গত বছরের ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ করেছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ গ্রহণ দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, পৃথক দুটি ভিডিও ও অডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একত্রিত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Shakil Ahmed নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত পোস্টে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির আংশিক মিল রয়েছে৷
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও ও আলোচিত ভিডিওটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিও দুটির বিষয়বস্তু ও পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে মিল রয়েছে৷ ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া ২০২৪ সালের ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাঁথিয়া উপজেলা শাখার বিএনপির অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের চিত্র৷ উক্ত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিবর্গ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা সম্বলিত সাইনবোর্ড ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতার সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে৷ অর্থাৎ, এই দুটি ভিডিও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাঁথিয়া উপজেলা শাখার বিএনপির অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের৷
অতঃপর, ভিডিওগুলোতে থাকা অডিও পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ২০২৪ সালের ভিডিওর অডিও থেকে আলোচিত ভিডিওটির অডিও ভিন্ন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটির অডিওতে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Shuvo Mondal নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ০৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতেও হুবহু একই অডিওটি শোনা যায়। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত অডিওটি ভিন্ন কোনো এক উৎস থেকে নিয়ে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রতিস্থাপন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
উপরিউক্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ফুটেজটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ২০২৪ সালের একটি ভিডিও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অডিওটি ভিন্ন কোনো একটি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে
সুতরাং, সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথ গ্রহণ করার দৃশ্য দাবিতে ২০২৪ সালের একটি সমাবেশের ভিডিওতে ভিন্ন একটি উৎসের অডিও দিয়ে প্রতিস্থাপন করে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত৷
সম্প্রতি, টেসলা এবং স্পেসএক্স-এর সিইও ইলন মাস্ক রোবট নাপিত দিয়ে চুল কাটাচ্ছেন দাবিতে দৈনিক জনকণ্ঠ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যায়, অত্যাধুনিক এক রোবট ইলন মাস্কের চুল কাটছে। যেটিকে প্রতিবেদনের শেষে গণমাধ্যমটি ‘প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে মাস্কের নতুন পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
ফেসবুকে প্রচারিত জনকণ্ঠ-এর ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোবট নাপিত দ্বারা ইলন মাস্কের চুল কাটার প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরিকৃত ভিডিওটিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সাধারণত ইলন মাস্ক প্রতিটি বিষয়েই তার ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্টে আপডেট দিয়ে থাকেন। তবে দাবিটির বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এমন কোনো ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে aismartzone ইউজারনেমের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর সাদৃশ্য রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, এই ক্লিপটি কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি বা সিজিআই। যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি উক্ত ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় নির্মিত একাধিক ভিডিও রয়েছে। এছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি নানা ধরনের ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে ইলন মাস্কের রোবট নাপিত দিয়ে চুল কাটানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সম্প্রতি রংপুরে লাঠিসোটা হাতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলের নয় বরং ইন্টারনেট থেকে কয়েকটি ভিন্ন ঘটনার পুরাতন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
বিষয়টি অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম DBC News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর প্রকাশিত ‘রংপুরে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল’’ শিরোনামে একটি ভিডিওখুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা সংবাদ উপস্থাপিকার সংবাদ পাঠের অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতির মিছিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তিমূলক স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) ঝাড়ু মিছিল করে রংপুরের আওয়ামী লীগ, মহানগর যু্বলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলো।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, এটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পুরোনো ভিডিও।
আলোচিত ভিডিওর বিস্তারিত অংশে মিছিলের ফুটেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ০২ নভেম্বর Channel i এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ‘রংপুরে জাতীয় পার্টির লাঠি মিছিল ও সমাবেশ’’ শিরোনামে একটি ভিডিওপাওয়া যায়। যেখানে মিছিলের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
গত ২ নভেম্বর, ২০২৪ সালে রংপুরের সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে ভিপি নুরের গণ অধিকার পরিষদসহ ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে একটি লাঠি মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন ছাত্রের নোংরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানানো হয়।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটির প্রেক্ষাপট আলোচিত দাবি থেকে ভিন্ন৷
সুতরাং, রংপুরে লাঠিসোটা হাতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার বিভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিস্ফোরক এক ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসেই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এমন এক মন্তব্য করেছেন যা শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম ভাষণে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মতো একজন সফল প্রধানমন্ত্রী আর আসবে না। তার অসাধারণ নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো বলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে যে সাফল্য অর্জন করেছে তা অনন্য। তার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। এখানেই থেমে যাননি ট্রাম্প। তিনি আরে বলেন আমি অতি শীঘ্রই বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনবো এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাকে আবারও ক্ষমতায় বসানোর ব্যবস্থা করবো। [….]”
