সম্প্রতি, ১৮১৩ নং স্মারক উল্লেখ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে ৩ বছর মেয়াদী প্রকল্পে সারাদেশে ৪২০ জন মাঠকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশে ৪২০ জন মাঠকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত এই বিজ্ঞপ্তি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর দেয়নি বরং আর্থিক প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভুয়া এই বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবং গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও এ ধরনের কোন বিজ্ঞপ্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খন্দকার আরিফুজ্জামান রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন যে বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া।
পূর্বেও একই দাবিতে ভিন্ন নাম্বার ব্যবহার করে একই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সম্প্রতি, আওয়ামী লীগ সরকারের ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম্যের পোস্টগুলোতে দাবিতে করা হচ্ছে, ‘অবৈধ ভবে আধার কার্ড সংগ্রহ করতে গেলে পালিয়ে থাকা আওয়ামীলীগের ডামি এমপি নিজামুদ্দিন হাজারীকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ফেনীর সন্ত্রাসী গডফাদার হাজারী ও তার ঘনিষ্ট ক্যাডাররা স্থানীয় দালাদের মাধমে চুক্তিতে বৈধ ভাবে কলকাতায় বসবাসের উদ্দেশে ঔই কার্ড সংগ্রহ করার চেষ্টা করলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদেরকে আটক করে।’
তাছাড়া, বাংলাদেশ সকাল নামের একটি অনলাইন পোর্টালে গত ০৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও প্রায় একই দাবি করা হয়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে আটক হননি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে দাবির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে নিজাম উদ্দিন হাজারী পশ্চিম বঙ্গ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন দাবির সপক্ষে ভারতীয় বা বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দাবির সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Abdur Rab Bhuttow’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০৮ জানুয়ারী রাত ১০টা ০৩ মিনিটে করা পোস্টটি সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট হিসেবে পাওয়া যায়। তবে এই পোস্টে কোনো তথ্যসূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, দাবির বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামীম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “এমন কোনো গ্রেফতারের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই”।
তবে, গত ০৬ আগস্ট মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী ও এমপির দেহরক্ষী পিএস মানিক আটক করেছে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড। সেসময় একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা টাইমস।
নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আটকের বিষয় সম্পর্কে জানতে ফেনীর পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যনারকে জানান, “গত ০৬ আগস্ট নিজাম উদ্দিন হাজারী আটকের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই”।
মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ০১ জানুয়ারি ‘চব্বিশের বিপ্লব, ফেনীতে হাজারী যুগের অবসান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিজাম হাজারীর বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান এর একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। এই পুলিশ সুপার বলেন, “এখন পর্যন্ত নিজাম হাজারীর নামে ৮টি হত্যা মামলাসহ নয়টি মামলা হয়েছে। তার নামে নানা অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
নিজাম হাজারীকে আটকের দাবিটি ভুয়া বলে নিশ্চিত হলেও তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, নিজাম হাজারী গ্রেফতার না হলেও গত ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মোহাম্মদ ফরিদ মানিক আটক করেছে পুলিশ। পরদিন ১৩ আগস্ট ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
সুতরাং, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Statement: Jawed Shamim, ADG (Law and Order), West Bengal Police
Statement: Md. Habibur Rahman, SUPERINTENDENT OF POLICE, Feni
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও আকারে একটি অডিও প্রচার করে দাবি করা হয় যে, এটি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ঘোষণার। ভিডিওটিতে কোনো একজনকে বলতে শোনা যায়, “অদ্য সকাল হতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে। সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে। এখন থেকে সারাদেশে সামরিক আইন জারি করা হলো।”
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি ৭৪ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৫ হাজারটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করা বা সামরিক আইন জারির বিষয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কোনো ঘোষণা দেননি। প্রকৃতপক্ষে, কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিতে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করতে দেখা যায়নি। তাছাড়া, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করা বা সামরিক আইন জারি করার বিষয়ে সেনাপ্রধানের অনুরূপ কোনো ঘোষণা দেওয়ার বিষয়েও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রচারিত অডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধান করলে নজরুল সায়েদ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১৬ আগস্টে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে মূলত একটি অডিও শুনতে পাওয়া যায়। উক্ত অডিওটির কথার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে বলা কথাগুলোর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
