Home Blog Page 104

মার্চে ২৯৮ ভুল তথ্য শনাক্ত

0

চলতি বছরের মার্চে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয় যথাক্রমে ২৭১ ও ২৬৮টি ভুল তথ্য।

রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে গত মার্চে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (১০৫) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৩৫ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় বিষয়ে ১০৩টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১২টি, ধর্মীয় বিষয়ে ৩৬টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে তিনটি, শিক্ষা বিষয়ে তিনটি, প্রতারণা বিষয়ে ১২টি, খেলাধুলা বিষয়ে ১৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে মার্চে।

এসব ঘটনায় ভিডিও কেন্দ্রিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি, ১৪৩টি। এছাড়া তথ্য কেন্দ্রিক ভুল ছিল ১১০টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৪৫টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৬৮টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৯৭টি এবং বিকৃত হিসেবে ৩১টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

প্লাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবু্কে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যার হিসেবে যা ২৭৩টি। এছাড়া এক্সে ৬২টি, টিকটকে সাতটি, ইউটিউবে ৪৪টি, ইন্সটাগ্রামে ২৬টি, থ্রেডসে অন্তত পাঁচটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।  

গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল মার্চেও এই ধারাবাহিকতা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে চারটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া তিনটি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল কিছু মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। মার্চে এমন ২৬টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে অর্ধেক ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেল মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুলতথ্যগুলোর ধরণ বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার দুইটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে৷ সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এসব অপতথ্যের সবগুলোই সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। 

মার্চে ২২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও। এর মধ্যে মাত্র ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য তার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। অন্যদিকে ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল তথ্যগুলো তার পক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে।

সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে দুইটি (সবগুলোই বিপক্ষে), সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে), ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে চারটি (সবগুলোই বিপক্ষে), ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে জড়িয়ে দুইটি (সবগুলোই বিপক্ষে), মো. তৌহিদ হোসেনকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। 

রিউমর স্ক্যানার গেল মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে (৭) জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ভুল তথ্যের ৮৬ শতাংশই দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার সুযোগ রেখেছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানকে জড়িয়ে এই সময়ে দুইটি অপতথ্য (সবগুলোই বিপক্ষে) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই সময়ে ছয়টি (সবগুলোই বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) জড়িয়ে গত মাসে চারটি (৭৫ শতাংশই বিপক্ষে) ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এই সময়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে একটি (পক্ষে) এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে দুইটি (সবগুলোই পক্ষে) ভুল তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে জড়িয়ে এই সময়ে চারটি (সবগুলোই বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। 

এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে ছয়টি অপতথ্য (৮৩ শতাংশই পক্ষে) শনাক্ত করা হয়েছে। মার্চে দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া একটি ভুল তথ্য (পক্ষে) শনাক্ত করা হয়েছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এই সময়ে ৩৩টি ভুল তথ্য (৮৫ শতাংশই পক্ষে) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। দলটিকে জড়িয়ে গত মাসে দুইটি অপতথ্য (সবগুলোই বিপক্ষে) শনাক্ত করা হয়েছে। এই দলের শীর্ষ পদ অর্থাৎ আহ্বায়ক পদে রয়েছেন নাহিদ ইসলাম। তাকে জড়িয়ে গত মাসে চারটি (সবগুলোই বিপক্ষে) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে গত মাসে। এছাড়া দলটির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে ছয়টি (সবগুলোই বিপক্ষে), সারজিস আলমকে জড়িয়ে তিনটি (সবগুলোই বিপক্ষে), তাসনিম জারাকে জড়িয়ে চারটি (সবগুলোই বিপক্ষে), হুমায়রা নুরকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে), আব্দুল হান্নান মাসউদকে জড়িয়ে একটি (বিপক্ষে) অপতথ্য প্রচার দেখা গেছে।  

ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গেল মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে সাতটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ২৩টি ভুল তথ্য প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। গত বছরের আগস্ট পরবর্তী সময়ে একক মাস হিসেবে এটিই সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যের সংখ্যা। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো তিনটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর বাইরে র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে জড়িয়ে একটি করে ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল মার্চে।  

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ফেব্রুয়ারিতে তিনটি অপতথ্যের শিকার হয়েছে। এই সময়ে সংগঠনটির মুখপাত্র  উমামা ফাতেমাকে জড়িয়ে একটি অপতথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

