Home Blog Page 58

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সেনাপ্রধানের চুক্তি স্বাক্ষরের দাবিটি ভুয়া

0

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এলাকায় গত ২১ জুলাই বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনটি ছবি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “সবার নজর কিন্তু উত্তরায় এদিকে ওয়াকার আমেরিকার গোলামী করতে চুক্তি স্বাক্ষরতি করছে। সবকিছুই প্ল্যান মাফিক চলছে অপেক্ষা করো বাঙালি।”

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ছবিগুলো উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার মধ্যেই/পর আমেরিকার সাথে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের চুক্তি স্বাক্ষরের ছবি।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো গত ২১ জুলাইয়ে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের পরের সময়কার নয় বরং, উক্ত ঘটনার প্রায় ১২ দিন আগের গত ৮ জুলাইয়ের এবং ছবিগুলোতে আমেরিকার কোনো প্রতিনিধি নেই বরং, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সচিব হালুক গরগুন রয়েছেন। এছাড়া, প্রচারিত তৃতীয় ছবিটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধানকে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা শিল্প অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট’ নামে পরিচালিত ‘savunmasanayii’ ইউজারনেমের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৮ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে দুইটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার একটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “প্রফেসর ড. হালুক গরগুন, প্রতিরক্ষা শিল্প সচিব, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে স্থলভিত্তিক সামরিক ব্যবস্থা, সাঁজোয়া যান এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের যৌথ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাগাভাগির ভিত্তিতে টেকসই সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে। স্থলশক্তি থেকে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দিকে এই কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিই বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে একটি অভিন্ন প্রতিরক্ষা ভিশনের ভিত্তি গঠন করে।” (অনূদিত)।

এছাড়াও, “Itibarhaber.com’ নামক একটি তুর্কি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে গত ৮ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই ঘটনার দাবিতে আলোচিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়।


আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে তুর্কি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘টিআরটি গ্লোবাল’ এর ওয়েবসাইটে ‘Bangladesh urges ‘close’ defence cooperation with Türkiye’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৮ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে একটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবিটির মিল পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ সফরে আসা তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সচিবালয়ের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান প্রতিরক্ষা খাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। হালুক গরগুন মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা মুহাম্মদ ইউনুস এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়।” (অনূদিত)।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে গত ৮ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সাথে তুরস্কের হালুক গরগুনের ধারণকৃত ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর মান্যবর সেক্রেটারি Prof. Haluk Gorgun আজ (৮ জুলাই) সেনা সদরে সেনাপ্রধানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি তাঁরা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। মান্যবর সেক্রেটারি বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। সেনাপ্রধান তুরস্কের সহযোগিতায় দেশে বিভিন্ন আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম তৈরি এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।”

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তৃতীয় ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৮ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ৭টি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার মধ্যে একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তৃতীয় ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, গত ৮ জুলাইয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধানের সাথে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন এর সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। এছাড়াও, ক্যাপশনে পারস্পরিক কুশল বিনিময় ও সহযোগিতার ব্যাপারে হওয়া আলোচনার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়।

তবে ছবিগুলোর বিষয়ে কোথাও সেনাপ্রধানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কারোর চুক্তি হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার মধ্যেই আমেরিকার সাথে সেনাপ্রধানের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আসিফ, সারজিস ও হাসনাতকে জড়িয়ে কালবেলার নামে ভুয়া ফটোকার্ড

0

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গতকাল (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে আজ (২২ জুলাই) কলেজ চত্বরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে, রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুপুরে সচিবালয়ের সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জুবাইরকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে সরকার। পাশাপাশি, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সরকার।

এই ঘটনাচক্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত তিনটি ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয় যে আন্দোলনরত ছাত্রজনতাকে হুমকি দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রথম ফটোকার্ডের শিরোনামে লেখা হয়, “শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে না গেলে সরকার কঠোরভাবে দমন করবে: আসিফ মাহমুদ।” দ্বিতীয় ফটোকার্ডের শিরোনামে লেখা হয়, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদের ঘরে ফিরে যেতে বললেন সারজিস।” তৃতীয় ফটোকার্ডের শিরোনামে বলা হয়, “এবার মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানেএখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর নামে প্রচারিত মন্তব্যগুলো ভিত্তিহীন। তারা এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি এবং মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলাও সংশ্লিষ্ট কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, কালবেলার ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে ভুয়া এসব ফটোকার্ড তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত তিনটি ফটোকার্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিটিতেই কালবেলার লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২২ জুলাই, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

