সম্প্রতি, “দেশ বাঁচাতে খালেদার সাথে হাসিনার জরুরি বৈঠক সিমান্তে ভারতের গুলিতে বিজিবির লাশের সারি” শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি এবং সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে বিজিবির লাশের সারির দাবিও সঠিক নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ঘটনার ফুটেজ জুড়ে দিয়ে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি একটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই-১
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Jamuna Tv এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি “এবার বিএসএফের ছোড়া ককটেলে বাংলাদেশি যুবক নিহত | Lalmonirhat BSF Killed | BGB | Jamuna TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশের সাথে আলোচিত সংবাদ পাঠ অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি লালমনিরহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর নিক্ষিপ্ত ককটেল বিস্ফোরণে বাংলাদেশি একজন যুবক নিহত হয়েছেন।
ভিডিও যাচাই-২
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সাংবাদিক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট মোস্তফার ফিরোজের ইউটিউব চ্যানেল Voice Bangla তে গত ২৭ জানুয়ারি “‘বিজিবি সদস্য রইস উদ্দিন নি*হত’ জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের দাবি বিএনপির I Mostofa Feroz I Voice Bangla” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

উক্ত ভিডিওতে গত ২১ জানুয়ারি যশোর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিন নিহত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন মোস্তফা ফিরোজ।
উপরোক্ত দুইটি ভিডিওর কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে খালেদা জিয়ার বৈঠকের কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে বিজিবি সদস্যদের লাশের সারি দাবির স্বপক্ষেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে পৃথক দুইটি ঘটনায় বিএসএফের গুলিতে এক বিজিবি সদস্যসহ একজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ওপরে উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়।
এছাড়াও, মূলধারার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকেও আলোচিত দাবির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২১ জানুয়ারি যশোর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিন নিহত হন। পরবর্তীতে ২৮ জানুয়ারি লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফ এর নিক্ষিপ্ত ককটেল বিস্ফোরণে রাফিউল ইসলাম ওরফে টুকলু নিহত হয়েছেন। এই সকল ঘটনার প্রেক্ষিতে “দেশ বাঁচাতে খালেদার সাথে হাসিনার জরুরি বৈঠক সিমান্তে ভারতের গুলিতে বিজিবির লাশের সারি” দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে বিজিবির লাশের সারিন এবং সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।