গেল মাসের ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, বিভিন্ন অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে গত মাসে ১৭টি মৃত্যুর গুজব প্রচার করা হয়েছে। মার্চে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে নয়টি। একই সময়ে ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে পাঁচটি। 

মার্চে ধর্ষণ সম্পর্কিত খবর এবং এ সংক্রান্ত তথ্য, ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে প্রচার বেড়ে যাওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মার্চ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনেও দাবি করা হচ্ছে, মার্চ মাসে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এর ফলে জনমনে শঙ্কার অবকাশের সুযোগ নিয়ে অপতথ্যের প্রচার ছিল গত মাসে। এরই প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার গেল মাসে ধর্ষণ বিষয়ক অন্তত ২৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে একক ঘটনা হিসেবে মাগুরায় আট বছরের এক শিশুর ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। গেল মাসে রমজান এবং ঈদ পালন করেছে এ দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এই দুইটি বিষয়কে ঘিরে যথাক্রমে ১৬টি ও ছয়টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। 

গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৮টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ৩৯টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৪৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারে মূল ধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির নাম সবচেয়ে বেশি (১০) ব্যবহার করা হয়েছে। গণমাধ্যমটির পর জনকণ্ঠ (৫) ও আমার দেশ (৪) এর নাম বেশি ব্যবহার করা হয়েছে।  

বার্তা প্রেরক 

তানভীর মাহতাব আবীর

জ্যেষ্ঠ ফ্যাক্টচেকার

রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ

[email protected]

ফরিদপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিওকে সাম্প্রদায়িক রং মিশিয়ে প্রচার

সম্প্রতি, ফরিদপুরে হিন্দুদের ওপর হামলা দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

‘Bangladesh Hindu Genocide’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোডকৃত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার কৃষি ব্যাংকের সামনে দুর্বৃত্তদের দ্বারা হিন্দুদের ওপর হামলা। বাংলাদেশী মিডিয়া এবং প্রশাসন প্রতিদিনের এমন অসংখ্য ঘটনায় নীরব। পোস্টটি দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।

অন্য আরেকটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে একই ভিডিও প্রচার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার কৃষি ব্যাংকের সামনে মুসলিম সন্ত্রাসীদের দ্বারা হিন্দুদের উপর হামলা। পোস্টটি দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পৌর বাজারের পুকুর পাড় এলাকার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পল্লব সরকার ও বিজয় সরকার নামে দুই যুবক ও ভ্যানচালকের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। উক্ত ঘটনার সাথে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ইস্যুর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘sumon khan 007’ নামক ফেসবুক পেজে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

গত ৩ মার্চ আপলোড করা ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘আজ দুপুরে বোয়ালমারী কৃষি ব্যাংক এর সামনে।’

পোস্টটির এডিট হিস্টোরি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি আপলোডের পর একবার সম্পাদনা করে ক্যাপশনটি দেওয়া হয়েছে।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ইনডিপেনডেন্ট টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ৪ মার্চ প্রচারিত ‘ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দুইপক্ষের মধ্যে এ সংঘ’র্ষ হয় | Faridpur | Independent TV’ শীর্ষক ক্যাপশনে এই বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।


প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। ৩ মার্চ উপজেলার পৌর বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, পৌর বাজারের পুকুর পাড় এলাকার পল্লব সরকার ও বিজয় সরকার নামে দুই যুবক পৌরসভায় ভোটার হতে যায়। দুপুরে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে রড বোঝাই ভ্যানের সাথে পল্লবের ধাক্কা লাগলে এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে ভ্যানচালকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিকেল ওই ভ্যানচালক ও দুই যুবক লোকজন নিয়ে এসে সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৫ জন আহত হয়। আহতদের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এই বিষয়ে ইনকিলাব ও বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনগুলোর কোনোটিতেই উক্ত ঘটনার সাথে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ইস্যুর সংযোগ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনাকে ধর্মীয় রং মিশিয়ে হিন্দুদের ওপর হামলা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