কালবেলার লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, কালবেলার ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বরং একই দিনে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি পোস্টে জানানো হয়, এসব ফটোকার্ড ভুয়া। ওই পোস্টে বলা হয়, কালবেলার ডিজাইন নকল করে আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে এসব ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করা হয়েছে।

অর্থাৎ, কালবেলার নামে ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া, আলোচিত দাবির পক্ষে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এমনকি আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলমহাসনাত আবদুল্লাহর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল বা অফিসিয়াল পেজেও এ ধরনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, উত্তরার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ হুমকি দিয়েছেন দাবিতে কালবেলার নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

Kalbela: Facebook Post 

উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় আহত শিশু দাবিতে গাজার পুরোনো ছবি প্রচার

0

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গতকাল (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আহত ও দগ্ধ হয়েছে শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এই প্রেক্ষিতে, ‘এটা গাঁজা নয়, বাংলাদেশের দৃশ্য’ ক্যাপশনে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটিতে দেখা যায়, একটি মেয়ে শিশু ও এক কিশোর ধুলো-মলিন অবস্থায় একটি হাসপাতালের স্ট্রেচারে বসে আছে।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। বরং, এটি ২০২৩ সালে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আহত শিশুদের একটি পুরোনো ছবি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে হুবহু একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে আহত শিশুদের ধুলোমলিন ও রক্তাক্ত অবস্থায় একটি স্ট্রেচারে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় কাছাকাছি একটি শরণার্থী শিবিরে বোমাবর্ষণের পর তাদের হাসপাতালে আনা হয়।

ছবিটির ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রতিবেদনে গাজার ফ্রিল্যান্স ছবি সাংবাদিক সামার আবু এলউফের নাম দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর দ্য আইরিশ টাইমসেও ছবিটি প্রকাশিত হয় এবং সেখানে একই সূত্রের বরাতে ছবিটি আল-শিফা হাসপাতালে ধারণকৃত বলে উল্লেখ রয়েছে।

সুতরাং, ২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহত শিশুদের একটি ছবি বাংলাদেশের উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

সম্পাদিত ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ভবিষ্যদ্বাণীর দাবি

0

গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে,‘বিমান বিধ্বস্ত হবে, শতাধিক শিশু আহত হবে..’ দাবির Motiur Rahman নামের ফেসবুক ব্যবহারকারীর ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে পোস্টটি তিনদিন আগের অর্থাৎ, ঘটনার আগের।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

Motiur Rahman নামের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটটে দেখা যায়, ‘বিমান বিধ্বস্ত হবে, শতাধিক শিশু আহত হবে..’ পোস্টটি শেয়ার দিয়ে তিনি আবার নিজেই লিখেন, ‘এরকম পোস্ট দেখে বিভ্রান্ত হবেন না, আগামীকাল কি ঘটবে সেটা কেউ জানেনা’

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘বিমান বিধ্বস্ত হবে, শতাধিক শিশু আহত হবে..’দাবির Motiur Rahman নামের ফেসবুক ব্যবহারকারীর ফেসবুক পোস্টের লেখাটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার আগের নয়। বরং, বিমান দুঘটনার পরবর্তী সময়ে Motiur Rahman নামের ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের গত ১৮ জুলাইয়ের একটি পোস্ট সম্পাদনা করে আলোচিত লেখাটুকু সংযুক্ত করেছেন, যা পরে ভাইরাল হয়ে আলোচিত দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও, একই পোস্টটি তিনি একাধিকবার এডিট করেন।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে Motiur Rahman নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। দেখা যায়, পোস্টটি ১৮ জুলাইয়ের। পোস্টটির এডিট হিস্ট্রি যাচাই করে দেখা যায় এটি একাধিকবার সম্পাদনা করা হয়েছে।

গত ১৮ জুলাই রাত ২ট ১০ মিনিটে পোস্টটির প্রথম সংস্করণের ক্যাপশন ছিল ‘01967657515 ১৭ জুলাই’।  

