সম্প্রতি, কেমব্রিজ ডিকশনারির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের একটি পোস্টের ভিত্তিতে কেমব্রিজ ডিকশনারি থেকে ইংরেজি বর্ণমালার ১৭তম অক্ষর কিউ (Q বা q) অক্ষরটি সরিয়ে ফেলা হবে দাবিতে দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে৷
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কেমব্রিজ ডিকশনারি থেকে কিউ (Q বা q) অক্ষরটি সরিয়ে ফেলা হবে দাবিটি সঠিক নয় বরং, গত ০১ এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল’ উদযাপনের অংশ হিসেবে কেমব্রিজ ডিকশনারির ফেসবুক পেজে এই সংক্রান্ত পোস্ট দেওয়া হয় এবং কমেন্টে এটি এপ্রিল ফুল বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি সত্য দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে Cambridge Dictionary এর ফেসবুক পেজে গত ০১ এপ্রিল প্রকাশিত আলোচিত পোস্টটির কমেন্ট বক্স পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত পোস্টে মন্তব্যকারীদের পেজের পক্ষ থেকে রিপ্লাইয়ে ‘hi! Follow this link!’ বাক্যযুক্ত একটি লিংক দেওয়া হচ্ছে। উক্ত লিংকে ক্লিক করা হলে ‘April Fool’s Day’ লিখিত একটি পাতায় নিয়ে যায়।
Collage: Rumor Scanner
তাছাড়া, একই পোস্টের বেশ কিছু কমেন্টে বিষয়টি এপ্রিল ফুল জানিয়ে মন্তব্য করা হয় পেজের এডমিনের পক্ষ থেকে।
সুতরাং, ‘এপ্রিল ফুল’ উপলক্ষে কেমব্রিজ ডিকশনারির ফেসবুক পেজ থেকে মজার ছলে করা পোস্টকে সত্য দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে জামাতের সম্মেলনে বিএনপির হামলা।” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে জামাতের সম্মেলনে বিএনপির হামলা।” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে জনকণ্ঠ কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি এবং সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে এমন কোনো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই জনকণ্ঠের ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে জনকণ্ঠের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০২ এপ্রিল ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
এই সূত্রে অনুসন্ধান করে জনকণ্ঠের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এসংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে গত ০২ এপ্রিল প্রচারিত একটি পোস্টে বলা হয় আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
Screenshot: Janakantha Facebook Page
উক্ত পোস্টের মন্তব্যের ঘরে থাকা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জনকণ্ঠের নাম ব্যবহার করে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে সংঘর্ষের ঘটনার কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে জামাতের সম্মেলনে বিএনপির হামলা।” শীর্ষক তথ্যে বা শিরোনামে জনকণ্ঠের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি ভুয়া।
পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার প্রেক্ষিতে গত ৩১ মার্চ, সোমবার বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ঈদের দিনে মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি বাংলাদেশে ঈদের দিনে মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষের দৃশ্য নয়, বরং ভারতের মুম্বাইয়ের ভিন্ডি বাজার এলাকায় সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিও।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Treeni’ নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) প্রোফাইলে গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি পোস্টে একই দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্ট থেকে জানা যায়, এটি মুম্বাইয়ের ভেন্ডি বাজার এলাকায় সুন্নি ও বোহরা (শিয়া) মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিও।
এই বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভির ওয়েবসাইটে গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের ভিন্ডি বাজার এলাকায় সুন্নি ও বোহরা (শিয়া) মুসলমানদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, নামাজ আদায়ের সময় যাতায়াতের পথ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, যা পরবর্তীতে মারামারিতে রূপ নেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় উভয় সম্প্রদায়েরই মসজিদ রয়েছে এবং সন্ধ্যার সময় রাস্তায় ব্যাপক ভিড় জমে। এ কারণে নামাজে যাতায়াতকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর মুম্বাইয়ের জেজে মার্গ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। কীভাবে এবং কেন এই ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Comparison: Rumor Scanner.
ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদনের (১,২) সঙ্গেও আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যগত মিল দেখা যায়।
সুতরাং, ভারতের সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের মধ্যে হাতাহাতির একটি ভিডিওকে বাংলাদেশে ঈদের দিনে মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সায়মা ওয়াজেদ গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইন সাইট ব্যবহার করে প্রকাশিত ভুয়া এই সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টে BCC NEWS নামের একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে https://bhdhdjjddh.blogspot.com নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভুঁইফোঁড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। সাইটে পুতুলের গ্রেফতারের কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে গত ০৪ এপ্রিল।
Screenshot: BCC News
কথিত এই সংবাদে শিরোনাম এবং পুতুলের ছবি ব্যতিত বিস্তারিত আর কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চ করে মূল ধারার গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে পুতুলের গ্রেফতার হওয়া সংক্রান্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, পুতুলকে নিয়মিতই নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে সরব থাকতে দেখা যাচ্ছে। অ্যাকাউন্টে তিনি নিয়মিত তার কাজের খবর দিচ্ছেন এবং শেয়ার করছেন।
সুতরাং, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত ঈদের আগে বাড়ি যাওয়ার সময় ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভৈরবে কোনো ট্রেন দুর্ঘটনাও ঘটেনি বরং, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার সময়কার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে ‘সৈকত খান’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর প্রচারিত একটি লাইভ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত লাইভে থাকা দৃশ্য এবং বর্ণনার সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Video Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন এবং বর্ণনা শুনে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর ভৈরবে আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস এবং একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত সংঘর্ষের ঘটনার দৃশ্য এটি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর বিকেলে আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন ও একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর ভৈরবে গঠিত জরুরি কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সালেহ (ভৈরব এসি ল্যান্ড অফিসের কর্মকর্তা) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দুর্ঘটনায় ২ জন নারী ও ১৫ জন পুরুষ নিহত হয়েছেন।
সেসময় বিবিসি বাংলা, সমকালসহ দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমগুলো একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
অর্থাৎ, ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার দৃশ্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সাম্প্রতিক সময়ে ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার কোনো তথ্য গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “চুমু খাওয়া দোষের কিছু না চুমু খেলে মন ভালো থাকে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।” শীর্ষক মন্তব্যটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের দাবিতে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “চুমু খাওয়া দোষের কিছু না চুমু খেলে মন ভালো থাকে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।” শীর্ষক কোনো মন্তব্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান করেননি এবং কালের কণ্ঠও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি বরং, ভিন্ন প্রেক্ষিতে কালের কণ্ঠের প্রচারিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে কালের কণ্ঠর লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০১ এপ্রিল ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
এই সূত্রে অনুসন্ধান করে কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলে এসংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে গত ০১ এপ্রিল “যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল সাড়ে ১২ বছর। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও দেয়নি, সাক্ষ্যও দেয়নি।” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ব্যতিত বাকি সব উপাদানের মিল রয়েছে।
Photocard Comparison By Rumor Scanner
ফটোকার্ডটিতে থাকা শিরোনামটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
কালের কণ্ঠের মূল ফটোকার্ড সম্বলিত এ সংক্রান্ত পোস্টের কমেন্টে থাকা সংবাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০১ এপ্রিল মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘জন্মস্থানের একটা মায়া-ভালোবাসা আছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আপনাদের সামনে ২৪ বছর পর কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কুলাউড়ার মানুষ যেভাবে চেনে অন্য কেউ সেভাবে চেনে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কি যুদ্ধাপরাধী? না; অথচ আমার ওপর যুদ্ধাপরাধের মামলা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল সাড়ে ১২ বছর। সাড়ে ১২ বছরের ছেলে যুদ্ধের সময়ে মানুষ খুন করতে পারে—এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা? তা-ও চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও দেয়নি, সাক্ষ্যও দেয়নি। হিন্দু ভাইয়েরাও তাতে রাজি হয়নি। আমি সেই সময় জামায়াতে ইসলামীও করতাম না। আমি অন্য একটা সংগঠন করতাম। যেটা বলতে এখন লজ্জা হয়।’
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “চুমু খাওয়া দোষের কিছু না চুমু খেলে মন ভালো থাকে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।” শীর্ষক শিরোনামে কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
ঈদের আগে বকেয়া বেতন, বোনাস ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে একজন নিরাপত্তাকর্মী এক নারীকে মারধর করতে দেখা যায়। ভিডিওটি পোশাক শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের দৃশ্য বলে দাবি করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সম্প্রতি বেতন ও বোনাসের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের মার্চ মাসে বাগেরহাটের মংলা ইপিজেডে অবস্থিত ভারতীয় মালিকানাধীন ‘ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরি’র শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে হওয়া আন্দোলনের দৃশ্য।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Md Jahedul Sharder’ নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ঘটনার দীর্ঘ সংস্করণের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশন অনুযায়ী, ভিডিওটি মোংলা ইপিজেডে অবস্থিত ভিআইপি গার্মেন্টসের শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় ধারণ করা।
Comparison: Rumor Scanner.