হাশিম আমলা টেস্টের ৩১১ রানের ইনিংসটি রোজা রেখে খেলেছিলেন শীর্ষক দাবিটি ভুয়া

0

সম্প্রতি, ‘রমজানে রোজা রেখে যদি ক্লান্ত বোধ করো, তাহলে মনে রেখো, রোজা রেখে হাশিম আমলা 2012 সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে 311* রান করেছিল।’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দক্ষিন আফ্রিকার তারকা ক্রিকোর হাশিম আমলা ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে ৩১১ রান রোজা রেখে করেননি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Cricketangon’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ০৪ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটি থেকে জানা যায়, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১১ রান করা ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে হাশিম আমলা বলেছিলেন, তিনি মুসাফির হওয়ার কারণে রোজা রাখছেন না।

একই বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘The Guardian’ এর ওয়েবসাইটে ২০১২ সালের ২২ জুলাই ‘Hashim Amla is ‘overwhelmed’ by record-breaking knock for South Africa’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও আলোচিত ম্যাচে হাশিম আমলার রোজা না রাখার তথ্য পাওয়া যায়।

সুতরাং, হাশিম আমলা ২০১২ সালে রোজা রেখে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে ৩১১ রান করেছিলেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগের নামে আসিফ নজরুলের প্রশংসাসূচক এই বক্তব্যটি সম্পাদিত

সম্প্রতি, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগের প্রশংসা করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগের প্রশংসা করেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত একটি ব্রিফিংয়ের ভিডি সম্পাদিত করে আলোচিত অডিওটি যুক্ত করা হয়েছে।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে শুরুতেই আসিফ নজরুলের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখা যায়। এতে আসিফ নজরুলকে বলতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশে যত দল আছে বড় বড় দল তাদের মধ্যে সবচেয়ে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত দল। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে সমস্ত গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল। আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সনে সংবিধান প্রতিষ্ঠাকারী দল, যে সংবিধানে ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশনের আকাঙ্খা আছে, যে সংবিধানে সমাবেশের স্বাধীনতার কথা বলা আছে, বাক স্বাধীনতার কথা বলা আছে, আওয়ামী লীগ সেই দল যেই দলের প্রতিষ্ঠা দ্বারা এই স্বাধীনতাগুলো রক্ষা করার কথা বাংলাদেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে গেছে।

তবে, ভিডিও ফুটেজটিতে আসিফ নজরুলের মুখের অঙ্গভঙ্গির সাথে অডিওর অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।

আলোচিত ভিডিওর ভয়েসওভারে বলতে শোনা যায়, দেশের একমাত্র গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রশংসায় ভাসালেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এক সংবাদ গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিস্তৃত বর্ণনা করেন তবে হঠাৎ করে আসিফ নজরুলের এমন বিভ্রান্তিকর মন্তব্যে থমকে গেছে উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলসহ সমন্বয়করাও। এই বিষয় নিয়ে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন উল্লেখ করে সারজিস আলমের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়।

ভিডিও ফুটেজটিতে সারজিস আলমকে বলতে দেখা যায়, এরকভাবে প্রেজেন্ট করা হয়েছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি করলেন বা এই বিষয়ে রিট করেছেন সারজিস হাসনাত। যেমন মিডিয়াতে এসেছে নিষিদ্ধের কথা, আমাদের রিটের কোনো সিঙ্গেল লাইনে কোনো একটি দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের কথা, নিবন্ধন বাতিলের কথা নেই।

ভিডিও ফুটেজটি দেখানোর পর ভয়েসওভার দেওয়া ব্যক্তি দাবি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করায় বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন আসিফ নজরুল। আসিফ নজরুল বলেছেন দাবি করে বলেন, কোনো দলকে জনগনের মতামত না নিয়ে নিষিদ্ধ করা যায়না, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে বাংলা ভাষাকে অসম্মান করা হয়। এটার পক্ষে আমি নই।

এরপর আসিফ নজরুলের আরও একটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। যেখানে আসিফ নজরুলকে বলতে শোনা যায়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের একটি দাবি উঠেছে হাইকোর্টে, সেই অফিস থেকে এটার প্রতিবাদ করা হয়েছে, এটার বিপক্ষে দাড়িয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে কারি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে আমি না । আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এই দলটির অবদান ছিল।

