বৃহস্পতিবার, মে 22, 2025

ভুয়া ফেসবুক আইডির বরাতে ধর্ম উপদেষ্টার নামে ঈদ মিছিলের প্রসঙ্গে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সদ্য অতিক্রান্ত ঈদুল ফিতরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে মোগল আমলের কায়দায় ঈদ আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত ঈদ মিছিলের অগ্রভাগে দুই সারিতে ছিল আটটি সুসজ্জিত ঘোড়া। আরও ছিল ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস–সংবলিত ১০টি পাপেট শো। 

এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে মোগল আমলের কায়দায় ঈদ আনন্দ মিছিলে মূর্তি কারা আনল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। ধর্ম উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘ঈদ মিছিলে মূর্তি কারা আনল, কারা বৈধতা দিল (অগোচরে ষড়যন্ত্র) সবাইকে ধর্ম অবমাননার দায়ে আইনের আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ!’ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সবচেয়ে কঠোর শাস্তি সেই ব্যক্তির হবে, যে মূর্তি তৈরি করে।’ (বুখারি : ৫৯৫০, মুসলিম : ২১০৯) রাসুল (সা.) নিজ হাতে কাবাঘর থেকে সব মূর্তি অপসারণ করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে মূর্তি বা ভাস্কর্যের কোনো স্থান ইসলামে নেই, পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন।”

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন : একুশে টিভি, ইনকিলাব, যায় যায় দিন, কালের কণ্ঠ, ডেইলি সান, বাংলাদেশ টাইমস, ডেল্টা টাইমস, সারাদিনের সংবাদ, বিজনেস টুডে২৪, রূপালী বাংলাদেশ, বাংলা এডিশন

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

গণমাধ্যম ছাড়াও নেটিজেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদ মিছিল প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ‘ঈদ মিছিলে মূর্তি কারা আনল, কারা বৈধতা দিল (অগোচরে ষড়যন্ত্র) সবাইকে ধর্ম অবমাননার দায়ে আইনের আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ!’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুক কোনো পোস্ট করেননি। প্রকৃতপক্ষে, যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এই পোস্টটি করা হয়েছে সেটি ধর্ম উপদেষ্টার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নয় বরং, তার নামে পরিচালিত একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্টকে আসল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত দাবি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তাতে দাবিটির উৎস বা সূত্রপাত হিসেবে ধর্ম উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্ট উল্লেখ করা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে উক্ত দাবির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে গত ৩১ মার্চে ‘ড. আ.ফ.ম খালিদ হোসেন’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে এ বিষয়ে প্রচারিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot : Facebook

Screenshot : Facebook

উক্ত পোস্টটিতে লেখা হয়, “ঈদ মিছিলে মূর্তি কারা আনলো, কারা বৈধতা দিলো(অগোচরে ষড়যন্ত্র) সকলকে ধর্ম অবমাননার দায়ে আইনের আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ!!” এবং উক্ত পোস্টটির মন্তব্য সেকশনে একই ফেসবুক পেজ থেকে মন্তব্য করা হয়, “হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ❝ নিশ্চয়ই সবচেয়ে কঠোর শাস্তি সেই ব্যক্তির হবে, যে মূর্তি তৈরি করে। ❞ (বুখারি: ৫৯৫০, মুসলিম: ২১০৯)

রাসুল (সা.) নিজ হাতে কাবাঘর থেকে সব মূর্তি অপসারণ করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে মূর্তি বা ভাস্কর্যের কোনো স্থান ইসলামে নেই।” উক্ত ফেসবুক পেজটির প্রোফাইল ছবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টার ছবি এবং বায়োতে ধর্ম উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ দাবি করা হয়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আলোচিত দাবিটি মূলত উক্ত ফেসবুক পোস্টের প্রেক্ষিতেই প্রচার হয়েছে।

তবে, উক্ত ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইনের নামে খোলা একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট।

এরপর ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইনের মূল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে তাতে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এরূপ কোনো দাবি প্রচার হতে বা কোনো প্রেস কনফারেন্সে ধর্ম উপদেষ্টাকে আলোচিত দাবিটি করতে দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য যে, এর আগেও ধর্ম উপদেষ্টার নামে পরিচালিত উক্ত ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে ধর্ম উপদেষ্টাকে জড়িয়ে পর্ণ ওয়েবসাইট বন্ধের ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলে রিউমর স্ক্যানার সেসময় এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সুতরাং, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন ঈদ মিছিলে মূর্তি আনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img