মঙ্গলবার, জুলাই 22, 2025

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সেনাপ্রধানের চুক্তি স্বাক্ষরের দাবিটি ভুয়া

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল এলাকায় গত ২১ জুলাই বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনটি ছবি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “সবার নজর কিন্তু উত্তরায় এদিকে ওয়াকার আমেরিকার গোলামী করতে চুক্তি স্বাক্ষরতি করছে। সবকিছুই প্ল্যান মাফিক চলছে অপেক্ষা করো বাঙালি।”

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ছবিগুলো উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার মধ্যেই/পর আমেরিকার সাথে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের চুক্তি স্বাক্ষরের ছবি।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো গত ২১ জুলাইয়ে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের পরের সময়কার নয় বরং, উক্ত ঘটনার প্রায় ১২ দিন আগের গত ৮ জুলাইয়ের এবং ছবিগুলোতে আমেরিকার কোনো প্রতিনিধি নেই বরং, তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সচিব হালুক গরগুন রয়েছেন। এছাড়া, প্রচারিত তৃতীয় ছবিটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধানকে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা শিল্প অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট’ নামে পরিচালিত ‘savunmasanayii’ ইউজারনেমের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৮ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে দুইটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার একটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রথম ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “প্রফেসর ড. হালুক গরগুন, প্রতিরক্ষা শিল্প সচিব, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে স্থলভিত্তিক সামরিক ব্যবস্থা, সাঁজোয়া যান এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের যৌথ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাগাভাগির ভিত্তিতে টেকসই সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে। স্থলশক্তি থেকে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দিকে এই কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিই বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে একটি অভিন্ন প্রতিরক্ষা ভিশনের ভিত্তি গঠন করে।” (অনূদিত)।

এছাড়াও, “Itibarhaber.com’ নামক একটি তুর্কি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে গত ৮ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই ঘটনার দাবিতে আলোচিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়।


আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে তুর্কি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘টিআরটি গ্লোবাল’ এর ওয়েবসাইটে ‘Bangladesh urges ‘close’ defence cooperation with Türkiye’ শীর্ষক শিরোনামে গত ৮ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে একটি ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দ্বিতীয় ছবিটির মিল পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ সফরে আসা তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সচিবালয়ের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান প্রতিরক্ষা খাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। হালুক গরগুন মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা মুহাম্মদ ইউনুস এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়।” (অনূদিত)।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে গত ৮ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সাথে তুরস্কের হালুক গরগুনের ধারণকৃত ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর মান্যবর সেক্রেটারি Prof. Haluk Gorgun আজ (৮ জুলাই) সেনা সদরে সেনাপ্রধানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি তাঁরা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। মান্যবর সেক্রেটারি বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। সেনাপ্রধান তুরস্কের সহযোগিতায় দেশে বিভিন্ন আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম তৈরি এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।”

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তৃতীয় ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৮ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ৭টি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার মধ্যে একটি ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত তৃতীয় ছবিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, গত ৮ জুলাইয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধানের সাথে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন এর সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। এছাড়াও, ক্যাপশনে পারস্পরিক কুশল বিনিময় ও সহযোগিতার ব্যাপারে হওয়া আলোচনার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়।

তবে ছবিগুলোর বিষয়ে কোথাও সেনাপ্রধানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কারোর চুক্তি হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার মধ্যেই আমেরিকার সাথে সেনাপ্রধানের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img