সম্প্রতি বাংলাদেশি টিভি অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী দাবিতে ‘নতুন লুকে আমাদের বাংলা নাটকের ‘সুহাসিনী’ তানজিম সাইয়ারা তটিনী’ ক্যাপশনে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনীর নয়। প্রকৃতপক্ষে, একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনীর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট যাচাই করে আলোচিত ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, Focus Media নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ জুন ‘Bengali actress mokksha at kerala’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলীর সাথে আলোচিত ছবিগুলোর আংশিক সাদৃশ্য রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রচারিত ছবির সাথে এই ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির পোশাক, অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক সবকিছুর মিল রয়েছে কিন্তু ছবি দুইটিতে থাকা নারীদের চেহারা ভিন্ন। মূলত, ভিডিওটি থেকে কয়েকটি ভিন্ন ফ্রেমে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ব্যক্তির মুখমণ্ডলের স্থলে তটিনীর মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে প্রচারিত ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।
Screenshot: Instagram
ভিডিওটির শিরোনামে থাকা ‘Bengali actress mokksha at kerala’ তথ্যটির সূত্র ধরে পৃথা সেনগুপ্ত, পেশাগতভাবে ‘মোক্ষা’ নামে পরিচিত ভারতীয় অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পীর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৯ জুনের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে উক্ত অভিনেত্রীকে ট্যাগ করে Reshma নামক একজন আলোকচিত্রী কিছু ছবি প্রকাশ করেন। অভিনেত্রী মোক্ষার এসব ছবিতে তার মুখমণ্ডল ব্যতীত তার পোশাক, অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক সবকিছুর সাথে আলোচিত ছবিগুলোর মিল রয়েছে।
সুতরাং, অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনীর ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো সম্পাদিত।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন নিহত হন। যার মধ্যে রমজান মুন্সী ও রমজান কাজী নামেও দুই ব্যক্তি ছিলেন। উল্লেখ্য, গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী (৩২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ জুলাই দিবাগত রাত দুইটার দিকে মারা গেছেন।
এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “গোপালগঞ্জে রমজানকে গ্রেফতারের পর যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।”
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি এরূপ দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো প্রায় ১ লক্ষ বার দেখা হয়েছে।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সম্প্রতি গোপালগঞ্জে নিহত রমজানকে গুলি করে হত্যার দৃশ্যের নয় বরং, গত বছরের ০৫ আগস্টে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে হৃদয় হত্যার ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “শটগান ঠেকিয়ে গুলি করলো পুলিশ, মামলা হলো সাংবাদিকের নামে” শীর্ষক শিরোনামে গত বছরের ০২ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দুইটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্য সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গত বছরের ০৫ আগস্টে গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানার পাশে ঘটে এই ঘটনা৷ ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ছেলেকে ধরে রেখেছেন। পেছন থেকে আরেক পুলিশ সদস্য ছেলেটির শরীরে শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে দেয়৷ সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞাত এই কিশোর।… ভিডিও ফুটেজ দেখে ইব্রাহীম নামের এই যুবক আমাদের নিশ্চিত করেন, নিহত কিশোর তার স্ত্রীর ছোটভাই হৃদয়। বাড়ি টাঙ্গাইল হলেও পড়ালেখার খরচ ও সংসারের হাল ধরতে কোনাবাড়িতে অটোরিকশা চালাতো।”
যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “৫ আগস্ট কোনাবাড়িতে যেভাবে হত্যা করা হয় হৃদয়কে!” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৫ জানুয়ারিতে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত দৃশ্য দুইটির সংযুক্তি পাওয়া যায়।
