এক বাড়ি থেকেই নগদ ২০ কোটি অর্থ উদ্ধারের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের

সম্প্রতি, “এক বাড়িতেই মিলল নগদ ২০ কোটি!” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি অনলাইন নিউজ পোর্টাল Bd24live এর একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে এই ঘটনাটি বাংলাদেশের। 

কোটি

Bd24live এর ফটোকার্ড যুক্ত করে উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এক বাড়ি থেকে নগদ ২০ কোটি অর্থ উদ্ধারের  ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের ঝাড়খণ্ডের।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ফটোকার্ডটিতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল Bd24live লোগো রয়েছে এবং প্রচারের তারিখ হিসেবে ০৬ মে ২০২৪ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে এসব তথ্যের সূত্র ধরে ফেসবুকে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে Bd24live এর ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ডটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Bd24live Facebook Page

উক্ত ফটোকার্ড পোস্টের মন্তব্য ঘরে এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনের (আর্কাইভ) উল্লেখ পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২৫ কোটি রূপি নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অভিযানের একপর্যায়ে ঝাড়খন্ডের গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী আলমগীর আলমের ব্যক্তিগত সচিব সঞ্জীব লালের গৃহ সহকারীর বাড়িতে হানা দেওয়া হয়। এসময় ওই সহকারীর বাড়ির একটি কক্ষে টাকার পাহাড়ের দেখা মেলে, যার পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি রূপি। 

এছাড়া একই বিষয়ের সংবাদ শিরোনামে ভারতের কথা উল্লেখ না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশীয় গণমাধ্যম দ্যা মিরর অব বাংলাদেশ, ঢাকা টাইমস এবং আমার সংবাদ

প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করায় বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন না পড়েই তারা বিষয়টিকে বাংলাদেশের মনে করে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

Collage: Rumor Scanner

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Times of India এর ওয়েবসাইটে গত ০৬ মে “ED recovers huge amount of cash from alleged aide of Jharkhand minister”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ঝাড়খন্ডের রাঁচি জুড়ে একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়েছে এবং ঝাড়খণ্ডের গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী এবং কংগ্রেস বিধায়ক আলমগীর আলমের একজন কথিত ঘনিষ্ঠ সহযোগীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ‘বেহিসাবি’ নগদ উদ্ধার করেছে।

অর্থাৎ, এক বাড়িতেই নগদ ২০ কোটি অর্থ উদ্ধারের ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এ সম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম উল্লেখ না করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অভিযানের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক টাকা উদ্ধার সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২৫ কোটি রূপি নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অভিযানের একপর্যায়ে ঝাড়খন্ডের গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী আলমগীর আলমের ব্যক্তিগত সচিব সঞ্জীব লালের গৃহ সহকারীর বাড়িতে হানা দিলে সেখান থেকে প্রায় ২০ কোটি রূপি উদ্ধার করা হুয় । উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফটোকার্ড ও গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টিকে বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের একাধিক ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক নগদ অর্থ উদ্ধারের ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img