রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইনানকে গ্রেফতারের শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে ইনানের বিষয়ে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকেও এমন কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
তবে ২১ জানুয়ারী দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইনান “র” এর তত্ত্বাবধানে!’ শীর্ষক একটি সংবাদ পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়য়ী, ইনানের অবস্থান এখন ভারতে। তবে এই বিষয়ে অন্য কোনো গণমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও নির্দিষ্ট কোনো সূত্র বা প্রমাণ দেওয়া হয়নি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আড়ালে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত গ্রেফতার হলেও কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সুতরাং, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইনানকে গ্রেফতারের দাবিটি ভিত্তিহীন ও ভুয়া।
সম্প্রতি, গত ২১ জানুয়ারি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডে পৌঁছান। সফর শেষে আজ ২৫ জানুয়ারি তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এই সফরে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভা এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব ইভেন্টের সময় কমপক্ষে ৪৭টি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
এই সফরের মধ্যেই ড. ইউনূস ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে ড. ইউনূস ক্ষমা চাননি বরং, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যাওয়া এক কিশোরের তার মাকে লেখা চিঠির বিষয়ে ড. ইউনূসের ‘কোট’ করা “if I don’t come back please forgive me” শীর্ষক মন্তব্যকে কাট করে তার (ইউনূস) নিজস্ব মন্তব্য দাবিতে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে।
গত ২৩ জানুয়ারি ড. ইউনূস বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের নানা বিষয় ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের আন্দোলনে সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে আন্দোলনে যাওয়া এক কিশোর তার মাকে লেখা চিঠির বিষয়ে ‘কোট’ করে বলেন, “ if I don’t come back please forgive me”। তার আলোচনার এই অংশটিই তার নিজস্ব মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে করে ভিডিওতে ড. ইউনূসকে বলতে দেখা যায়, “ if I don’t come back please forgive me, my friends are there, they are brave friends, I’m a brave person too” অর্থাৎ, যদি আমি ফিরে না আসি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার বন্ধুরা সেখানে আছে, তারা সাহসী বন্ধু। আমিও একজন সাহসী মানুষ।
ভিডিওটিতে যমুনা টিভির লোগো রয়েছে। এছাড়াও, ভিডিওতে ‘দাভোস সুইজারল্যান্ড…’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির প্রথম ২০ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এটি ভিডিওটির ইন্ট্রো। কিন্তু মূল কথা ভিডিওর ১৪ মিনিট ২১ সেকেন্ড থেকে ১৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ড অংশে রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটিতে এক পর্যায়ে ছাত্র আন্দোলনে তরুণদের কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এই তরুণরা একে অপরের সঙ্গে নতুন করে জড়ো হয়েছিল। তাদের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন ছিল না। আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করবেন, তারা বামপন্থী কি? ইসলামপন্থী কি? সন্ত্রাসী কি? কিন্তু তারা কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণিতে পড়ে না। আপনার কাছে তাদের জন্য কোনো শ্রেণী নেই। দেখুন, সেখানে সবাই ছিল, সকল নাগরিক, সকল তরুণ, বয়স নির্বিশেষে।
আন্দোলনে যাওয়া এক কিশোর তার মাকে লেখা চিঠির কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ১২ বছরের এক কিশোর একটি চিঠি লিখেছিল, যা তার মা কান্না করে জনতার সামনে পড়ছিলেন। সে আমাকে (তার মাকে) লিখেছিল, মা, তুমি সবসময় আমাকে রক্ষা করেছ, যাতে আমি প্রতিবাদ মিছিলে না যাই। আমি ঘরে বসে খুব রাগ করছিলাম যে আমি আজ যেতে পারছি না। আজ আমি যাচ্ছি। তোমাকে বিদায় জানাচ্ছি। আমি জানি না আমি ফিরে আসব কি না। যদি না ফিরে আসি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার বন্ধুরা সেখানে আছে, তারা সাহসী বন্ধু। আমিও একজন সাহসী মানুষ।
যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটির একটি লাইভ ভিডিওও খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের আন্দোলনে সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে আন্দোলনে যাওয়া এক কিশোরের তার মাকে লেখা চিঠির বিষয়ে ‘কোট’ করে বলেন, “ if I don’t come back please forgive me”। তার আলোচনার এই অংশটিই তার নিজস্ব মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, জুলাই আন্দোলনে যাওয়া এক কিশোরের লেখা চিঠির বিষয়ে ড. ইউনূসের ‘কোট’ করে বলা কথা ড. ইউনূসের নিজস্ব বক্তব্য দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করেছেন দাবিতে একটি পদত্যাগপত্রের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।।