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো সম্মিলিতভাবে এক লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই ভিন্ন, পুরোনো, সম্পাদিত ও অপ্রাসঙ্গিক নানা ছবি ও ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে একটি ভিডিও তৈরি করে তা আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত তথ্যগুলোর দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করতে দেখা যায়নি৷ এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রচারিত পুরো ভিডিওটিতে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির লোগো দেখা গেলেও যমুনা টিভির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ বা ইউটিউব চ্যানেলে এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশের প্রমাণ মেলেনি।
এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে অন্য কোনো বিষয়েও শেখ হাসিনাকে ট্রাম্পের চিঠি দেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। বরং, শেখ হাসিনার তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানা যায়৷
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শেখ হাসিনার নানা ফুটেজ ও ছবি সংযুক্ত করতে দেখা যায়৷ প্রচারিত ভিডিওটির শুরুর দিকে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠি দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এসময় গণমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের লোগোসহ একটি ফুটেজও সংযুক্ত করা হয়৷ তবে, ফুটেজটিতে শেখ হাসিনাকে ট্রাম্পের চিঠি দেওয়ার বিষয়ে লেখার বদলে “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শেখ হাসিনার চিঠি | ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রীর রোগমুক্তি কামনা” লেখা দেখতে পাওয়া যায়৷
Comparison : Rumor Scanner
এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ০৪ অক্টোবরে “ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রীর রোগমুক্তি কামনা করে চিঠি দিয়েছেন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির শুরুর দিকের দৃশ্যের সাথে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত উক্ত দৃশ্যের হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়, তবে অডিওতে “ট্রাম্প’কে” এর জায়গায় “কে” বাদ দিয়ে “ট্রাম্প” করে প্রচার করা হয়েছে। সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেসময় ট্রাম্প ও তার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হলে রোগমুক্তি কামনা করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠি দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, প্রায় ৪ বছর পুরোনো ভিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক একটি দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম ভাষণে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শীর্ষক দাবিটির সময় ট্রাম্পের ভাষণ দেওয়ার একটি ফুটেজ প্রচার করা হয়৷ তবে, ফুটেজটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ আর্কাইভড’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ০১ ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও এর ৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড পরবর্তী সময়ের দৃশ্যের সাথে হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
তাছাড়া, একইদিনে ফক্স বিজনেস নামের একটি ফেসবুক পেজেও প্রচারিত একটি পোস্টে উক্ত দৃশ্যটি পাওয়া যায়৷ জানা যায়, দৃশ্যটি ওয়াশিংটন ডিসিতে ৯৫তম বার্ষিক জাতীয় ক্রিসমাস ট্রি লাইটিং এর দৃশ্যের।
এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দৃশ্যে দেখা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে শেখ হাসিনা ও ট্রাম্পের একটি ছবি ধরে আছেন। তবে, রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে উক্ত ছবিটির সত্যতার সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসা নিয়ে স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়ার ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি সংবাদের একটি দৃশ্যে ট্রাম্পকে একটি নথি সদৃশ বস্তু হাতে দেখা যায়৷
Comparison : Rumor Scanner
ছবি দুইটি তুলনা করলে নিশ্চিত হওয়া যায়, উক্ত স্থিরচিত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