পরবর্তীতে, তিনি গত ২১ জুলাই রাতে পোস্টটিতে সম্পাদনা করে লিখেন, ‘বিমান বিদ্ধস্ত, শতাধিক আহত..’। একই দিনে দ্বিতীয় দফা সম্পাদনা করে লিখেন, ‘বিমান বিধ্বস্ত হবে, শতাধিক শিশু আহত হবে..’। তৃতীয় দফা সম্পাদনা করে লিখেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান হামলা পরিকল্পিত, অবশ্যই পরিকল্পিত, পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার পূর্বে পরিকল্পিত…। এই পরিকল্পনা মহান আল্লাহর’। সর্বশেষ বার ক্যাপশন পরিবর্তন করে লিখেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিদ্ধস্ত পরিকল্পিত, অবশ্যই পরিকল্পিত, পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার পূর্বে পরিকল্পিত…। এই পরিকল্পনা মহান আল্লাহর’।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে ‘বিমান বিধ্বস্ত হবে, শতাধিক শিশু আহত হবে..’ দাবির Motiur Rahman নামের ফেসবুক ব্যবহারকারীর ফেসবুক পোস্টের লেখাটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার আগের নয়। 

সুতরাং, উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় Motiur Rahman নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Motiur Rahman : Facebook Post

উত্তরায় মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ভিডিও দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এলাকায় গতকাল ২১ জুলাই বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “যেভাবে স্কুল ভবনে প্রশিক্ষণ বিমানটি আঘাত হানে। উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে! একটি ট্রেনিং এয়ারক্রাফট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কলেজের মাঠে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই আ;গুন ধরে যায় এবং চারদিকে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।”

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ভিডিও।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আসল দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে বিমান দুর্ঘটনার এরূপ কোনো ভিডিও ধারণ করা হলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।

পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে বিল্ডিংয়ে বিমানের বিধ্বস্ত হওয়া ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।

Screenshot of Claimed Video

এছাড়া, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির নিচের ডান কোণে ‘Veo’ নামের একটি জলছাপ ও এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের লেবেল দেখতে পাওয়া যায়। ‘Veo’ গুগলের একটি উন্নত এআই টুল, যা টেক্সট প্রম্পট থেকে ৮ সেকেন্ডের বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্যও ৮ সেকেন্ড।

পাশাপাশি, প্রচারিত ভিডিওটির বিল্ডিংয়ে ‘Untie College’ সদৃশ কিছু একটা লেখা দেখতে পাওয়া যায় যা আলোচিত ঘটনার ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আসল দৃশ্য দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Veo
  • Rumor Scanner’s analysis

ডা. সামন্ত লাল সেন কারাগারে আটক থাকার দাবিটি মিথ্যা 

0

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এলাকায় গতকাল ২১ জুলাই বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি দাবি প্রচার করা হয় যে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বার্ন বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্ত লাল সেন কারাগারে আটক আছেন এবং মাইলস্টোনের এই পরিস্থিতিতে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে আহতদের সেবার কাজে নিযুক্ত করার দাবি জানানো হয়।

ডা. সামন্ত লাল সেন কারাগারে আটক আছেন এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বার্ন বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্ত লাল সেন কারাগারে আটক নেই। গত ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তার নামে একটি হত্যা মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গেলেও তাকে ঐ মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে ডা. সামন্ত লাল সেনের মতো ব্যক্তি গ্রেফতার হলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো।

অনুসন্ধানে ‘জাগোনিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটে “হঠাৎ আলোচনায় ডা. সামন্ত লাল সেন” শীর্ষক শিরোনামে গত ২১ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বার্ন বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্ত লাল সেন ‘আত্মগোপনে’ চলে যান। ডা. সামন্ত লাল সেনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জাগো নিউজকে জানিয়েছে, আত্মগোপনে থাকলেও তিনি দেশেই আছেন। মাসখানেক আগেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সূত্রটি ডা. সেনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে এ প্রতিবেদক একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ডা. সেন সাড়া দেননি।”

ডা. সামন্ত লালের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম এনটিভির ওয়েবসাইটে “শেখ হাসিনা-সামন্ত লাল-ডিপজলসহ ১৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা” শীর্ষক শিরোনামে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় গুলি করে শুভ নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, অভিনেতা ও ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন ডিপজলসহ ১৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে শুভর মা রেনু মামলাটি করেন।”

উক্ত তথ্যের প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিম ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমার সাথে যোগাযোগ করে। ক্যশৈন্যু নিশ্চিত করেন যে, হত্যা কিংবা অন্য কোনো মামলায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ ডা. সামন্ত লাল সেনকে গ্রেফতার করেনি।

সুতরাং, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বার্ন বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্ত লাল সেন কারাগারে আটক আছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ কর্তৃক শিশুকে বল প্রয়োগের ভিডিওকে গোপালগঞ্জের দাবিতে প্রচার  

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখন অবধি ০৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 

