জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা, সংঘর্ষ এবং ভাংচুরের ঘটনায় গত বুধবার (১৬ জুলাই) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখন অবধি ০৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এরই প্রেক্ষিতে “গোপালগঞ্জ একটা ছোট্ট ছেলে কেউ ছাড় দিছে নাই কুলাঙ্গার পুলিশ বাহিনী। এর এক এক হিসাব নেওয়া হবে। যা তোরা চিন্তাও করতে পারবি না। রাজনীতিতে একটা কথা আছে ইতিহাস ছাড় দেয় ছেড়ে দেয় না” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক শিশুকে বল প্রয়োগের দৃশ্যের নয়। বরং এটি গত ০৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ কর্তৃক এক শিশু বল প্রয়োগের ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশীয় মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘ATN News’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৮ জুলাই “চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিশুর উপর পুলিশের বল প্রয়োগের ভিডিও ভাইরাল” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশিয় মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজের ওয়েবসাইটে গত ১৮ জুলাই ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওসি-এসআইয়ের শিশু বল প্রয়োগের ভিডিও ভাইরাল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির ফিচারে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনের বিবরণী থেকে জানা যায়, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মতিউর রহমান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাইয়ের শিশুকে বল প্রয়োগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ভাইরাল হয়েছে। ২৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, এক শিশুর হাত ধরে আছেন সদর থানার ওসি মতিউর রহমান। শিশুটির গায়ে থাকা টি-শার্টের গলার অংশ ধরে মারধর করছেন সদর থানার এসআই আব্দুল হাই। এক পর্যায়ে মাথা ও চুল ধরে পেছনের দিকে বল প্রয়োগ করছেন তিনি। পুরো ভিডিওতেই শিশুটি কান্নারত অবস্থায় ছিল। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি শিশুটির। ওসি এসআইসহ ৩-৪ জন পুলিশ সদস্য মিলে শিশুটিকে নির্যাতন করেন।
সদর থানার ওসি মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনাটি গত ৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা দিনের ঘটনা এটি। ওই শিশু এনসিপির নেতৃবৃন্দের কাছাকাছি চলে যায়। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে তার কাছে পাওয়া যায় ড্যান্ডি নামের মাদক। তবে পুলিশের বল প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেন তিনি।’
এছাড়া, একই বিষয়ে দেশিয় মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘Independent Television’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত ভিডিওর বিষয়ে একই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, পুলিশ কর্তৃক শিশুকে বল প্রয়োগের ভিডিওটি গোপালগঞ্জের নয়।
সুতরাং, গত ০৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ কর্তৃক এক শিশুকে বল প্রয়োগের ভিডিওকে গোপালগঞ্জের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।