উপরোল্লিখিত কোনো দৃশ্য বা ছবিতেই শেখ হাসিনা বা আলোচিত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি৷ এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটিতে আরো কয়েকটি শেখ হাসিনার সাথে ট্রাম্পের ছবি ও ফুটেজ সংযুক্ত করা হয়েছে তবে কোনোটিরই সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গত ২১ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএনের ইউটিউব চ্যানেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ভাষণ পাওয়া যায়। উক্ত ভাষণটি মনোযোগ দিয়ে শুনলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়ে কোনো কথা বলতে ট্রাম্পকে শোনা যায়নি৷ তিনি বরং যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধি, সীমান্ত ও করসহ নানাক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন সেসব বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা, চিঠি দেওয়া বা শেখ হাসিনার গুণ উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্পকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ভিডিওটির একটি অংশে শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়, যদিও শেখ হাসিনার বক্তব্যের শব্দ মিউট করে দেওয়া হয়৷ তবে, শেখ হাসিনার বক্তব্যের উক্ত দৃশ্যটির ব্যাকগ্রাউন্ডও সম্পাদিত। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ইতোমধ্যে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুতরাং, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
সম্প্রতি, শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূসের গান দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটিতে প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৬ শতকেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মনিকা ইউনূস আলোচিত গানটি করেননি, বরং ভিন্ন একটি অডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় মনিকা ইউনূসের ভিন্ন গানের ভিডিওতে সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে মনিকার গাওয়া গানের দাবিতে প্রচারিত অডিওর সাথে মনিকার ঠোঁট ও মুখভঙ্গির অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ১৩ জুন, ২০১৩ তারিখে ‘Skoll.org’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘Monica Yunus Performs at 2013 Skoll World Forum Awards Ceremony Honoring Her Father Muhammad Yunus‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ৭ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির ০১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে ড. ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূসকে গান গাইতে দেখা যায়। এছাড়াও, উক্ত ভিডিওতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। সেখানে মনিকার পোশাক, পারিপার্শ্বিক দৃশ্যসহ বাচনভঙ্গির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
Comparison : Rumor Scanner
অডিও যাচাই
পরবর্তীতে উক্ত গানের কিছু অংশ কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘CD PLUS Entertainment’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘Biday Den Nani Go | বিদায় দেন নানী গো | Mousumi | Ferdous | Jhuma Khandakar | Khairun Sundori’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি গানের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ভিডিওর গানটির সাথে উক্ত গানের ভিডিওটির ১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড অংশের ‘বিদায় দেন আব্বাগো’ অডিও অংশের মিল পাওয়া যায়।
Screenshot: YouTube
অর্থাৎ, মনিকা ইউনূস ‘বিদায় দেন আব্বাগো’’ শীর্ষক কোন গান গাননি।
সুতরাং, মনিকা ইউনূসের গান দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটির অডিওটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
সম্প্রতি, ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে গাছে ঝুলে থাকা এক তরুণের লাশের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, এই লাশটি একজন যুবলীগ কর্মীর এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত লাশটি কোনো যুবলীগ কর্মীর নয় এবং লাশ উদ্ধারের ঘটনাটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, ২০২৩ সালে ১২ নভেম্বর বিগত সরকারের আমলে শাফিন মিয়া নামের অনার্স পড়ুয়া এক তরুণের লাশের ভিডিও এটি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘মিঠাপুকুর, রংপুর আপডেট খবর’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর “মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী দামুয়া এলাকায় শাফিন নামে এক অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ম*রদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ….।” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির তরুণের পোশাক ও পারিপার্শ্বিক বিষয়বস্তুর মিল রয়েছে।
Video Comparison by Rumor Scanner
