১০ মিনিটের মধ্যে সিটে না বসলে টিকেট বাতিল সংক্রান্ত রেলের নতুন নিয়ম দাবিতে প্রচারিত সংবাদটি ভারতের

সম্প্রতি, রেলে নতুন নিয়ম, ১০ মিনিটের মধ্যে সিটে না বসলে টিকিট বাতিলের দাবি সংক্রান্ত একটি সংবাদ বাংলাদেশের দাবিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম এবং ফটোকার্ড যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

টিকেট বাতিল

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রেলে নতুন নিয়মে ১০ মিনিটের মধ্যে আসনে না বসলে টিকিট বাতিলের দাবিকৃত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘটনা দাবিতে সেদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদকে বাংলাদেশের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর সূত্র ধরে দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে (কালবেলা, সময় টিভি, ঢাকা পোস্ট, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, জুমবাংলা, ডেইলি বাংলাদেশ) এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Kalbela

প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সংবাদগুলোর শিরোনামে ঘটনাটির স্থান উল্লেখ করা না হলেও প্রতিবেদনগুলোর বিস্তারিত অংশে এটি ভারতীয় রেলওয়ে সেবার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের নেওয়া একটি পদক্ষেপ বলে জানানো হয়েছে। সংবাদগুলোয় দাবি করা হচ্ছে, যদি কোনো যাত্রী নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত ১০ মিনিটের মধ্যে নিজের আসনে বসতে না পারে তাহলে তার সিট বাতিল বলে গণ্য হবে।

তাছাড়া একাধিক গণমাধ্যম তাদের ফেসবুক পেজে (, ,) বিষয়টির বিস্তারিত উল্লেখ না করে শুধুমাত্র শিরোনাম এবং ফটোকার্ড পোস্ট করার ফলে ঘটনাটি ভারতের হলেও স্থানের নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশে প্রচার করায় বিষয়টি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের নেটিজেনরা বিষয়টি সঠিকভাবে না জেনেই ঘটনাটি বাংলাদেশের বলে মনে করেছেন।

Screenshot: Facebook

উক্ত পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স বিশ্লেষণ করে নেটিজেনদের নিকট তথ্যটি বাংলাদেশের ভেবে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতেও দেখা যায়।

Collage: Rumor Scanner

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম News18 এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই “Will Your Train Ticket Be Cancelled If You Are Late By 10 Minutes? Railway Official Answers” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্রেন ছাড়ার ১০ মিনিটের মধ্যে আসনে না পৌঁছালে টিটি চাইলে অন্য কাউকে নির্দিষ্ট যাত্রীকে আসন দিয়ে পারবে এমন দাবিতে একটি তথ্য ভারতীয় গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। তবে নিউজ ১৮ কে দেওয়া সাক্ষাতকারে পিআইবি রেলের মহাপরিচালক (ডিজি) যোগেশ বাওয়েজা জানান ট্রেন ছাড়ার ১০ মিনিটের মধ্যে নিজ আসনে না বসলে টিকিট বাতিলের তথ্যটি মিথ্যা। হ্যান্ড হেল্ড স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর টিকিট চেক করার জন্য টিটি ৩০ মিনিট সময় নেয়। এর পর যদি কেউ ১০ মিনিট দেরি করে তাহলে সেক্ষেত্রে টিটি অন্য কাউকে আসন দিয়ে দিতে পারবে।

খেয়াল করুন, এ সংক্রান্ত সংবাদটি ২০২৩ সালের জুলাইয়ের। ভারতীয় কতিপয় গণমাধ্যমে এই সংবাদটিই সম্প্রতি নতুন করে প্রচার হওয়ার ফলে তা বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও প্রচার হতে শুরু করে। 

তবে এ সম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রেল কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়ম অনুসারে ১০ মিনিটের মধ্যে আসনে না বসলে টিকিট বাতিলের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ভারতের রেল কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়ম দাবি করে গেল বছর সে দেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, অনুসারে হ্যান্ড হেল্ড স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের পর ১০ মিনিটের পর কেউ আসনে না বসলে সেই আসনে টিটি অন্য যাত্রীদের বসাতে পারবেন। উক্ত সংবাদটি সম্প্রতি ভারতেরই কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যার বরাতে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ইন্টারনেটে প্রচার করেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, ভারতীয় হ্যান্ড হেল্ড স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার ১০ মিনিটের মধ্যে আসনে না বসলে টিকিট বাতিলের দাবিতে প্রচারিত সংবাদকে বাংলাদেশের গণমধ্যমের  শিরোনামে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img