Home Blog Page 159

ঢাবি ও সাত কলেজে গত রাতের সংঘর্ষে কেউ নিহত হয়নি

0

গতকাল (২৬ জানুয়ারি) রাতভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সারা রাত উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। থেমে থেমে চলছিল ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এই ঘটনায় অন্তত একজন থেকে সর্বোচ্চ সাতজন মৃত্যুর দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব দাবির প্রেক্ষিতে দেশের তিনটি গণমাধ্যম আমার দেশ, যমুনা টিভি ও জনকণ্ঠের আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে নিহতের দাবি প্রচার হতে দেখা গেছে। 

গত রাতে নিহত দাবিতে গণমাধ্যমের ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ফটোকার্ডে প্রচার হওয়া ফেসবুক পোস্ট দেখুন জনকণ্ঠ, আমার দেশ, যমুনা টিভি, আমার দেশ (২)।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সম্মিলিত সাত কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ এর ব্যানারে কথিত একটি প্রেস রিলিজেও অন্তত দুইজন নিহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবি ও সাত কলেজে গত রাতের সংঘর্ষে কেউ মারা যায়নি বলে আন্দোলনকারীরাই রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোও উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং কোনো প্রমাণ ছাড়াই এই ঘটনায় আহত কতিপয় ব্যক্তির ছবি এবং গণমাধ্যমের নকল ব্যবহার করে দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর (কলেজগুলোর সাংবাদিক সমিতি সূত্রসহ) বরাতে গত রাতের ঘটনায় কোনো ব্যক্তি নিহতের তথ্য মেলেনি। মূল ধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো, সমকাল, দ্য ডেইলি স্টার, নিউ এজ, মানবজমিন এর এ সংক্রান্ত খবরে সারা রাত থেমে থেমে চলা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সর্বনিম্ন পাঁচজন থেকে বেশ কয়েকজন আহতের তথ্য দেওয়া হলেও নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পার্সন আব্দুর রহমানের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার। তিনি জানান, গত রাতের ঘটনায় কেউ মারা যায়নি। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে জনকণ্ঠ, আমার দেশ, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবিতে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রচারের প্রমাণ মেলেনি। 

রাকিব নামের যে শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার দাবি প্রচার হচ্ছে তা নিয়ে পরবর্তী অনুসন্ধানে ফেসবুকে রাকিবুল ইসলাম নামে একটি অ্যাকাউন্টে আজ সকালের এক পোস্ট থেকে জানা যায়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সমস্যায় Muhammad Rakib ভাই আহত হয়েছে, তাকে এখন ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, সকলের কাছে রাকিব ভাইয়ের সুস্থতা কামনায় দোয়া চাই। অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে সে মারা গেছে। আলহামদুলিল্লাহ উনি বেছে আছেন এবং কিছুটা ভালো আছেন।” 

রিউমর স্ক্যানারকে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পার্সন আব্দুর রহমানও নিশ্চিত করেছেন যে রাকিব মারা যায়নি। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

তাছাড়া, জাতীয় দৈনিক কালবেলার এক সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গত রাতের সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাকিব গুরুতর আহত হয়েছেন। রাকিব নাকে ও মুখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরে সহপাঠীরা তাকেসহ অন্যদের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী।

আজ দুপুর নাগাদ হাসপাতাল থেকে রাকিবের একটি বক্তব্যের ভিডিও-ও পাওয়া যায়। তিনি তার বক্তব্যে তার ওপর হামলাকারীদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।    

পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সম্মিলিত সাত কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ এর ব্যানারে কথিত প্রেস রিলিজে দুইজন নিহতের দাবি প্রচারের প্রেক্ষিতে প্রেস রিলিজটির উৎস অনুসন্ধান করে নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যমে প্রেস রিলিজটি প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। ঢাকা কলেজের সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজ এবং গণমাধ্যমেও উক্ত প্রেস রিলিজটির বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। রিউমর স্ক্যানার ঢাকা কলেজের সাংবাদিক সমিতির শীর্ষস্থানীয় পদে থাকা একাধিক সাংবাদিকের সাথে আলাপ করেছে। তারা নিশ্চিত করেছেন, এই প্রেস রিলিজটি ভুয়া। দায়িত্বশীল কোনো ফোরাম থেকে এটা প্রকাশ করা হয়নি। 