পোস্টটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, উক্ত লাশটি শাফিন মিয়া নামের এক তরুণের। তিনি সে সময়ে অনার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। তার বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়। সে সময় তাকে হত্যা করে পুকুরপাড়ের একটি আম গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়াও, Online A Rangpur.24 নামের অপর একটি ফেসবুক পেজেও সে বছরের একই দিনে ‘মিঠাপুকুড়ে শিক্ষার্থীসহ ২ জনের লাশ উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত ঘটনায় ওই তরুণের ভিন্ন এঙ্গেলের অপর একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকেও উক্ত তরুণের বিষয়ে একই তথ্য জানা যায়।
Comparison by Rumor Scanner
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর ‘মিঠাপুকুরে ছাত্রকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেবছর মিঠাপুকুরে সাফিন মিয়া নামে এক ছাত্রকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠে। উক্ত উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী বেকীপাড়া গ্রাম থেকে সে সময় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাফিন ওই গ্রামের সেকান্দার আলীর ছেলে।
পাশাপাশি সেসময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে গাছে ঝুলছিল রংপুর কারমাইকেল কলেজছাত্রের মরদেহ’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত তরুণ শাফিন মিয়া রংপুরের কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
অর্থাৎ, আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
সুতরাং, ২০২৩ সালে এক তরুণের লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে সাম্প্রতিক যুবলীগ কর্মীকে হত্যার ঘটনা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত বছরের ৫ জুন হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্র-জনতার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জুলাই মাসে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। মাত্র দুই মাসের মধ্যেই ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘটে। এই গণ-আন্দোলন পরবর্তীতে ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিতি পায়।
সম্প্রতি, ঢাবির বর্তমান প্রো-ভিসি ড. মামুন আহমেদ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে একটি ফোনালাপের অডিও রেকর্ড ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, এটি গত জুলাই আন্দোলনে দিকনির্দেশনার ফোনালাপ।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তারেক রহমানের সাথে ড. মামুন আহমেদ এর আলোচিত ফোনালাপটি ২০২৪ সালের নয়, বরং ২০১৮ সালের।
আলোচিত ফোনকলের বিষয়ে অনুসন্ধানে, জাগোনিউজ২৪-এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল “কোটাব্যবস্থা নিয়ে ঢাবি শিক্ষককে যা বললেন তারেক রহমান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন চলাকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোটাব্যবস্থা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেছিলেন। এই কথোপকথনের বিষয়টি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের কাছে স্বীকার করেছেন অধ্যাপক মামুন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল ২০১৮) সন্ধ্যার পর তারেক রহমানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।”
পাশাপাশি উক্ত প্রতিবেদনে তারেক রহমানের সঙ্গে অধ্যাপক মামুন আহমেদের সম্পূর্ণ ফোনালাপ তুলে ধরা হয়, যার সাথে আলোচিত ফোনালাপের হুবহু মিল দেখা যায়।
এছাড়া, ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল ‘Bangla Voice24’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই ফোনকলের অডিও রেকর্ড পাওয়া যায়। যার সাথেও আলোচিত ফোনালাপের মিল পাওয়া যায়।
একই দিন যমুনা টিভি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ফোনালাপের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মন্তব্য পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যদি সমমনা কোনো শিক্ষককে আন্দোলনে সমর্থন দিতে বলেন, তাতে অন্যায়ের কিছু নেই।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একই বিষয়ে বলেন, ‘একটি যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের একজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যকে তারেক রহমান ফোন দিতেই পারেন। এই ফোনালাপ স্বাভাবিক ঘটনা।’
অর্থাৎ, আলোচিত ফোনালাপটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম দফার সঙ্গে সম্পর্কিত।