এরই প্রেক্ষিতে “গোপালগঞ্জ একটা ছোট্ট ছেলে কেউ ছাড় দিছে নাই কুলাঙ্গার পুলিশ বাহিনী। এর এক এক হিসাব নেওয়া হবে। যা তোরা চিন্তাও করতে পারবি না। রাজনীতিতে একটা কথা আছে ইতিহাস ছাড় দেয় ছেড়ে দেয় না” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক শিশুকে বল প্রয়োগের দৃশ্যের নয়। বরং এটি গত ০৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ কর্তৃক শিশুকে বল প্রয়োগের ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশীয় মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘ATN News’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৮ জুলাই “চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিশুর উপর পুলিশের বল প্রয়োগের ভিডিও ভাইরাল” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশিয় মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজের ওয়েবসাইটে গত ১৮ জুলাই ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওসি-এসআইয়ের শিশু বল প্রয়োগের ভিডিও ভাইরাল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির ফিচারে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। 

Screenshot by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনের বিবরণী থেকে জানা যায়, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মতিউর রহমান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাইয়ের শিশুকে বল প্রয়োগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ভাইরাল হয়েছে। ২৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, এক শিশুর হাত ধরে আছেন সদর থানার ওসি মতিউর রহমান। শিশুটির গায়ে থাকা টি-শার্টের গলার অংশ ধরে মারধর করছেন সদর থানার এসআই আব্দুল হাই। এক পর্যায়ে মাথা ও চুল ধরে পেছনের দিকে বল প্রয়োগ করছেন তিনি। পুরো ভিডিওতেই শিশুটি কান্নারত অবস্থায় ছিল। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি শিশুটির। ওসি এসআইসহ ৩-৪ জন পুলিশ সদস্য মিলে শিশুটিকে নির্যাতন করেন। 

সদর থানার ওসি মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাটি গত ৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা দিনের ঘটনা এটি। ওই শিশু এনসিপির নেতৃবৃন্দের কাছাকাছি চলে যায়। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে তার কাছে পাওয়া যায় ড্যান্ডি নামের মাদক। তবে পুলিশের বল প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেন তিনি।’

এছাড়া, একই বিষয়ে দেশিয় মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘Independent Television’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত ভিডিওর বিষয়ে একই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, পুলিশ কর্তৃক শিশুকে বল প্রয়োগের ভিডিওটি গোপালগঞ্জের নয়।

সুতরাং, গত ০৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ কর্তৃক এক শিশুকে বল প্রয়োগের ভিডিওকে গোপালগঞ্জের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

বাংলাদেশি অভিনেত্রী নিহার ছবি দাবিতে ভারতীয় অভিনেত্রীর সম্পাদিত ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি, অভিনেত্রী নাজনীন নাহার নিহা দাবিতে কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো নাজনীন নাহার নিহার নয়। বরং, ইন্টারনেট থেকে ভারতীয় অভিনেত্রী বৈষ্ণবী পাটবর্ধন (Vaishnavi V Patwardhan) -এর ছবি সংগ্রহ করে তাতে প্রযুক্তির সাহায্যে নাজনীন নাহার নিহার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে Vaishnavi V Patwardhan নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৫ জুন প্রচারিত কিছু ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। ছবিতে উক্ত নারীর মূখমণ্ডলে পার্থক্য ছাড়া অন্য সব উপাদানে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

জানা যায়, বৈষ্ণবী পাটবর্ধন (Vaishnavi V Patwardhan) একজন ভারতীয় অভিনেত্রী।

অর্থাৎ, মূল ছবিগুলো বৈষ্ণবী পাটবর্ধন (Vaishnavi V Patwardhan) নামের একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর।

অনুসন্ধানের স্বার্থে রিউমর স্ক্যানার বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৈষ্ণবী পাটবর্ধন (Vaishnavi V Patwardhan)-এর ছবির ওপর নাজনীন নাহার নিহার মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করেছে। এতে সম্পাদিত ছবির মতোই অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, অভিনেত্রী নাজনীন নাহার নিহাকে নিয়ে আগেও সম্পাদিত ছবি প্রচার করা হয়েছিল। সেই সময় তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, অভিনেত্রী নাজনীন নাহার নিহা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই ছবিগুলো সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

  • Vaishnavi V Patwardhan : Facebookn Post

চাঁদপুরে আ. লীগের হরতাল সমর্থনে মিছিল দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

