বুধবার, অক্টোবর 9, 2024

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন দাবি করে একাধিক ভিডিও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতারের দাবিটি সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

গত ০২ মে Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হলেন শেখ হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

Screenshot: YouTube

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি প্রতিবেদন ভিডিও। ১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও’তে বলা হয়, “এবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে গ্রেফতার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত পহেলা মে আইএমএফ এর বিশেষ অধিবেশনে যোগ দিতে ওয়াশিংটন যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশের আয়োজন করলে আওয়ামী পন্থীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে প্রায় ২০-৩০ নেতাকর্মী আহত হয়। পরে ৫ জনকে গুরুতর অবস্থায় হসপিটালে ভর্তি করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ওয়াশিংটন পুলিশের হস্তক্ষেপ নেওয়া হয়। পরে ওয়াশিংটন পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। এই সংঘর্ষের পেছনে শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে জানান ওয়াশিংটন পুলিশ। এজন্য শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ১৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে গিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাইডেনের সাথে কথা বলেন।”

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

এছাড়াও একই ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ৩ মে ‘নিউইয়র্কের হোটেল থেকে গ্রেফতার হলেন শেখ হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে অন্য একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

Screenshot: YouTube

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি প্রতিবেদন ভিডিও। ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের এই ভিডিও’তে বলা হয়, “এবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে গ্রেফতার হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৫ এপ্রিল ১৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে আইএমএফ এর বিষয় অধিবেশনে যোগ দিতে বের হলে তখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য সংবিধান সংশোধন করে হলেও নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের আদেশ দেন যুক্তরাষ্ট্র।”

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot: Sabai Sikhi YouTube

পাশাপাশি ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, ভিডিওটি শুরুর ৩০ সেকেন্ড মূল ধারার গণমাধ্যম সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ‘প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সর্বশেষ’ শীর্ষক শিরোনামে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।

Screenshot: Somoy TV YouTube

এবিষয়ে দাবি এবং প্রকৃত তথ্যের পাশাপাশি তুলনা দেখুন:

Image Comparison by Rumor Scanner

এছাড়াও বিষয়টি অধিকতর অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক আমাদের সময় এর অনলাইন সংস্করণে গত ০২ মে ‘বিশ্বব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে আহত ৫, গ্রেপ্তার ৩’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Amader Somoy

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য প্রদানের সময় বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ উভয় দলের ৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশ উভয় দলের ৩ সমর্থকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরে দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

অর্থাৎ, উক্ত প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যকার সংঘর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হননি। এতে উভয় দলের ৩ জন সমর্থক গ্রেফতার হলেও পরবর্তীতে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এছাড়াও অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এ ‘লন্ডনের পথে ওয়াশিংটন ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন(আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: bdnews24.com

উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র (বাসস) বরাতে জানানো হয়, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডন রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার(০৪ মে) সকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ছাড়েন।

অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 

পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতার সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, গত ০২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য প্রদানের সময় বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত একাধিক ভিডিওতে দাবি করা হয় এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ৪ মে লন্ডনের উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতারের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হলে সেসময় এবিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img