তবে, ইউটিউবের উক্ত ভিডিওটিতে বলা হয়, “মেজর ডালিম বলছি। অদ্য সকাল হতে খন্দকার মোশতাক আহমেদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করিয়াছে। শেখ মুজিব ও তার খুনি, দুর্নীতিবাজ সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে। এখন থেকে সারাদেশে সামরিক আইন জারি করা হলো। [….]” অর্থাৎ, উক্ত অডিওটি থেকে সম্পাদনার মাধ্যমে কিছু কিছু শব্দ বাদ দেওয়া হয়েছে এবং সম্পাদিত অডিওটি আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। ইউটিউব ভিডিওটিতে উক্ত অডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, “১৫ আগস্ট ১৯৭৫ রেডিওতে মেজর ডালিমের ঘোষণা।” এছাড়াও ভিডিওটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর সেদিন সকালে রেডিওতে এই ঘোষণাটি দেওয়া হয়েছিল।
অর্থাৎ, প্রচারিত অডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং তা যে বেশ পুরোনো সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সেনানিবাসস্থ দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের শহীদ এম আর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে ঐতিহ্যবাহী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১৭তম ‘কর্নেল অব দি রেজিমেন্ট’ অভিষেক অনুষ্ঠানে দেশের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে সেনা সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এর পরবর্তী সময়ে বা সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক আইন জারি করা বা সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিষয়ে তার কোনো প্রকাশ্য ঘোষণা পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, পুরোনো এবং ভিন্ন একটি অডিও সম্পাদনা করে বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে এবং সামরিক আইন জারি করা হয়েছে জানিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন সেনাপ্রধান শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা এবং প্রচারিত অডিওটি সম্পাদিত।
সম্প্রতি, কোন আইনে পাসপোর্ট ছাড়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লী পৌঁছাতে পারলো?, ভারতীয় পার্লামেন্টে নরেন্দ্র মোদিকে এমন প্রশ্ন করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভিডিওতে শেখ হাসিনা পাসপোর্ট ছাড়া দিল্লী কীভাবে পৌঁছালো সংক্রান্ত প্রশ্ন ভারতীয় পার্লামেন্টে নরেন্দ্র মোদিকে করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। বরং দিল্লির আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহের ভিন্ন বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, তার এই বক্তব্যের সময় নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, নির্মলা সীতারমণ ও রাজনাথ সিং এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, ভিডিওতে সাংসদ সঞ্জয় সিংহ সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন। ট্রাম্প বা ওবামার সরকার নয় বরং ভারতে এক মহামানবের সরকার চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি সেই মহামানব নরেন্দ্র মোদীকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রশ্ন করতে চাই, সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব কাদের? অমিত শাহের দফতরের।”
এছাড়াও, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি প্রশ্ন তোলেন, কোনো বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ইউপির সীমান্ত পেরিয়ে কিভাবে দিল্লি চলে আসে।
তবে, ভিডিওতে শেখ হাসিনা সংক্রান্ত কোনো কথা তাকে বলতে দেখা যায়নি।
ভিডিওতে জেপি নাড্ডার ‘অনুপ্রবেশকারী’ সংক্রান্ত এক বক্তব্যের জবাবে দিল্লির আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি প্রশ্ন তোলেন, কোনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ইউপির সীমান্ত পেরিয়ে কিভাবে দিল্লি চলে আসে।
তবে, তার বক্তব্যে শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য আসেনি। তাছাড়া, আলোচিত ভিডিওতে থাকা রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কাউকেই দেখতে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, তাদেরকে আলোচিত ভিডিওটিতে সম্পাদনার মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।
তবে, ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারী অনুপ্রবেশকারীদের ইস্যুতে শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ০৮ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তবে, সাংসদ সঞ্জয় সিংহের যে ভিডিও দিয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে, সেই ভিডিওতে তিনি যখন সংসদে বক্তব্য রাখেন তখন শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়নি।
সুতরাং, ভারতীয় পার্লামেন্টে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর ।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার ১৫ সদস্যের সেক্রেটারিয়েট ঘোষণা করা হয়েছে। গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের ফেসবুক পেজে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি এস এম ফরহাদ স্বাক্ষরিত নবগঠিত সেক্রেটারিয়েট তালিকা প্রকাশ করা হয়। উক্ত তালিকায় তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হয় যে, “জহুরল হক হল ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা এখন ঢাবি শিবিরের পোস্টেড নেতা! আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রচার উপ সম্পাদক, জহুরল হক হল ছাত্রলীগ। এখন ঢাবি শাখা শিবিরের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে আসীন হয়েছে।”
উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছবি দাবিতে কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করা হয় এবং ঢাবি শিবির শাখা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল কমিটির পুরোনো একটি তালিকার ছবি সংযুক্ত করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং বর্তমানে শিবির নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ভিন্ন মানুষের, ঢাবি শিবিরের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন এক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছবি ব্যবহার করে তাকে বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ছবি দাবিতে কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করা হয় এবং ঢাবি শিবির শাখা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল কমিটির ২০২২ সালের একটি তালিকার ছবি সংযুক্ত করা হয়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে তার একাধিক ছবি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর তুলনা করলে পার্থক্য দেখা যায়। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে থাকা ছবির ব্যক্তিটি ভিন্ন।
