Home Blog Page 62

গোপালগঞ্জে নিহত ব্যক্তিদের লাশ দাফনের দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।

এরই প্রেক্ষিতে, গোপালগঞ্জে নিহত ব্যক্তিদের দাফনের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটির শিরোনামে আরও দাবি করা হয়, গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে স্থানীয়দের হওয়া সংঘর্ষে ৫১ জন নিহত ও ৩৯১ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এছাড়াও দাবি করা হয় উক্ত সহিংসতার ঘটনায় ১১৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক সহিংসতায়লর ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের দাফন কার্যের কোনো সর্ম্পক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ইন্টারনেটে বিদ্যমান পুরোনো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, উক্ত সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ০৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে July Revolutionary Alliance – JRA নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৩ মার্চ প্রচারিত একটি ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, এটি গতবছরে চলমান আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় নিহত ব্যক্তিদের দাফনের ভিডিও। এছাড়াও দাবি করা হয়, এটি ঢাকার রায়েরবাজারের কোনো একটি জায়গায় ধারণ করা। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে। তবে ভিডিওটি গতবছরের জুলাইয়ের-ই কিনা সে বিষয়ে আলাদাভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এছাড়া, প্রচারিত পোস্টগুলোতে গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় ৫১ জন নিহত, ৩৯২ জন নিখোঁজ এবং ১১৭০ জন গ্রেফতার হওয়ার দাবি প্রচার করা হলেও বিশ্বস্ত কোনো সূত্র দাবিগুলোর সত্যতা মেলেনি।

পরবর্তীতে, গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সর্বশেষ ৫ জন নিহত হওয়ার তথ্যই পাওয়া যায়। 

এছাড়াও আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় পূর্বে নিহত চারজনের দাফন ও সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহাকে ১৬ জুলাই রাতে পৌর শ্মশানে সৎকার করা হয়। টাইলস মিস্ত্রির সহকারী রমজান কাজীকে একইদিন রাতে এশার নামাজের পর দাফন করা হয়।

এছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও ক্রোকারিজ দোকানের কর্মচারী ইমন তালুকদারকে ১৭ জুলাই সকালে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

তবে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কারও নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী উক্ত সহিংসতার ঘটনায় সর্বমোট ৩০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

সুতরাং, গোপালগঞ্জের সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ দাফনের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে বিদ্যমান পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রংপুরের শিক্ষার্থীদের মিছিলকে গোপালগঞ্জে জনতার মিছিল দাবিতে প্রচার

গতকাল (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে এখন অবধি অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। হামলাকারীদের গ্রেফতারে জেলা জুড়ে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী।

এরই প্রেক্ষিতে, “আলহামদুলিল্লাহ আবারো উত্তাল গোপালগঞ্জ” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্যের নয় বরং, এটি রংপুরের কারমাইকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের গোপালগঞ্জে জুলাই যোদ্ধাদের উপর হামলার প্রতিবাদে করা বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওর থাকা লোগোর সূত্র ধরে রংপুরের স্থানীয় গণমাধ্যম ‘DRB News’ এর ফেসবুক পেজে ২০২৫ সালের ১৬ জুলাই “গোপালগঞ্জে জুলাই যো দ্ধাদের উপর হা ম লার প্রতিবাদে কারমাইকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের বি ক্ষো ভ | DRB NEWS” প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর শুরু থেকে ১৫ সেকেন্ড অংশের হুবহু মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটিতে শিক্ষার্থীদের “সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, এ্যাকশন এ্যাকশন ডাইরেক্ট এ্যাকশন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট এ্যাকশন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট এ্যাকশন…” বলতে শোনা গেলেও আলোচিত ভিডিওতে থাকা “একাত্তরের স্মরণে ভয় করিনা মরনে, গোপালগঞ্জ আসিস না পিঠের চামড়া থাকবে না, আমার মাটি আমার ঘর পাকিস্তান হবে না…” শীর্ষক স্লোগান শুনতে পাওয়া যায় নি। 

একই ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিন্ন ফ্রেমের ভিডিও (, ) পোস্ট হতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি গোপালগঞ্জের নয়।

সুতরাং, গোপালগঞ্জে জুলাই যোদ্ধাদের উপর হামলার প্রতিবাদে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের করা বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্যকে গোপালগঞ্জে জনতার বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

গোপালগঞ্জে এপিসি থেকে গোলাগুলির নয়, ভিডিওটি তাইওয়ানে সামরিক মহড়া ‘হান কুয়াং’ এর 

গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটির নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে যান। তারা পৌঁছানোর আগেই সমাবেশস্থলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপরও সমাবেশ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে কর্মসূচি শেষে ফেরার সময় স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকদের হামলায় তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তবে পরবর্তীতে বিকেলেই সেনাবাহিনীর এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) ব্যবহার করে তাদের গোপালগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দিরভর সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। 

উল্লিখিত ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘কালাপাডা হাসনাত সারজিস গংদের ট্যাংকের ভিতর নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে বের হচ্ছে গুলি করতে করতে…’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি এনসিপির নেতাদের এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) ব্যবহার করে গোপালগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় সামরিক ট্যাংক থেকে গুলির কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, তাইওয়ানে বাৎসরিক সামরিক মহড়া ‘হান কুয়াং’ এর ৪১তম আয়োজনের একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রাশিয়া ভিত্তিক গণমাধ্যম RT এর এক্স হ্যান্ডেলে গত ১৫ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

পোস্টটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য তাইপেতে যুদ্ধের মহড়ায় রাজধানীর মূল প্রবেশপথের প্রতিরক্ষায় সাঁজোয়া যান থেকে গুলি ছোঁড়ার দৃশ্য এটি।

একই বিষয়ে East Channel নামক ফেসবুক পেজে গত ১৬ জুলাই প্রকাশিত পোস্টে একই ভিডিও ও তথ্য পাওয়া যায়। 

এছাড়া, এই বিষয়ে তাইওয়ান ভিত্তিক গণমাধ্যম Taiwan News এর ওয়েবসাইটে গত ১৫ জুলাই ‘New Taipei bridge blocked and armored vehicles fire during drills’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন ১০ দিনব্যাপী তাইওয়ানে বাৎসরিক সামরিক মহড়া ‘হান কুয়াং’ এর ৪১তম আয়োজনের সপ্তম দিনে তাইপের রাজনৈতিক ও সামরিক কেন্দ্রগুলিতে শত্রু বাহিনীকে অগ্রসর হতে বাধা দেওয়ার জন্য সামরিক পুলিশ কমান্ড ওয়ানবান সেতুতে একটি সেতু প্রতিরক্ষা মহড়া পরিচালনা করে যেখানে মেশিনগান ছোঁড়া সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়। 

সুতরাং, এনসিপির নেতাদের এপিসিতে নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময় সামরিক ট্যাংক থেকে গুলি করার ভিডিও দাবিতে তাইওয়ানের বাৎসরিক সামরিক মহড়া ‘হান কুয়াং’ এর একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

গোপালগঞ্জে র‍্যাবের অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে এখন অবধি অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। দিরভর সংঘর্ষের পর ঐদিন সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। হামলাকারীদের গ্রেফতারে জেলা জুড়ে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী।

এরই প্রেক্ষিতে, “দেখুন গোপালগঞ্জের চিত্র, হাসিনার আসল রুপ! এরপরও যারা খু*নি হাসিনার পক্ষে তারা দেশদ্রোহী” শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দেখা যায়, র‍্যাব সদস্যরা একজনকে সাথে নিয়ে একটি সিন্দুকের ভেতর থেকে র‍্যাবের পোশাক, পিস্তল, র‍্যাবের আইডিকার্ড, হ্যান্ডকাফ এবং পাঁচটি বুলেট উদ্ধার করেছেন। 

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটির সাথে সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রকৃতপক্ষে, প্রচারিত ভিডিওটি গত জুন মাসে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে একটি অপহরণকারী চক্রের সদস্যের বাসা থেকে র‍্যাবের পোশাক, পিস্তল, র‍্যাবের আইডিকার্ড, হ্যান্ডকাফ এবং পাঁচটি বুলেট উদ্ধারের দৃশ্যের। 

অনুসন্ধানে ‘Saroar alam shahin’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ০২ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ০৪ মিনিট ১১ সেকেন্ড দৈর্ঘ্য এই ভিডিওর প্রথম ১৮ সেকেন্ড পরের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison By Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওর বিবরণী থেকে জানা যায়, উখিয়ায় র‍্যাব পরিচয়ে রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত চক্রের এক সদস্যকে র‍্যাবের পোশাক, ভুয়া আইডি কার্ড, অস্ত্র-গুলি ও হাতকড়াসহ গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত হাফিজ উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা যুবককে। 

উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ৩০ জুন “উখিয়ায় অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও র‍্যাবের পোশাক উদ্ধার”- শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তির ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওতে র‍্যাব সদস্যদের হাতে আটক হওয়া ব্যক্তির চেহারার মিল রয়েছে। 

