আওয়ামী লীগ সমর্থিত সেনাসদস্যরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে দাবিতে গত ১৮ জুলাই রাত থেকে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে প্রচার করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটিতে সেনা সদরদপ্তরের গতকাল রাতের চিত্র দেখা যাচ্ছে। যেখানে সড়কে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে গুলির শব্দও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিওটির সাথে সেনা সদর দপ্তরে কথিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত সেনাসদস্যদের বিদ্রোহ ঘোষণা দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়া প্রচারিত ভিডিওটি সেনা সদর দপ্তরেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত বছর জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের গুলি ছোঁড়ার ভিডিও।
অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সেনাবাহিনীতে কোনো গ্রুপের বিদ্রোহ ঘোষণা করার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি সহায়তায় ছাত্রলীগের হামলার দাবি করে পোস্টটিতে বলা হয়, ‘হামলার এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় তখনই পুলিশ এসে অতর্কিত ভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করে।’
পরবর্তীতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম Dhaka Post এর ওয়েবসাইটে একইদিন অর্থাৎ, ১৬ জুলাই জাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের গুলি শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দিবাগত রাত ১ টা ৫০ মিনিটের দিকে বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী হামলা চালায়। এসময় হামলা থেকে বাচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনর ভেতর আশ্রয় নিলে সেখানেও তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পরবর্তীতে হল থেকে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বের হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে চারজন সাংবাদিকসহ ছয়জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।
পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফেসবুক পেজ JU Insiders পর্যালোচনা করে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই মধ্যরাতে পুলিশের গুলি করার বিষয়ে পেজটিতে করা একাধিক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। এছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে সেরাতে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়।
পূর্বেও একই ভিডিওকে গত মে মাসে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলি ছোঁড়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হলে সেসময় এ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলি ছোঁড়ার ভিডিওকে সেনা সদর দপ্তরের কথিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত সেনাসদস্যদের বিদ্রোহ ঘোষণা করার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Bangladesh Nationalist Party-BNP Facebook Page Post
- Dhaka Post Website: জাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের গুলি
- JU Insiders Facebook Page Post
- JU Insiders Facebook Page Post
- The Daily Star Facebook Page: জাবিতে মধ্যরাতে ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত, শিক্ষক ও ৪ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ
- Rumor Scanner’s Analysis