সম্প্রতি ‘নেলসন ম্যান্ডেলা জেলে থাকাকালীন সময়ে পানি খেতে চাইলে যে কারারক্ষী তাকে প্রস্রাব খেতে দিত, তাকেই রেস্টুরেন্টে খাইয়েছিলেন ম্যান্ডেলা’ শীর্ষক দাবিতে একটি গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে কারারক্ষীর প্রস্রাব পান সংক্রান্ত গল্পটি সঠিক নয় বরং নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে দীর্ঘদিন যাবত উক্ত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।
এবিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ম্যান্ডেলার বিষয়ে আলোচিত পোস্টগুলোতে উল্লেখিত তথ্য পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
আলোচিত পোস্টগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ‘নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর একদিন এক হোটেলে খেতে গিয়ে তার জেলে থাকার সময়ের একজন কারারক্ষীর সাথে দেখা হয়। তখন সেই ব্যক্তি ম্যান্ডেলাকে দেখে ভয় পেলেও ম্যান্ডেলা তাকে কাছে টেনে নেয় এবং একসাথে খাবার খায়। পরে বিষয়টি নিয়ে তার সাথের লোকজন প্রশ্ন করলে ম্যান্ডেলা তাদেরকে বলেন, ওই লোকটি তার(ম্যান্ডেলার) জেলে থাকার সময়ে গার্ড ছিলেন এবং পিপাসা পেলে তিনি ম্যান্ডেলাকে নিজের(গার্ড) প্রস্রাব খেতে দিতেন। অর্থাৎ, ম্যান্ডেলা এত বছর পর সুযোগ পেয়েও কোনো প্রতিশোধ না নিয়ে ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন বলেই পোস্ট গুলোতে উল্লেখ পাওয়া যায়।’
উক্ত পোস্টগুলোর তথ্য ধরে অনুসন্ধান
ম্যান্ডেলার বিষয়ে প্রচারিত এই পোস্টগুলোতে কোথাও ওই হোটেলটির নাম বা স্থান উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও ঘটনার সময়কাল এবং সেসময় ম্যান্ডেলার সাথে যারা ছিল তাদের পরিচয় বা তাদের ব্যাপারে তেমন কিছু নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। এমনকি সেখানে আলোচিত সেই কারারক্ষীর নাম বা তার ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
নেলসন ম্যান্ডেলার বিষয়ে আলোচিত দাবিগুলো অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে উল্লিখিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি।
South African News Agency এর ওয়েবসাইটে ‘Nelson Mandela famous quotes’ সেকশনেও নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে প্রচারিত এই বিষয়টি সম্পর্কিত কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই।

পরবর্তী অনুসন্ধানে নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও এধরনের কোনো ঘটনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে আফ্রিকা ভিত্তিক ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান Africa Check এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল ‘Did Mandela invite the prison guard who used to urinate on his head to lunch? Facebook anecdote false’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ম্যান্ডেলার কারারক্ষীর প্রস্রাব পান সম্পর্কিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জোহানেসবার্গের নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের আর্কাইভ অ্যাণ্ড রিসার্চ ডিরেক্টর রাজিয়া সালেহ আফ্রিকা চেককে উক্ত বিষয়ে বলেন, “এবিষয়ে আমাদের কাছে অসংখ্য প্রশ্ন এসেছে। আমরা এটিকে সত্য বলে মনে করি না।”
তিনি আরও বলেন, “মাদিবা(ম্যান্ডেলা) সবসময় বলতেন, জেলে কখনো তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়নি। এবং কারাগারে কখনো একজন কারারক্ষী বা অন্যকারো দ্বারা তাকে প্রস্রাব খেতে দেওয়া হয়নি।”
পাশাপাশি, নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন এই গল্পের উৎস বের করতে পারেনি। এছাড়াও এটা সত্য হওয়ারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে কারারক্ষীর প্রস্রাব পান সম্পর্কিত তথ্যগুলো বানোয়াট।
মূলত, সম্প্রতি ‘নেলসন ম্যান্ডেলা জেলে থাকাকালীন সময়ে পানি খেতে চাইলে যে কারারক্ষী তাকে প্রস্রাব খেতে দিত, তাকেই রেস্টুরেন্টে খাইয়েছিলেন ম্যান্ডেলা’ শীর্ষক দাবিতে একটি গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে ম্যান্ডেলাকে নিয়ে প্রচারিত এই গল্পটি ভুয়া। পূর্বে এই গল্পটি ছড়ানোর প্রেক্ষিতে নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন থেকে উক্ত গল্পটিকে মিথ্যা বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে কারারক্ষীর প্রস্রাব পান সংক্রান্ত একটি গল্প ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- South African News Agency: Nelson Mandela famous quotes
- Nelson Mandela Foundation: https://www.nelsonmandela.org/content/page/a-selection-of-nelson-mandela-quotes
- Africa Check: Did Mandela invite the prison guard who used to urinate on his head to lunch? Facebook anecdote false
- Rumor Scanner’s Own Analysis