Comparison: Rumor Scanner
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও একটি বিস্তারিত পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টটিতে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, প্রচারিত ছবিতে থাকা ব্যক্তি এবং তিনি ভিন্ন। তার বিস্তারিত পরিচয় : নাম: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডিপার্টমেন্ট: শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, সেশন: ২০১৯-২০, হল: সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, জেলা: লক্ষ্মীপুর।
এবং আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ব্যাক্তির পরিচয়: নাম: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ডিপার্টমেন্ট: ইসলামিক স্টাডিজ, সেশন: ২০১৭-১৮, হল: জহুরুল হক হল, জেলা: চট্টগ্রাম।
ঢাবি শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সেশনের তথ্যের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে গত ২২ জানুয়ারিতে “ঢাবি ছাত্রশিবিরের ১৫ সদস্যের সেক্রেটারিয়েট কমিটি ঘোষণা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং তিনি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক হিসেবে ঘোষিত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন দাবিতে ভিন্ন ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোতে হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ির নয় বরং এটি তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের হাররান অঞ্চলে অবস্থিত একটি বাড়ির ছবি। উক্ত বাড়িটির সাথে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার।
এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানে Adil Hafiza-এর টুইট ও Turktoyu ওয়েবসাইটে Harran বাড়ির ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায় ছবিগুলো তুরস্কের হাররান অঞ্চলের ঐতিহাসিক কিছু বাড়ির ছবি।
হাররানের বাড়িগুলো নিয়ে করা গবেষণা এবং তুরস্কের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হাররানের বাড়িগুলোর সাথে প্রায় ২৫০০ হাজার বছরেরও পুরোনো ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও তুরস্কের মূলধারার গণমাধ্যম Daily Sabah এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে যেসব গম্বুজবিশিষ্ট বাড়ি দেখা যায় সেগুলো সর্বোচ্চ ২৫০ বছর পুরোনো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এত অল্প সময়কাল পূর্বে তুরস্কে তৈরিকৃত এই বাড়িগুলোকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে আরবের মক্কা নগরীতে বসবাসকারী হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি দাবিতে প্রচারিত হলে তা স্পষ্টতই মিথ্যাচার। তাছাড়া, হযরত ফাতেমা (রাঃ) জীবিত থাকাকালীন অবস্থাতেও তুরস্কে তার কোনো বাড়ি ছিল কিনা সে ব্যাপারে ঐতিহাসিক প্রমাণও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, তুরস্কের একটি বাড়ির ছবিকে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর বাড়ির ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালেও একই দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এমনকি গত বছরও দাবিটি প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি, “ওশ স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, মস্কো, রাশিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. গুপ্তপ্রসাদ রেড্ডি (বি ভি) বলেছেন, ক্যান্সার কোনো মরণব্যাধি নয়, কিন্তু মানুষ এই রোগে মারা যায় শুধুমাত্র উদাসীনতার কারণে। তার মতে, মাত্র দুটি উপায় অনুসরণ করলেই উধাও হবে ক্যান্সার।” শীর্ষক শিরোনামে একজন ব্যক্তির ছবি সম্বলিত একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চিনি-মুক্ত খাদ্য, লেবু মিশ্রিত গরম পানি এবং নারিকেল তেল খেয়ে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ওশ স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি রাশিয়ায় নয়, কিরগিজস্তানে অবস্থিত এবং ডা. গুপ্তপ্রসাদ রেড্ডি (বি ভি) নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। পোস্টে ব্যবহৃত ব্যক্তির ছবিরও কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস মেলেনি, এবং ডা. গুপ্তপ্রসাদের নামে কোনো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিনি-মুক্ত খাদ্য, লেবু মিশ্রিত গরম পানি এবং নারকেল তেল খেয়ে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে জানিয়েছে, চিনি বাদ দিলে ক্যান্সার ঝুঁকি কমে এমন কোনো প্রমাণ নেই। ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ রিসার্চ ও Snopes এর তথ্যমতে, লেবু ক্যান্সার নিরাময়ে কার্যকর নয়। নারকেল তেল নিয়ে কিছু গবেষণায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানোর সম্ভাবনা পাওয়া গেলেও ক্যান্সার নিরাময়ের প্রমাণ মেলেনি।
সুতরাং, ডা. গুপ্তপ্রসাদের বরাতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত চিনি-মুক্ত খাদ্য, গরম লেবু পানি এবং নারকেল তেল খেয়ে ক্যান্সার নিরাময়ের দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই, এটি একটি গুজব।
পূর্বেও একই দাবিতে একই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গত বছরের ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ করেছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ গ্রহণ দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, পৃথক দুটি ভিডিও ও অডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একত্রিত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Shakil Ahmed নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির আংশিক মিল রয়েছে৷