আসিফ নজরুলের ভিডিও ফুটেজ যাচাই ০১

ফুটেজটি থেকে কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এটিএন নিউজ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর ‘নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে জানালেন আইন উপদেষ্টা | Asif Nazrul | Election | ATN News’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত  একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার সাথে আলোচিত দাবির প্রচারিত ভিডিও ফুটেজের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ভিডিওটিতে নির্বাচান নিয়ে অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলা ছাড়াও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল অংশ নিতে পারবে কি না জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, এটা আমার এখন বলার স্টেজ না, এখন আপনি যদি মনে করেন যারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, আরও ৪০-৫০ হাজার মানুষের অঙ্গহানি ঘটিয়েছে, চোখ কেড়ে নিয়েছে। এখনো তারা ঐটার পক্ষে কথা বলে, তাদের নেত্রীর রেকর্ডটা যদি কারেক্ট হয় হয়—২৮৭ জনকে দেখে নেবে এই ধরনের সন্ত্রাসী হুমকি দিচ্ছে অন্য দেশে বসে, যিনি একটা গণহত্যা মামলার আসামী আমার মনে হয় না বাংলাদেশের মানুষ এক্সেপ্ট করবে যে তাদের বিচার ও অনুশোচনা হওয়ার আগে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি চালাবে কি আবারও হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার জন্য? তাদের কথা শুনে তো তেমনই মনে হয়। ফলে, এগুলো একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এত বড় একটি আন্দোলনকে তারা এখনো বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, আন্দোলনের নেতাদের কিশোর গ্যাং বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং সুযোগ পেলেই আরও মানুষকে হত্যা ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এই দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত কি না, সেই প্রশ্নটি বাংলাদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে রেখে গেলাম।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

অর্থাৎ, এই ভিডিওতে আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগের প্রশংসা করেননি।

সারজিস আলমের ভিডিও ফুটেজ যাচাই 

ফুটেজটির কিছু কি ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দীপ্ত টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে কোনো রিট করা হয়নি: সারজিস আলম | Awami League Writ | Deepto News’ শীর্ষক শিরোনামেপ্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ফুটেজের মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওতে, সেই সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো রিট করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন খবরকে তিনি বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেন।

আসিফ নজরুলের ভিডিও ফুটেজ যাচাই ০২

ভিডিও ফুটেজ থেকে কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না- ড. আসিফ নজরুল । Dr. Asif Nazrul | Law Advisor’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার সাথে আলোচিত ভিডিওর ফুটেজের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অনেকে মনে করে যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা দরকার, এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? এর জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার একটি দাবি হাইকোর্টে (রিট) করা হয়, তখন আপনি দেখেছেন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না। যদি না শক্তভাবে জঙ্গি তৎপরতা, রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা থাকলে সেটি সততার সঙ্গে তদন্ত করে এটি করা যেতে পারে। সাধারণ নিয়ম হিসেবে সংবিধানে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এই দলটির অবদান ছিল। গত ১৫ বছরে তারা যা করেছে সেটা তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, সেটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। তারা বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরতম এক ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে। লিডারদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বলছি, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে মনে হয় না।

অর্থাৎ, ভয়েসওভারে করা ব্যক্তির দাবি অনুযায়ী আলোচিত ভিডিওতে ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে বাংলা ভাষাকে অসম্মান করা হয়। এটার পক্ষে আমি নই।’ এমন কোনো কথা বলতে আসিফ নজরুলকে দেখা যায়নি।

সুতরাং, ড. আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগের প্রশংসা করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

ডিসপ্লে ফুড হিসেবে মোমের তৈরি বাঁধাকপিকে খাওয়ার জন্যে তৈরি নকল বাঁধাকপি বলে প্রচার

সম্প্রতি, নকল বাঁধাকপি! ফ্যাক্টরিতে কিভাবে তৈরি হয় শীর্ষক ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এগুলো খাওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া বাঁধাকপিটি খাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়নি বরং জাপানের রেস্টুরেন্টগুলোতে স্যাম্পল ফুড বা ডিসপ্লে ফুড হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে মোমের তৈরি এসব বাঁধাকপি।

মূলত, রেস্টুরেন্টে ডিসপ্লের জন্যে তৈরিকৃত এসব স্যাম্পল ফুডকে Shokuhin Sampuru বলা হয়ে থাকে। সাধারণত মোম অথবা প্লাস্টিকের মাধ্যমে এই ফুড মডেলগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে। যখন রঙিন ছবির প্রচলন ছিল না তখন থেকে রেস্টুরেন্টগুলোতে এ ধরনের ফুড স্যাম্পল ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। মূলত, রেস্টুরেন্টটিতে কী কী খাবার পাওয়া যায় এ বিষয়ে জানানোর জন্যে এগুলোর ব্যবহার করা হতো।জাপানের Gujo Hachiman নামের একটি শহরে স্যাম্পল ফুড বা ডিসপ্লে ফুড তৈরি করার একটি কারখানা রয়েছে। যেখানে গিয়ে কেউ চাইলে নিজের মত করে এইসব স্যাম্পল ফুড তৈরিও করতে পারেন।  