সুতরাং, ঢাবি ও সাত কলেজে গত রাতের সংঘর্ষে অন্তত একজনসহ একাধিক নিহতের যে দাবি প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এ সংক্রান্ত দাবিতে গণমাধ্যমের আদলে তৈরি ফটোকার্ডগুলোও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র 

শেখ হাসিনার করা কথিত মামলার কপি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার 

সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত থেকে পাওয়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়ের করা কথিত মামলার ৯ নাম্বার কপি নিয়ে কথিত আওয়ামী লীগ নেত্রী তামান্না ইয়াছমিন সহ ৮৯ জন সফরসঙ্গী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে গিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

উক্ত দাবিতে এক্স-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷ 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি শেখ হাসিনার করা মামলার কপি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে যাওয়ার ঘটনার নয় বরং, ২০২৪ সালের একটি ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷ এছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনার কোনো মামলা দায়ের করার বিষয়টিও ভিত্তিহীন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটির ক্যাপশনে দেখা যায়, ক্যাপশনে থাকা তথ্যাবলীর তথ্যসূত্র হিসেবে ‘তামান্না আকতার ইয়াছমিন’ নামক একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে উল্লেখ করা হয়েছে৷ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে হিন্দি ভাষার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের অংশ হিসেবে আবুধাবিতে তার কার্যক্রম বর্ণনা করা হয়েছে৷ 

উক্ত তথ্যের সূত্রে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Times Now’ এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে৷ 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি নরেন্দ্র মোদীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের অংশ হিসেবে কাতারের উদ্দেশ্যে রওনার দেওয়ার মুহূর্তে ধারণকৃত৷ 

ভারতীয় সংবাদসংস্থা ANI এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘Prime Minister Narendra Modi concludes UAE visit, emplanes for Qatar’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে একাধিক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে৷ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই দিনের সফর শেষে সফরটির দ্বিতীয় পর্বের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাতারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন৷ 

এছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনার কোনো মামলা দায়ের করার বিষয়ে গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, রিউমর স্ক্যানার ২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানায়, তামান্না ইয়াসমিন নামের এক নারীর আওয়ামী লীগের হয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রভাবশালী ভূমিকা পালনের দাবিটিও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে, আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশেমীর ছবি ব্যবহার করে পরিচালিত একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই দাবিটি করা হচ্ছে।

সুতরাং, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা কথিত মামলার কপি নিয়ে একদল লোকের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে সফর দাবিতে নরেন্দ্র মোদীর ২০২৪ সালের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতারের গুজব

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গুলশান থেকে গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, গুলশান থেকে ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতারের খবরটি সত্য নয় বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বিশ্বস্ত কোনো গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সাধারণত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার হলে তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতো। তবে নির্ভরযোগ্য কোনো উৎসে এমন তথ্য পাওয়া না যাওয়ায় প্রচারিত দাবিটি ভিত্তিহীন বলে প্রতীয়মান হয়।

আলোচিত পোস্টগুলিতে কমেন্ট সেকশনে সূত্র হিসেবে বিভিন্ন লিংক দেওয়া হলেও সেগুলো একটি অনলাইন বেটিং সাইটে নিয়ে যায়, যা থেকে বোঝা যায় লিংকগুলো মূলত ক্লিকবেইট লিংক। 

এছাড়া, গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন চললেও তবে বর্তমানে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও, ওবায়দুল কাদেরকে এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি বা মন্তব্য দিতে দেখা যায়নি।

সুতরাং, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গ্রেফতারের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner Own analysis

ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ইডেনের ৩ ছাত্রীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ দাবিতে গণমাধ্যমের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

0

ঢাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ২৭ জানুয়ারি রাতে হল ছেড়ে মূল সড়কে নেমে আসেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ঢাবি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

এরই প্রেক্ষিতে “ইডেনের ৩ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিটি ফটোকার্ড ছাড়া শুধু টেক্সট আকারেও পোস্ট হতে দেখা গেছে। এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, একুশে টিভি “ইডেনের ৩ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে” শীর্ষক শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, একুশে টিভি’র ডিজাইন নকল করে উক্ত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি’র লোগো দেখা যায় এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে একুশে টিভি’র ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে একুশে টিভি’র প্রচলিত ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্ট ও ডিজাইনের ভিন্নতা রয়েছে।

Photocard Comparison by Rumor Scanner

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে একুশে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে গণমাধ্যমটি জানায়, তারা এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।

ফটোকার্ডটির তথ্যের উৎপত্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের মধ্যকার সংঘর্ষ চলাকালে ২৭ জানুয়ারি রাত ২:১৯ মিনিটে’ মহিউদ্দিন আহমেদ’’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে “ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী বোনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সন্ত্রাসীরা তলে নিয়ে গেছে” শীর্ষক দাবিতে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) প্রচার করা হয়। এছাড়াও, রাত ২:৪৮ মিনিটে Sushanta Das Gupta নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও উক্ত বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট (আর্কাইভ) করা হয়। উক্ত দাবি সম্বলিত পোস্টগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরই একুশে টিভি’র নামে আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রচার করা হয়।

Screenshot Collage by Rumor Scanner

পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেও আলোচিত দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের ইডেন কলেজ প্রতিনিধি স্মৃতি আক্তার জানান, ইডেন কলেজের কোনো শিক্ষার্থীকে তুলে নেওয়া হয়নি। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সুতরাং, “ইডেনের ৩ ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে” শীর্ষক শিরোনামে একুশ টিভি’র নামে ইন্টারনেটে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

ঢাবির প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্লোগানকে ইউনূস বিরোধী স্লোগান দাবিতে প্রচার

অন্তত গতকাল (২৬ জানুয়ারি) থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিক্ষোভ ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “সাইন্সল্যাব মোড়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছে- “ইউনূস তুই স্বৈরাচার, এই মূহুর্তে গদি ছাড়”।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত উক্ত পোস্টটি ৩ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ২০ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বৈরাচার দাবি করে পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভের দৃশ্যের নয় বরং, অশোভন আচরণ করে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে ঢাবি প্রো-ভিসির (শিক্ষা) ক্ষমা চাওয়া ও শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে একটি ভিডিও এর সংযুক্তি ব্যতীত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করতে দেখা যায়নি৷ তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ‘প্রো-ভিসি তুই স্বৈরাচার, এই মুহূর্তে গদি ছাড়’ স্লোগানসহ নানা স্লোগান শুনতে পাওয়া গেলেও দাবিকৃত ‘ইউনূস তুই স্বৈরাচার, এই মুহূর্তে গদি ছাড়’ শীর্ষক স্লোগানটি শোনা যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ‘সিউবি ইনসাইডার্স – সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওসহ গতকাল (২৬ জানুয়ারি) প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির পারিপার্শ্বিক দৃশ্য ও ঘটনার মধ্যে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “প্রো-ভিসি তুই স্বৈরাচার এই মুহূর্তে গদি ছাড়”। স্লোগানে উত্তাল নীলক্ষেত-নিউমার্কেট”।

Comparison : Rumor Scanner

একই ফেসবুক পেজে গতকাল (২৬ জানুয়ারি) পোস্টকৃত আরেকটি পোস্টে বলা হয়, “আজ ঢাবি প্র ভিসি আমাদের যে ভাবে অপমান করছে তা মানার মতো না, সবাই নীতক্ষেত মোড়ে চলে আসেন। ৭ কলেজের যে যেখানে আসেন নীলক্ষেত মোড়ে চলে আসেন।আজ এখন থেকে রাস্তা ব্লোক শুরু। নীতক্ষেত ব্লোক করা হবে আজ। ৭ কলেজে ভর্তির আসন কমানো সহ ৫ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ঢাবির প্রো-ভিসি শিক্ষা  এবং কয়েকজন শিক্ষক সাত কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে অপমান করে বের করে দেয় ! শিক্ষার্থীদের নিকট ক্ষমা চাওয়া সহ সবগুলো দাবি রাতের মধ্যে মেনে নিতে হবে ! 

