সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি অফিস কক্ষে একজন ব্যক্তি বসে আছেন এবং আরেকজন ব্যক্তি তার টিপসই নিচ্ছেন। কক্ষে আরও কয়েকজন ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওটির প্রচারের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এটি একজন মৃত বাবার কাছ থেকে তার সন্তানের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য টিপসই নেওয়ার দৃশ্য। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, টিপসই নেওয়া ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তির সন্তান এবং তিনি জামাত-শিবিরের কর্মী।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মৃত বাবার কাছ থেকে টিপসইয়ের মাধ্যমে সন্তানের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি হাউজিং কোম্পানির কাছে জমি বিক্রির পর উইনম্যাক্স মোবাইল কোম্পানির চেয়ারম্যান মোঃ হোসেন খানের জমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রমের ভিডিও। ভিডিওতে থাকা মোঃ হোসেন খান জীবিত আছেন।
এই বিষয়ে প্রচারিত দাবিগুলো পর্যবেক্ষণের সময় একটি পোস্টে সফিউল্লাহ শেখ নামের এক ব্যক্তির মন্তব্য পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন, ভিডিওটি সত্য নয়। তার দাবি, ভিডিওতে বসা ব্যক্তি ও পাশে দাঁড়ানো নারী স্বামী-স্ত্রী, যাদের কাছ থেকে তার কোম্পানি জমি ক্রয় করেছে। অসুস্থতার কারণে ওই ব্যক্তির বাসায় অফিসের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলছিল এবং ভিডিওটিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে সফিউল্লাহ শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি জানান, তিনি একটি বেসরকারি হাউজিং কোম্পানিতে সিনিয়র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। ভিডিওটি মূলত জমি রেজিস্ট্রেশনের ডকুমেন্টেশনের জন্য ধারণ করা হয়েছিল এবং পরে তার অফিসের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছিল। কিন্তু ভিডিওটির খণ্ডিত অংশ ব্যবহার করে ভিন্ন দাবি ছড়িয়ে পড়ায় অফিসের পেজ থেকে এটি ডিলিট করা হয়। তিনি আরও নিশ্চিত করেছেন, ভিডিওতে বসা ব্যক্তি মারা যাননি; তিনি অসুস্থ থাকলেও জীবিত আছেন।
উইনম্যাক্স মোবাইল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে গতকাল (১৩ আগস্ট) একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে ভিডিওটির দুটি স্থিরচিত্র যুক্ত করে জানানো হয়েছে, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘সম্প্রতি আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের সম্পর্কিত একটা ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু দুষ্কৃতকারী অসত্য তথ্য প্রচার করেছে যা একেবারেই উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং সম্পূর্ণ দন্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। এম এইচ টেকনোলজি লিমিটেড এর সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদেরকে অবহিত করিতেছি যে এই মিথ্যা গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।’
পরবর্তীতে পেজটি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্টে লেখা আছে, ‘আমাদের এম এইচ টেকনোলজি লিমিটেড (Winmax Mobile) এর সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মোঃ হোসেন খান স্যার এর জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা শুভ জন্মদিন স্যার।’ পোস্টটিতে জনাব হোসেন খানের একটি ছবিও সংযুক্ত আছে। ছবিটির সঙ্গে আলোচিত ভিডিওতে বসে থাকা ব্যক্তির তুলনামূলক যাচাই করলে মিল পাওয়া যায়।
আজ (১৪ আগস্ট) ‘Sha Masud Zamil’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে আগের আলোচিত ভিডিওর মতো একই কক্ষ দেখা যাচ্ছে। চেয়ারেও আগের ভিডিওতে বসে থাকা একই ব্যক্তিকে দেখা যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়েছে, তিনি মূলত অন্যের কাছে জমি বিক্রি করে সেটি রেজিস্ট্রি করছিলেন। তার ছেলে-মেয়ে কেউই দেশে থাকেন না। পোস্টটিতে চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিকে উইনম্যাক্স মোবাইল কোম্পানির সত্বাধিকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে নিশ্চিত করা হয়েছে, তিনি জীবিত আছেন এবং মারা যাননি।

সুতরাং, অসুস্থ ব্যক্তির টিপসইয়ের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রমের ভিডিওকে মৃত বাবার কাছ থেকে সন্তানের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Winmax Mobile: Facebook Post
- Sha Masud Zamil: Facebook Post
- Statement from Sofiullah Sheikh