সম্প্রতি,“ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশ করলো যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ ও নেতাদের ভিসা বাতিল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পুলিশ ও নেতাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি হয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি একটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই-১
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ATN News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর “বাংলাদেশকে ‘অ্যালার্ট লিস্ট’ তৈরির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের | Alert List | Police | USA | ATN News” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি অ্যালার্ট লিস্ট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে প্রতিবেদনের কোথাও ভিসা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই-২
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে BanglaVision News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর “অবস্থানে অনড় জাতিসংঘ, কথা বলবে নির্বাচনের পর; জানালেন স্টিফেন ডুজারিক | Stéphane Dujarric | UN” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওতে দেখা যায়, জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক প্রশ্নের জবাবে জানান, জাতিসংঘ বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জাতিসংঘ পূর্বের অবস্থানেই অনড় রয়েছে।
অর্থাৎ, উক্ত ভিডিও ক্লিপগুলোকোনো প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
পরবর্তীতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পুলিশ ও নেতাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করেছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পুলিশ ও নেতাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবির বিষয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি “ভিসা নিষেধাজ্ঞার লিস্ট প্রকাশ করলো যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশ ও নেতাদের ভিসা বাতিল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পুলিশ ও নেতাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করেছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।