এছাড়া, অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জাগোনিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটে “কলেজছাত্র হৃদয়কে গুলি করা কনস্টেবল আকরামকে জিজ্ঞাসাবাদ ১১ মার্চ” শীর্ষক শিরোনামে গত ০৫ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনে একটি কোলাজ ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আপনারা জানেন জুলাই আন্দোলনের সময় গাজীপুরের কোনাবাড়িতে হৃদয় নামে একজন শিক্ষার্থীকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।…চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘গাজীপুরের কোনাবাড়িতে গত ৫ আগস্ট একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড হয়। তারা একজন বিক্ষোভকারীকে ধরে নিয়ে নানাভাবে অত্যাচার করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে ঘিরে ধরে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে যায়। ঠান্ডা মাথায় তাকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর আরেকজন পুলিশ সদস্য এসে তাকে টেনে গলির মধ্যে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তার স্বজনরা জানে না, হৃদয়ের মরদেহ কোথায় আছে।’”
এ থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের ০৫ আগস্টে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ধারণকৃত এবং নিহত হওয়া ব্যক্তির নাম হৃদয়।
উল্লেখ্য, অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম বিবিসি নিউজ বাংলা ও ‘টাইমস অফ বাংলাদেশ’ নামক সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিহত রমজান কাজীর বিষয়ে যথাক্রমে গত ১৮ ও ২০ জুলাইয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়। প্রতিবেদনে রমজান কাজীকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের সংযুক্তি পাওয়া যায় এবং পরবর্তীতে রমজানের মামাকে ভ্যানে করে রমজানকে নিয়ে যেতে দেখা যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনগুলোতে প্রদর্শিত রমজানের দৃশ্যগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়।
সুতরাং, গত বছরের ০৫ আগস্টে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে হৃদয় হত্যার ভিডিওকে সম্প্রতি গোপালগঞ্জে নিহত রমজানকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এলাকায় আজ (২১ জুলাই) বিমান বাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আহত ও দগ্ধ হয়েছে শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “যেভাবে দুর্ঘটনাটি হয়েছিল”।
প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায় “MILESTTONE COLLEGE” লেখা একটি বিল্ডিংয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হচ্ছে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি আজ (২১ জুলাই) মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ভিডিও।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আসল দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে বিমান দুর্ঘটনায় এরূপ কোনো ভিডিও ধারণ করা হলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।
পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে মানুষের অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।
এছাড়া, ‘মাইলস্টোন কলেজ‘ এর ইংরেজি বানান ‘Milestone College’ হলেও প্রচারিত ভিডিওটিতে তা ‘Milesttone College’ দেখা যায়। অর্থাৎ, একটি ‘t’ বেশি রয়েছে।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আসল দৃশ্য দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
আজ (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের দৃশ্য দাবিতে অন্তত সাতটি ভিন্ন ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রথম ছবিসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে।
একই ছবিসহ গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন এখুন: জনকণ্ঠ।
সপ্তম ছবিসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত সাতটি ছবি উত্তরায় বিধ্বস্ত হওয়া যুদ্ধবিমানের দৃশ্যের নয়। বরং, ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, মাইলস্টোন কলেজে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান। এই তথ্যের ভিত্তিতে ছড়িয়ে পড়া সাতটি আলোচিত ছবি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেগুলোর সঙ্গে এফ-৭ যুদ্ধবিমানের (১,২) গঠনগত বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে।
Image: Wikipedia.
