যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজের

সম্প্রতি, ড্রাগনের মাথার খুলির মত দেখতে কয়েকটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

যাক্কুম গাছ

প্রচারিত পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি যাক্কুম গাছের নয় বরং, যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আসলে স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পর শুকনো বীজের।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Nature in Stock’ এর ওয়েবসাইটে ‘Snapdragon (Antirrhinum sp.) seedpod in close up, Twente, Overijssel, The Netherlands’ শীর্ষক শিরোনোমে আপলোডকৃত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত একটি ছবির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। ছবির বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, এটির সাধারণ নাম ‘স্ন্যাপড্রাগন’ এবং এর ল্যাটিন নাম ‘এন্টিররিনাম স্পে’।

‍Screenshot: Nature in Stock

এছাড়াও, উক্ত ওয়েবসাইটে এমন আরো ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

‍Screenshot: Nature in Stock

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Gardening Know How’ এর ওয়েবসাইটে ‘Snapdragon Seed Heads: Tips For Snapdragon Seed Collecting’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। 

Screenshot:Gardening Know How

নিবন্ধটিতে বলা হয়, স্ন্যাপড্রাগন আমাদের সবার কাছেই পরিচিত একটি পুরোনো ফুল। এই ফুলের নাম এসেছে এর মুকুলের আকৃতি থেকে, যেগুলো ছোট্ট ড্রাগনের চোয়ালের মতো দেখতে লাগে। স্ন্যাপড্রাগনের ফুল মরে যাওয়ার পর, শুকনো বীজের থোকাগুলো দেখতে লাগে ঠিক ছোট্ট, খোলা, বাদামী খুলির মতো। 

এছাড়াও, ‘Dark Dwelling’ নামের ওয়েবসাইটে ‘Snapdragon Skulls’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে স্ন্যাপড্রাগনের গাছে ফুল এবং ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পর খুলির মতো দেখতে বিজের কিছু ছবি পাওয়া যায়।

Screenshot: Dark Dwelling

অর্থাৎ, ‍যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আসলে স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পর শুকনো বীজের ছবি।

যাক্কুম গাছ দেখতে কেমন?

যাক্কুম গাছ সম্পর্কে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘The Munsif Daily’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর ‘Quranic Zaqqum – A Scientific Study’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ পাওয়া যায়।

ছবিটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘আফ্রিকায় ইউফোর্বিয়ার শতাধিক প্রজাতি দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে কয়েকটির ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।’

প্রবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়, আলমুনজিদ (আরবি অভিধান) অনুসারে, যাক্কুম (زقوم) জাহান্নামের গাছ এবং পাপীদের জন্য একটি বিষাক্ত খাদ্য। অন্যান্য কিছু অভিধানে এটি তিক্ত স্বাদযুক্ত একটি কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রবন্ধটিতে যাক্কুম গাছের কিছু প্রচলিত নাম উল্লেখ করা হয়-
আরবি: লেব্বেইন, রুম্মিদ, রিজলাত-ইবলিস
ইংরেজি এবং ল্যাটিন: ইউফোরবিয়া
ফরাসি: ইউফোর্বে
গ্রীক: ইউফোরভিয়ন
হিন্দি এবং উর্দু: থোহার, সেহন্দ
সংস্কৃত: বজ্র-কণ্টক
তামিল: আইলাইক্কালি
বাংলা: তিক্তসিজ.পাতসিজ
মালায়ালাম: কাল্লি
তেলেগু: আকিয়েমাডু
উদ্ভিদবিদ্যাগত নাম: ইউফোরবিয়া রেসিনিফেরা বার্গ. (ইউফোরবিয়াসি)

এছাড়াও, RadianceWeekly.net নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১০ মার্চ ‘Qur’ānic Zaqqum – A Scientific Study’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ছবি স্টক করা ওয়েবসাইট Shutterstock এ ইউফোরবিয়া রেসিনিফেরা বার্গ. এর কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Shutterstock

মূলত,  যাক্কুম গাছ দাবিতে ড্রাগনের মাথার খুলির মত দেখতে কয়েকটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,  প্রচারিত ছবিগুলো যাক্কুম গাছের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এগুলো স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজের ছবি। স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল মরে যাওয়ার পর শুকনো বীজের ছবিকে যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং,  স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল মরে যাওয়ার পর শুকনো বীজের ছবিকে সামাজিক মাধ্যমে যাক্কুম গাছ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img