সম্প্রতি, “বিমসটেকে’র ডিনারে চেয়ার খালি পেয়ে নির্লজ্জের মতো মোদীর পাশে বসে গেলেন ড. ইউনূস” শীর্ষক শিরোনামে মূল ধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “বিমসটেকে’র ডিনারে চেয়ার খালি পেয়ে নির্লজ্জের মতো মোদীর পাশে বসে গেলেন ড. ইউনূস” শীর্ষক কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি বরং, গণমাধ্যমটির লোগো সম্বলিত নকল ফটোকার্ডের মাধ্যমে ভুয়া দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৩ এপ্রিল ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
এই সূত্রে অনুসন্ধান করে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে গত ০৩ এপ্রিল “বিমসটেক’র ডিনারে পাশাপাশি চেয়ারে নরেন্দ্র মোদি- ড. ইউনূস” শীর্ষক শিরোনামের একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ছবি বা কথিত শিরোনামটির কোনো মিল পাওয়া যায়নি
Photocard Comparison: Rumor Scanner
যমুনা টিভির এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিমসটেকের অফিশিয়াল ডিনারে পাশাপাশি চেয়ারে বসেন মোদী ও ড. ইউনূস। তবে এই প্রতিবেদনে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “বিমসটেকে’র ডিনারে চেয়ার খালি পেয়ে নির্লজ্জের মতো মোদীর পাশে বসে গেলেন ড. ইউনূস” শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের ছবিসম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে যেখানে লেখা রয়েছে, “জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করা হবে”। অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করা হবে।”
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করা হবে” শীর্ষক কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বা জামায়াতের তরফ থেকে করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, কোনোরকমের নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডে কোনো গণমাধ্যমের লোগো বা নামেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সাধারণত কোনো গণমাধ্যম কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করে থাকলে, প্রচারিত ফটোকার্ডে গণমাধ্যমটির নাম বা লোগোর সংযুক্তি থাকে৷ যা থেকে বুঝা যায় যে আলোচিত ফটোকার্ডটি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রেও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বরং গত ২৪ মার্চে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৪ মার্চে এক বিবৃতিতে মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। একই সঙ্গে তিনি যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস পালনের জন্য জামায়াতের সব শাখা এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতা গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তদানীন্তন শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। তিনি বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দুঃশাসনমুক্ত একটি দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বস্তরের জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।…
এছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যম আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ২৬ মার্চে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে সব সময় ধারণ করে। আমাদের সংবিধানের ভূমিকাতে সেটা আমরা ঘোষণা দিয়ে বলেছি। ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রদান করেছি।’
অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও নেতাকর্মীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করলেও তা আলোচিত দাবিটির সাথে সাংঘর্ষিক হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
সুতরাং, “জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করা হবে” শীর্ষক মন্তব্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
সম্প্রতি, “শুল্ক না কমালে আমেরিকা কে পারমাণবিক বোমা মেরে উড়িয়ে দিবো” শীর্ষক মন্তব্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দাবিতে মূল ধারার গণমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “শুল্ক না কমালে আমেরিকা কে পারমাণবিক বোমা মেরে উড়িয়ে দিবো” শীর্ষক কোনো মন্তব্য ড. ইউনূস করেননি এবং চ্যানেল২৪ ও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি বরং, ভিন্ন প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে চ্যানেল২৪ এর লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ০৩ এপ্রিল ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
এই সূত্রে অনুসন্ধান করে চ্যানেল২৪ এর ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে গত ০৩ এপ্রিল “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যুর ইতিবাচক সমাধান হবে: প্রধান উপদেষ্টা” শীর্ষক শিরোনামের একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ব্যতিত বাকি সব উপাদানের মিল রয়েছে।
Photocard Comparison: Rumor Scanner
ফটোকার্ডটিতে থাকা শিরোনামটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
চ্যানেল২৪ এর মূল ফটোকার্ড সম্বলিত এ সংক্রান্ত পোস্টের কমেন্টে থাকা সংবাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে এ কথা বলেন।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “শুল্ক না কমালে আমেরিকা কে পারমাণবিক বোমা মেরে উড়িয়ে দিবো : প্রধান উপদেষ্টা” শীর্ষক শিরোনামে চ্যানেল২৪ এর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ঢাবি শিক্ষক কামরুল হাসান মামুনের নয় বরং, আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার কুস্তিগীর হাল্ক হোগানের ছবিতে প্রযুক্তির সাহায্যে মামুনের মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিটি প্রচার করা হয়েছে।
ছবিটি রিভার্স ইমজে সার্চ করে আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার কুস্তিগীর WWE (ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট) হাল্ক হোগানের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের জুনে প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