গোপালগঞ্জে গণহত্যার অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদ গত ২০ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল আহ্বান করেছে আওয়ামী লীগের চার সংগঠন – যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ। এ প্রেক্ষিতে, “এই মুহুর্তে চাঁদপুরে গণজোয়ার আকাশে কালো মেঘ জমিনে প্রতিবাদী হুংকার।” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি গত ২০ জুলাই (রবিবার) চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের হরতাল পালনের দৃশ্যের নয় বরং, এটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে ঢাকার শাহবাগে জনতার মিছিলের ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওর কী-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম  ‘Shutterstock’’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট  প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওর বিবরণী থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট ধারণ করা। সেদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ঢাকার শাহবাগে জনতার মিছিলের সময় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুরের নয়।

সুতরাং, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে জনতার মিছিলের ভিডিওকে চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের হরতাল পালনের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

মিটফোর্ডে নিহত সোহাগের শেষ বক্তব্য দাবিতে ছড়ানো হয়েছে এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া ভিডিও

গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পাথর ছুড়ে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই প্রেক্ষিতে, নিহত সোহাগের শেষ ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে সোহাগের মতো দেখতে এক ব্যক্তি বলেন, “আমি মো. সোহাগ। আমার এই ভিডিওটা হয়তো স্মৃতি হয়ে থাকবে। একদিন হয়তো আমি থাকব না। কিন্তু অনেকদিন বাঁচার খুব ইচ্ছা আমার। আমার দুটো সন্তান হয়েছে, তাদের অনেক ভালো কিছু বানাবো—এটাই আমার ইচ্ছা রে, তাদের মানুষের মতো মানুষ বানাবো।”

এই দাবিতে ফেসবুকে ভাইরাল একটি পোস্ট দেখা হয়েছে ২ কোটি ২৭ লাখবার। একই বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও টিকটকেও দেখা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ২৭ লাখবার। আর ইউটিউবে ভাইরাল একটি ভিডিওর ভিউ সংখ্যা ৪ লাখ ৬৬ হাজার।

এ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

টিকটকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে

ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার মো. সোহাগের শেষ ভিডিও নয়। বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা একটি ভুয়া ভিডিও।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম বেশ কয়েকটি এআই-জনিত অসংগতি শনাক্ত করে। ভিডিওতে কথিত সোহাগের মুখভঙ্গি অস্বাভাবিক ও অপ্রাকৃতিক মনে হয়। পাশাপাশি, আলো-ছায়ার অসামঞ্জস্যতা, দ্রুত নড়াচড়ার সময় মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়া, মুখের চারপাশে ঝাপসা ভাব, চোখের পাতায় কম ঝাপটানি বা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মতো বিষয়ও চোখে পড়ে। এসব লক্ষণ থেকে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সন্দেহ তৈরি হয়। এ ছাড়া, কথার সঙ্গে ঠোঁটের নড়াচড়ার মিল পাওয়া যায়নি, যা এআই ভিত্তিক লিপ সিঙ্ক টুল ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।

অডিও অংশেও এআই ব্যবহারের লক্ষণ দেখা গেছে। বক্তার কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়, বরং কৃত্রিম বা রোবোটিক শোনায়। মুখের গতিবিধির সঙ্গেও কণ্ঠস্বরের তালে মিল দেখা যায় না। বক্তা টানা কথা বললেও শ্বাস নেওয়ার স্বাভাবিক শব্দ বা কণ্ঠে টোনের ওঠানামা নেই। এ ছাড়া, তিনি খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলেও, আশপাশে কোনো পরিবেশগত শব্দ, যেমন পাখির ডাক বা বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে না। অডিও অংশটিও এআই-নির্ভর টেক্সট-টু-স্পিচ প্রযুক্তিতে তৈরি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

পরবর্তীতে, ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট হাইভ মোডারেশনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ভিডিওর অডিও অংশটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯২ শতাংশ।

Screenshot: Hive Moderation. 

এছাড়া, সোহাগের এমন কোনো ভিডিও থাকলে তা স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের কোনো গণমাধ্যমে এই ভিডিওটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমনকি বিশ্বস্ত কোনো সূত্র থেকেও ভিডিওটি প্রকাশিত হয়নি।

ভিডিওটি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে, সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৬ জুলাই বাংলানিউজ২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সোহাগের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ভিডিওর সঙ্গে এই ছবির মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এই ছবি ব্যবহার করেই এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

বর্তমানে অসংখ্য ফ্রি এআই টুলস রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে স্থির চিত্র থেকে সহজেই ভিডিও তৈরি করা সম্ভব। এ ধরনের কোনো টুল ব্যবহার করেই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিওকে মিটফোর্ডে নিহত সোহাগের শেষ ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র