উল্লেখ্য, পূর্বেও মোমের বাঁধাকপি নিয়ে একই দাবি ছড়িয়ে পড়লে তা ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ খারাপ খেলায় তাসকিন আহমেদের কান্না দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত

২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের যাত্রা মোটেও সুখকর ছিল না। তারা তাদের প্রথম দুটি ম্যাচ হেরেছিল এবং তৃতীয় ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছিল।

সম্প্রতি এরই প্রেক্ষিতে, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ খারাপ খেলায় কান্না করে দিলেন তাসকিন আহমেদ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন  এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে তাসকিন আহমেদ কান্না করেননি। এছাড়া, ভিডিওটি ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের কোনো ম্যাচেরও নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের ৩ মে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাসকিন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন। পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি তার অনুভূতি প্রকাশ করেন। সম্প্রতি, সেই সময়ের ফুটেজ সংগ্রহ করে তা প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে খেলাধুলা বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল ‘Rabbitholebd Sports’ এ ২০২৪ সালের ৩ মে প্রচরিত ‘Bangladesh vs Zimbabwe | 1st T20I | FULL MATCH | Zimbabwe tour of Bangladesh 2024’ শীর্ষক ক্যাপশনে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ৫ ঘন্টা ৭ মিনিটের পরবর্তী সময়ে তাসকিনের ফুটেজের সাথে আলোচিত প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।


ভিডিওটিতে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ পুরস্কার গ্রহণ করে তাসকিন আহমেদকে ম্যাচ জয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় কিন্তু এই ভিডিওতে তাকে কান্না করতে দেখা যায়নি।

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে তাসকিন আহমেদের এই ভিডিওর ফুটেজ সংগ্রহ করে তা প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের মে মাসে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ২০২৪ সালের ৩ মে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই ম্যাচে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়লাভ করে।

সুতরাং, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ খারাপ খেলায় তাসকিন আহমেদ কান্না করেছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

মিরপুরে ছিনতাইয়ের সাম্প্রতিক দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাভারের গেল নভেম্বরের ভিন্ন ঘটনার

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনায় রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের ছিনতাই-ডাকাতির। গণমাধ্যমেও উক্ত ভিডিওটি “মিরপুরে ছিনতাইয়ের সিসিটিভি ফুটেজ” শীর্ষক শিরোনামে সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাইয়ের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে প্রচারিত ভিডিওটি সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত এবং ভিডিওটিতে দুইজন ব্যক্তির ওপর আরো কয়েকজনকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করতে দেখা যায় এবং পরবর্তীতে সেখানে আরো মানুষ আসতে দেখা যায়।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যম প্রচারিত পোস্ট দেখুন : মোহনা টিভি (ইউটিউব)।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটি মিরপুরের কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনাও নয় বরং, গত নভেম্বরে সাভারের আশুলিয়ায় এক ব্যক্তিকে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘নাজমুল হক এমু’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বরে পোস্টকৃত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় ম*রন নে*শা মা*দক ই*য়া*বা বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় বাড়িওয়ালার বড় ভাই কে হ*ত্যার উদ্দেশ্যে কু*পিয়ে গু*রুতর জ*খম করেছেন মা*দক ব্যবসায়ীরা। হা*মলাকারীদের ১ জন কে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।” উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

একই দাবিতে ‘সাংবাদিক বাবুল হোসেন’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বরে প্রচারিত ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এছাড়া, উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একইদিনে জখমকৃত বাড়িওয়ালার বড় ভাইয়ের ছবি দাবিতে একজন আহত ব্যক্তির ছবিও পোস্ট করা হয়েছে।

তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি লক্ষ্য করলে ভিডিওটি সিসি ক্যামেরায় ধারণ হওয়ার দিনের তারিখ হিসেবে স্ক্রিনে ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর তারিখ প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটি মিরপুরেরও কোনো ঘটনার নয়। এই ঘটনার সাথে ছিনতাইয়েরও কোনো সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, সাভারে গেল নভেম্বর মাসের ভিন্ন ঘটনার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ের মিরপুরের ছিনতাই-ডাকাতির দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যে করা শফিকুল ইসলাম মাসুদের মন্তব্যের খণ্ডিত অংশ বিকৃতভাবে প্রচার

সম্প্রতি, জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজে “দেশটা আমাদের আমরা যা বলব দেশে তাই হবে – শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ” শীর্ষক দাবি সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে।

গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ

পরবর্তীতে উক্ত ফটোকার্ডটি প্রচার করে নেটিজেনদের শফিকুল ইসলাম মাসুদের সমালোচনা করতে দেখা হচ্ছে। উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ নিয়ে জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদের মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের তথ্যটি বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় শফিকুল ইসলাম মাসুদের দেওয়া বক্তব্য থেকে একটি অংশ কাট করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। মূলত তিনি বিএনপির সমালোচনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তারা (আওয়ামী লীগ) দেশকে নিজেদের দাবি করতো এমন উদাহরণ টেনে এই মন্তব্য করেছেন।

অনুসন্ধানে ‘Dr. Md. Shafiqul Islam Masud’’ এর ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে গত ২৬ মার্চ ‘যারা বলছে “মৌলবাদীদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবো না” তারা আওয়ামী লীগের ভাষায়, ভারতের ভাষায় কথা বলছে। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে মাসুদের একটি অংশের বক্তব্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত মন্তব্যের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বিএনপির বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করে করে শফিকুল ইসলাম মাসুদকে বলতে দেখা যায়, “মানুষ এখন এ কথা বলতে শুরু করেছে ৭১ সাল পরবর্তী মানুষের অর্থবহ স্বাধীনতা দেয়ার পরিবর্তে স্বাধীনতাটাকে ব্যক্তি, দল এবং পরিবারের কুক্ষিগত একটি সম্পত্তিতে আপনারা কেউ কেউ পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন। আজও আমরা লক্ষ্য করছি শ্রমিক সংগঠনের একজনের বক্তব্য শুনে তো আমি অবাক হয়েছি। আমি রাস্তারও নিরাপত্তা চাই, আমি চাঁদাবাজির ও নিরাপত্তা চাই। কি অদ্ভুত কথা! আমরা তো এটাও শুনতে পাই ৭১ পরবর্তী ওই দলটি যা করেছিল এটাই তো করেছিল। এই দেশ আমাদের এটা আমরা স্বাধীন করেছি, আমরা যা বলবো তাই হবে। বিগত ১৫ বছর আমরা তাই শুনেছি। ২০২৪ পরবর্তী আমরা একই কথা শুনতে পাচ্ছি। আমার নেতাদের গ্রেফতার করা হলে আমার অনুমতি ছাড়া থানা ঘেরাও করা হবে। আমার অনুমতি ছাড়া নেতাদের গ্রেফতার করা হলে যদি থানা ঘেরাও করা হয় তবে সে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন কিভাবে হবে?”

অর্থাৎ, শফিকুল ইসলাম মাসুদের দীর্ঘ বক্তব্য থেকে “দেশটা আমাদের আমরা যা বলব দেশে তাই হবে” শীর্ষক মন্তব্যটুকু খণ্ডিত আকারে প্রচার করা হয়েছে। মাসুদের মূল বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করে এটি নিশ্চিত যে, তার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশটুকু মূল বক্তব্যের প্রকৃত অর্থ বহন করেনা। কারণ তিনি এই মন্তব্যটি নিজ বা নিজের সংগঠনকে জড়িয়ে করেননি, করেছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ্য করে।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানেই আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে শফিকুল ইসলাম মাসুদ আলোচিত মন্তব্যটি করেছেন।

সুতরাং, বিএনপির সমালোচনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদের বক্তব্যের একটি খণ্ডিত অংশ বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

মাথার খুলির মত দেখতে এই ছবিটি যাক্কুম গাছের নয়

0

সম্প্রতি, ড্রাগনের মাথার খুলির মত দেখতে একটি ছবি ইন্টারনেটে যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পোস্ট দেখুন যমুনা টিভি। 

একই দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। 

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামের পোস্ট দেখুন এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি যাক্কুম গাছের নয় বরং, যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচারিত ছবিটি স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পর শুকনো বীজের।