ইন্টারনেটে প্রচারিত কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যমুনা টিভি’র এক সাংবাদিকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগপত্র দাবিতে ভাইরাল চিঠিটি আসল নয় বরং বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকা এই পদত্যাগপত্রটি ভুয়া। তাছাড়া, তিনি যমুনা টিভি’র কোনো সাংবাদিকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাননি বলে গণমাধ্যমটি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত বছরের (২০২৪) ০৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রেক্ষিতে সে বছরের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের চিঠি দাবিতে একটি ভুয়া পদত্যাগপত্রের ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সে সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবিতেও একটি ভুয়া চিঠির ছবি ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত চিঠির ছবিটির সাথে সম্প্রতি প্রচারিত আলোচিত চিঠির সীল ও তারিখ ব্যতিত বাকি সবকিছুর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
কথিত এই চিঠিতে তারিখ বদলে ২২ জানুয়ারি ২০২৫ লেখা হয়েছে। অথচ ড. ইউনূসকে এই তারিখ পরবর্তী সময়ে সরকারি সফরে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করতে দেখা গেছে। গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে, এই চিঠির উল্লিখিত তারিখ পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়ে গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত আলোচিত পদত্যাগপত্রটি পর্যবেক্ষণ করে এতে বেশ কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত, ওপেন সোর্সে থাকা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক প্যাড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে তারিখের ঘরে বাংলা মাসের তারিখ ওপরে এবং ইংরেজি মাসের তারিখ নিচে থাকে। তবে আলোচিত এই পদত্যাগের চিঠিতে ইংরেজি ও বাংলা তারিখ পাশাপাশি রয়েছে। তাছাড়া ইংরেজি তারিখ শুরুতে রয়েছে।
Comparison by Rumor Scanner
দ্বিতীয়ত, আলোচিত চিঠিতে ব্যবহৃত ফন্ট এবং প্রধান উপদেষ্টার প্যাডে ব্যবহৃত ফন্টের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
Image: Facebook Claim Post
এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একাধিক পোস্টে যমুনা টিভি’র এক সাংবাদিকের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন শীর্ষক দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমটির সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম জানান, “যমুনা টেলিভিশনের সংবাদ নিজেদের চ্যানেলের স্ক্রিন, ভেরিফাইড ফেসবুক, ইউটিউব এবং ওয়েবসাইটে প্রচার হয়।গুজব রটনাকারীরা মনগড়া কথা বলেছে। যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিকের যে কথা বলেছে, তা হয়ত মিথ্যাটাকে সত্য বলে প্রমাণের চেষ্টা হিসেবে। গুজবে কান না দিয়ে সবাই সচেতন থাকলে, অপপ্রচারকারীরা হালে পানি পাবে না।”
অর্থাৎ, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যমুনা টিভি’র কোনো সাংবাদিকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেননি।
সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই চিঠিটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি সংঘর্ষের দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রাণ এখন বিপদে আছে” (ভাষান্তরিত)।
উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এককভাবে ৩ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৪ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হিন্দুদের সাথে সংঘর্ষের বা হিন্দুদের ওপর কোনো অত্যাচারের ভিডিও নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বরং, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলীগ-জামাতের দুই পক্ষের সংঘাতের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো বিস্তারিত তথ্য বা নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালের কণ্ঠের ইউটিউব চ্যানেলে “ইজতেমা শুরুর আগেই দু’পক্ষের উ ত্তেজ না, তাবলীগের দুই সাথী হাসপাতালে ভর্তি” শীর্ষক শিরোনামে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়৷
Comparison : Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটির শুরুর দিককার দৃশ্যের সাথে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটির থাম্বনেলে বলা হয়, “সা’দ পন্থীদের গাড়িতে হামলা | জোবায়ের পন্থীদের সড়ক অবরোধ”।
এরই প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গত ১৩ ডিসেম্বরে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’তে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করেন জুবায়েরের অনুসারীরা। এরপর ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় পালনের ঘোষণা দেন সাদের অনুসারীরা। কিন্তু জুবায়েরের অনুসারীরা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে জোড় ইজতেমা করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন। এর মধ্যে গতকাল (১২ ডিসেম্বর) সাদের অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে প্রবেশের খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা একটার দিকে স্টেশন রোড এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন জুবায়েরের অনুসারীরা। এ সময় সাদের অনুসারীদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সাদের অনুসারী দুই মুসল্লি আহত হন।”
