৩৩ বছর পর গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ডাকসু নির্বাচনের মত ওএমআর পদ্ধতিতে মেশিনে ভোট গণনা না করে জাকসু নির্বাচনে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনা করা হয়। যার ফলে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করতে প্রায় তিনদিন সময় লেগে যায়। নির্বাচনে প্রীতিলতা হল ভোটকেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসার ও পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা। কিন্তু পরদিন (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে ভোট গণনার কাজে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে দেশীয় গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যাতে তার ছবি দাবিতে একজন নারীর ছবিও প্রকাশ করা হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এটিএন বাংলা, নয়া দিগন্ত, দৈনিক করতোয়া, আমাদের সময়, মানবকণ্ঠ, সোনালী নিউজ, ঢাকা টাইমস, রেডিও টুডে, আজকের খবর, বেঙ্গল গ্যাজেট, এইদিন এইসময়, বাংলা ৫২ নিউজ, শিক্ষাবার্তা, হাওরবার্তা, দৈনিক যমুনা এক্সপ্রেস এবং সুপ্রভাত।
গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ড দেখুন এখানে এবং এখানে।

যুগান্তর, এনটিভি, বাংলানিউজ২৪, চ্যানেল আই এবং ঢাকা পোস্ট তাদের ফেসবুক পেজে একই দাবিতে ফটোকার্ড প্রকাশ করে পরবর্তীতে সরিয়ে নেয়।
ফেসবুকে প্রচারিত অন্যান্য পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাকসু নির্বাচনে ভোটগণনার কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার মৃত্যুর সংবাদে গণমাধ্যমগুলোতে ব্যবহৃত ছবিটি তার নয়। প্রকৃতপক্ষে, জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার মৃত্যুর সংবাদে জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা নামের ভিন্ন আরেকজন নারীর ছবি প্রকাশ করা হয়।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Afrin Mim নামের একজন গণমাধ্যম কর্মীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১২ সেপ্টেম্বর করা একটি পোস্টর সন্ধান পাওয়া যায়। পোস্টে তিনি দাবি করেন, গণমাধ্যমে জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার মৃত্যুর সংবাদে প্রচারিত ছবিটি মৌমিতার নয়। যার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তিনি জীবিত আছেন। বিষয়টি তিনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন কারণ মৌমিতা তার বন্ধু ছিলেন বলেও তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন।

এছাড়াও Suprio Sikdar নামের ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের আরেকজন গণমাধ্যমকর্মীর একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। যাতে তিনি লিখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর সংবাদে প্রকাশিত ছবিটি তার সহকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যার। পোস্টে তিনি তার এবং জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যার সেদিন সকালে তোলা একটি ছবিও যুক্ত করে দেন। পাশাপাশি পোস্টে তিনি অনন্যার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লিংকও যুক্ত করে দেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা ১২ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে তার ছবি ব্যবহার করে জাবি শিক্ষিকা মৌমিতার মৃত্যুতে প্রকাশিত নিউজের স্ক্রিনশট যুক্ত করে জানান, তিনি মারা যাননি, জীবিত আছেন।

পরবর্তীতে তার ফেসবুক প্রোফাইল পর্যালোচনার মাধ্যমে গণমাধ্যমে জাবি শিক্ষিকা মৌমিতার মৃত্যুর সংবাদে ব্যবহৃত তার ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।

জাবি শিক্ষিকার মৃত্যুর সংবাদে ভুল ছবি প্রকাশ নিয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যার ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের একজন গণমাধ্যমকর্মী। এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনে জাবি শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার আসল ছবিও প্রকাশ করা হয়।

সুতরাং, জাকসু নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যুবরণ করা শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার মৃত্যুর সংবাদে গণমাধ্যমে জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা নামের ভিন্ন আরেক নারীর ছবি প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।