চটকদার থাম্বনেইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানকে গ্রেফতারের গুজব প্রচার

সম্প্রতি, ‘ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতায় তাকে ফাঁসির নির্দেশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান গ্রেফতার হননি এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতায় তাকে ফাঁসির নির্দেশও দেওয়া হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। গত ১১ সেপ্টেম্বর B tv news 24 নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। ভিডিওটির কোথাও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানকে গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি এবং এসম্পর্কিত কোনো ভিডিও সেখানে দেখানো হয়নি। তবে সেখানে শুরুতেই বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার এসম্পর্কিত একটি আলোচনার ভিডিও দেখানো হয় যেটি গত ০৯ সেপ্টেম্বর Rumeen’s Voice নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও সেখানে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের অপর একটি ভিডিও যুক্ত করা হয়েছে যেটি গত ০৬ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টার সুমন তার ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন করেন। এই ভিডিওতেও সুমন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের বিবৃতিতে সাক্ষর না করার বিষয়ে আলোচনা করেন। এই দুই আইনজীবীর বক্তব্যেও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানকে গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের গ্রেফতার বা ফাঁসির নির্দেশের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইটে গত ০৮ সেপ্টেম্বর ‘ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদকে অব্যাহতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর (জিপি/পিপি শাখা) অনুবিভাগ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) তাকে অব্যাহতি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘দ্য বাংলাদেশ ল অফিসারস অর্ডার, ১৯৭২ এর ৪(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়ার নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে গত ১২ সেপ্টেম্বর ‘বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না বরখাস্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বরখাস্ত হওয়ার পর গত ০৮ সেপ্টেম্বর বিকালে এমরান স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের ফটকে পাশের অভ্যর্থনাকক্ষে গিয়ে অবস্থান নেন। সন্ধ্যার পর পুলিশ পাহারায় বাসায় ফেরেন তিনি।

সেদিন রাতে এমরান গণমাধ্যমে বলেছিলেন, তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে, এ আশঙ্কা থেকে মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। পরে তার কোনো ক্ষতি হবে না, সে বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরেছেন।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানকে গ্রেফতার বা রাষ্ট্রদ্রোহিতায় ফাঁসির নির্দেশ দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে অধ্যাপক ডক্টর ইউনূসের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দেন বিশ্বের দেড় শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি। সেই খোলা চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সবাইকে সাক্ষর করার কথা বলা হলে ‘ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হয়েছে’ মন্তব্য করে এতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান সাক্ষর করা থেকে বিরত থাকেন। পরবর্তী ঐ ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং তিনি নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয়ের জন্য যান। যদিও পুলিশের আশ্বাসে তিনি আবার বাসায় ফিরেন। কিন্তু এই ঘটনার পরই ‘ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতায় তাকে ফাঁসির নির্দেশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি ইউটউবে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান গ্রেফতার হননি এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতায় তাকে ফাঁসির নির্দেশও দেওয়া হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের দাবিতে ভিডিও প্রচারের প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। 

সুতরাং, সদ্য বরখাস্তকৃত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img