গোপালগঞ্জে রমজানকে হত্যার দৃশ্য দাবিতে গত ০৫ আগস্টের কোনাবাড়ীর ভিডিও প্রচার

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন নিহত হন। যার মধ্যে রমজান মুন্সী ও রমজান কাজী নামেও দুই ব্যক্তি ছিলেন। উল্লেখ্য, গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী (৩২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ জুলাই দিবাগত রাত দুইটার দিকে মারা গেছেন।

এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “গোপালগঞ্জে রমজানকে গ্রেফতারের পর যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।”

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি এরূপ দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো প্রায় ১ লক্ষ বার দেখা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সম্প্রতি গোপালগঞ্জে নিহত রমজানকে গুলি করে হত্যার দৃশ্যের নয় বরং, গত বছরের ০৫ আগস্টে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে হৃদয় হত্যার ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “শটগান ঠেকিয়ে গুলি করলো পুলিশ, মামলা হলো সাংবাদিকের নামে” শীর্ষক শিরোনামে গত বছরের ০২ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দুইটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্য সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গত বছরের ০৫ আগস্টে গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানার পাশে ঘটে এই ঘটনা৷ ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ছেলেকে ধরে রেখেছেন। পেছন থেকে আরেক পুলিশ সদস্য ছেলেটির শরীরে শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে দেয়৷ সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞাত এই কিশোর।… ভিডিও ফুটেজ দেখে ইব্রাহীম নামের এই যুবক আমাদের নিশ্চিত করেন, নিহত কিশোর তার স্ত্রীর ছোটভাই হৃদয়। বাড়ি টাঙ্গাইল হলেও পড়ালেখার খরচ ও সংসারের হাল ধরতে কোনাবাড়িতে অটোরিকশা চালাতো।”

যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “৫ আগস্ট কোনাবাড়িতে যেভাবে হত্যা করা হয় হৃদয়কে!” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৫ জানুয়ারিতে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত দৃশ্য দুইটির সংযুক্তি পাওয়া যায়। 

এছাড়া, অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জাগোনিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটে “কলেজছাত্র হৃদয়কে গুলি করা কনস্টেবল আকরামকে জিজ্ঞাসাবাদ ১১ মার্চ” শীর্ষক শিরোনামে গত ০৫ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনে একটি কোলাজ ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আপনারা জানেন জুলাই আন্দোলনের সময় গাজীপুরের কোনাবাড়িতে হৃদয় নামে একজন শিক্ষার্থীকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।…চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘গাজীপুরের কোনাবাড়িতে গত ৫ আগস্ট একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড হয়। তারা একজন বিক্ষোভকারীকে ধরে নিয়ে নানাভাবে অত্যাচার করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে ঘিরে ধরে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে যায়। ঠান্ডা মাথায় তাকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর আরেকজন পুলিশ সদস্য এসে তাকে টেনে গলির মধ্যে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তার স্বজনরা জানে না, হৃদয়ের মরদেহ কোথায় আছে।’”

এ থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি গত বছরের ০৫ আগস্টে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ধারণকৃত এবং নিহত হওয়া ব্যক্তির নাম হৃদয়।

উল্লেখ্য, অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম বিবিসি নিউজ বাংলা ও ‘টাইমস অফ বাংলাদেশ’ নামক সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গোপালগঞ্জের ঘটনায় নিহত রমজান কাজীর বিষয়ে যথাক্রমে গত ১৮ ও ২০ জুলাইয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়। প্রতিবেদনে রমজান কাজীকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের সংযুক্তি পাওয়া যায় এবং পরবর্তীতে রমজানের মামাকে ভ্যানে করে রমজানকে নিয়ে যেতে দেখা যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনগুলোতে প্রদর্শিত রমজানের দৃশ্যগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়।

সুতরাং, গত বছরের ০৫ আগস্টে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে হৃদয় হত্যার ভিডিওকে সম্প্রতি গোপালগঞ্জে নিহত রমজানকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img