এছাড়াও, তাবলীগ-জামাতের এই দুই পক্ষের সংঘাতের বিষয়ে আরো একাধিক গণমাধ্যম সূত্রেও জানা যায়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সংঘাত বা গাড়িতে হামলার সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই৷
সুতরাং, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলীগ-জামাতের দুই পক্ষের সংঘাতের দৃশ্যকে হিন্দুদের সাথে সংঘর্ষের বা হিন্দুদের ওপর হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
গত ১৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে আমগাছের ডাল কাটা নিয়ে ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হওয়ার তথ্যও পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সীমান্তে দুই দেশের জনগণ উচ্চস্বরে মাইক এবং সাউন্ডবক্স বাজিয়ে প্রতিযোগিতা করেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে মাইক ও সাউন্ডবক্স বাজিয়ে প্রতিযোগিতা করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের দুটি ইটভাটায় স্বত্বাধিকারীদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Robiul Funny নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ জানুয়ারি প্রচারিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, এটি মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার মধ্যবর্তী একটি প্রতিযোগিতার দৃশ্য।
Video Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটি পর্যালোচনার মাধ্যমে এতে একই ঘটনার বেশ কয়েকটি শর্টস ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। যার মধ্যে একটির শিরোনামে ‘পিকনিক VS পিকনিক’ শব্দিটি উল্লেখ করা হয়। অপর আরেকটি ভিডিওতে ‘পিকনিক 2025 সাল’ উল্লেখ করা হয়েছে। ‘পিকনিক 2025 সাল’ শীর্ষক ভিডিওটি পর্যালোচনা করে সাউন্ড সিস্টেমের একটি বক্সে ‘সুপার সাউন্ড’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও এটিতে ‘নাটনা, পূর্বপাড়া এবং নদীয়া’ নামগুলো দেখা যায়। পাশাপাশি ‘9775105686’ শীর্ষক একটি মোবাইল নাম্বার দেখতে পাওয়া যায়।
Screenshot: Youtube
পরবর্তীতে সুপার সাউন্ড তথ্যটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Sahin Sekh নামের একটি ভারতীয় ফেসবুক আইডিতে ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রচারিত একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
পোস্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি সুপার সাউন্ড নামের সাউন্ড সিস্টেম প্রোভাইডারের একটি বিজ্ঞাপনধর্মী পোস্ট। এতে ব্যবহৃত ছবিগুলো পর্যালোচনা করে একই তথ্য সম্বলিত সাউন্ড সিস্টেম বক্সও দেখতে পাওয়া।
পরবর্তীতে পোস্টটিতে ব্যবহৃত ভারতীয় মোবাইল নাম্বারে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে উক্ত নাম্বার ব্যবহারকারী রিউমর স্ক্যানারকে জানান তার নাম শাহীন শেখ। তিনি ‘সুপার সাউন্ড’- এ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের গোবিন্দপুরের মুক্তারপুর এলাকার। মূলত, পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ইটভাটার স্বত্বাধীকারী পিকনিকের আয়োজন করেন। পিকনিককে কেন্দ্র করেই তারা সাউন্ডবক্স এবং মাইকের এমন আয়োজন করেছিলেন।
এছাড়াও, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের ঘটনার পরবর্তী সময়ে আলোচিত দাবিটির মত কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম ডিবিসি টেলিভিশনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জহুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সম্প্রতি এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের গোবিন্দপুরের দুই ইটভাটার স্বত্বাধিকারীদের আয়োজিত পিকনিকের দৃশ্যকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নাগরিকদের উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে প্রতিযোগিতা করার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ট্রেনে আগুন লেগেছে বলে একটি দাবি ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে। একটি ভিডিও যুক্ত করে ‘ট্রেনে আগুন- আহা দেশের অবস্থা! দেশের দায়িত্ব কার হাতে তুলে দিলেন?’ শিরোনামে দাবিটি প্রচারিত হয়েছে। এছাড়াও একই ভিডিওটি ‘ময়মনসিংহে ট্রেনে ভয়াবহ আগুন’ দাবিতেও প্রচারিত হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ট্রেনে আগুন লাগার প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। মূলত, ২০২২ সালে পারাবত এক্সপ্রেসে আগুন লাগার একটি ভিডিও সাম্প্রতিক ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে, উক্ত ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এ দুর্ঘটনা নিয়ে ২০২২ সালের ১১ জুন প্রকাশিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত ট্রেনের বগিতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে এতে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