সমাধানের আগ পর্যন্ত নীলক্ষেত সাইন্সল্যাব বন্ধ!”

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ঢাকা কলেজ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ফেসবুক পেজে বিক্ষোভের একটি ভিডিওসহ একটি পোস্ট পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়, “৫ দফা দাবিতে রাজধানীর মিরপুর সড়ক অবরোধ করেছে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।” 

এছাড়া, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজে গতকাল (২৬ জানুয়ারি) প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্টে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের একজন শিক্ষার্থী বিক্ষোভের কারণ জানান। তিনি জানান, গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন। মাঝে তারা আন্দোলন থেকে সরে গিয়েছিলেন। তবে এখন দাবি হচ্ছে, নতুন কাঠামোতে যেন তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রথম দাবি ছিল, সীট সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়াও আরো কয়েকটি দাবির বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন৷ তবে কোথাও ড. ইউনূসের পদত্যাগ বা ইউনূসকে স্বৈরাচার বলার বিষয়ে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গতকাল (২৬ জানুয়ারি) “সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, সড়কে যানজট” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁরা ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হন। এরপর সেখানে কিছু সময় থেকে সরে এসে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন। এতে সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ সাত কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে অপমান করেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেছেন। তাঁরা জানান, তাঁদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিতে হবে এবং সহ–উপাচার্যকে তাঁর আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। […]

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ তারা এসেছিল আমার সঙ্গে কথা বলতে। তখন আমি তাদের বলি, তোমরা সবাই না এসে দুজন আসো। কিন্তু অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে ঢুকে যায়। ঘটনা এতটুকুই। সেখানে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করা হয়নি।’ তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা বিষয়ে আগামীকাল সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় সাত কলেজের বিষয়ে যে কমিটি আছে, তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। […] শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে, শ্রেণিকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি না করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা, ভর্তি পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটতে হবে ও সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত নতুন অ্যাকাউন্টে ভর্তি ফি জমা রাখতে হবে।”

এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে গতকাল (২৬ জানুয়ারি) প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়৷ এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “এসময় অবরোধ করা শিক্ষার্থীদের ‘প্রো-ভিসি তুই স্বৈরাচার, এই মুহূর্তে গদি ছাড়’, ‘আমাদের পাঁচ দফা, মানতে হবে মানতে হবে’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছেই চলবে’, ‘এই মুহূর্তে ক্ষমা চাইবি, পাঁচ দফা মেনে নিবি’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।” অর্থাৎ, সংবাদমাধ্যম থেকেও জানা যায় স্লোগানে প্রো-ভিসি’কে উল্লেখ করে স্বৈরাচার ডাকা হয় এবং পদত্যাগ করতে বলা হয়। এ বিষয়ে ড. ইউনূসের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দেওয়া ঢাবির প্রো ভিসি বিরোধী স্লোগানকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের স্লোগান দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একই দাবি টিকটক পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্টটি প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

ভারতের গণমাধ্যমকে জড়িয়ে শেখ হাসিনাকে ইন্টারপোল গ্রেপ্তার করেছে শীর্ষক ভুয়া দাবি প্রচার 

