১৫ই আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মিছিল করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মিছিলের এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত ডিসেম্বরে ধানমন্ডিতে আ’লীগ কর্মীদের ঝটিকা মিছিলের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওতে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার লোগো থাকার সূত্রে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ইউটিউবে পত্রিকাটির চ্যানেলে প্রকাশিত একই ভিডিওর সন্ধান মেলে।
ভিডিও থেকে জানা যায়, সেদিন ভোরে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ঝটিকা মিছিল করে আ’লীগ কর্মীারা।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ জার্নালের সে সময়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ধানমন্ডিতে হওয়া এই মিছিলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল।
সুতরাং, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্রলীগের মিছিল দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, “১৫ই আগস্ট কে ঘিরে আজ গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিশাল মহাসম্মেলনে লাখো মানুষের ভিড়” শীর্ষক দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ১৫-ই আগস্ট উপলক্ষে গুলিস্তানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্প্রতি কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন চলাকালে চ্যানেল২৪-এ প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ‘চ্যানেল ২৪’ এর লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ০৯ ডিসেম্বর “আজ গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক বাংলার ওয়েবসাইটে একই তারিখে অর্থাৎ ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর “পল্টনে সমাবেশ করতে পারছে না, এখানেই বিএনপির পরাজয়: কাদের” শিরোনামে আলোচ্য সমাবেশের বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর তারিখে রাজধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
এছাড়া, ১৫-ই আগস্ট উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের কোনো সমাবেশের খবর দেশিয় সংবাদমাধ্যমে অথবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে প্রকাশ হতে দেখা যায়নি।
সুতরাং, ২০২২ সালে রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন চলাকালে চ্যানেল২৪-এ প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের ক্লিপ সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে নরেন্দ্র মোদির ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ভারত সরকারের কাছে ৭ আগস্ট একটি আবেদন করেছিলাম এর প্রেক্ষিতে আজ (১৪ আগস্ট) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে অনুমতিপত্র পেয়েছি।
অর্থাৎ দাবি করা হয়েছে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে মোদির সাথে করমর্দনরত নারী তামান্না আক্তার ইয়াসমান।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে নরেন্দ্র মোদির সাথে করমর্দনরত নারীর নাম তামান্না আক্তার ইয়াসমান নয়, তিনি হলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদির সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফর করার সময়ের ছবি এবং ছবিতে মোদির সাথে করমর্দনরত নারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি। এছাড়া, শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করতে নরেন্দ্র মোদির কাছে থেকে অনুমতিপত্র নেওয়ার মতোও কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দিনের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষ করার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার দুই দেশ সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে কাতার গমন করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, দোহায় প্রধানমন্ত্রী মোদি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ বিষয়ে সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে একই তথ্যসংবলিত সংবাদ (১,২,৩) প্রকাশিত হয়।
এছাড়া, ছবিতে থাকা নারীর নাম রিম বিনতে রিম আল হাশিমি, তিনি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, Tamanna Akhter Yesman নামে পরিচালিত এই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমির ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির চেষ্টা নিয়ে গত ১৯ জুন বিস্তারিত ফ্যাক্টস্টোরি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদির সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি ও নরেন্দ্র মোদির করমর্দনরত ছবি দিয়ে কথিত তামান্না আক্তার ইয়াসমান বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের অনুমতিপত্র নিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বৈঠা মিছিলের ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশের ব্যানারে একদল ব্যক্তিকে বৈঠা হাতে একটি সমাবেশ স্থলে যেতে দেখা যায়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত বৈঠা মিছিলের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। বরং, ২০২৩ সালের ২৮ মে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশের ভিডিওকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে BNP – বিএনপি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৮ মে একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়।
Video Comparison by Rumor Scanner