সুতরাং, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন নিয়ে ড. মামুন আহমেদ ও তারেক রহমানের পুরোনো ফোনালাপ ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে একটি অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে যুবতী কনে তার বৃদ্ধ বরকে দেখে অচেতন হয়ে পড়ছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য কোনো ঘটনার নয় বরং, স্ক্রিপ্টেড বা অভিনীত ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি থেকে কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Wedding Studio’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই আপলোডকৃত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিরও মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির ১ মিনিট ৮ সেকেন্ড থেকে প্রায় ১ মিনিট ২২ সেকেন্ড দৃশ্যের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Screenshot: Facebook (Wedding Studio)
একই পেজ থেকে ২০২৪ সালের একই বৃদ্ধের আরও একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook (Wedding Studio)
উক্ত ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটি থেকে নিয়মিত এমন ভিডিও প্রচার করা হয়। এছাড়া, ফেসবুক পেজ ‘Wedding Studio’-এর “অ্যাবাউট” বিভাগে দেখা যায়, পেজটির লোকেশন হিসেবে সৌদি আরবের রিয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে। পেজটির ইন্ট্রোতে লেখা রয়েছে:
“হ্যালো বন্ধুরা, আমি দেলোয়ার। আমি সৌদি আরবে থাকি। আমরা কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ভিডিও আপলোড করি না, বরং স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ভিডিও তৈরি করি। আমরা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান পরিচালনা করি না। আপনার কোনো অভিযোগ থাকলে দয়া করে আমাদের জানান।”
Screenshot: Facebook (Wedding Studio)
পেজটির “ট্রান্সপারেন্সি” বিভাগ যাচাই করে দেখা গেছে, পেজটি বাংলাদেশ থেকে দুইজন ব্যক্তি পরিচালনা করেন। জানা যায়, ২০২২ সালের ২৮ জুলাই পেজটি প্রথমে ‘Wedding Studio’ নামে তৈরি করা হয়। এরপর ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘AN Media’। তবে, একই বছরের ১৮ এপ্রিল পেজটির নাম আবার পরিবর্তন করে পুরোনো নাম ‘Wedding Studio’ রাখা হয়।
Screenshot: Facebook (Wedding Studio)
অর্থাৎ, পেজটি পর্যবেক্ষণ করে এটা নিশ্চিত যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড।
সুতরাং, স্ক্রিপ্টেড ভিডিওকে সত্য দাবিতে বাংলাদেশের একটি অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে কনে তার বৃদ্ধ বরকে দেখার সাথে সাথেই অচেতন হয়ে পড়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাংলাদেশি নারী ও পুরুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে দাবিতে কয়েকটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে দাবি করা হয়, উক্ত প্রশিক্ষণে কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যুক্ত করা হয়নি।
এছাড়াও ভারতীয় গণমাধ্যম আজতক বাংলাতে একই ঘটনাকে জিহাদি ট্রেনিং দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশি নারী ও পুরুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, রাজধানীতে অবস্থিত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত ঢাকা মহানগরের নগর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) মৌলিক প্রশিক্ষণের ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ জানুয়ারি প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Image Comparison by Rumor Scanner
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো সাথে উক্ত প্রতিবেদনের বেশ কয়েকটি স্থানের ফুটেজের সাথে হুবহু মিল রয়েছে। যা থেকে ধারণা করা যায়, ছবিগুলো উক্ত প্রতিবেদন থেকেই স্ক্রিনশটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভিডিওটি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘টাউন ডিফেন্স পার্টি- টিডিপি’র মৌলিক প্রশিক্ষণের ভিডিও। প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিন উক্ত প্রশিক্ষণ শুরু হয়। উক্ত প্রশিক্ষণে ঢাকা মহানগরীর ২৫০ জন তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, এবারের প্রশিক্ষণে প্রথমবারের মত অস্ত্র চালানোর শিক্ষা দেওয়া হবে।
পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক আজকের পত্রিকা-এর ওয়েবসাইটে গত ২১ জানুয়ারি একই ঘটনায় আনসার সদর দপ্তরে টিডিপির মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Ajker Patrika
