সম্প্রতি, “হরিণ টি গর্ভবতী ছিল।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ইম্পালা ও একটি কুমিরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

যা দাবি করা হচ্ছে
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর ক্যাপশনে বলা হয়, “হরিণ টি গর্ভবতী ছিল। শিকারের সময়ে হরিণটির পেটে বাচ্চার নড়াচড়া দেখে কুমির টি শিকার ছেড়ে দেয়। এদের থেকে মানব জাতির শিক্ষা নেওয়া উচিত।”
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গর্ভবতী হরিণের পেটে বাচ্চার নড়াচড়ার দাবিতে ইম্পালা ও কুমিরের ভিডিওর সাথে যে গল্পটি প্রচারিত হচ্ছে তা সত্য নয় বরং উক্ত ভিডিওর সাথে কল্পিত বানোয়াট একটি গল্প জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে ইম্পালা ও কুমিরের এই ভিডিওটির সঙ্গে উক্ত গল্প জুড়ে দেওয়া বেশ কিছু পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।


রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে dailymotion.com নামে একটি ওয়েবসাইটে “Crocodile does impossible and let’s go its meal” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ডেইলি মোশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে এই ভিডিওটি ধারণ করেন ইতোশা জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে আসা এক ব্যক্তি। ঐ ব্যক্তির বক্তব্য অনুযায়ী, ইম্পালাটি কয়েকটি কুকুরের তাড়া খেয়ে নদীর দিকে ছুটে আসে। আর তখনটি একটি কুমির ইম্পালাটির পায়ে কামড়ে ধরে। তবে কুমিরটি পানিতে না থেকে ডাঙ্গায় থাকার কারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। সুযোগ বুঝে ছুটে পালায় ইম্পালাটি। ক্ষুধার্ত কুমিরটি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় নদীতে।
প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিওর গায়ে লাগানো লোগো সার্চ করে মূল ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তিকে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। তবক কিছু খুঁজে পাওয়া যায় নি।
পরবর্তীতে, একই পদ্ধতিতে কি-ওয়ার্ড সার্চে Mail Online নামে ব্রিটিশ একটি অনলাইন পোর্টালে ১৫ নভেম্বর ২০১৭ “Lucky impala cheats death as a crocodile inexplicably releases it from its huge jaws after snatching it by a river” শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।

এই সংবাদেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান Hoax Or Fact এর ওয়েবসাইটে এই ভিডিও সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

তাদের প্রতিবেদনেও ভিডিওটির সঙ্গে যে গল্প জুড়ে প্রচার করা হচ্ছে তাকে মনগড়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মূলত, আফ্রিকার নামিবিয়ায় ইতোশা ন্যাশনাল পার্কে ইম্পালা, হরিণসদৃশ প্রাণীটির সঙ্গে কুমিরের ধ্বস্তাধ্বস্তির একটি ভিডিও ধারণ করেন পার্কটিতে ঘুরতে আসা একজন ব্যক্তি। ইম্পালাটি কয়েকটি কুকুরের তাড়া খেয়ে নদীর দিকে দৌড়ে আসে। আর তখনই পাড়ে বসে থাকা একটি ক্ষুধার্ত কুমির কামড়ে ধরে ইম্পালাটির পা। বেশ কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধ্বস্তির পর সুযোগ বুঝে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে পালায় প্রাণীটি। ভিডিও ধারণকারীর বক্তব্য অনুযায়ী ইম্পালাটি কুকুরের তাড়া খেয়েছে বলে বেশ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলো। এই জোরে জোরে শ্বাস নেওয়াকেই পেটে বাচ্চার নড়াচড়া হিসেবে উপস্থাপন করে কাল্পনিক গল্প জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইম্পালা একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী যা হরিণের মতো দেখতে। এটি Artiodactyla পর্বের Bovidae পরিবারের প্রাণী।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন ছবি/ভিডিওর সঙ্গে কাল্পনিক, বানোয়াট গল্প জুড়ে দেওয়া ফেসবুক পোস্ট শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার টিম পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুতরাং, ইম্পালা-কুমিরের ধ্বস্তাধ্বস্তির ভিডিওর সাথে একটি বানোয়াট গল্প জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।