১৩ বছরের বালককে পরিবার কর্তৃক বিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, পাকিস্তানের 

সম্প্রতি, স্কুলে না যাওয়ায় ১৩ বছরের ছেলেকে পরিবার কর্তৃক বিয়ে দেওয়ার একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

বিয়ে

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৩ বছরের ছেলেকে পরিবার কর্তৃক বিয়ে দেওয়ার উক্ত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের।

অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টগুলোর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে (দৈনিক জনকণ্ঠ, কালবেলা, ডেইলি বাংলাদেশ) এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: The Daily Janakantha

উক্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সংবাদগুলোর শিরোনামে দেশের নাম উল্লেখ না করা হলেও প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে এটি পাকিস্তানের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাছাড়া একাধিক গণমাধ্যম তাদের ফেসবুক পেজে (, , ) বিষয়টি’র বিস্তারিত উল্লেখ না করে শুধুমাত্র শিরোনাম এবং ফটোকার্ড পোস্ট করার ফলে ঘটনাটি পাকিস্তানের হলেও দেশটি’র নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় বিষয়টি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং বাংলাদেশের নেটিজেনরা বিষয়টি সঠিকভাবে না জেনেই ঘটনাটি বাংলাদেশের মনে করেছেন।

Screenshot: Daily Bangladesh

উক্ত পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স পর্যবেক্ষণ করে নেটিজেনদের ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়।

Comment Collage by Rumor Scanner

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম The Indian Express এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘13-year-olds set to get married in Pakistan after boy gives an ultimatum to parents, shocked netizen react’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিয়ে না দিলে আর পড়াশোনা করবে না বলে বাবা-মাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের ১৩ বছর বয়সি এক ছেলে। এরপর চাপে পরে ১২ বছর বয়সি এক নাবালিকার সঙ্গে ঐ কিশোরের বাগদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে পরিবার। তাদের বাগদানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা।

এছাড়াও, বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল ‘SAMAA TV’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ‘13 Years Old Newly Married Pakistani Kid Couple Goes Viral in Social Media’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকেও আলোচিত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

Screenshot: SAMAA TV

অর্থাৎ, স্কুলে না যাওয়ায় ১৩ বছরের ছেলেকে পরিবার কর্তৃক বিয়ে দেওয়ার উক্ত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এসম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ১৩ বছরের কোনো ছেলেকে পরিবার কর্তৃক বিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে পরিবারের সম্মতিতে ১৩ বছরের এক বালকের সাথে ১২ বছরের এক বালিকার বাগদান সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত বিষয়টি ইন্টারনেটে ভাইরাল হলে তা নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে দেশটি’র নাম উল্লেখ না করে প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে ছেলে ও মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আইনিভাবে নির্দিষ্ট রয়েছে। সেখানে পুরুষদের জন্য বৈধ বিবাহের বয়স ১৮ বছর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৬ বছর। সিন্ধু প্রদেশ ২০১৩ সালে উভয় লিঙ্গের জন্য বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর করার জন্য আইন পাশ হয়েছিল। তবে তা দেশব্যাপী কার্যকর করা হয়নি।

উল্লেখ্য, পূর্বে ভারতের একাধিক ঘটনা বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ ব্যতীত প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, পাকিস্তানে স্কুলে না যাওয়ায় ১৩ বছরের ছেলেকে পরিবার কর্তৃক বিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img