Comparison By Rumor Scanner 

আজকের পত্রিকার প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১১ জুন রাতে র‍্যাব পরিচয় দিয়ে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মো. হাফিজ উল্লাহকে র‍্যাব পরিচয়ে অপহরণ করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। পরে অপহৃতের পরিবারের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা। সেই অপহরণকারী চক্রের একজন গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি জায়েদ হোসেন ফারুক। তাকে গত ২৯ জুন রাতে উপজেলার পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামে এই অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে র‍্যাব-১৫। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁর কাছ থেকে র‍্যাবের চারটি পোশাক, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ২১ রাউন্ড দেশি-বিদেশি পিস্তল, বন্দুকের গুলি, র‍্যাবের নকল আইডিসহ বিভিন্ন সরাঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি গোপালগঞ্জের নয়।

সুতরাং,সম্প্রতি গোপালগঞ্জে র‍্যাবের অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারের দৃশ্য দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়ার ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

গোপালগঞ্জে হাসপাতালের বেড থেকে নামিয়ে হত্যার ভিডিও দাবিতে নাটকের দৃশ্য প্রচার 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে এখন অবধি অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। দিরভর সংঘর্ষের পর ঐদিন সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। হামলাকারীদের গ্রেফতারে জেলা জুড়ে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী।

এরই প্রেক্ষিতে, “গোপালগঞ্জে হসপিটালের বেড থেকে নামিয়ে নামিয়ে গনহত্যা চালিয়েছে সেনাবাহিনীর ও এনসিপি জামাত মিলে” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট (ভিডিও) দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে । 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,  প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিদ্যাপীঠ নামক একটি নাটকের দৃশ্যকে গোপালগঞ্জে হাসপাতালের বেড থেকে নামিয়ে গণহত্যা চালানোর ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওতে ‘RKR Production’ নামক লোগো দেখতে পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ‘RKR Production’ এর ইউটিউব চ্যানেলটিতে ২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর “Bidya Pith Expert Tofazzel Shares” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ১৮ মিনিট ২৭ সেকেন্ড সময়ের এই নাটকটির ১৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ভাত খাইয়ে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটে। মোবাইল চুরির সন্দেহে তিন ধাপে ২১ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মারধর করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ঢাবিতে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আলোকপাত করেই ‘বিদ্যাপীঠ’ নামক নাটকটি তৈরি করা হয়েছে।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়। 

সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্মিত নাটকের ভিডিওকে গোপালগঞ্জে হাসপাতালের বেড থেকে নামিয়ে গনহত্যা চালানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

জামায়াতের সমাবেশে আসার পথে টোলপ্লাজায় জোরপূর্বক গাড়ি পার করার দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার 

আজ (১৯ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দুপুর ২টা থেকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও, এর আগের দিন (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেন। এ প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে টুপি ও পাঞ্জাবি পরিহিত এক ব্যক্তিকে টোলপ্লাজার বেষ্টনী জোরপূর্বক সরিয়ে দিতে দেখা যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হয়, জামায়াত নেতাকর্মীরা ক্ষমতা দেখিয়ে জোর করে টোলপ্লাজা পার হয়েছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে 

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি জামায়াতে ইসলামীর আজকের সমাবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কুড়িল টোলপ্লাজায় যাত্রীবোঝাই একটি পিকআপকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা প্রবেশে বাধা দেয়। তখন যাত্রীরা জোর করে বেষ্টনী সরিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ঢোকে। এটি সে ঘটনারই দৃশ্য।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের  ১৯ সেপ্টেম্বর চ্যানেল ২৪-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যার সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির মিল লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner. 

ওই ভিডিওর সূত্র ধরে সমকালে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, টোল না দিয়ে যাত্রীবোঝাই একটি পিকআপ এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেতু বিভাগ এবং ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি সূত্র জানায়, খোলা গাড়িতে যাত্রী পরিবহণ নিষিদ্ধ থাকায় স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা পিকআপটিকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু পিকআপে থাকা যাত্রীরা তা মানতে না চেয়ে টোলের ৮০ টাকা নিতে চাপ দেন এবং কর্মীরা রাজি না হওয়ায় তারা বেষ্টনী সরিয়ে ঢুকে পড়েন। ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং পিকআপটি শনাক্তের কাজ শুরু করে।


সে সময় দেশের আরও একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমেও (,,) একই তথ্য প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়।