0

সম্প্রতি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’কে তথ্য সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে ‘শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছে ইন্টারপোল’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে ইন্টারপোল গ্রেপ্তার করেছে শীর্ষক দাবিতে হিন্দুস্তান টাইমস কোনো সংবাদ দেয়নি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ভুয়া দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, ইন্টারপোল কর্তৃক কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার নেই। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে হিন্দুস্তান টাইমসের ইংরেজি এবং বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কিওয়ার্ড এবং এডভান্স সার্চ করেও এমন দাবিতে কোনো তথ্য প্রচারের প্রমাণ পায়নি রিউমর স্ক্যানার৷ সংবাদমাধ্যমটির বাংলা সংস্করণে সর্বশেষ ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার দল নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়; যাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মন্তব্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামি লিগকে লড়াই করতে দেওয়া হবে না শীর্ষক বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে, হিন্দুস্তান টাইমসের ইংরেজি সংস্করণে সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি শেখ হাসিনার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়; যাতে তদন্তকারী কমিশনের বরাত দিয়ে হাসিনার সরকারের আমলে গোপন কারাগারে শিশু ও তাদের মায়েদের পাশাপাশি গোপন আটক কেন্দ্রে বন্দি রাখা হতো শীর্ষক বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এসব প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে তথ্য মেলেনি। পরবর্তী অনুসন্ধানে ইন্টারনেট আর্কাইভ যাচাই করেও হিন্দুস্তান টাইমসে উক্ত দাবিতে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে শেখ হাসিনাকে ইন্টারপোল গ্রেপ্তার করেছে দাবির বিষয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মূলধারার গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

ইন্টারপোল সদস্য দেশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক নোটিশ ব্যবস্থা পরিচালনা করে। এতে রেড নোটিশ নামে একটি বিশেষ ধরনের সতর্কবার্তা জারি করা হয়। রেড নোটিশ হচ্ছে এক ধরনের আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, যার মাধ্যমে একটি দেশ অন্য দেশগুলোকে কোনো অপরাধীকে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করতে সাহায্য চায়, যাতে তাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু কোনো অপরাধীকে খুঁজে বের করার দায়িত্বটি নেয় আবেদনকারী দেশটিই। মনে রাখা জরুরি যে এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী ব্যবস্থা। কোনো দেশই আইনত বাধ্য নয় যে রেড নোটিশের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার করবে। ইন্টারপোল জানায় যে প্রতিটি দেশ নিজের আইন অনুযায়ী রেড নোটিশকে কতটা গুরুত্ব দেবে তা নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

তাছাড়া, ইন্টারপোলের কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। এর পরিবর্তে এটি বিশ্বব্যাপী পলাতকদের সনাক্ত করতে সহায়তা করার সময় রেড নোটিশ, ফরেনসিক এবং বিশ্লেষণের মতো তদন্তমূলক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে সহায়তা করে। সদস্য দেশগুলো তাদের নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী রেড নোটিশের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে দাবি করেছেন। তবে, ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে এখন অবধি এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ‘হিন্দুস্তান টাইমস’কে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনাকে ইন্টারপোল গ্রেপ্তার করেছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধর্ষণ ও হত্যার পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে বাংলাদেশের ঘটনা বলে অপপ্রচার

সম্প্রতি, সামাজিক মাধ্যমে ভুট্টা ক্ষেতে এক নারীর লাশের একটি ভিডিও বাংলাদেশের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে ওই নারীকে ধর্ষণের পর জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। একই ভিডিওটি বাংলাদেশে হিন্দু নারীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবিতেও প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নারী ধর্ষণ ও হত্যার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয় বরং এটি ভারতের একটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও। ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বৈষ্ণবনগরে একটি ভুট্টার ক্ষেত থেকে উদ্ধার মৌসুমি মণ্ডল নামের এক নারীর লাশের ভিডিও এটি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Amit Malviya নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে একই ঘটনার একটি ভিডিও যুক্ত করে ঘটনাটি তুলে ধরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। উক্ত পোস্ট থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের। পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে— “..গতকাল (২৩ ফেব্রুয়ারি,২০২৪) বৈষ্ণবনগর বিধানসভার সীমান্তবর্তী গ্রাম শবদলপুরে একটি ভুট্টাক্ষেতে ২৭ বছর বয়সী দুই সন্তানের মা মৌসুমী মণ্ডলের মরদেহ পাওয়া যায়।…”