অর্থাৎ, আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার কুস্তিগীর হাল্ক হোগান এর এই ছবিতে প্রযুক্তির সাহায্যে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন এর মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের স্বার্থে রিউমর স্ক্যানার বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার কুস্তিগীর হাল্ক হোগান এর আসল ছবির ওপর অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন এর মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করেছে। এতে বিকৃত ছবির মতোই অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে।
সুতরাং, প্রযুক্তির সহায়তায় আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার কুস্তিগীর হাল্ক হোগানের ছবির ওপর ঢাবি অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের মুখমণ্ডল বসিয়ে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “বিশেষ সাক্ষাৎকারে হাসনাত আব্দুল্লাহ | পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সে এত সহজে দেশে ফিরতে পারবেনা” শীর্ষক শিরোনামে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে। উক্ত ফটোকার্ডটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সে এত সহজে দেশে ফিরতে পারবেনা”।
উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “বিশেষ সাক্ষাৎকারে হাসনাত আব্দুল্লাহ | পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সে এত সহজে দেশে ফিরতে পারবেনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলো কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথম আলোর লোগো ব্যবহার করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে প্রথম আলোর নাম, লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘২ এপ্রিল ২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ ও ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও প্রথম আলোর ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, অনুসন্ধানে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে গত ০২ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচিত ফটোকার্ডটির ছবি সংযুক্ত করে বলা হয়, “প্রথম আলোর নামে ছড়ানো এই তথ্য ও কার্ডটি ভুয়া। আমাদের প্রকাশিত নয়।..”
পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও কোনো বিশেষ সাক্ষাৎকারে হাসনাত আবদুল্লাহর এরূপ কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করার পক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বিশেষ সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন “পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সে এত সহজে দেশে ফিরতে পারবেনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলোর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
৭ এপ্রিল, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একই দাবি সম্বলিত ফেসবুক পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্ট প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি, তার মুক্তি চেয়ে কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কোনো বিক্ষোভ সমাবেশের নয়। বরং, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির আয়োজিত একটি বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে MR vlogger নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৬ মার্চ প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম ভাষান্তরের মাধ্যমে জানা যায়, এটি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে আরপিপি-র আয়োজিত একটি মোটরসাইকেল র্যালির দৃশ্য। পাশাপাশি ভিডিওটির শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্যের গায়ে NEPAL POLICE লেখা দেখতে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৫ মার্চ নেপালের রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি বা আরপিপি রাজধানী কাঠমান্ডুর বাবর মহল থেকে নারাণয়হিতি পর্যন্ত একটি মোটরসাইকেল র্যালি করে।
এছাড়াও এ ঘটনায় অন্য আরেকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মূলত র্যালিটির মাধ্যমে নেপালে রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, হিন্দু রাষ্ট্র, প্রদেশ বিলোপ, দুর্নীতির অবসান এবং আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়।
সুতরাং, নেপালের ভিডিওকে কলকাতায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তি চেয়ে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “নিবন্ধন ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেবো না” শীর্ষক মন্তব্যটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের দাবিতে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “নিবন্ধন ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেবো না” শীর্ষক কোনো মন্তব্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার করেননি এবং জনকণ্ঠও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি বরং, ভিন্ন প্রেক্ষিতে জনকণ্ঠের প্রচারিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে জনকণ্ঠের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২০ মার্চ ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
এই সূত্রে অনুসন্ধান করে জনকণ্ঠের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এসংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে গত ২০ মার্চ “জামায়াতে ইসলামীর ৫টি বিষয়ের ওপর সংস্কার প্রস্তাব জমা” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ব্যতিত বাকি সব উপাদানের মিল রয়েছে।
Photocard Comparison By Rumor Scanner
ফটোকার্ডটিতে থাকা শিরোনামটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
