চটকদার থাম্বনেইলে পুলিশ প্রধান নিহত হওয়ার বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

সম্প্রতি ‘বোমা হামলায় পুলিশ প্রধান নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত দাবিতে কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বোমা হামলায় বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান নিহতের ঘটনা ঘটেনি বরং বোমা হামলায় রুশ অধিকৃত জাপোরিঝিয়া প্রদেশের মেলিটোপোল শহরের পুলিশ প্রধান আলেক্সেন্ডার মিসচেনকো নিহত হয়েছেন এবং ভিডিওর থাম্বনেইলে দেশের নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের ছবি ব্যবহার করার ফলে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। 

গত ২৮ এপ্রিল News Plus নামের একটি পেজ থেকে ‘বোমা হামলায় পুলিশ প্রধান নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের ছবি ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

Screenshot: Facebook 

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। ৯ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের সময় বোমা হামলায় পুলিশ প্রধান নিহত হওয়ার বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৫ মিনিট ১২ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে। 

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বোমা হামলায় রুশ অধিকৃত জাপোরিঝিয়া প্রদেশের মেলিটোপোল শহরের পুলিশপ্রধান আলেক্সেন্ডার মিসচেনকো নিহত হয়েছেন। ২০২২ সালে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা চার অঞ্চলের একটি হচ্ছে জাপোরিঝিয়া। খবর বিবিসির। জাপোরিঝিয়া রাশিয়া দখলের আগে ও পরে প্রদেশটির মেলিটোপোল শহরের পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন আলেক্সেন্ডার মিসচেনকো। এ কারণে ইউক্রেনের লোকজন তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনের সেনারাই তাকে হত্যা করেছে।

Screenshot: Facebook

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ‘বোমা হামলায় মেলিটোপোলের পুলিশ প্রধান নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jugantor

প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির বরাতে জানানো হয়, ‘বোমা হামলায় রুশ অধিকৃত জাপোরিঝিয়া প্রদেশের মেলিটোপোল শহরের পুলিশপ্রধান আলেক্সেন্ডার মিসচেনকো নিহত হয়েছেন। ২০২২ সালে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা চার অঞ্চলের একটি হচ্ছে জাপোরিঝিয়া। জাপোরিঝিয়া রাশিয়া দখলের আগে ও পরে প্রদেশটির মেলিটোপোল শহরের পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন আলেক্সেন্ডার মিসচেনকো। এ কারণে ইউক্রেনের লোকজন তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনের সেনারাই তাকে হত্যা করেছে।’

পরবর্তীতে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি নিউজের অনলাইন সংস্করণে ‘Ukraine war: Partisan attack kills police chief in Russian-occupied Melitopol’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: BBC News

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। এছাড়াও দাবিকৃত ভিডিওতে এই সংবাদ পাঠের অংশে প্রদর্শিত ছবিটিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে বোমা হামলায় বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান নিহতের কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও’র বিস্তারিত প্রতিবেদন এবং এবিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান নয়, বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন রুশ অধিকৃত জাপোরিঝিয়া প্রদেশের মেলিটোপোল শহরের পুলিশ প্রধান আলেক্সেন্ডার মিসচেনকো।

মূলত, সম্প্রতি বোমা হামলায় রুশ অধিকৃত জাপোরিঝিয়া প্রদেশের মেলিটোপোল শহরের পুলিশ প্রধান আলেক্সেন্ডার মিসচেনকো নিহত হয়েছেন। তবে দেশটির নাম উল্লেখ না করে ‘বোমা হামলায় পুলিশ প্রধান নিহত’ শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের ছবি ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

উল্লেখ্য, ক্যাপশন এবং থাম্বনেইলে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, বোমা হামলায় রুশ অধিকৃত একটি শহরের পুলিশ প্রধান আলেক্সেন্ডার মিসচেনকো নিহত হওয়ার ঘটনার সংবাদের ভিডিও’র ক্যাপশনে দেশের নাম উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ‘বোমা হামলায় পুলিশ প্রধান নিহত’ লিখে প্রচার করা হচ্ছে এবং থাম্বনেইলে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img