সুতরাং, গত বছরের সেপ্টেম্বরের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে আজ ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশে আসার পথে টোলপ্লাজায় জোরপূর্বক ক্ষমতা দেখিয়ে গাড়ি পার হওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সম্প্রতি গোপালগঞ্জে নয়, শিশু জাবির গত বছরের ০৫ আগস্ট নিহত হয়েছেন

0

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন নিহত হন। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “পুলিশের গুলিতে ‘আর্মি’ হতে চাওয়া ছোট্ট জাবিরের মৃত্যু” শীর্ষক শিরোনামের একটি ফটোকার্ড প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি গোপালগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় জাবির ইব্রাহিম নামের শিশু।

উল্লেখ্য যে, কিছু পোস্টের ক্যাপশনে পুলিশের গুলিতে এবং কিছু পোস্টের ক্যাপশনে সেনাবাহিনীর গুলিতে জাবিরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত শিশু জাবির ইব্রাহিম সম্প্রতি গোপালগঞ্জে হওয়া সংঘর্ষে নিহত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে সে গত বছরের ০৫ আগস্টে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে সংযুক্ত ফটোকার্ডে ‘রূপালী বাংলাদেশ” নামক সংবাদমাধ্যমের নাম ও লোগো পাওয়া যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে গত ১৬ জুলাই১৮ জুলাইয়ে “রূপালী বাংলাদেশ” এর ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ফটোকার্ড পোস্টগুলোর মন্তব্য বিভাগ পর্যবেক্ষণ করলে তাতে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের লিঙ্কের সংযুক্তি পাওয়া যায়।

“পুলিশের গুলিতে ‘আর্মি’ হতে চাওয়া জাবিরের মৃত্যু” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজের পরিবারের চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় ছোট্ট জাবির।…বাবা কবির হোসেন জানান, ‘(গত বছরের ৫ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে আমরা একটি সেতুর উপর ছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে সবাই দৌড়াতে থাকে। আমি জাবিরের ডান হাত ধরে ছিলাম। তখন একটি গুলি এসে তার পায়ে লাগে। কিছুদূর যাওয়ার পর সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।’ জাবিরকে প্রথমে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ করেন পরিবার। পরে ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জাবিরকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের তুলাই শিমুল গ্রামে।”

এছাড়াও, জাবির ইব্রাহিমের বিষয়ে নানা সময়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো, ইত্তেফাক, কালবেলা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়। উক্ত প্রতিবেদনগুলোতেও বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট মা–বাবার সঙ্গে ঢাকার উত্তরার জসীমউদ্‌দীন সড়কে আনন্দমিছিলে থাকার সময় গুলিতে প্রাণ হারায় শিশু জাবির ইব্রাহিম (৬)।

সুতরাং, গত বছরের ০৫ আগস্টে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া শিশু জাবির ইব্রাহিম সম্প্রতি গোপালগঞ্জে হওয়া সংঘর্ষে মারা গিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সেনা সদরে আওয়ামী পন্থী সেনা সদস্যদের বিদ্রোহ দাবিতে জাবির পুরোনো ভিডিও প্রচার

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সেনাসদস্যরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে দাবিতে গত ১৮ জুলাই রাত থেকে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে প্রচার করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটিতে সেনা সদরদপ্তরের গতকাল রাতের চিত্র দেখা যাচ্ছে। যেখানে সড়কে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে ‍গুলির শব্দও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটির সাথে সেনা সদর দপ্তরে কথিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত সেনাসদস্যদের বিদ্রোহ ঘোষণা দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া প্রচারিত ভিডিওটি সেনা সদর দপ্তরেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত বছর জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের গুলি ছোঁড়ার ভিডিও।

অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সেনাবাহিনীতে কোনো গ্রুপের বিদ্রোহ ঘোষণা করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‍ওপর পুলিশি সহায়তায় ছাত্রলীগের হামলার দাবি করে পোস্টটিতে বলা হয়, ‘হামলার এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় তখনই পুলিশ এসে অতর্কিত ভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করে।’

পরবর্তীতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম Dhaka Post এর ওয়েবসাইটে একইদিন অর্থাৎ, ১৬ জুলাই জাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের গুলি শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Dhaka Post 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দিবাগত রাত ১ টা ৫০ মিনিটের দিকে বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী হামলা চালায়। এসময় হামলা থেকে বাচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনর ভেতর আশ্রয় নিলে সেখানেও তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

Screenshot: Dhaka Post 

প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পরবর্তীতে হল থেকে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বের হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে চারজন সাংবাদিকসহ ছয়জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।

পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফেসবুক পেজ JU Insiders পর্যালোচনা করে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই মধ্যরাতে পুলিশের গুলি করার বিষয়ে পেজটিতে করা একাধিক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। এছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে সেরাতে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়। 

পূর্বেও একই ভিডিওকে গত মে মাসে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলি ছোঁড়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হলে সেসময় এ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলি ছোঁড়ার ভিডিওকে সেনা সদর দপ্তরের কথিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত সেনাসদস্যদের বিদ্রোহ ঘোষণা করার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গোপালগঞ্জ থেকে নৌবাহিনীর পলায়নের দাবিটি ভুয়া, ভিডিওটি মুন্সিগঞ্জ এলাকাবাসী ও বালু শ্রমিকদের সংঘর্ষের 

গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটির নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে যান। তারা পৌঁছানোর আগেই সমাবেশস্থলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপরও সমাবেশ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে কর্মসূচি শেষে ফেরার সময় স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকদের হামলায় তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তবে পরবর্তীতে বিকেলেই সেনাবাহিনীর এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) ব্যবহার করে তাদের গোপালগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দিরভর সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। 

উল্লিখিত ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘গোপালগঞ্জের মানুষের ধাওয়া খেয়ে নৌ বাহিনীর পলায়ন।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গোপালগঞ্জে মানুষের ধাওয়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যদের পলায়নের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদীতে নির্ধারিত স্থানের বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলনের ঘটনায় এলাকাবাসীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের পুরোনো ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ জুন ‘মুন্সিগঞ্জের মেঘনায় বালু উত্তোলন নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত ভিডিওতে সংযুক্ত একটি ভিডিও ক্লিপের দৃশ্যাবলীর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির ০১:১৩ থেকে ০১:২৪ সেকেন্ড পর্যন্ত সংযুক্ত ভিডিও ক্লিপের অংশটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

ভিডিওটির বিরবণী থেকে জানা যায়, গত ১৯ জুন মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদীতে সরকার কর্তৃক ইজারাকৃত বালুমহালের নির্ধারিত স্থানের বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগে স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে ইজারাদারের শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এটি সেই ঘটনার দৃশ্য। 

একই বিষয়ে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ জুন ‘বালু উত্তোলন ঘিরে গ্রামবাসী-শ্রমিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত মুন্সিগঞ্জ’ শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনেও একই ধরণের দৃশ্য ও তথ্য পাওয়া যায়। 

সুতরাং, মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী-শ্রমিকদের সংঘর্ষের ভিডিওকে গোপালগঞ্জের মানুষের ধাওয়ায় নৌবাহিনীর পলায়ন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

গোপালগঞ্জে লাশ পড়ে থাকার সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে যাত্রাবাড়ীর ২০২৪ সালের আগস্টের ভিডিও প্রচার

গত ১৬ জুলাই ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে যান। তবে তাদের পৌঁছানোর আগেই সমাবেশস্থলে হামলা ও ভাঙচুর ঘটে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই প্রেক্ষাপটে, গোপালগঞ্জে লাশ পড়ে থাকার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলোচিত ভিডিওটি গোপালগঞ্জের নয়। বরং, এটি গত বছরের আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি ভিডিও।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ জুলাই গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে দেখানো ভিডিওর দৃশ্যের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির স্থান মিলে যায়। 

Comparison: Rumor Scanner. 

বিবিসির প্রতিবেদনে দেখানো ভিডিওটি একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ হিসেবে প্রতীয়মান হয়, যেখানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারিখ ও দুপুর ২টা ৫৩ মিনিটের সময় দেখা যায়।

এছাড়া, গত ১৪ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের প্রামাণ্যচিত্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও একই স্থানের ভিডিও দেখানো হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলির তীব্রতা কমে এলে বেঁচে যাওয়া আতঙ্কিত মানুষরা একটি সরু গলিতে আহত ও নিহতদের সহায়তা করতে শুরু করেন।

প্রতিবেদনের প্রতিবেদনের ওই অংশে লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরা এক রক্তাক্ত ব্যক্তির মরদেহ দেখা যায়, যা আলোচিত ভিডিওতেও দেখা গেছে।

Comparison: Rumor Scanner. 

অর্থাৎ, ভিডিওটি গোপালগঞ্জের নয়; এটি গত বছরের আগস্টে যাত্রাবাড়ী এলাকার দৃশ্য।

সুতরাং, গত বছরের যাত্রাবাড়ীর ভিডিওকে গোপালগঞ্জে লাশ পড়ে থাকার দৃশ্য দাবি করে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র