জনকণ্ঠের মূল ফটোকার্ড সম্বলিত এ সংক্রান্ত পোস্টের কমেন্টে থাকা সংবাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২০ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংসদ ভবনের কার্যালয়ে ঐকমত্য কমিশনের কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের নিকট সংস্কার প্রস্তাব জমা দেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। আমীরে জামায়াতসহ নেতৃবৃন্দ প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত একটি অর্থবহ নির্বাচন দেওয়ার জন্য বারবার বলে আসছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ের ব্যাপারে একটি ধারণা জাতির সামনে পেশ করা হয়েছে। আমরা তার সাথে দ্বিমত পোষণ করিনি। আজকে আমরা পাঁচটি বিষয়ের ওপর আমাদের মতামত তুলে ধরেছি। কমিশনের প্রস্তাবের সাথে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারিনি; আবার অনেক বিষয়েই একমত হয়েছি। আমরা ব্যাখ্যাসহ আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছি। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করবেন।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “নিবন্ধন ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেবো না” শীর্ষক শিরোনামে জনকণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
সদ্য অতিক্রান্ত ঈদুল ফিতরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে মোগল আমলের কায়দায় ঈদ আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত ঈদ মিছিলের অগ্রভাগে দুই সারিতে ছিল আটটি সুসজ্জিত ঘোড়া। আরও ছিল ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস–সংবলিত ১০টি পাপেট শো।
এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে মোগল আমলের কায়দায় ঈদ আনন্দ মিছিলে মূর্তি কারা আনল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। ধর্ম উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘ঈদ মিছিলে মূর্তি কারা আনল, কারা বৈধতা দিল (অগোচরে ষড়যন্ত্র) সবাইকে ধর্ম অবমাননার দায়ে আইনের আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ!’ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সবচেয়ে কঠোর শাস্তি সেই ব্যক্তির হবে, যে মূর্তি তৈরি করে।’ (বুখারি : ৫৯৫০, মুসলিম : ২১০৯) রাসুল (সা.) নিজ হাতে কাবাঘর থেকে সব মূর্তি অপসারণ করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে মূর্তি বা ভাস্কর্যের কোনো স্থান ইসলামে নেই, পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন।”
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
গণমাধ্যম ছাড়াও নেটিজেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদ মিছিল প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ‘ঈদ মিছিলে মূর্তি কারা আনল, কারা বৈধতা দিল (অগোচরে ষড়যন্ত্র) সবাইকে ধর্ম অবমাননার দায়ে আইনের আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ!’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুক কোনো পোস্ট করেননি। প্রকৃতপক্ষে, যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এই পোস্টটি করা হয়েছে সেটি ধর্ম উপদেষ্টার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নয় বরং, তার নামে পরিচালিত একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্টকে আসল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত দাবি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তাতে দাবিটির উৎস বা সূত্রপাত হিসেবে ধর্ম উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্ট উল্লেখ করা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে উক্ত দাবির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে গত ৩১ মার্চে ‘ড. আ.ফ.ম খালিদ হোসেন’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে এ বিষয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot : Facebook
Screenshot : Facebook
উক্ত পোস্টটিতে লেখা হয়, “ঈদ মিছিলে মূর্তি কারা আনলো, কারা বৈধতা দিলো(অগোচরে ষড়যন্ত্র) সকলকে ধর্ম অবমাননার দায়ে আইনের আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ!!” এবং উক্ত পোস্টটির মন্তব্য সেকশনে একই ফেসবুক পেজ থেকে মন্তব্য করা হয়, “হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ❝ নিশ্চয়ই সবচেয়ে কঠোর শাস্তি সেই ব্যক্তির হবে, যে মূর্তি তৈরি করে। ❞ (বুখারি: ৫৯৫০, মুসলিম: ২১০৯)
রাসুল (সা.) নিজ হাতে কাবাঘর থেকে সব মূর্তি অপসারণ করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে মূর্তি বা ভাস্কর্যের কোনো স্থান ইসলামে নেই।” উক্ত ফেসবুক পেজটির প্রোফাইল ছবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টার ছবি এবং বায়োতে ধর্ম উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ দাবি করা হয়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত দাবিটি মূলত উক্ত ফেসবুক পোস্টের প্রেক্ষিতেই প্রচার হয়েছে।
তবে, উক্ত ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইনের নামে খোলা একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট।
এরপর ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইনের মূল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে তাতে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এরূপ কোনো দাবি প্রচার হতে বা কোনো প্রেস কনফারেন্সে ধর্ম উপদেষ্টাকে আলোচিত দাবিটি করতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য যে, এর আগেও ধর্ম উপদেষ্টার নামে পরিচালিত উক্ত ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে ধর্ম উপদেষ্টাকে জড়িয়ে পর্ণ ওয়েবসাইট বন্ধের ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে রিউমর স্ক্যানার সেসময় এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সুতরাং, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন ঈদ মিছিলে মূর্তি আনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
