গোপালগঞ্জে নিহত ব্যক্তিদের লাশ দাফনের দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।

এরই প্রেক্ষিতে, গোপালগঞ্জে নিহত ব্যক্তিদের দাফনের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটির শিরোনামে আরও দাবি করা হয়, গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে স্থানীয়দের হওয়া সংঘর্ষে ৫১ জন নিহত ও ৩৯১ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এছাড়াও দাবি করা হয় উক্ত সহিংসতার ঘটনায় ১১৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক সহিংসতায়লর ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের দাফন কার্যের কোনো সর্ম্পক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ইন্টারনেটে বিদ্যমান পুরোনো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, উক্ত সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ০৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে July Revolutionary Alliance – JRA নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৩ মার্চ প্রচারিত একটি ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, এটি গতবছরে চলমান আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় নিহত ব্যক্তিদের দাফনের ভিডিও। এছাড়াও দাবি করা হয়, এটি ঢাকার রায়েরবাজারের কোনো একটি জায়গায় ধারণ করা। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে। তবে ভিডিওটি গতবছরের জুলাইয়ের-ই কিনা সে বিষয়ে আলাদাভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এছাড়া, প্রচারিত পোস্টগুলোতে গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় ৫১ জন নিহত, ৩৯২ জন নিখোঁজ এবং ১১৭০ জন গ্রেফতার হওয়ার দাবি প্রচার করা হলেও বিশ্বস্ত কোনো সূত্র দাবিগুলোর সত্যতা মেলেনি।

পরবর্তীতে, গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সর্বশেষ ৫ জন নিহত হওয়ার তথ্যই পাওয়া যায়। 

এছাড়াও আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় পূর্বে নিহত চারজনের দাফন ও সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহাকে ১৬ জুলাই রাতে পৌর শ্মশানে সৎকার করা হয়। টাইলস মিস্ত্রির সহকারী রমজান কাজীকে একইদিন রাতে এশার নামাজের পর দাফন করা হয়।

এছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও ক্রোকারিজ দোকানের কর্মচারী ইমন তালুকদারকে ১৭ জুলাই সকালে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

তবে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কারও নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী উক্ত সহিংসতার ঘটনায় সর্বমোট ৩০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

সুতরাং, গোপালগঞ্জের সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ দাফনের ভিডিও দাবিতে ইন্টারনেটে বিদ্যমান পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img