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও ও আলোচিত ভিডিওটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিও দুটির বিষয়বস্তু ও পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে মিল রয়েছে৷ ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া ২০২৪ সালের ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাঁথিয়া উপজেলা শাখার বিএনপির অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের চিত্র৷ উক্ত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিবর্গ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা সম্বলিত সাইনবোর্ড ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতার সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে৷ অর্থাৎ, এই দুটি ভিডিও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাঁথিয়া উপজেলা শাখার বিএনপির অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের৷
অতঃপর, ভিডিওগুলোতে থাকা অডিও পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ২০২৪ সালের ভিডিওর অডিও থেকে আলোচিত ভিডিওটির অডিও ভিন্ন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটির অডিওতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Shuvo Mondal নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ০৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতেও হুবহু একই অডিওটি শোনা যায়। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত অডিওটি ভিন্ন কোনো এক উৎস থেকে নিয়ে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রতিস্থাপন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
উপরিউক্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ফুটেজটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ২০২৪ সালের একটি ভিডিও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অডিওটি ভিন্ন কোনো একটি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে
সুতরাং, সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ গ্রহণ করার দৃশ্য দাবিতে ২০২৪ সালের একটি সমাবেশের ভিডিওতে ভিন্ন একটি উৎসের অডিও দিয়ে প্রতিস্থাপন করে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত৷
সম্প্রতি, টেসলা এবং স্পেসএক্স-এর সিইও ইলন মাস্ক রোবট নাপিত দিয়ে চুল কাটাচ্ছেন দাবিতে দৈনিক জনকণ্ঠ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যায়, অত্যাধুনিক এক রোবট ইলন মাস্কের চুল কাটছে। যেটিকে প্রতিবেদনের শেষে গণমাধ্যমটি ‘প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে মাস্কের নতুন পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
ফেসবুকে প্রচারিত জনকণ্ঠ-এর ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোবট নাপিত দ্বারা ইলন মাস্কের চুল কাটার প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরিকৃত ভিডিওটিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সাধারণত ইলন মাস্ক প্রতিটি বিষয়েই তার ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্টে আপডেট দিয়ে থাকেন। তবে দাবিটির বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এমন কোনো ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে aismartzone ইউজারনেমের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর সাদৃশ্য রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, এই ক্লিপটি কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি বা সিজিআই। যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি উক্ত ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় নির্মিত একাধিক ভিডিও রয়েছে। এছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি নানা ধরনের ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে ইলন মাস্কের রোবট নাপিত দিয়ে চুল কাটানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সম্প্রতি রংপুরে লাঠিসোটা হাতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলের নয় বরং ইন্টারনেট থেকে কয়েকটি ভিন্ন ঘটনার পুরাতন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
বিষয়টি অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম DBC News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর প্রকাশিত ‘রংপুরে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল’’ শিরোনামে একটি ভিডিওখুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা সংবাদ উপস্থাপিকার সংবাদ পাঠের অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতির মিছিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তিমূলক স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) ঝাড়ু মিছিল করে রংপুরের আওয়ামী লীগ, মহানগর যু্বলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলো।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো ভিডিও।
আলোচিত ভিডিওর বিস্তারিত অংশে মিছিলের ফুটেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ০২ নভেম্বর Channel i এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘রংপুরে জাতীয় পার্টির লাঠি মিছিল ও সমাবেশ’’ শিরোনামে একটি ভিডিওপাওয়া যায়। যেখানে মিছিলের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
গত ২ নভেম্বর, ২০২৪ সালে রংপুরের সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে ভিপি নুরের গণ অধিকার পরিষদসহ ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে একটি লাঠি মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন ছাত্রের নোংরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানানো হয়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটির প্রেক্ষাপট আলোচিত দাবি থেকে ভিন্ন৷
সুতরাং, রংপুরে লাঠিসোটা হাতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার বিভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।