সম্প্রতি “This is why i love Cristiano Ronaldo. Will Always Have A Special Place In My Heart for him.” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমোন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ভিডিওগুলো আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিন-ইজরায়েল ইস্যু নিয়ে রোনালদো প্রকাশ্যে কোনো পক্ষের সমর্থন করেনি বরং বিভিন্ন সময়ের ভিডিওর খন্ডিত অংশ প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে কোনরূপ গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত বিষয়টি প্রচারিত হচ্ছে।
ভিডিওতে যা আছে
১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে প্রথম ১০ সেকেন্ড মেসি এবং নেইমারকে ইহুদিদের তীর্থস্থান পরিদর্শন করতে দেখা যায়। যা দ্বারা দাবি করা হয় মেসি এবং নেইমার ইহুদিদের সমর্থন করে।
এছাড়াও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে মেসি এবং রোনালদোর মধ্যে কে সেরা প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে এরদোয়ান জানান, তিনি রোনালদোর ভক্ত। বিশেষত ফিলিস্তিন ইস্যুতে রোনালদোর ভূমিকার প্রশংসা করেন এরদোয়ান।
ভিডিওর একটি অংশে দেখা যায়, ম্যাচ পরবর্তী সময়ে পুরস্কার গ্রহণের সময় ইজরায়েলের ব্যক্তি দাবি করা একজন মানুষকে উপেক্ষা করে চলে যান রোনালদো।
ভিডিওর শেষ অংশে রোনালদোর কয়েকটি ছবি দেখানো হয় এবং রোনালদো ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিচ্ছে দাবি করা হয়।
তবে উক্ত ভিডিওটি বেশ কয়েকটি ভিডিওর সংকলন। যা থেকে রোনালদো ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিচ্ছে দাবি করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে যা জানা যায়
ভিডিওর শুরুতে মেসি এবং নেইমারকে ইহুদিদের তীর্থস্থান পরিদর্শন করতে দেখা যায় এবং দাবি করা হয় তারা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, NBCSports নামক গণমাধ্যমে ২০১৩ সালে “Lionel Messi, Neymar head to Middle East on “Peace Tour” with Barcelona” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
“FC Barcelona, with the full cooperation and support of the Government of Israel and the Palestinian National Authority, will host two football clinics for peace. One will be in Israel and the other in the West Bank and both will involve children from Israel and the Palestinian Territories.”
যার ভাবার্থ করলে দাঁড়ায়
ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়ের সহযোগিতায় বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব দুটি ক্লিনিক স্থাপন করবে। ক্লিনিক দুটিতে ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের শিশুদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। বার্সেলোনার শান্তি সফরের অংশ হিসেবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এছাড়াও, তুরস্কভিত্তিক গণমাধ্যম Anadolu Agency তে ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট “Messi and his friends visit Palestine” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
“Palestinian President Mahmoud Abbas received on Saturday one of the most famous football club of the world, Barcelona, which wants to make contribution to the peace process in the Middle East.”
যার ভাবার্থ করলে দাঁড়ায় :
“ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বিশ্বসেরা ক্লাব বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি সফরে বরন করে নেন।”
অর্থাৎ, মেসি এবং নেইমারের ইহুদিদের তীর্থস্থান পরিদর্শনের ছবি ব্যবহার করে তাদেরকে ইজরায়েলের সমর্থক দাবি করা হয়। কিন্তু উক্ত শান্তি সফরে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয় ভূখন্ডে ভ্রমণ করে।
ভিডিওর পরবর্তী অংশে দেখা যায়, ম্যাচ পরবর্তী সময়ে পুরস্কার গ্রহণের সময় ইজরায়েলের ব্যক্তি দাবি করা একজন মানুষকে উপেক্ষা করে চলে যান রোনালদো। তবে উক্ত ব্যক্তিটি ইজরায়েলি নয় এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে উক্ত ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে নি রোনালদো।
কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Football on BT Sport নামক টুইটার একাউন্টে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর “Ronaldo’s not one for silver medals, is he?” CR7 was not having it. Straight off.” শীর্ষক শিরোনামের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে ইজরায়েলের প্রতিনিধিকে উপেক্ষা করার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তবে উক্ত ভিডিও এবং ক্যাপশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ইতালিয়ান সুপার কাপে ম্যাচ হারের কারণে রোনালদো অসন্তুষ্ট হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করে করমর্দন না করেই মঞ্চ ত্যাগ করে রোনালদো।
এছাড়াও, ভিডিওতে রোনালদোর সামনের ব্যক্তিটি ইজরায়েলি নন। উক্ত ব্যক্তির নাম Luca Ferrari. যিনি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সৌদিতে নিযুক্ত ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
উক্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগ ইতোমধ্যে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ।
এছাড়াও, রোনালদোর ফিলিস্তিনকে সমর্থনের দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ পাওয়া যায় নি।
এছাড়াও, রোনালদোর ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট এবং টুইটার একাউন্ট পর্যবেক্ষণ করেও উক্ত দাবির কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় নি।
অর্থ্যাৎ, বিভিন্ন সময়ে ভিডিওর খন্ডিত অংশ ব্যবহার করে প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে ইজরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে রোনালদো ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
মূলত, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশে অনুদান করেন রোনালদো। উক্ত বিষয়টি মুসলিম বিশ্বে বেশ প্রশংসিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রোনালদোর বিভিন্ন সময়ের ভিডিওত খন্ডিত অংশ প্রযুক্তির সাহায্যে এডিট করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে রোনালদো ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে।
সুতরাং, রোনালদো ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে দাবিতে উক্ত ভিডিওটি প্রচারিত হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- NBCSports : Lionel Messi, Neymar head to Middle East on “Peace Tour” with Barcelona
- Anadolu Agency : Messi and his friends visit Palestine
- Football on BT Sport : Ronaldo’s not one for silver medals, is he?” CR7 was not having it. Straight off
- AFP Fact Check : This video shows Ronaldo taking off his medal after losing a match in 2019