এছাড়া, সাতটি ছবির প্রতিটিতেই এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের দেখা যায়। প্রথম ছবিতে আগুন ও ধোঁয়ার গঠন অস্বাভাবিকভাবে তৈরি, যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দ্বিতীয় ছবিতে আগুন ও ধোঁয়ার অসামঞ্জস্যের পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্সের সামনের লেখা বিকৃতভাবে গঠিত হয়েছে, যা সাধারণভাবে এআই-জেনারেটেড ছবিতে দেখা যায়। তৃতীয় ছবিতে একটি বিমানকে সুউচ্চ ভবনে আঘাত করতে দেখা গেলেও মাইলস্টোন কলেজে এমন কোনো ভবন নেই। চতুর্থ ছবিতে দুটি বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে সেখানে একটি মাত্র বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল। পঞ্চম ছবিতে ‘Milestone School & College’ লেখা একটি ভবনের ছাদে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি বিমান আগুনে জ্বলতে দেখা যায়, তবে এই ছবিতেও আগুনের গঠন অস্বাভাবিক। ষষ্ঠ ছবিতে ইংরেজিতে লেখা স্কুলের নামে ‘&’ শব্দটি দুইবার ব্যবহৃত হয়েছে এবং মাঝখানের ‘School’ শব্দটি অনুপস্থিত। সপ্তম ছবিতে ইংরেজিতে লেখা ‘School’ ও ‘College’ শব্দে বানান ভুল দেখা যায়, যা এআই-নির্মিত ছবিতে প্রায়শই দেখা যায়।
বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে পাঁচটি ছবিই এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিটি ছবির ক্ষেত্রেই এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি পাঁচটি ছবিকে উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
২২ জুলাই, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঘটনাটি ঘিরে এআই দিয়ে তৈরি আরও দুইটি ছবি ছড়িয়ে পড়ায়, সংশ্লিষ্ট দাবিগুলো পরবর্তী সময়ে প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে গণহত্যার অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে গতকাল (২০ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল আহ্বান করেছিল আওয়ামী লীগের চার সংগঠন – যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ। এ প্রেক্ষিতে, ‘সাবাস বীর বাঙালি। ২০ শে জুলাই ২০২৫ হরতাল। গণতান্ত্রিক লড়াই। জয় বাংলা’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর ০৩১৯০৬ নম্বর যুক্ত একটি গাড়ির সামনে কয়েকজন ব্যক্তির শুয়ে পড়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ার দৃশ্যটি গতকালের (২০ জুলাই) নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত মে মাসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দফা দাবি আদায়ে চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আন্দোলনের ঘটনার ভিডিও।
অনুসন্ধানে অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম বাংলাদেশ টাইমস এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৮ মে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা গাড়ির নম্বর এবং আশেপাশের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Video Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর গাড়ির সামনে চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শুয়ে পড়ার দৃশ্য এটি। এছাড়া, সাংবাদিককেও একই কথা বলতে শোনা যায়।
জাগো নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চার দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যরা। এর অংশ হিসেবে গত ১৮ মে বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাদের বৈঠক হয় সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় তারা কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকে গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি গতকালের (২০ জুলাই) নয়।
সুতরাং, গত ১৮ মে চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের চার দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ার দৃশ্যকে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের সমর্থনে সেনাবাহিনীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ‘জাতীয় সমাবেশ’ আয়োজন করেছে৷ এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে তিনটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ছবি তিনটি জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশের ছবি।
জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশের ছবি দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট: বিডি২৪রিপোর্ট।
এছাড়াও, জামায়াতে ইসলামীর ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি ছবি প্রচার করা হয়েছে। আলোচিত দাবিতে উক্ত ছবি সম্বলিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
আলোচিত দাবিতে উক্ত ছবি সম্বলিত এক্স পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
আলোচিত দাবিতে উক্ত ছবিগুলো সম্বলিত ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই দুইটি ছবি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশের ছবি দাবিতে আরো একটি ছবিও প্রচার করা হয়েছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৯ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবি তিনটির কোনোটিই জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশের ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে একটি ছবি গত ২৮ জুনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশের ছবি, আরেকটি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত উক্ত মহাসমাবেশের অপর আরেকটি ছবিকে সম্পাদিত করে তৈরি করা ছবি এবং অপর আরেকটি ছবি গত ১২ এপ্রিলে মার্চ ফর গাজার ছবি যা আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যম ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস’ এর ওয়েবসাইটে “Islami Andolan puts forward 16-point charter” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৯ জুনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে একটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