Video Comparison by Rumor Scanner 

পরবর্তীতে উক্ত পোস্টের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসে ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। “মালদায় ফের ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ, একই দিনে উদ্ধার ২ দেহ” শিরোনামে প্রকাশিত সে প্রতিবেদনে মৌসুমি মণ্ডলের হত্যার তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে এ ঘটনা নিয়ে বলা হয়, “বৈষ্ণবনগর থানার চরি-অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই শত বিঘি গ্রামের ভুট্টা খেতে এক গৃহবধূর গলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। নিহতের নাম মৌসুমী মণ্ডল । ছাগল চরাতে গিয়ে তাঁর দেহ দেখতে পায় ২ কিশোর। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, চার দিন আগে বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন ওই মহিলা। শুক্রবার তিনি পারিবারিক জমি দেখভাল করতে মাঠে যান। তার পর থেকেই তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দেহ উদ্ধার করে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ। মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান পরিবারের।”

অর্থাৎ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি পুরোনো ঘটনার ভিডিওকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা দাবিতে এবং বাংলাদেশে হিন্দু নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, ভারতের পুরোনো ঘটনার ভিডিও প্রচার করে বাংলাদেশে নারী ধর্ষণ ও হত্যা দাবি করার বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার নারীর মরদেহ দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় 

সম্প্রতি বাংলাদেশে এক নারীর গণধর্ষণের শিকার ও দুইদিন পর তার মরদেহ পাওয়া যাওয়ার দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণধর্ষণের শিকার নারীর মরদেহ পাওয়া যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেনি বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি সাম্প্রতিক ঘটনার ভিডিও উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওতে লাশের উদ্ধারকাজ তদারকিতে একজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। উক্ত পুলিশ সদস্যের পরনে বাংলাদেশ পুলিশের পোশাক নয় বরং ভারতীয় পুলিশের খাকি পোশাক দেখা যায়৷ এছাড়া, আলোচিত পোস্টগুলোর মন্তব্যের ঘরে অনেকেই ভিডিওটি ভারতের বলে দাবি করেছেন৷ 

পরবর্তী অনুসন্ধানে Shati Das নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২১ জানুয়ারি পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে৷ 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসন্তী থানাধীন চুনাখালির মণ্ডলপাড়ার চিত্র, সেখানে তের বছর বয়সী একজন বালিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। 

ভারতীয় গণমাধ্যম NDTV এর ওয়েবসাইটে গত ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘Body Of Minor Girl Found In Bengal Town, Rape And Murder Suspected’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অষ্টম শ্রেনীর ওই বালিকা গত ০৯ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিল৷ গত ২০ জানুয়ারি তার মরদেহ চব্বিশ পরগনা জেলার বাসন্তীর একটি মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়, ভুক্তভোগী ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ 

সুতরাং, বাংলাদেশে একজন নারীর গণধর্ষণ ও হত্যা দাবিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দৃশ্য দাবিতে জুলাই আন্দোলনের পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে সাধারণ জনতা। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি মিছিল ‘’ভুয়া,ভুয়া”,”আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবোনা’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি সম্প্রতি সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোনো দৃশ্য নয় বরং, জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গাজীপুরে অনুষ্ঠিত আন্দোলনের একটি ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে, ‘SM Nayeem Hasan’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবুহু মিল দেখা যায়। ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা – ‘’অস্তিত্বের লড়াইয়ে, ডুয়েট, গাজীপুর।” ফেসবুক ভিডিওটি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের সময়ের নয় বরং গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে মিছিলের ভিডিও এটি।

