গতকাল (২৬ জানুয়ারি) রাতভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সারা রাত উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। থেমে থেমে চলছিল ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এই ঘটনায় অন্তত একজন থেকে সর্বোচ্চ সাতজন মৃত্যুর দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব দাবির প্রেক্ষিতে দেশের তিনটি গণমাধ্যম আমার দেশ, যমুনা টিভি ও জনকণ্ঠের আদলে তৈরি ফটোকার্ডের মাধ্যমে নিহতের দাবি প্রচার হতে দেখা গেছে।
- ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিব নিহত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
- দুইজন নিহত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
- চারজন নিহত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে।
- সাতজন নিহত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
- একাধিক নিহত দাবিতে এক্সের পোস্ট দেখুন এখানে।

গত রাতে নিহত দাবিতে গণমাধ্যমের ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ফটোকার্ডে প্রচার হওয়া ফেসবুক পোস্ট দেখুন জনকণ্ঠ, আমার দেশ, যমুনা টিভি, আমার দেশ (২)।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সম্মিলিত সাত কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ এর ব্যানারে কথিত একটি প্রেস রিলিজেও অন্তত দুইজন নিহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। দেখুন এখানে।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবি ও সাত কলেজে গত রাতের সংঘর্ষে কেউ মারা যায়নি বলে আন্দোলনকারীরাই রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোও উক্ত দাবিতে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং কোনো প্রমাণ ছাড়াই এই ঘটনায় আহত কতিপয় ব্যক্তির ছবি এবং গণমাধ্যমের নকল ব্যবহার করে দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর (কলেজগুলোর সাংবাদিক সমিতি সূত্রসহ) বরাতে গত রাতের ঘটনায় কোনো ব্যক্তি নিহতের তথ্য মেলেনি। মূল ধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো, সমকাল, দ্য ডেইলি স্টার, নিউ এজ, মানবজমিন এর এ সংক্রান্ত খবরে সারা রাত থেমে থেমে চলা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সর্বনিম্ন পাঁচজন থেকে বেশ কয়েকজন আহতের তথ্য দেওয়া হলেও নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পার্সন আব্দুর রহমানের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার। তিনি জানান, গত রাতের ঘটনায় কেউ মারা যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে জনকণ্ঠ, আমার দেশ, যমুনা টিভির ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবিতে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রচারের প্রমাণ মেলেনি।
রাকিব নামের যে শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার দাবি প্রচার হচ্ছে তা নিয়ে পরবর্তী অনুসন্ধানে ফেসবুকে রাকিবুল ইসলাম নামে একটি অ্যাকাউন্টে আজ সকালের এক পোস্ট থেকে জানা যায়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সমস্যায় Muhammad Rakib ভাই আহত হয়েছে, তাকে এখন ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, সকলের কাছে রাকিব ভাইয়ের সুস্থতা কামনায় দোয়া চাই। অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে সে মারা গেছে। আলহামদুলিল্লাহ উনি বেছে আছেন এবং কিছুটা ভালো আছেন।”
রিউমর স্ক্যানারকে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পার্সন আব্দুর রহমানও নিশ্চিত করেছেন যে রাকিব মারা যায়নি। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তাছাড়া, জাতীয় দৈনিক কালবেলার এক সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গত রাতের সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাকিব গুরুতর আহত হয়েছেন। রাকিব নাকে ও মুখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরে সহপাঠীরা তাকেসহ অন্যদের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী।
আজ দুপুর নাগাদ হাসপাতাল থেকে রাকিবের একটি বক্তব্যের ভিডিও-ও পাওয়া যায়। তিনি তার বক্তব্যে তার ওপর হামলাকারীদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সম্মিলিত সাত কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ এর ব্যানারে কথিত প্রেস রিলিজে দুইজন নিহতের দাবি প্রচারের প্রেক্ষিতে প্রেস রিলিজটির উৎস অনুসন্ধান করে নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যমে প্রেস রিলিজটি প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। ঢাকা কলেজের সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজ এবং গণমাধ্যমেও উক্ত প্রেস রিলিজটির বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। রিউমর স্ক্যানার ঢাকা কলেজের সাংবাদিক সমিতির শীর্ষস্থানীয় পদে থাকা একাধিক সাংবাদিকের সাথে আলাপ করেছে। তারা নিশ্চিত করেছেন, এই প্রেস রিলিজটি ভুয়া। দায়িত্বশীল কোনো ফোরাম থেকে এটা প্রকাশ করা হয়নি।
সুতরাং, ঢাবি ও সাত কলেজে গত রাতের সংঘর্ষে অন্তত একজনসহ একাধিক নিহতের যে দাবি প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এ সংক্রান্ত দাবিতে গণমাধ্যমের আদলে তৈরি ফটোকার্ডগুলোও বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- Kalbela: শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য রাকিব আহত
- Md Rakibul Islam: Facebook Post
- Statement from Abdur Rahman