যুক্তরাষ্ট্রের আদালত বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেনি

সম্প্রতি, “যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রধানমন্ত্রী ধরা। নির্বাচনী ফলাফল বাতিল ঘোষণা” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

নির্বাচনের ফলাফল বাতিল

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেনি  বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি দুটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই-১

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে BanglaVision News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি “বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি: ম্যাথিউ মিলার | Matthew Miller | U.S. Department of State” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটিতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় আমরা হতাশ”

তবে, ভিডিওটির কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভিডিও যাচাই-২

প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে MANCHITRO এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি “হাসিনা সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর? | US State Dept | Bangladesh Election” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison By Rumor Scanner

ভিডিওতে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। 

তবে, উক্ত ভিডিওটির কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আলোচিত দাবির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে,  যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত কর্তৃক বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

মূলত, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বয়কটের মুখে গত ০৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে ২২২ আসনে জয় লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরই মাঝে গত ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। পরবর্তীতে তার সেই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত কর্তৃক বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আদালত কর্তৃক বাংলাদেশের নির্বাচন বাতিলের কোনো ঘটনা ঘটে নি।

প্রকৃতপক্ষে,অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত কর্তৃক বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img