রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গতকাল (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে আজ (২২ জুলাই) কলেজ চত্বরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে, রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুপুরে সচিবালয়ের সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জুবাইরকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে সরকার। পাশাপাশি, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সরকার।
এই ঘটনাচক্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার ডিজাইন সম্বলিত তিনটি ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয় যে আন্দোলনরত ছাত্রজনতাকে হুমকি দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রথম ফটোকার্ডের শিরোনামে লেখা হয়, “শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে না গেলে সরকার কঠোরভাবে দমন করবে: আসিফ মাহমুদ।” দ্বিতীয় ফটোকার্ডের শিরোনামে লেখা হয়, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদের ঘরে ফিরে যেতে বললেন সারজিস।” তৃতীয় ফটোকার্ডের শিরোনামে বলা হয়, “এবার মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর নামে প্রচারিত মন্তব্যগুলো ভিত্তিহীন। তারা এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি এবং মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলাও সংশ্লিষ্ট কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, কালবেলার ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে ভুয়া এসব ফটোকার্ড তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত তিনটি ফটোকার্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিটিতেই কালবেলার লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২২ জুলাই, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
কালবেলার লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, কালবেলার ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বরং একই দিনে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি পোস্টে জানানো হয়, এসব ফটোকার্ড ভুয়া। ওই পোস্টে বলা হয়, কালবেলার ডিজাইন নকল করে আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে এসব ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করা হয়েছে।

অর্থাৎ, কালবেলার নামে ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, আলোচিত দাবির পক্ষে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এমনকি আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল বা অফিসিয়াল পেজেও এ ধরনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, উত্তরার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ হুমকি দিয়েছেন দাবিতে কালবেলার নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
Kalbela: Facebook Post