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি স্পষ্ট সংস্করণ। যার শিরোনামে দাবি করা হয়, এটি সেবছরের ২৮ মে অর্থাৎ, ভিডিওটি প্রচারের দিন অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের ভিডিও। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মিছিলের ব্যানারে দেখা যায়, মিছিলটি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ জুয়েল গণির।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত-এর ফেসবুক আইডিতে ২০২৩ সালের ২৮ মে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশের বেশকিছু ছবি সম্বলিত একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
পোস্টটিতে সমাবেশে উপস্থিত অনেকের হাতে বৈঠা দেখতে পাওয়া যায়। তবে আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তিদের ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ছবিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত শান্তি সমাবেশে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটুও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
Screenshot: Facebook
পরবর্তীতে ইকরামুল হক টিটুর ফেসবুক আইডি পর্যালোচনার মাধ্যমে সেদিনের শান্তি সমাবেশের ৮০ টি ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
Screenshot: Facebook
উক্ত পোস্টের ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে তাতে বৈঠা হাতে মিছিলের আলোচিত ভিডিওর মোঃ জুয়েল গণির নেতৃত্বে আসা মিছিলটির দুটি ছবির খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে।
Comparison by Rumor Scanner
অর্থাৎ, ময়মনসিংহে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বৈঠা হাতে মিছিলের ভিডিওটি ২০২৩ সালের।
উল্লেখ্য, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ২০২৩ সালের ২৮ মে বিএনপির দেশব্যাপী কর্মসূচি ছিল। যার অংশ হিসেবে সেদিন ময়মনসিংহ বিএনপি জনসমাবেশ করে। একই দিন পাল্টা কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত জোটের নৈরাজ্য ও আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ।
সুতরাং, ২০২৩ সালের ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের বৈঠা মিছিলের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
গত ৭ আগস্ট খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে চারটি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, মৃতদেহ সৎকারের জন্য শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে একটি মসজিদের সামনে “হরে কৃষ্ণ হরে রাম” বলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এই হামলা করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাটি গত ৭ আগস্টের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালের ৭ আগস্ট শিয়ালী গ্রামে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলায় সেসময় করা একটি ফেসবুক পোস্ট কপি করে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Goutam Halder Pranto নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট করা একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।
Comparison by Rumor Scanner
পোস্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে খুলনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলার দাবিতে প্রচারিত পোস্টের প্রথম দুই পারার সাথে উক্ত পোস্টের শুরুর দুই পারার হুবহু মিল রয়েছে। উভয় পোস্টেই খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে হামলা হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে গৌতম হালদার প্রান্তর প্রোফাইলের ২০২১ সালের পোস্টটিতে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ততকালীন ইউএনও, পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম্বার প্রদান করা হয়। এছাড়া পোস্টটিতে হামলার ঘটনায় হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বেশ কয়েকটি ছবিও দেখতে পাওয়া যায়। যার সাথে সাম্প্রতিক হামলা দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিরও মিল পাওয়া যায়। পাশপাশি গৌতম হালদার প্রান্ত পোস্টে উল্লেখ করেন, সে ততকালীন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক। তবে তার প্রোফাইল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি।
পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যম সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেবছরের ৬ আগস্ট রাতে মন্দির থেকে কয়েকজন নারীভক্ত কীর্তন করতে করতে শিয়ালী মহাশ্মশানের দিকে যাচ্ছিলেন। পথের মাঝে একটি মসজিদ ছিল। মসজিদের ইমাম নারীদের কীর্তন করতে নিষেধ করেন। তখন তাদের মধ্যে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি নিয়ে পরদিন থানায় বৈঠক হওয়ার কথা থাকলে ৭ আগস্ট বিকেলে শতাধিক যুবক রামদা, চাপাতি, কুড়াল নিয়ে শিয়ালী গ্রামে হামলা চালায়। যাতে চারটি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু দোকান ও কয়েকটি বাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুতরাং, খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে ২০২১ সালে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাকে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
সম্প্রতি, ‘রংপুর মেডিকেল কলেজের হিন্দু ডাক্তার ডাক্তার মারু দেব-অনৈতিক কাজে ধরা পড়েছে। এদের কাছে কোন মুসলিম বোনকে কখনোই পাঠাবেন না’- শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কোয়ার্টারে এক নারীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পরা চিকিৎসক হিন্দু নন এবং তার নামও মারু দেব নয়। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত ডাক্তারের নাম এ বি এম মারুফুল হাসান ওরফে মারুফ। তিনি মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
অনুসন্ধানে দৈনিক যুগান্তরের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৭ আগস্ট ‘আ’পত্তি’কর অবস্থায় নারীসহ ড্যাব নেতা আটক’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
Video Comparison By Rumor Scanner
