ২০২৪ সালে জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশি অ্যাকশনের ঘটনার ভিডিও।

একইদিন জাকসুর ফল ঘোষণা নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে কালেরকণ্ঠের ডিজাইন সংবলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। যেখানে দাবি করা হয়- শিবিরের সভাপতি বলেছেন, “জাকসুতে শিবিরকে বিজয়ী ঘোষনা না করলে জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হবে”। প্রকৃতপক্ষে শিবির সভাপতি এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং কালেরকণ্ঠও এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।

ভোটগ্রহণের প্রায় ৪৮ ঘন্টার পর ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে নির্বাচন ফলাফল ঘোষণা করা হয়। একাধিক প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ওএমআর পদ্ধতিতে মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনার ফলে ফলাফল জানতে বেশি সময় লেগেছে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

ফল ঘোষণার পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর বামপন্থীদোর আরেক অংশের সমর্থিত ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের এজিএস (নারী) প্রার্থী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়ার আহত অবস্থার একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়, ছাত্রশিবির নির্বাচনে জয় লাভের পর বামপন্থীদের ওপর হামলা করেছে। তবে যাচাই করে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ের। প্রকৃতপক্ষে, জাকসু নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে শিবির কর্তৃক বামপন্থীদের ওপর এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

কোন প্যানেল সবচেয়ে বেশি গুজবের শিকার?

জাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ০৯টি গুজব ছড়ানো হয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলকে জড়িয়ে। যার প্রায় ৮৯ শতাংশই প্যানেলটির ভাবমূর্তির বিপক্ষে গেছে। তালিকায় পরের অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলকে জড়িয়ে প্রচার করা হয়েছে ০৫টি গুজব, যার ৮০ শতাংশ প্যানেলটি সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে সক্ষম। এই দুই প্যানেলের বাহিরে বামপন্থীদের একাংশের সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলেকে জড়িয়েও ০২টি (বিপক্ষে) গুজব প্রচার হতে দেখা গেছে।

প্রার্থীদের জড়িয়ে যত গুজব

জাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনকে জড়িয়ে ০২টি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ভোট গ্রহণের দু’দিন আগে আদালত থেকে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থীতা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে। যার ফলে তিনি ভোট যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। অমর্ত্য ছাড়াও আরো দুই প্রার্থীকে জড়িয়ে গুজব ছড়াতে দেখা গেছে। ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলামকে জড়িয়ে ০১টি (পক্ষে) এবং ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের এজিএস (নারী) প্রার্থী সোহাগী সামিয়াকে জড়িয়ে ০১টি (পক্ষে) ছড়ানো একটি গুজব শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

প্রার্থীদের লিঙ্গ ভেদে গুজব

জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেটে ০২ জন পুরুষ প্রার্থী এবং ০১ জন নারী প্রার্থীকে জড়িয়ে গুজব ছড়াতে দেখা গেছে। যার মধ্যে পুরুষ প্রার্থীদের জড়িয়ে গুজবের সংখ্যা ০৩টি এবং নারী প্রার্থীর জড়িয়ে ০১টি।

অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গুজব

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নামে ০১টি (বিপক্ষে) ভুয়া মন্তব্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সংবাদকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যাকে (বিপক্ষে) জড়িয়ে গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে ০১টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীকে জড়িয়ে গুজব

গুজবের হাত থেকে ছাড় পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে ০২টি গুজব ছড়ানো প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে একটি গুজব ছড়ানো হয়েছে যেখানে জড়ানো হয়েছে বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে।

গণমাধ্যমের ভুল সংবাদ

শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, গুজবের অংশীজন ছিল গণমাধ্যমও। জাকসু নির্বাচন ইস্যুতে ০২টি ভিন্ন ঘটনায় অন্তত ৬২টি গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করেছে। যার মধ্যে ০২টি করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে তালিকায় সম্মিলিতভাবে শীর্ষে রয়েছে ০৬টি গণমাধ্যম। বাকি ৫৬টি গণমাধ্যম একটি করে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে।

গণমাধ্যমকে টার্গেট করেও অপপ্রচারের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় দৈনিক কালেরকণ্ঠের নামে ০১টি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গুজবের ধরণ

শনাক্ত হওয়া মোট ভুল তথ্যের মধ্যে ভিডিও-কেন্দ্রিক ভুল সবচেয়ে বেশি, ৯টি (প্রায় ৬৪%)। এছাড়া তথ্য-কেন্দ্রিক ভুল ৩টি (প্রায় ২১%) এবং ছবি-কেন্দ্রিক ২টি (প্রায় ১৪%) ভুল পাওয়া গেছে।

গুজবের লক্ষ্যবস্তু যুবসমাজ

জাকসু নির্বাচনে ভুল তথ্য প্রচারের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ১৮-৩৫ বছর বয়সী যুব সমাজের পাঁচজন ব্যক্তিকে ভুল তথ্য প্রচারের সঙ্গে জড়ানো হয়েছে। এছাড়া, ৩৬-৫৯ বছর বয়সী একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে জড়িয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। তবে, শিশু বা প্রবীণ ব্যক্তিদের জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গুজবের মূল উৎস ফেসবুকে, পিছিয়ে নেই ইন্সটাগ্রামও

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুকে সর্বোচ্চ ১৩টি গুজব ছড়িয়েছে, যা মোট গুজবের প্রায় ৯৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে আছে মেটার আরেক প্লাটফর্ম ইন্সটাগ্রাম। এই মাধ্যমটিতে ছড়িয়েছে ০৯টি গুজব, যা প্রায় ৬৪ শতাংশ। এছাড়া, ইউটিউবে ০৫টি, টিকটকে ০৩টি, থ্রেডসে ০৩টি এবং এক্সে ০১টি গুজব ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে, কিছু গুজব একাধিক প্ল্যাটফর্মে ছড়ানোয় প্ল্যাটফর্মভিত্তিক গুজবের সংখ্যা (১৩ + ৯ + ৫ + ৩ + ৩ + ১= ৩৪) মোট গুজবের সংখ্যা (১৪) থেকে বেশি দেখাচ্ছে।

কাজের পদ্ধতি

এই গবেষণাটি তৈরি করা হয়েছে জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর উপর ভিত্তি করে। এজন্য আমরা গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত জাকসু-সংক্রান্ত সব ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছি। পরে পাঠকদের সহজে বোঝার সুবিধার্থে এই তথ্যগুলোকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে গ্রাফ, চার্ট এবং বিশ্লেষণমূলক লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

spot_img