গত ২১ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরইমধ্যে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, আসিফ নজরুল লাইভে এসে জানিয়েছেন ড. ইউনূস সুইজারল্যান্ডে গ্রেফতার হয়েছেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডে গ্রেফতার হননি এবং ড. আসিফ নজরুলও লাইভে এসে এমন কোনো তথ্য জানাননি বরং সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গে আসিফ নজরুলের পুরোনো বক্তব্যের লাইভ ভিডিওর খণ্ডিত অংশ সুইজারল্যান্ডে ড. ইউনূস গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ড. আসিফ নজরুলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে উক্ত দাবিতে তাঁর সাম্প্রতিক লাইভের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আসিফ নজরুলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ০২ অক্টোবর ‘মাহমুদূর রহমান প্রসঙ্গে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও বার্তায় ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের জামিনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে বক্তব্য দেন।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে মাহমুদুর রহমান সেদিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
অর্থাৎ, আসিফ নজরুলের বক্তব্যের এই লাইভ ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সাথে ড. ইউনূসের সুইজারল্যান্ডে গ্রেফতার হওয়ার দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
১৯৬১ সালে জাতিসংঘের ভিয়েনা কনভেশন কর্তৃক অনুমোদিত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কোনো দেশের সরকার প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদবী ধারী ব্যক্তিরা ভিনদেশে কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা(Diplomatic immunity) পাওয়ার অধিকার রাখেন। উক্ত অধিকার পাওয়া ব্যক্তিকে যে দেশ সফর করছেন সে দেশে অপরাধ করলেও ঐ দেশের আইনে তার বিচার কিংবা আটক করা যাবেনা। যদি ইউমিনিটির অধিকার পাওয়া কোনো ব্যক্তি বড় ধরণের কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে তাকে বিচার কিংবা আটক করার জন্য আগে তিনি যে দেশের নাগরিক সে দেশের সরকারের মাধ্যমে কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা’র বিশেষ আইন রদ করাতে হবে।


অর্থাৎ, উপরোক্ত আইন অনুযায়ী ড. ইউনূস যদি সুইজারল্যান্ডে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে থাকতেন তারপরেও ঐ অপরাধের জন্য তার বিচার করা কিংবা বিচারের অংশ হিসেবে তাকে আটক করার কোনো এখতিয়ার সুইজারল্যান্ড সরকারের নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চারদিনের সফরে মুহাম্মদ ইউনূস মোট ৪৭টি ইভেন্টে যোগ দেন। যাত্রা শেষে বাংলাদেশ সময় আজ শনিবার বিকাল ৫ টার কিছু সময় পরঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন।
সুতরাং, ড. ইউনূস সুইজারল্যান্ডে গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে আসিফ নজরুলকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dr. Asif Nazrul Facebook: Post
- International Law: Vienna Convention on Diplomatic Relations, 1961
- bdnews24: সুইজারল্যান্ড সফর শেষে দেশের পথে ইউনূস
- Rumor Scanner’s Own Analysis