সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করেছেন দাবিতে একটি পদত্যাগপত্রের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।।
ইন্টারনেটে প্রচারিত কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যমুনা টিভি’র এক সাংবাদিকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (এখানে), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত চিঠি ব্যতীত পদত্যাগের দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগপত্র দাবিতে ভাইরাল চিঠিটি আসল নয় বরং বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকা এই পদত্যাগপত্রটি ভুয়া। তাছাড়া, তিনি যমুনা টিভি’র কোনো সাংবাদিকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাননি বলে গণমাধ্যমটি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত বছরের (২০২৪) ০৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রেক্ষিতে সে বছরের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের চিঠি দাবিতে একটি ভুয়া পদত্যাগপত্রের ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সে সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবিতেও একটি ভুয়া চিঠির ছবি ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত চিঠির ছবিটির সাথে সম্প্রতি প্রচারিত আলোচিত চিঠির সীল ও তারিখ ব্যতিত বাকি সবকিছুর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

কথিত এই চিঠিতে তারিখ বদলে ২২ জানুয়ারি ২০২৫ লেখা হয়েছে। অথচ ড. ইউনূসকে এই তারিখ পরবর্তী সময়ে সরকারি সফরে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করতে দেখা গেছে। গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে, এই চিঠির উল্লিখিত তারিখ পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়ে গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত আলোচিত পদত্যাগপত্রটি পর্যবেক্ষণ করে এতে বেশ কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত, ওপেন সোর্সে থাকা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক প্যাড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে তারিখের ঘরে বাংলা মাসের তারিখ ওপরে এবং ইংরেজি মাসের তারিখ নিচে থাকে। তবে আলোচিত এই পদত্যাগের চিঠিতে ইংরেজি ও বাংলা তারিখ পাশাপাশি রয়েছে। তাছাড়া ইংরেজি তারিখ শুরুতে রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আলোচিত চিঠিতে ব্যবহৃত ফন্ট এবং প্রধান উপদেষ্টার প্যাডে ব্যবহৃত ফন্টের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।

এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একাধিক পোস্টে যমুনা টিভি’র এক সাংবাদিকের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন শীর্ষক দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমটির সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম জানান, “যমুনা টেলিভিশনের সংবাদ নিজেদের চ্যানেলের স্ক্রিন, ভেরিফাইড ফেসবুক, ইউটিউব এবং ওয়েবসাইটে প্রচার হয়।গুজব রটনাকারীরা মনগড়া কথা বলেছে। যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিকের যে কথা বলেছে, তা হয়ত মিথ্যাটাকে সত্য বলে প্রমাণের চেষ্টা হিসেবে। গুজবে কান না দিয়ে সবাই সচেতন থাকলে, অপপ্রচারকারীরা হালে পানি পাবে না।”
অর্থাৎ, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যমুনা টিভি’র কোনো সাংবাদিকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেননি।
সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই চিঠিটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়: প্রজ্ঞাপন
- bdnews24: সুইজারল্যান্ড সফর শেষে দেশের পথে ইউনূস
- Statement from Chief News Editor, Jamuna TV
- Rumor Scanner’s Own Analysis