সম্প্রতি, “আওয়ামী লীগ একাই একশো। আওয়ামী লীগের ভোট আছে ৫০% এর উপরে। ইউনুস ধোঁকাবাজ ও লোভী টাইপের মানুষ।” শীর্ষক মন্তব্যটি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আবু হেনা রাজ্জাকীর দাবিতে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “আওয়ামী লীগ একাই একশো। আওয়ামী লীগের ভোট আছে ৫০% এর উপরে। ইউনুস ধোঁকাবাজ ও লোভী টাইপের মানুষ।” শীর্ষক কোনো মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আবু হেনা রাজ্জাকী করেননি এবং জনকণ্ঠও এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রচার করেনি বরং, ভিন্ন প্রেক্ষিতে জনকণ্ঠের প্রচারিত একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে জনকণ্ঠের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।
এই সূত্রে অনুসন্ধান করে জনকণ্ঠের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে গত ২৯ মার্চ “ইউনুস সাহেব একাই একশ: আ. লীগের সমর্থক আছে মাত্র ৫%!” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ব্যতিত বাকি সব উপাদানের মিল রয়েছে।
Photocard Comparison By Rumor Scanner
ফটোকার্ডটিতে থাকা শিরোনামটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
জনকণ্ঠের মূল ফটোকার্ড সম্বলিত এ সংক্রান্ত পোস্টের কমেন্টে থাকা সংবাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৯ মার্চ একটি ভিডিও বার্তায় সুপ্রিম কোর্টের এ্যাডভোকেট আবু হেনা রাজ্জাকী বলেছেন, ইউনুস সাহেব একাই ১০০ আওয়ামী লীগের সমর্থক ৯০% এখন হাসিনার বিরোধী। পতিত সরকারের পক্ষে তারাই আছে যারা এখন পলাতক হয়ে আছে। কারণ তারা পুত্রের শোক ভুলে কিন্তু টাকার শোক ভুলে না। টাকা ছিল তাদের জন্য মেনিয়া, তারা টাকার জন্য অন্ধ ছিল।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী-লীগ আবার বাংলাদেশে এসে শাসন ক্ষমতা দখল করবে এটা জাস্ট অন্ধকারে রেখে মানুষের কাছে একটি প্রোপাগান্ডা। এমনকি তারা এখন কিছুই না। এতদিন যারা তাদের সাথে জোটবদ্ধ ছিল তারাও এখন বলছে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। সুতরাং আবারো বলছি আওয়ামী লীগের এসব কথা শুধুমাত্র তাদের মুখের বুলি। ৫ পার্সেন্ট লোক এখন তাদের সমর্থন করে না। এমনকি আওয়ামী লীগের ৯০% মানুষ এখন পলাতক নেতাদের বিরুদ্ধে। যারা তাদেরকে ফেলে রেখে চলে গেছে। তাদের এখনো নাকি ৩০% সমর্থক আছে এগুলো নির্জলা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই না।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্য কোনো গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “আওয়ামী লীগ একাই একশো। আওয়ামী লীগের ভোট আছে ৫০% এর উপরে। ইউনুস ধোঁকাবাজ ও লোভী টাইপের মানুষ।” শীর্ষক শিরোনামে কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে কোনো জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেনি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সেনা সদস্যও নিহত হয়নি বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে sadhinnews247 নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। সাইটে ‘ঢাকা সেনানিবাসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা: ৯ সেনা সদস্য নিহত, ২ জঙ্গি নিহত’ শীর্ষক কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তবে কোনো প্রকাশকাল উল্লেখ নেই।
কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, রাজধানীর ঢাকার উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত সেনানিবাসে আজ রাত ১২টার দিকে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জন সেনা সদস্য নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় ২ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে এবং আরও একজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, মধ্যরাতে একটি সশস্ত্র জঙ্গি দল সেনানিবাসের পূর্ব প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। ভারী অস্ত্র নিয়ে তারা গুলি বর্ষণ শুরু করে এবং প্রধান নিরাপত্তা চৌকিকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। প্রায় ৩০ মিনিটের বন্দুকযুদ্ধের পর সেনা সদস্যরা জঙ্গিদের প্রতিহত করে। সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও, সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তরের (ISPR) পক্ষ থেকে জানা যায় যে নিহত ৯ সেনা সদস্যের মধ্যে একজন মেজর এবং দুইজন ক্যাপ্টেন রয়েছেন। আহতদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (CMH) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহত দুই জঙ্গির পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আটককৃত একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলার সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “সেনাবাহিনীর সাহসিকতায় দেশ বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “সেনানিবাসের মতো সংবেদনশীল এলাকায় হামলা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।” তিনি আরও জানান, ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে, তা জানতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ থেকে ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আত্মগোপনে রয়েছেন।
এছাড়া, বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের তিনদিন পর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৭ জন উপদেষ্টা রয়েছেন এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
এছাড়া, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে জঙ্গী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ সেনাসদস্য নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে উক্ত বিষয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার হওয়ার কথা। তবে, দেশের কোনো গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়নি।
সুতরাং, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে জঙ্গী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ সেনাসদস্য নিহত হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।