প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিলের গুজব

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিলসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য পিটার হাসকে ধন্যবাদ’ শীর্ষক শিরোনামে সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট মিনা ফারাহর একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

মার্কিন ভিসা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিল করা হয়নি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও এসম্পর্কিত কোনো ঘোষণা দেননি বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ২০ সেপ্টেম্বর মিনা ফারাহ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়। ভিডিওটিতে সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট মিনা ফারাহ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিল হয়েছে বলে দাবি করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিটার হাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

বিষয়টি অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে গণমাধ্যম বা অন্যকোনো সূত্রে এই বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এসম্পর্কিত কোনো মন্তব্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন ভিসা বাতিলের দাবিটি অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এর বক্তব্য থেকে জানা যায়, ভিসা নীতির আওতায় যাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  আলোচিত ভিডিওটি প্রচারের তারিখে (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থা করছিলেন।  তিনি নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে ভাষণ দেন। এটা ছিল তার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৭তম ভাষণ। এই ভাষণে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি প্রচারের সময়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থা করেছেন এবং জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছেন।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিলের বিষয়টি গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, যে সময় তার ভিসা বাতিলের দাবি প্রচার হয় ঠিক সেসময় তিনি সেসময় জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশ নিতে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই অবস্থান করছিলেন এবং তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেই আছেন। তাছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিলের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মার্কিন ভিসা বাতিলের গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন-

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন ভিসা বাতিলের দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img