সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি সংঘর্ষের দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রাণ এখন বিপদে আছে” (ভাষান্তরিত)।

উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি এককভাবে ৩ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৪ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হিন্দুদের সাথে সংঘর্ষের বা হিন্দুদের ওপর কোনো অত্যাচারের ভিডিও নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বরং, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলীগ-জামাতের দুই পক্ষের সংঘাতের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো বিস্তারিত তথ্য বা নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালের কণ্ঠের ইউটিউব চ্যানেলে “ইজতেমা শুরুর আগেই দু’পক্ষের উ ত্তেজ না, তাবলীগের দুই সাথী হাসপাতালে ভর্তি” শীর্ষক শিরোনামে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়৷

উক্ত ভিডিওটির শুরুর দিককার দৃশ্যের সাথে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটির থাম্বনেলে বলা হয়, “সা’দ পন্থীদের গাড়িতে হামলা | জোবায়ের পন্থীদের সড়ক অবরোধ”।
এরই প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গত ১৩ ডিসেম্বরে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’তে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করেন জুবায়েরের অনুসারীরা। এরপর ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় পালনের ঘোষণা দেন সাদের অনুসারীরা। কিন্তু জুবায়েরের অনুসারীরা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে জোড় ইজতেমা করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন। এর মধ্যে গতকাল (১২ ডিসেম্বর) সাদের অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে প্রবেশের খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা একটার দিকে স্টেশন রোড এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন জুবায়েরের অনুসারীরা। এ সময় সাদের অনুসারীদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সাদের অনুসারী দুই মুসল্লি আহত হন।”
এছাড়াও, তাবলীগ-জামাতের এই দুই পক্ষের সংঘাতের বিষয়ে আরো একাধিক গণমাধ্যম সূত্রেও জানা যায়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সংঘাত বা গাড়িতে হামলার সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই৷
সুতরাং, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলীগ-জামাতের দুই পক্ষের সংঘাতের দৃশ্যকে হিন্দুদের সাথে সংঘর্ষের বা হিন্দুদের ওপর হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Kaler Kantho – ইজতেমা শুরুর আগেই দু’পক্ষের উ ত্তে জ না, তাবলীগের দুই সাথী হাসপাতালে ভর্তি
- Prothom Alo – হামলার ঘটনায় তাবলিগের সাদ অনুসারীদের মামলা, জুবায়েরপন্থীদের বিক্ষোভ
- The Business Standard – টঙ্গীতে জোড় ইজতেমা নিয়ে সাদ অনুসারীদের গাড়িতে জুবায়ের পন্থীদের হামলা