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ০৭ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কোয়ার্টারে আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয় জনতার কাছে আটক হন ডা. এ বি এম মারুফুল হাসান। পরবর্তীতে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷
সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন এলাকা থেকে পাথর লুটপাটের ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি দেশব্যাপী তুমুল আলোচনা চলছে৷ এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাথরসহ পুলিশ ও কয়েকজন ব্যক্তির একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ছবিতে পুলিশ কর্তৃক পাথরসহ আটককৃত সিলেটের সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটপাটকারীদের ছবি প্রদর্শিত হয়েছে।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি আসল নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি।
ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে পাথরসহ এভাবে অভিযুক্তদের আটক করা হলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হতো। এছাড়া, প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে প্রদর্শিত মানুষ, মানুষের অঙ্গভঙ্গি, শরীরের গড়ন, ত্বক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়াও, প্রচারিত ছবি পর্যবেক্ষণ করলে ডান পাশের নিচের অংশে ‘ai’ লেখা সম্বলিত একটি জলছাপ দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, গুগলের এআই টুল ব্যবহার করে কোনো ছবি তৈরি করলে তৈরি হওয়া এআই ছবিতে এরূপ জলছাপ দেখা যায়।
Comparison : Rumor Scanner
প্রচারিত ছবিটির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ছবিটি গত (১৩ আগস্ট) দুপুরে প্রথমদিকে এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হিসেবে লেবেল করে ব্যাঙ্গাত্মক ছবি হিসেবে প্রচার করা শুরু হয় যা ক্রমেই পরবর্তীতে আসল দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাথর উদ্ধার ও আটকের প্রচারিত ছবিটি এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হলেও মূলধারার গণমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ এর সূত্রে জানা যায়, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথরে পাথর লুট ও পাচারের বিরুদ্ধে বুধবার (১৩ জুলাই) রাত থেকে শুরু করে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি ট্রাকে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে নদীতে পুনরায় ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। এদিকে গতকাল (১৩ জুলাই) সাদাপাথরের আশপাশের এলাকা থেকে সিলেট জেলা প্রশাসনের অভিযানে জব্দ করা ১২ হাজার ঘনফুট পাথর রাতে সাদাপাথর এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হয়। এছাড়া, সাদাপাথর লুটপাটের অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুতরাং, পুলিশ কর্তৃক পাথরসহ আটককৃত পাথর লুটপাটকারীদের ছবি দাবিতে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি মেজর পদমর্যাদার সাদেকুল হক সাদেক নামে এক সেনাকর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত ৩১ জুলাই ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এ তথ্য জানান।
এরই প্রেক্ষিতে “আওয়ামীলীগ নেতাদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে ধরা পরলো সেনাপ্রধানের স্ত্রী” শীর্ষক থাম্বনেইল সম্বলিত একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, একইসাথে যমুনা টিভি, আমার দেশ, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং ডিবিসি নিউজের ফুটেজ একত্রিত করে আলোচিত দাবিটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
এর মধ্যে যমুনা টিভির ফুটেজে ‘রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান’ – এমন অডিও শোনা যায়। দৈনিক আমার দেশের ফুটেজে ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে ভাটারা থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত’ – এমন অডিও শুনতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফুটেজে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে আটক সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে করা মামলায় ৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত’ – এমন অডিও শোনা যায় এবং ডিবিসি নিউজের ফুটেজে এক আইনজীবীকে কথা বলতে শোনা যায়। তবে ডিবিসি নিউজের ফুটেজে অভিযুক্ত সুমাইয়া জাফরিনকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী হিসেবে দাবি করা হয়নি।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে আটক হওয়া সুমাইয়া জাফরিন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী নন। প্রকৃতপক্ষে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠকের’ অভিযোগের মামলায় সেনাবাহিনীর মেজর সাদেকুল হক সাদেকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে হেফাজতে নেওয়ার ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন সম্পাদনা করে আলোচিত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সেনাপ্রধানকে আটকের দাবিটিও বানোয়াট।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। ভিডিওটির কয়েকটি গণমাধ্যমের (যমুনা টিভি, আমার দেশ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডিবিসি নিউজ) সংবাদের ফুটেজ দেখানো হয়। তারপর ডিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে একজন আইনজীবীকে কথা বলতে দেখা যায়।
যমুনা টিভির ভিডিও ফুটেজ যাচাই
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ০১ আগস্টে ‘মেজর সাদেকুলের বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হবে: আইএসপিআর’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুর অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ভিজ্যুয়াল সাদৃশ্যতা থাকলেও অডিওতে অমিল লক্ষ্য করা যায়। মূল ভিডিওতে কোথাও ‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক’ শীর্ষক তথ্যের বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