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত করতে রিউমর স্ক্যানার টিম ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং এতে ‘অঙ্কুর ক্যাডেট একাডেমি’ নামের একটি সাইনবোর্ড লক্ষ্য করা যায়। এই সূত্র ধরে গুগল ম্যাপে এই নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। জানা যায়, এটি গাজীপুরের শিমুলতলী রোডে অবস্থিত। পরবর্তীতে গুগল ম্যাপ থেকে উক্ত রোডের ছবি সংগ্রহ করে এবং এর সঙ্গে ভিডিওটিতে দৃশ্যমান স্থাপনার তুলনা করে। এতে দেখা যায়, ভিডিওতে দৃশ্যমান স্থাপনার সঙ্গে শিমুলতলী রোডের অবকাঠামোর মিল রয়েছে। অর্থাৎ, ভিডিওটি গাজীপুরেই ধারণকৃত।

Photo comparison: Rumor Scanner

এছাড়া অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ১৬ জুলাই গাজীপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন বিকাল ৩টায় ডুয়েটের সামনে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে এটি শুরু হয়। এরপর ডুয়েট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে পদযাত্রা করা হয় এবং চৌরাস্তা গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

সুতরাং, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ভিডিও হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

দক্ষিণ সুদানের মুন্দারি উপজাতির গো-মূত্রে গোসল করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির গোসল দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, হিন্দু ব্যক্তি গো-মূত্রে গোসল করছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, গো-মূত্রে এক ব্যক্তি গোসল করছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভিডিওতে হিন্দু ব্যক্তি গো-মূত্রে গোসল করছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং, দক্ষিণ সুদানের মুন্দারি উপজাতির এক ব্যক্তির গো-মূত্রে গোসল করার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২৩ সালের ০৫ জুলাই ‘UR World’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ‘The Mundari tribe is made up mostly of cattle breeders and fierce warriors.’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ভিডিওতে গো-মূত্রে গোসল করা ব্যক্তি মুন্দারি উপজাতির।

এছাড়াও, অনলাইন ভিডিও নিউজ কমিউনিটি এবং মার্কেটপ্লেস ‘Newsflare’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একই ভিডিওর ক্যাপশন থেকেও জানা যায়, এটি মুন্দারি উপজাতির।

পরবর্তীতে, উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ‘africanvibes’ নামক ইনস্টগ্রাম অ্যকাউন্টে প্রচারিত একই ভিডিও থেকে জানা যায়, ভিডিওটি দক্ষিণ সুদানের মুন্দারি উপজাতির । মুন্দারি সম্প্রদায়ে গরুর প্রস্রাব দিয়ে চুল ধোয়া একটি গভীর সাংস্কৃতিক প্রথা। তাদের বিশ্বাস, এই প্রস্রাব তাদের চুলকে এক বিশেষ রঙ দেয়, যা তাদের নারীদের অত্যন্ত আকর্ষণ করে। এই রীতি তাদের পুরুষদের প্রতি নারীদের আকর্ষণ বাড়ায়।

Screenshot: Instagram

মুন্দারিন উপজাতি সম্পর্কে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় দুই সংবাদমাধ্যম NEWS18Indiatimes এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দক্ষিণ সুদানের মুন্দারি জনগোষ্ঠী তাদের গরুদের প্রতি অসাধারণ ভক্তি ও আনুগত্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। সাধারণত ভারতকে গরু পূজার দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, মুন্দারিরা তাদের গরুদের প্রতি এমন এক গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে যা অনন্য। তারা মূলত ‘আনখল-ওয়াতুসি’ গরু লালন পালন করে থাকেন। এই উপজাতির মানুষ গোমূত্র স্নান ও গোবরকে সানস্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করে।

তাছাড়া, ‘Discovery UK’ ইউটিউব চ্যানেলে আপলোডকৃত তথ্যচিত্র থেকেও  প্রায় একই তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, দক্ষিণ সুদানের মুন্দারি জনগোষ্ঠীর ব্যক্তির গো-মূত্র দিয়ে গোসল করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তি গো-মূত্রে গোসল করছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র