প্রতিবেদনটিতে ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শনিবার, (২৮ জুন) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে, যেখানে তারা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক (PR) ভোটিং পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি জানায়।” (অনূদিত)
এছাড়াও, অনলাইন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা মেইল’ এর ওয়েবসাইটেও “কার্যকর ঐক্য হলে রাষ্ট্রক্ষমতা আমাদের হাতেই আসবে: চরমোনাই পীর” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ জুনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটি গত ২৮ জুন বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত মহাসমাবেশের ছবি দাবিতে পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত উক্ত ছবিটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গত ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশের ছবি নয়।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘ইত্তেফাক’ এর ওয়েবসাইটে “ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে জামায়াত-এনসিপি-হিন্দু মহাজোটের নেতারা” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ জুনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে একটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “সংস্কার, বিচার, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যোগ দিয়েছেন। চরমোনাই পীরসাহেবের এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সংগঠনের নেতারাও। শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল মহাসমাবেশে যোগ দেন।”
এছাড়াও, অনুসন্ধানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লক্ষ জনতার জাতীয় মহাসমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র একাত্মতা প্রকাশ। নির্বাচনের পূর্বে বিচার ও মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে কোন আপোস নয়” শীর্ষক ক্যাপশনে গত ২৮ জুনে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ৬টি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার মধ্যে একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, সাদৃশ্য পাওয়া উক্ত ছবিটি ইত্তেফাকের উপরোল্লিখিত প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়।
তবে, ইত্তেফাকের প্রতিবেদন ও সারজিস আলমের পোস্টে সংযুক্ত উক্ত ছবিটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির বাম অংশের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়। ইত্তেফাকের প্রতিবেদন ও সারজিস আলমের পোস্টে সংযুক্ত ছবিটির বাম অংশে গাছগাছালি থাকলেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটিতে বামপাশেও জনসমুদ্র দেখা যায়। এছাড়াও, অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির হুবহু অনুরূপ কোনো ছবি নির্ভরযোগ্য সূত্রেও পাওয়া যায়নি যা থেকে বুঝা যায় যে, প্রচারিত ছবিটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, অনুসন্ধানে সম্পাদিত ছবিটিও অন্তত গত ০২ জুলাই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখা যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত উক্ত ছবিটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গত ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশের ছবি নয়।
প্রচারিত তৃতীয় ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন ‘ঢাকা মেইল’ এর ওয়েবসাইটে “ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন প্রতিবাদ আগে দেখেনি দেশবাসী” শীর্ষক শিরোনামে গত ১২ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের সম্মিলিন”। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত ১২ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত “মার্চ ফর গাজা” কর্মসূচির দৃশ্য।
এছাড়াও, ‘অর্থসূচক’ নামক একটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটেও গত ১২ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ‘মার্চ ফর গাজা’র ছবি দাবিতে আলোচিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়।
সুতরাং, গত ১৯ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশের ছবি দাবিতে গত ২৮ জুনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশের একটি আসল ছবি,একটি সম্পাদিত ছবি ও গত ১২ এপ্রিলের ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
২৮ জুলাই, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একই দাবিতে ভিন্ন আরেকটি পুরোনো ছবি সম্বলিত ফেসবুক পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্টগুলো প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো এবং তার সপক্ষে ফ্যাক্ট প্রদর্শন করা হলো।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আজ (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে বিমানটির পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে আসছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ভিডিও দেখুন ঢাকা প্রকাশ (ইউটিউব)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি আজকের নয় বরং ২০২৪ সালের মে মাসে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার পর দুই পাইলটকে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে লাফিয়ে আত্মরক্ষার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে মূল ধারার গণমাধ্যম দীপ্ত টিভির ইউটিউব চ্যানেলে একই ভিডিও ফুটেজের সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার। ২০২৪ সালের ০৯ মে প্রকাশিত এই ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য।
