রোনালদোর পিঠে ‘ফ্রি ফিলিস্তিন’ ট্যাটুর ভাইরাল ছবিটি ভুয়া 

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত প্রায় আট দশক ধরে চলমান, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক বোমা হামলার পর আরও তীব্র হয়। এই সংঘাতে হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, লক্ষাধিক আহত হয়েছেন, এবং অসংখ্য ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী জীবনযাপন করছেন।

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে নানা গুজব ছড়াচ্ছে। মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য পরিচিত এই তারকাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারসহ বিভিন্ন ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম বারবার এসব গুজবকে অসত্য প্রমাণ করে একাধিক প্রতিবেদন (,) প্রকাশ করেছে।

সম্প্রতি, রোনালদো পিঠে ফিলিস্তিনের পতাকা ও ‘Free Palestine’ লেখা ট্যাটু করেছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত ছবি সম্বলিত ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক


রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পিঠে ফিলিস্তিনের পতাকা ও ‘Free Palestine’ লেখা ট্যাটু করাননি বরং, এ বিষয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।

ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে রোনালদোর এমন কোনো ছবি বা ট্যাটুর অস্তিত্ব বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার। তাই, রোনালদোর পিঠে সত্যিই এমন ট্যাটু রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে তার সাম্প্রতিক ম্যাচের ছবিগুলো পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রিউমর স্ক্যানার দেখতে পায়, রোনালদোর পিঠে ট্যাটু সম্বলিত কথিত ছবিটি অন্তত গত ৫ নভেম্বর বা তারও আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।

স্টক ফটোর বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট গেটি ইমেজেস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ৮ নভেম্বর সৌদি প্রো লিগে আল-রিয়াদের বিপক্ষে আল-নাসরের জয়ের পর রোনালদোকে খালি গায়ে দেখা গেছে। তবে, ওয়েবসাইটে থাকা ওই মুহূর্তের ছবিগুলোতে রোনালদোর পিঠ স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি।

পরবর্তীতে, এই সূত্র ধরে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে ‘Football Lover’s’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ৮ নভেম্বরের ওই ম্যাচের কিছু বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির একটি দৃশ্যে ম্যাচ শেষে খালি গায়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে রোনালদোর পিঠ স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তার পিঠে বর্তমানে এমন কোনো ট্যাটু নেই।  

Comparison: Rumor Scanner.

২০১৮ সালের একটি পিঠের ছবি এবং চলতি বছরের জানুয়ারির একটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায়, অতীতেও রোনালদোর পিঠে এমন কোনো ট্যাটু ছিল না।

এছাড়া, ২০১২ সালে ইতালীয় গণমাধ্যম “দিরেত্তা”-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জানিয়েছেন, “আমি ট্যাটু করাই না, কারণ এটি আমাকে রক্তদান থেকে বিরত রাখতে পারে।”

অন্যদিকে, রোনালদোর ভাইরাল ছবির পাশাপাশি একই দৃশ্য দেখানো একটি কথিত ভিডিও ইউটিউবে প্রচারিত হয়েছে। ভিডিওটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি কনটেন্টের মতো বেশ কিছু অসংগতি দেখতে পায় রিউমর স্ক্যানার।

ডিপফেক শনাক্তকরণ প্ল্যাটফর্ম ট্রুমিডিয়ার পর্যবেক্ষণও বলছে, আলোচিত ছবিতে ম্যানিপুলেশনের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। অর্থাৎ, ছবিটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

Screenshot: Trumedia.org. 

সুতরাং, এআই ব্যবহার করে তৈরি একটি ছবি দিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পিঠে ফিলিস্তিনের পতাকা এবং ‘Free Palestine’ লেখা ট্যাটু রয়েছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img