আনসারের টিডিপি প্রশিক্ষণকে ভারতবিরোধী সামরিক প্রশিক্ষণ দাবিতে অপপ্রচার

সম্প্রতি, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাংলাদেশি নারী ও পুরুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে দাবিতে কয়েকটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে দাবি করা হয়, উক্ত প্রশিক্ষণে কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যুক্ত করা হয়নি।

এক্স-এ প্রচারিত এমন ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও ভারতীয় গণমাধ্যম আজতক বাংলাতে একই ঘটনাকে জিহাদি ট্রেনিং দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশি নারী ও পুরুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, রাজধানীতে অবস্থিত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত ঢাকা মহানগরের নগর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) মৌলিক প্রশিক্ষণের ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশন’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ জানুয়ারি প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো সাথে উক্ত প্রতিবেদনের বেশ কয়েকটি স্থানের ফুটেজের সাথে হুবহু মিল রয়েছে। যা থেকে ধারণা করা যায়, ছবিগুলো উক্ত প্রতিবেদন থেকেই স্ক্রিনশটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ভিডিওটি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘টাউন ডিফেন্স পার্টি- টিডিপি’র মৌলিক প্রশিক্ষণের ভিডিও। প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিন ‍উক্ত প্রশিক্ষণ শুরু হয়। উক্ত প্রশিক্ষণে ঢাকা মহানগরীর ২৫০ জন তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, এবারের প্রশিক্ষণে প্রথমবারের মত অস্ত্র চালানোর শিক্ষা দেওয়া হবে।

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক আজকের পত্রিকা-এর ওয়েবসাইটে গত ২১ জানুয়ারি একই ঘটনায় আনসার সদর দপ্তরে টিডিপির মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Ajker Patrika 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে সারা দেশে উদ্‌যাপিত হচ্ছে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে ঢাকা মহানগরের নগর প্রতিরক্ষা দলের (টিডিপি) মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মানব নিরাপত্তা, কমিউনিটি অ্যালার্ট মেকানিজম, স্বেচ্ছাসেবা এবং নগর অঞ্চলের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয়ে সমন্বিত ও বাস্তব ধারণা প্রদানের মাধ্যমে তরুণদের কীভাবে একই ছাতার নিচে আনা যায়, তা এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। যেখানে ঢাকা মহানগরের খিলগাঁও, মিরপুর, ভাটারা ও লালবাগ থানার মোট ২৫৬ জন নারী ও পুরুষকে মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Bangladesh Ansar and VDP এর ফেসবুক পেজে গত ১৯ জানুয়ারি প্রচারিত উক্ত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনের একটি পোস্ট ‍খুঁজে পাওয়া যায়। য়েখানে সেদিনের প্রশিক্ষণ এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকটি ছবিও দেখতে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

পাশাপাশি উক্ত পেজটি পর্যালোচনার মাধ্যমে গত ২৪ জানুয়ারি প্রচারিত একটি পোস্টও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook

ভারতীয় গণমাধ্যম আজতক বাংলায় উক্ত প্রশিক্ষণের ছবি প্রচার করে এটিকে বাংলাদেশে ‘জিহাদি ট্রেনিং’ প্রদানের চিত্র দাবি করার প্রেক্ষিতে পোস্টটি করা হয়। পোস্টটিতে জানানো হয়, দেশের তারুণ্যের শক্তিকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করতে বাহিনীর প্রতিষ্ঠালগ্ন হতেই গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও শহর প্রতিরক্ষা দল (টিডিপি) এর মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি. তারিখে সারাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় ১০ (দশ) দিন মেয়াদী এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। যেটিকে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘জিহাদি প্রশিক্ষণ’ এবং ‘উগ্র-চরমপন্থীদের প্রশিক্ষণ’ দাবি করার বিষয়টির প্রতিবাদও জানানো হয় পোস্টটির মাধ্যমে।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) এবং ১৯৮০ সালে শহর প্রতিরক্ষা দল (টিডিপি) গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এ দুটি সংগঠন আনসার বাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়ে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি সমন্বিত শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। সদস্যদের দক্ষতা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।

ওপেন সোর্স অনুসন্ধানেও ফেসবুকে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে টিডিপি প্রশিক্ষণের দুটি পোস্ট পাওয়া গেছে। পোস্টগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।  

Screenshot Collage by Rumor Scanner 

এছাড়াও, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কোনো প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, এই প্রশিক্ষণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ রয়েছে বলে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাংলাদেশি নারী ও পুরুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img