Comparison: Rumor Scanner
একই দিন বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সুতরাং, উত্তরায় আজ বিধ্বস্ত বিমানের পাইলটের বেঁচে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে চট্টগ্রামের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা ধর্ষনের শিকার হওয়া কোনো নারীর বক্তব্য প্রদানের নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাসায় প্রেমিকার অনড় অনশন পালনের সংবাদকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওটিতে মোহনা টেলিভিশনের লোগো দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে বক্তব্য প্রদানকারী নারীকে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ করতে দেখা যায়নি। বরং, ভিডিওটিতে তাকে প্রেমিকের বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করার পরও বিয়ে না করার অভিযোগ করতে শোনা যায়।
পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Mohona Tv এর ফেসবুক পেজে গত ১১ জুলাই “আমার জীবন নষ্ট করছে, তাইলে আমার জীবন দিয়া কী হবে” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মূল ভিডিওটি প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফারুক নামের এক প্রবাসীর সাথে অভিযোগকারী সোনিয়ার দীর্ঘ তিন বছরের সম্পর্কের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফারুক তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় সোনিয়া ফারুকের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করেন।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একাধিক গণমাধ্যমে এ ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। প্রতিবেদনগুলো থেকেও একই তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি আরও জানা যায়, সোনিয়া নামের ওই মেয়েটি গত ১০ জুলাই ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নে অবস্থিত প্রবাসী প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করেন।
সুতরাং, বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশনের ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদনকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বাড়িতে ঢুকে মহিলাকে ধর্ষণ করেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গতকাল (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে এখন অবধি অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে, “গোপালগঞ্জে আরো লাশ” ক্যাপশনে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ছবিতে হাসপাতালের বেডে তিন ব্যক্তির মরদেহ পরে থাকতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি গোপালগঞ্জের সহিংসতায় নিহতদের লাশের নয় বরং, এটি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামে নিহত ব্যক্তিদের ছবি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সানবিডি২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই “চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৩” প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির হুবহু মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে তিন ব্যক্তি নিহত হন। ছবিটি সেই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের।
পরবর্তীতে, বিএনপি মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ছবিযুক্ত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, “চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় এখন পর্যন্ত তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে। ছবিতে- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শহীদ ভাইদের নিথর দেহ পরে আছে।”
একই ঘটনায় সেসময় বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত ছবিটি (১, ২) পোস্ট হতে দেখা যায়।
সুতরাং, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামে নিহত ব্যক্তিদের ছবি গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে নিহতদের লাশের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখন অবধি ০৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এরই প্রেক্ষিতে, “গোপালগঞ্জে নিখোঁজ ৩৯১ জন নিরীহ মানুষ। আর এদিকে হেলিকপ্টার থেকে নদীতে ফেলা হচ্ছে সারি সারি লাশ।” ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেট প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি হেলিকপ্টার থেকে লাশ ফেলার কোনো দৃশ্যের নয় বরং, ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত পুরোনো সামরিক প্রশিক্ষণের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘shohan_tgs0.2’ নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Comparison : Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে হেলিকপ্টার হতে সৈন্যদের সারিবদ্ধভাবে পানিতে নামতে দেখা যায়। অর্থাৎ, আমাদের পর্যবেক্ষণে ভিডিওটি কোনো সামরিক প্রশিক্ষণের বলে প্রতীয়মান হয়।
এছাড়াও, একই ভিডিওটি ‘@MDRiazH-j2b’ ইউটিউব অ্যাউন্টে শর্টস আকারে গত ১ জুলাই প্রচার করতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, এটি হেলিকপ্টার থেকে লাশ ফেলার কোনো দৃশ্য নয়। গোপালগঞ্জে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষ, ভাংচুর ও নিহতের ঘটনার সাথেও এই ভিডিওর সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, তবে ভিডিওটি কবে কোথায় ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।
সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে সামরিক প্রশিক্ষণের ভিডিও সংগ্রহ করে তা দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে গোপালগঞ্জবাসীর সারি সারি লাশ ফেলা হচ্ছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।