শনিবার (১১ জুন ২০২২) দুপুর ১টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনের বগিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রনে এগিয়ে আসলেও হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরো ২টি বগিতে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট আধা ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল সোয়া ৬টায় সিলেট থেকে কালনী এক্সপ্রেস ছয় শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। বেলা সোয়া ১১টায় জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বিকেল পৌনে চারটায় আরেকটি আন্তনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পারবত এক্সপ্রেসের ট্রেনটি মৌলভীবাজারের শমসের নগর এলাকায় আসার পর বগিতে আগুন ধরে যায়।”
সুতরাং, ২০২২ সালে মৌলভীবাজারে পারাবত এক্সপ্রেসে আগুন লাগার পুরোনো ভিডিও সাম্প্রতিক ট্রেনে আগুন এর ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় দুইটি নয় বরং, একটি লাশ পাওয়া গেছে। গণিত বিভাগের পাশের ফুটপাতে মেহগনি গাছের চূড়ায় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় থেকে এই ঝুলন্ত লাশটি উদ্ধার করা হয়। ওই ব্যক্তির নাম- আবু সালেহ (৪৫)।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি সকাল পৌনে ০৯ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকায় গাছে ঝুলতে থাকা দেখতে পান পথচারীরা। পরবর্তীতে পৌনে ১০ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে মরদেহটি গাছ থেকে নামান। প্রাথমিকভাবে মৃত ব্যক্তির নাম ও পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
একই দিন ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে “ঢাবি ক্যাম্পাসের গাছে ঝুলন্ত মরদেহের পরিচয় মিলেছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণিত বিভাগের পাশের ফুটপাতে মেহগনি গাছের চূড়ায় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলন্ত মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির নাম- আবু সালেহ (৪৫)। তিনি ঢাকা কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। ২২ জানুয়ারি দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন রমনা বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যমে গত ২২ জানুয়ারি দুইটি লাশ উদ্ধারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একাধিক সাংবাদিক এবং প্রক্টরের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যানেল ২৪ এর প্রতিনিধি মোঃ বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘দুইটি নয়, গত ২২ জানুয়ারি একটি লাশ পাওয়া গেছে। দুইটি লাশ পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
বাংলা ট্রিবিউনের ঢাবি প্রতিনিধি আবিদ হাসান রাসেল বলেন, আবু সালেহ নামের এক ব্যক্তির লাশ জিমনেসিয়ামের সামনে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। দুইটি লাশ পাওয়ার দাবিটি গুজব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘লাশ একটি পাওয়া গেছে।’
সুতরাং, ২২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি লাশ পাওয়ার ঘটনাকে দুইটি লাশ পাওয়া গেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, সামাজিক মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম এর নামে একটি আপত্তিকর ভিডিও ‘সমন্বয়ক নুসরাতের গোপন ভিডিও ফাঁস’ দাবিতে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটি প্রচারের পাশাপাশি ওই ভিডিওর প্রেক্ষিতে “বেডি সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম কট”, বেডি সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ড জাতিকে উপহার দিল” ইত্যাদি টেক্সট আকারেও পোস্ট দেয়া হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ইন্টারনেট বা অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইট থেকে একটি পুরোনো ভিডিও সংগ্রহ করে সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী নুসরাত তাবাসসুমের একটি ছবি যুক্ত করে ভিডিওটি তার বলে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে বিভিন্ন পর্ণসাইটে প্রচারিত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। অন্তত ২০২২ সাল থেকে ভিডিওটি বিভিন্ন পর্ণ ওয়েবসাইটে রয়েছে বলে দেখা যায়। এসব ওয়েবসাইটে ভিডিওর নারীর কোনো পরিচয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
Reverse image search results
এছাড়াও, ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে করে, ২০২২ সালের সমন্বয়ক নুসরাতের ছবির সাথে তুলনা করে ওই ভিডিওর নারীর সাথে নুসরাত তাবাসসুমের মুখমণ্ডলের মিল পাওয়া যায়নি।
Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ইন্টারনেটের আ্যাডাল্ট সাইটের একটি পুরনো ভিডিওকে নুসরাত তাবাসসুমের নামে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী নুসরাত তাবাসসুমের গোপন ভিডিও দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা ।
গত বছরের ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও ভারতে আশ্রয় গ্রহণের পর থেকে পরিবর্তিত পটভূমিতে বিভিন্ন তথ্য-অপতথ্যের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ‘৫ই আগস্টের পর সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য প্রদান করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হচ্ছে৷