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে সারা দেশে উদ্যাপিত হচ্ছে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে ঢাকা মহানগরের নগর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মানব নিরাপত্তা, কমিউনিটি অ্যালার্ট মেকানিজম, স্বেচ্ছাসেবা এবং নগর অঞ্চলের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয়ে সমন্বিত ও বাস্তব ধারণা প্রদানের মাধ্যমে তরুণদের কীভাবে একই ছাতার নিচে আনা যায়, তা এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। যেখানে ঢাকা মহানগরের খিলগাঁও, মিরপুর, ভাটারা ও লালবাগ থানার মোট ২৫৬ জন নারী ও পুরুষকে মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Bangladesh Ansar and VDP এর ফেসবুক পেজে গত ১৯ জানুয়ারি প্রচারিত উক্ত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। য়েখানে সেদিনের প্রশিক্ষণ এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকটি ছবিও দেখতে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
পাশাপাশি উক্ত পেজটি পর্যালোচনার মাধ্যমে গত ২৪ জানুয়ারি প্রচারিত একটি পোস্টও খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
ভারতীয় গণমাধ্যম আজতক বাংলায় উক্ত প্রশিক্ষণের ছবি প্রচার করে এটিকে বাংলাদেশে ‘জিহাদি ট্রেনিং’ প্রদানের চিত্র দাবি করার প্রেক্ষিতে পোস্টটি করা হয়। পোস্টটিতে জানানো হয়, দেশের তারুণ্যের শক্তিকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করতে বাহিনীর প্রতিষ্ঠালগ্ন হতেই গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও শহর প্রতিরক্ষা দল (টিডিপি) এর মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি. তারিখে সারাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় ১০ (দশ) দিন মেয়াদী এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। যেটিকে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘জিহাদি প্রশিক্ষণ’ এবং ‘উগ্র-চরমপন্থীদের প্রশিক্ষণ’ দাবি করার বিষয়টির প্রতিবাদও জানানো হয় পোস্টটির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) এবং ১৯৮০ সালে শহর প্রতিরক্ষা দল (টিডিপি) গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এ দুটি সংগঠন আনসার বাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়ে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি সমন্বিত শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। সদস্যদের দক্ষতা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
ওপেন সোর্স অনুসন্ধানেও ফেসবুকে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে টিডিপি প্রশিক্ষণের দুটি পোস্ট পাওয়া গেছে। পোস্টগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
Screenshot Collage by Rumor Scanner
এছাড়াও, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কোনো প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, এই প্রশিক্ষণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ রয়েছে বলে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাংলাদেশি নারী ও পুরুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সম্প্রতি, ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার একটি হোস্টেল থেকে ইডেন মহিলা কলেজের পুষ্পিতা বিশ্বাস নামের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই মৃত্যুর সংবাদে উক্ত নারীর ছবি দাবিতে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যম ও কতিপয় গণমাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত এই ছবিটি পুষ্পিতা বিশ্বাসের নয় বরং, গত বছরের নভেম্বরে আত্মহত্যা করা বর্ষা আক্তার বিথী নামের ইডেন কলেজের আরেক ছাত্রীর ছবিকে পুষ্পিতা বিশ্বাসের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে মূল ধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ঢাকা ট্রিবিউন এর ওয়েবসাইটে প্রাকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারী দিবাগত রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার একটি হোস্টেল থেকে পুষ্পিতা বিশ্বাস (২১) নামে ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
কিন্তু প্রথম আলো ও ঢাকা ট্রিবিউনের সংবাদে উক্ত শিক্ষার্থীর ছবি ব্যবহার করা হয়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে, জাতীয় দৈনিক ‘কালবেলা’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরার একটি বাসা থেকে বর্ষা আক্তার বিথী (২৪) নামে এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
Comparison: Rumor Scanner
এই সংবাদে প্রচারিত ছবির সাথে পুষ্পিতা বিশ্বাসের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ছবিটি বর্ষা আক্তার বিথীর।
তাছাড়া, আরেক জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় ছবিটি বর্ষা আক্তার বিথীর।
সুতরাং, সম্প্রতি পুষ্পিতা বিশ্বাস নামে ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের সংবাদে বর্ষা আক্তার বিথী নামে একই কলেজের আরেক ছাত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।