উক্ত ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলানিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডে ভারতীয় মালিকানাধীন ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরিতে প্রায় ১,৮০০ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এতে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ার ঘটনা ঘটে এবং অন্তত ৩০ জন আহত হন। শ্রমিকদের অভিযোগ, কোনো নোটিশ ছাড়াই ছাঁটাই করে বেতন-বোনাস না দিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, নিয়ম অনুযায়ী সব পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে।
এছাড়া, বাংলানিউজ২৪-এর প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গেও ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যের মিল দেখা যায়। এতে নিশ্চিত হওয়া যায়, ভিডিওটি মোংলা ইপিজেডে ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরির শ্রমিক আন্দোলনের সময় ধারণ করা।
সুতরাং, এক বছর পুরোনো ভিডিওকে সম্প্রতি ঈদের আগে হওয়া পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে নারী শ্রমিককে মারধরের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস নাউ এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন বলে মন্তব্য করেছেন।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নরেন্দ্র মোদী রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন দাবিতে টাইমস নাউ কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রচার করেনি বরং গণমাধ্যমটির লোগো ব্যবহার করে ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস নাউ এর লোগোর সূত্রে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ ও এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে এমন কোনো ফটোকার্ডের অস্তিত্ব মেলেনি। গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত দাবিতে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে দেশটির মূল ধারার গণমাধ্যম এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী (বা তার দল বিজেপিও) তার রাজনীতি থেকে অবসরের তারিখ জানিয়ে প্রকাশ্যে এমন কোনো মন্তব্যও করার তথ্য মেলেনি।
ভারতীয় একাধিক ফ্যাক্টচেকারও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন, মোদী প্রকাশ্যে এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
দাবিটির প্রেক্ষাপট নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ৭৫ বছর বয়সে পা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির রাজনীতির একটি রীতি হচ্ছে, দলটির রাজনীতিবিদরা কারো বয়স ৭৫ হলে অবসর নিতে হয়। এরই প্রেক্ষিতে ফটোকার্ডে মোদীর জন্মদিনের আগের দিনের তারিখ উল্লেখ করে ভুয়া দাবিটি প্রচার হচ্ছে।
তবে এই সংক্রান্ত আলোচনার প্রেক্ষাপট হিসেবে আরেকটি ঘটনা সামনে এসেছে। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী নাগপুরে ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সদরদপ্তরে গিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সাথে বৈঠক করেন। এরপরই বিরোধী জোটের শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত দাবি করেন, সঙ্ঘ চায় মোদী এবার অবসর নিন। জনাব রাউত মুম্বাইতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ”সেপ্টেম্বরে অবসরের আবেদন লেখার জন্য সম্ভবত তিনি আরএসএস সদরদপ্তরে গেছিলেন। আমি যা জানি, গত ১০-১১ বছরে মোদীজি কখনো আরএসএস সদরদপ্তরে যাননি। মোদীজি এটাই মোহন ভাগবতকে বলার জন্য গেছিলেন, টা টা, বাই বাই। আমি যাচ্ছি।’’
এরপরই এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সুতরাং, নরেন্দ্র মোদী ১৬ সেপ্টেম্বর রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস নাউ এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে গোলাগুলির কোনো ঘটনার নয় বরং, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা আন্দোলনের সময়কার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই প্রকাশিত একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
Comparison: Rumor Scanner
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘এখনো পর্যন্ত হাতে পাওয়া, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ ছাত্র-জনতার দিকে গুলি বর্ষণের এটা সবচাইতে স্পষ্ট ফুটেজ। এই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর পদাতিক সেনারা বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতার প্রতি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গুলি ছুঁড়েছেন। এখানে সেনাবাহিনীর মেজর পদবীর একজন কর্মকর্তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয় ২০২৪ সালের ০৮ আগস্ট। অর্থাৎ, এই ভিডিওটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ের নয়।
সুতরাং, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা আন্দোলনের সময়কার ভিডিওকে সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে গেলাগুলির দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি ‘প্রফেসর ইউনুচকে ২ মাসের সময় দিলেন মির্জা ফখরুলের বড় ছেলে মির্জা জাহিদ ফখরুল’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে থ্রেড-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি এই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সন্তান নন বরং, জায়েদ খান নামক ব্যক্তিকে মির্জা ফখরুলের বড় ছেলে মির্জা জাহিদ ফখরুল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে মাইক্রোফোনে ‘প্রতিদিন খবর’ লিখিত লোগো দেখতে পাওয়া যায়।
উক্ত তথ্যের সূত্রে ‘প্রতিদিন খবর’ নামক অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পেজে গত ১৬ মার্চ ‘ড. ইউনূসকে—উদ্দেশ্য করে—-যা বললেন—–জায়েদ খান’ ক্যাপশনে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।
Comparison: Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটির ক্যাপশনে ব্যক্তির নাম ‘জায়েদ খান বলা হলেও ভিডিওতে বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি নিজের নাম ‘জাহিদ’ বলে উল্লেখ করেছে। তবে, ভিডিওর ক্যাপশনে বা বক্তব্যে কোথাও উক্ত ব্যক্তি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সন্তান বিষয়ক তথ্য পাওয়া যায়নি।
আলোচিত পোস্টটির বিষয়বস্তু উল্লেখ করে Momitur Rahman Pial নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০১ এপ্রিল প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচিত দাবিটি মিথ্যা উল্লেখ করে বলা হয়, মির্জা ফখরুলের কোনো ছেলে সন্তান নেই।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যক্তিগত জীবনে মির্জা ফখরুল বিবাহিত এবং দুই মেয়ের বাবা। বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে সেখানেই শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। বর্তমানে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পরবর্তীতে, bdnews24 এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর ‘অস্ট্রেলিয়ার পথে মির্জা ফখরুল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মির্জা ফখরুল ও রাহাত আরা দম্পতির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে শামারুহ মির্জা ২০০৬ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন তার স্বামী ও সন্তান নিয়ে। আর ছোট মেয়ে সাফারুহ মির্জা ঢাকায় একটি ইংরেজি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
অর্থাৎ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দুইজন কন্যা সন্তান রয়েছে। তার কোনো পুত্র সন্তান নেই।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে ভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্যকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছেলের বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।