মূল ভিডিওতে সংবাদ উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়, “রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক মেজর সাদেকুল হক সাদেকের বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করার কথা জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৭ জুলাই ওই কর্মকর্তাকে উত্তরার নিজ বাসা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলেও আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।”
অর্থাৎ, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে যে, যমুনা টিভির প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ সম্পাদনা করেই আলোচিত ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে।
আমার দেশের ভিডিও ফুটেজ যাচাই
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে দৈনিক আমার দেশের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০২ আগস্টে ‘আওয়ামী না’শ’ক’তা’য় সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তারা কোর্ট মা’র্শা’লে’র মুখোমুখি’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর শুরুর অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে, ভিডিওতে থাকা অডিও ক্লিপের মধ্যে অমিল লক্ষণীয়। মূল ভিডিওতে ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে ভাটারা থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত’ শীর্ষক কোনো তথ্যের উল্লেখ ছিলো না।
মূল প্রতিবেদনটির শুরুর অংশে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপনে নাশকতার ট্রেনিং-এ সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তা মেজর সাদেক ও তার সুপিরিয়র কমান্ডকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর সেনাবাহিনীর তরফ থেকে দু’টি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।”
অর্থাৎ, আমার দেশের সংবাদ প্রতিবেদন সম্পাদনা করে আলোচিত ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভিডিও ফুটেজ যাচাই
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৭ আগস্ট ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী জাফরিন ৫ দিনের রিমান্ডে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ভিডিওটিতে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে আটক সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে করা মামলায় ৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত’ শীর্ষক তথ্যের উল্লেখ করা হয়নি। উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপের সাদৃশ্যতা থাকলেও অডিও ক্লিপে অমিল দেখা যায়।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের মূল প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মেজর সাদেকুলের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে করা মামলায় ০৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ০৭ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।”
অর্থাৎ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিও প্রতিবেদন ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবি সম্বলিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ডিবিসি নিউজের ভিডিও ফুটেজ যাচাই
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৭ আগস্ট ‘মেজর সাদেকের স্ত্রী জাফরিন ৫ দিনের রি/মা/ন্ডে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটির ১ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময়ের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত অংশের ভিজ্যুয়াল সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়। তবে, ভিডিওটিতে কোথাও সুমাইয়া জাফরিনকে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।
অর্থাৎ, ডিবিসি নিউজ-এর এই প্রতিবেদন সম্পাদনা করে সেখানে মেজর সাদেকের নাম উহ্য রেখে আলোচিত ফুটেজটি তৈরি করা হয়েছে।
উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভিডিও প্রতিবেদনের ফুটেজগুলো সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে।
ইউটিউব থাম্বনেইল যাচাই
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার স্ত্রী দাবিতে প্রচারিত থাম্বনেইল ইমেজটি সম্পাদনা বা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে সেনাপ্রধান এবং তার স্ত্রীর ছবি এবং পেছনে থাকা পুলিশদের একইরকম মুখাবয়বসহ বেশকিছু অসঙ্গতি লক্ষণীয়।
Screenshot from Youtube by Rumor Scanner
এছাড়া, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী’র চেহারার সঙ্গে মেজর সাদেকের স্ত্রীর চেহারার যথেষ্ট অমিল দেখতে পাওয়া যায়।
Face Comparison by Rumor Scanner
এছাড়া, Probaho tv নামক ইউটিউব চ্যানেল একই দাবিতে আরেকটি ভিডিও প্রচার করা হয় যেখানে আলোচিত ভিডিও ক্লিপগুলো ছাড়াও আরও কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়েছে। উক্ত ক্লিপগুলোর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠকের’ অভিযোগের মামলায় সেনাবাহিনীর মেজর সাদেকুল হক সাদেকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ১২ আগস্ট, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক জবানবন্দি রেকর্ড করে আসামিকে কারাগারে পাঠান।