উক্ত দাবিতে এক্স-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য প্রদান করেছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। মূলত, পুরোনো একটি ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শেখ হাসিনার বক্তব্যের সাম্প্রতিক একটি অডিও প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷
এ বিষয়টি অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করা হলে এতে বাংলাদেশের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন এর লোগো লক্ষ্য করা যায়৷
উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ০৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ভাষণ’ শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। একইসাথে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ২০২৩ সালের ০৬ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্টেও একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২৩ সালের ০৬ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করে।
তবে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেল ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড চ্যানেলে পাওয়া ২০২৩ সালের ভিডিও এবং আলোচিত দাবির ভিত্তিতে প্রচারিত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, উভয় ভিডিওতে গঠনগত পার্থক্য বিদ্যমান। মূলত, ২০২৩ সালের মূল ভিডিওতে ‘মিরর ইমেজ এফেক্ট’ ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে, মূল ভিডিওতে ডানপাশে থাকা সকল বস্তু আলোচিত ভিডিওতে বামপাশে এবং বামপাশে থাকা সকল বস্তু ডানপাশে অবস্থান করছে।
অতঃপর, ভিডিওগুলোতে থাকা অডিও বা শব্দ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ২০২৩ সালের মূল ভিডিওর অডিও থেকে আলোচিত ভিডিওটির অডিও ভিন্ন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটির অডিওতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে, HAB TV Online নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা | ভার্চুয়াল বৈঠকে কী বললেন?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত ভিডিওটির অডিও অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির অডিওর হুবহু মিল রয়েছে। মূলত, উক্ত ভিডিওটির অডিও অংশকে উল্লিখিত ২০২৩ সালের ভিডিওতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ পোস্টে থাকা একাধিক ছবির সাথে উল্লিখিত ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওতে থাকা পারিপার্শ্বিকতা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত করা যায়, ভিডিওটি ও এতে থাকা অডিও বার্তা ১৯ জানুয়ারিতে সিউলে দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভায় ধারণকৃত।
এছাড়া, ১৯ জানুয়ারির উক্ত প্রতিবাদ সভায় শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তব্য প্রদানের অডিওটি গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়।
উপরিউক্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে নিশ্চিত করা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ভিডিও অংশটি সাম্প্রতিক নয়, এটি ২০২৩ সালের একটি ভিডিও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে; এবং অডিও অংশটি গত ১৯ জানুয়ারির একটি ভার্চুয়াল বক্তব্য থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে৷
সুতরাং, সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদান দাবিতে তার ২০২৩ সালের ভাষণের একটি ভিডিওতে তার গত ১৯ জানুয়ারির একটি ভার্চুয়াল বক্তব্যের অডিও প্রতিস্থাপন করে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পাদিত৷
সম্প্রতি, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে “আগামী ১ সপ্তাহের ভিতরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরেও একই ফটোকার্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামী ১ সপ্তাহের ভিতরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান দাবিতে যমুনা টিভি ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
উক্ত দাবিতে ২০২৪ সালে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “আগামী ১ সপ্তাহের ভিতরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প” শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পও এমন কোনো মন্তব্য করেমনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যমুনা টিভির ডিজাইনের আদলে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির নাম ও লোগো উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Comparison: Rumor Scanner
তাছাড়া, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্ট ডিজাইনেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এটি প্রকাশের তারিখ উল্লেখ নেই, যা সাধারণত যমুনা টিভির ফটোকার্ডে উল্লেখ করা হয়।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত ফটোকার্ডটিতে থাকা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প শীর্ষক দাবির সপক্ষে অন্য কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, আগামী ১ সপ্তাহের ভিতরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প শীর্ষক দাবিতে শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।