সম্প্রতি “ওনার (নুরুল হুদা) হাত ধরেই বিশ্বে প্রথমবারের মতো নিশিরাতের সরকারের আবির্ভাব ঘটে। পুরস্কার স্বরুপ যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়ে তার ভিসা বাতিল করেছে। দেশের মানুষও যথোপযুক্ত সম্মান দেখানো সময় খুঁজছে..- ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার ভিসা বাতিল সংক্রান্ত দাবিটি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নয় বরং তার নামে তৈরি একটি ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে দাবিটি করা হয়েছে। পাশাপাশি, কে এম নূরুল হুদার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল সংক্রান্ত দাবির স্বপক্ষে কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি অর্থাৎ কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
গত ০৬ জানুয়ারি সকাল ১১ টা ৫৬ মিনিটে “Dr. Zafrullah Chowdhury” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার মার্কিন ভিসা বাতিল দাবিতে একটি পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে, জনাব নুরুল হুদার মার্কিন ভিসা বাতিল বলে দাবি করেছেন ড. জাফরুল্লাহ শীর্ষক তথ্যটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে, অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে তৈরি করা উক্ত ফেসবুক পেজটি ভুয়া। সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজ-২৪ এবং দৈনিক মানবজমিন এর অনলাইন সংস্করণে ২০২১ সালের ০২ আগস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন হতে জানা যায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার নামে থাকা একাধিক ভুয়া আইডি এবং পেজের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় জিডি করে রেখেছেন।
উক্ত পেজের ট্রান্সপ্যারেন্সি সেকশন থেকে জানা যায় পেজটি দুইজন এডমিন কর্তৃক সুইডেন থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিষয়টি অধিক নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিম গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাংগীর আলম মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান “জনাব জাফরুল্লার নামে থাকা আইডি অথবা পেজের সঙ্গে ওনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং এই বিষয়ে থানায় বহুবার জিডি করা হয়েছে”। অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে উক্ত পেজটি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নয়।
মূলত, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে তৈরি ভুয়া পেজের পোস্টকেই সূত্র হিসেবে ধরে “নুরুল হুদার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের তথ্য জানিয়েছেন ড. জাফরুল্লাহ” শীর্ষক দাবিটি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি,গ্রুপ এবং পেজে প্রচার হতে থাকে।
গুজবের সূত্রপাত
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলসের সহায়তায় দেখা যায়, গত ৫ জানুয়ারিতে সর্বপ্রথম জনাব নুরুল হুদার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল সংক্রান্ত তথ্য ফেসবুকে প্রচার করা হয়। Mohammad Mainul Islam নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ৫ জানুয়ারি দুপুর ১.২৭ মিনিটে সর্বপ্রথম উক্ত দাবিতে পোস্ট করা হয়, এরপর Let My Voice Be Heard এবং Londol Bangla Channel পেজ দুইটি থেকে পর্যায়ক্রমে বিকেল ৩.৩৩ মিনিটে এবং ৩.৪৫ মিনিটে একই তথ্য প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে তথ্যটি দ্রুতই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, উক্ত পোস্টগুলোতে কোন তথ্যপ্রমাণ বা সূত্রের উল্লেখ ছিলোনা।
এরপর, গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৭ জানুয়ারি ’ফেলানী হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ লেবার পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত আগ্রাসীবিরোধী কনভেনশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ (অবসরপ্রাপ্ত) নুরুল হুদাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবি করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন। পরবর্তীতে, চ্যানেল ২৪ এ ‘এবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে সিইসি‘ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রচারের পর তথ্যটি ব্যাপকভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, চ্যানেল২৪ উক্ত শিরোনাম ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশন করলেও সংবাদের ভেতরে জানানো হয় এটি শুধুমাত্র জনাব হাফিজের মন্তব্য এবং তারাও তথ্যটির কোন সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি।
রিউমর স্ক্যানার টিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে সিইসি নুরুল হুদার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোন তথ্য খুঁজে পায়নি। সেখানে সার্চের মাধ্যমে র্যাব এবং র্যাবের ৭ জন কর্মকর্তার উপরে দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলেও নুরুল হুদা সার্চের মাধ্যমে সেখানে কোন রেজাল্ট পাওয়া যায়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন এর ভেরিফাইড টুইটার একাউন্টেও সিইসি নুরুল হুদার ভিসা বাতিল সংক্রান্ত কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। মূলত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন। তার টুইটার একাউন্টের গত ৭ দিনের এক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করে সেখানে ক্যারিবীয় রাষ্ট্র কিউবা’র ৮ জন সরকারি কর্মকর্তার উপরে ভিসা রেস্ট্রিকশন আরোপ নিয়ে গত ৭ জানুয়ারিতে প্রকাশিত টুইট পাওয়া গেলেও নুহুল হুদা সংক্রান্ত কোনকিছু সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
The U.S. imposed visa restrictions on 8 Cuban government officials. Those who jail peaceful protesters and sentence them to unjust prison terms must be held accountable. We stand with the Cuban people in their fight for freedom.
— Secretary Antony Blinken (@SecBlinken) January 6, 2022
যেহেতু জনাব হাফিজ উদ্দিন আহমদের দেয়া উক্ত বিবৃতির প্রায় দুই দিন আগে থেকেই সিইসি’র মার্কিন ভিসা বাতিল সংক্রান্ত দাবি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে তাই তার এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হওয়া পোস্ট নির্ভর বলে ধারণা করা যায়।
উল্লেখ্য, London Bangla Channel, Mohammad Mainul Islam সহ এধরণের ফেসবুক পেজগুলোতে বিগত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজনের ভিসা বাতিল এবং নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। তবে, ইতিপূর্বেই রিউমর স্ক্যানার টিম উক্ত পেজগুলোতে ছড়ানো তিনটি তথ্যকে গুজব হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সুইজারল্যান্ডের ভিসা বাতিল সংক্রান্ত গুজব।
বিটিআরসি মহাপরিচালককে কানাডার ভিসা না দেওয়ার গুজব।
প্রতিমন্ত্রী পলককে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেয়া ও পুরোনো ছবি প্রচারের গুজব।
প্রসঙ্গত, ০৮ জানুয়ারী ২০২২-এ মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র দৈনিক কালের কন্ঠকে জানান “নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয় নি এবং ১০ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশি কারো ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় নি।”
অর্থাৎ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল সংক্রান্ত দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং গুজব। পাশাপাশি, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নুরুল হুদার ভিসা বাতিলের দাবি করেছেন এরুপ তথ্যটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
- Claim Review: নুরুল হুদার মার্কিন ভিসা বাতিল
- Claimed By: Facebook Posts
- Fact Check: False
[/su_box]