সুতরাং, আওয়ামী লীগের কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত মেজর সাদেকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের স্ত্রী দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি অফিস কক্ষে একজন ব্যক্তি বসে আছেন এবং আরেকজন ব্যক্তি তার টিপসই নিচ্ছেন। কক্ষে আরও কয়েকজন ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটির প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এটি একজন মৃত বাবার কাছ থেকে তার সন্তানের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য টিপসই নেওয়ার দৃশ্য। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, টিপসই নেওয়া ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তির সন্তান এবং তিনি জামাত-শিবিরের কর্মী।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মৃত বাবার কাছ থেকে টিপসইয়ের মাধ্যমে সন্তানের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি হাউজিং কোম্পানির কাছে জমি বিক্রির পর উইনম্যাক্স মোবাইল কোম্পানির চেয়ারম্যান মোঃ হোসেন খানের জমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রমের ভিডিও। ভিডিওতে থাকা মোঃ হোসেন খান জীবিত আছেন।
এই বিষয়ে প্রচারিত দাবিগুলো পর্যবেক্ষণের সময় একটি পোস্টে সফিউল্লাহ শেখ নামের এক ব্যক্তির মন্তব্য পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন, ভিডিওটি সত্য নয়। তার দাবি, ভিডিওতে বসা ব্যক্তি ও পাশে দাঁড়ানো নারী স্বামী-স্ত্রী, যাদের কাছ থেকে তার কোম্পানি জমি ক্রয় করেছে। অসুস্থতার কারণে ওই ব্যক্তির বাসায় অফিসের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলছিল এবং ভিডিওটিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে সফিউল্লাহ শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, তিনি একটি বেসরকারি হাউজিং কোম্পানিতে সিনিয়র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। ভিডিওটি মূলত জমি রেজিস্ট্রেশনের ডকুমেন্টেশনের জন্য ধারণ করা হয়েছিল এবং পরে তার অফিসের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছিল। কিন্তু ভিডিওটির খণ্ডিত অংশ ব্যবহার করে ভিন্ন দাবি ছড়িয়ে পড়ায় অফিসের পেজ থেকে এটি ডিলিট করা হয়। তিনি আরও নিশ্চিত করেছেন, ভিডিওতে বসা ব্যক্তি মারা যাননি; তিনি অসুস্থ থাকলেও জীবিত আছেন।
উইনম্যাক্স মোবাইল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে গতকাল (১৩ আগস্ট) একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে ভিডিওটির দুটি স্থিরচিত্র যুক্ত করে জানানো হয়েছে, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘সম্প্রতি আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের সম্পর্কিত একটা ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু দুষ্কৃতকারী অসত্য তথ্য প্রচার করেছে যা একেবারেই উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং সম্পূর্ণ দন্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। এম এইচ টেকনোলজি লিমিটেড এর সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে অবহিত করিতেছি যে এই মিথ্যা গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।’
পরবর্তীতে পেজটি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্টে লেখা আছে, ‘আমাদের এম এইচ টেকনোলজি লিমিটেড (Winmax Mobile) এর সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মোঃ হোসেন খান স্যার এর জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা শুভ জন্মদিন স্যার।’ পোস্টটিতে জনাব হোসেন খানের একটি ছবিও সংযুক্ত আছে। ছবিটির সঙ্গে আলোচিত ভিডিওতে বসে থাকা ব্যক্তির তুলনামূলক যাচাই করলে মিল পাওয়া যায়।
আজ (১৪ আগস্ট) ‘Sha Masud Zamil’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে আগের আলোচিত ভিডিওর মতো একই কক্ষ দেখা যাচ্ছে। চেয়ারেও আগের ভিডিওতে বসে থাকা একই ব্যক্তিকে দেখা যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়েছে, তিনি মূলত অন্যের কাছে জমি বিক্রি করে সেটি রেজিস্ট্রি করছিলেন। তার ছেলে-মেয়ে কেউই দেশে থাকেন না। পোস্টটিতে চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিকে উইনম্যাক্স মোবাইল কোম্পানির সত্বাধিকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে নিশ্চিত করা হয়েছে, তিনি জীবিত আছেন এবং মারা যাননি।
Screenshot: Facebook Post.
সুতরাং, অসুস্থ ব্যক্তির টিপসইয়ের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রমের ভিডিওকে মৃত বাবার কাছ থেকে সন্তানের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
সম্প্রতি সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর নামক পর্যটন স্পট থেকে পাথর লুটের ঘটনা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘সিলেটে সাদা পাথর লুট নেপথ্যে জামাত নেতা ও স্থানীয় প্রশাসন। বানিয়েছেন ৫০ কোটি টাকার প্রাসাদ’ শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম কালের কন্ঠের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটের পর্যটন স্পট সাদা পাথর থেকে পাথর লুটের ঘটনার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনকে জড়িয়ে কালের কন্ঠ এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কালের কন্ঠের প্রচলিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের আদলে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে কালের কন্ঠের লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১১ আগস্ট, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে কালের কন্ঠের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কালের কন্ঠের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, কালের কন্ঠের প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।
Comparison: Rumor Scanner
কালের কণ্ঠ ব্যতীত অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
সুতরাং, ‘সিলেটে সাদা পাথর লুট নেপথ্যে জামাত নেতা ও স্থানীয় প্রশাসন। বানিয়েছে ৫০ কোটি টাকার প্রাসাদ’ শিরোনামে কালের কন্ঠের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।