মূলত, যাক্কুম গাছ দাবিতে ড্রাগনের মাথার খুলির মত দেখতে এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে কয়েক বছর ধরেই প্রচার করা হচ্ছে। তবে, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি যাক্কুম গাছের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজের ছবি। স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল মরে যাওয়ার পর শুকনো বীজের ছবিকে যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। আলমুনজিদ (আরবি অভিধান) অনুসারে, যাক্কুম (زقوم) জাহান্নামের গাছ এবং পাপীদের জন্য একটি বিষাক্ত খাদ্য। অন্যান্য কিছু অভিধানে এটি তিক্ত স্বাদযুক্ত একটি কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

সুতরাং, স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল মরে যাওয়ার পর শুকনো বীজের ছবিকে সামাজিক মাধ্যমে যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার হলে সে সময় ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

দেশবাসীকে শেখ হাসিনার ঈদের শুভেচ্ছা দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

শীঘ্রই পালিত হতে যাচ্ছে মুসলিমদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এদিকে ক্ষমতা হারানোর পর শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের বাইরেই অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই প্রেক্ষিতে অন্তত গত ২৮ মার্চ থেকে শেখ হাসিনার একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন”। এছাড়াও, “শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা” শীর্ষক ক্যাপশনেও উক্ত একই ভিডিওটি প্রচার করে হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “বিদেশে থাকলেও মনটা পড়ে আছে দেশে। দেশবাসীর সাথে সবসময়ই আমি একাত্মতাবোধ করি।.. ঈদের শুভেচ্ছা সবাইকে আমি জানাচ্ছি। ঈদ মোবারক।” এছাড়াও, ভিডিওটিতে শেখ হাসিনার হজ করার সময়কার ফুটেজও সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তার নয় বরং, প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সেসময়ের ভিডিও বার্তার দৃশ্য সম্প্রতি আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার কোনো ভিডিও বার্তা দেওয়ার সপক্ষে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে “দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে ২০১৯ সালের ৫ জুনে প্রচারিত একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় সফরে ফিনল্যান্ডে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও বার্তায় এ শুভেচ্ছা জানান।” এছাড়াও, প্রতিবেদনটিতে শেখ হাসিনার একই ভিডিও বার্তাটিও প্রচার করা হয়েছে। উক্ত ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনাকে এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায়, “…বিদেশে থাকলেও মনটা পড়ে আছে দেশে। দেশবাসীর সাথে সবসময়ই আমি একাত্মতাবোধ করি। ঈদের শুভেচ্ছা সবাইকে আমি জানাচ্ছি। ঈদ মোবারক।…”

সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত উল্লিখিত শুভেচ্ছা বার্তাটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বার্তার তুলনা করলে বক্তব্য, পরিধেয় পোশাক, পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটিতে সময় টিভির লোগোও লক্ষ্য করা যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত উপরোল্লিখিত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তার দৃশ্য থেকেই নেওয়া হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে “বিদেশে থাকলেও মনটা পড়ে আছে দেশে: শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে ২০১৯ সালের ০৫ জুনে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “এক মাসের সিয়াম সাধনার পর বুধবার (০৫ জুন ২০১৯) সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের মুসলিমরা। প্রতি বছর ঈদে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও এবার ফিনল্যান্ডে থাকায় তা হচ্ছে না। মঙ্গলবার (০৪ জুন ২০১৯) ভিডিও বার্তায় ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রিয় দেশবাসী সব সময় দেশে থেকে আপনাদের সাথে ঈদ উদযাপন করি। এবারে বিভিন্ন কারণে আমাকে দেশের বাইরে যেতে হয়েছে। এবারে বিদেশে থাকতে হল। বিদেশে থাকলেও মনটা পড়ে আছে দেশে। “দেশবাসীর সাথে সব সময় একাত্মতা জানাই। দেশবাসী সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”” এছাড়াও, ঈদযাত্রাসহ নানা বিষয়ে শেখ হাসিনার বলা বক্তব্যের বিষয়েও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তার শেষে শেখ হাসিনার হজের একাধিক দৃশ্যও সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে। তবে, এসব দৃশ্যের সাথে আসন্ন ঈদুল ফিতরের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শেখ হাসিনার সেসময়ের ভিডিও বার্তার দৃশ্য সম্প্রতি আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র