Home Blog Page 16

পারিবারিক কলহের ভিডিও চাঁদা না দেওয়ায় ভবন মালিকের ওপর জামায়াত ক্যাডারের হামলার দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, কক্সবাজারের রামুতে চাঁদা না দেওয়ায় জামায়াত ক্যাডার বাড়ির মালিককে বিল্ডিং থেকে ফেলে দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু দাবি দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

এক্সে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি চাঁদা না দেওয়ায় জামায়াত ক্যাডার কর্তৃক বাড়ির মালিককে ভবন থেকে ফেলে দেওয়ার কোনো ঘটনার নয়। বরং, এটি চলতি বছরের মার্চে কক্সবাজারের রামুতে জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে ভাতিজা শাওন বড়ুয়া তার চাচা রনোতোষ বড়ুয়াকে ধাক্কা দিয়ে নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেওয়ার ভিডিও।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে জানানো হয়, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের উত্তর শ্রীকুল এলাকায় সন্তোষ বড়ুয়া ও তার সৎভাই রনোতোষ বড়ুয়ার মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের একপর্যায়ে ৮ মার্চ সকালে সন্তোষ বড়ুয়ার জাপানপ্রবাসী ছেলে শাওন বড়ুয়া তার চাচা রনোতোষ বড়ুয়াকে ধাক্কা দিয়ে নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। এতে রনোতোষ বড়ুয়া গুরুতর আহত হন। এটিএন নিউজের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner.

একই বিষয়ে কক্সবাজারভিত্তিক দ্য টেরিটোরিয়াল নিউজ (টিটিএন)-এর ফেসবুক পেজে ৯ মার্চ প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী রনোতোষ বড়ুয়া, তার স্ত্রী এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার দেখানো হয়। কেউই ঘটনাটির সঙ্গে কোনো জামায়াত ক্যাডারের সম্পৃক্ততার কথা বলেননি। বরং, তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এটি একটি পারিবারিক বিরোধের ঘটনা।

রামুর স্থানীয় গণমাধ্যম ‘রামু খবর ২৪’-এর ফেসবুক পেজেও একই দিন এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়।

সুতরাং, জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের একটি ভিডিওকে চাঁদা না দেওয়ায় জামায়াত ক্যাডার বাড়ির মালিককে ফেলে দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

গাজায় চার ইসরায়েলি সৈনিক আটকের দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ছবি প্রচার

0

সম্প্রতি, ফিলিস্তিনের গাজায় মুজাহিদীনরা চারজন ইসরায়েলি সৈনিককে আটক করেছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাজায় চারজন ইসরায়েলি সৈনিক আটক হওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যবেক্ষণে লক্ষ্য করা যায়, ইসরায়েলি সৈনিক দাবিতে যাদের উপস্থাপন করা হয়েছে তাদের ভেস্টের দৃশ্যমান অংশের লেখাগুলো অসামঞ্জ্যপূর্ণ। লেখাগুলো কোন ভাষায় লেখা হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না। সাধারণত এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় কোনো ছবি তৈরি করা হলে সেখানে লেখা সংক্রান্ত এই জটিলতা দেখা যায়। এছাড়াও ছবিটিতে আটক ব্যক্তিদের হাত ব্লার করে দেওয়া হয়েছে। এআই জেনারেটেড মানুষের ছবিগুলোতে সাধারণত হাতের বিকৃতি লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে ছবিটি এআইয়ের সহায়তায় তৈরি কিনা তা সহজেই যাচাই করা সম্ভব হয়ে থাকে। তবে ছবিটির উক্ত অংশ ব্লার থাকায় ছবিটি এআই সম্ভাব্যতা বাড়িয়ে তোলে।

বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Hugging Face AI এ ছবিটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।

পরবর্তীতে সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলি সৈনিক আটক হওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে গাজায় ইসরায়েলি সৈনিক আটকের হওয়ার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Hugging Face AI
  • Rumor Scanner’s Analysis

মেয়েকে বাঁচানোর জন্য বাবার আর্তনাদের ঘটনা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাজানো

সম্প্রতি “বরগুনার পাথরঘাটা গোলচাত্তরে হঠাৎ এই দৃশ্য। সকলে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউব পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি উক্ত দাবিতে ফেসবুক সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি প্রায় ৩৬ লক্ষবার দেখা হয়েছে। প্রায় ৭১ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট বা পেজ থেকে ভিডিওতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ৪৪ হাজারবার।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেয়েকে বাঁচাতে বাবার আর্তনাদের দৃশ্যের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সত্য কোনো ঘটনার নয় বরং, স্ক্রিপ্টেড বা অভিনীত ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘NOYON FUNNY TV’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ২০ জুন ‘মুন্নি | Munni | Noyon | Tabassum | Web Series 2025 | Bangla Natok 2025 | Noyon Funny Tv’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড থেকে ৩৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড অংশের হুবুহু মিল রয়েছে৷

এছাড়া, উক্ত ভিডিও প্রচারকারী চ্যানেলটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এটি একটি কনটেন্ট ক্রিয়েশন চ্যানেল। তারা বিভিন্ন ধরণের বিনোদনমূলক ভিডিও (,,)  বানিয়ে থাকেন। আলোচিত ভিডিওটিও নাটকের জন্য ধারণকৃত অভিনয়ের অংশ।

সুতরাং, মেয়েকে বাঁচাতে বাবার আর্তনাদের বাস্তব ঘটনা দাবিতে একটি স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

হামজা চৌধুরী দাবিতে করিম আদেয়েমির পারফরম্যান্সের ভিডিও প্রচার


সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ও ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের খেলোয়াড় হামজা চৌধুরীর ফুটবল খেলার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হামজা চৌধুরীর নয়। বরং, এটি চলতি বছরের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে জার্মান ফুটবলার করিম আদেয়েমির পারফরম্যান্সের ভিডিও।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘FULL TIME’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৮ জুন তারিখে ‘Karim Adeyemi Frustrated vs Barcelona | UCL Quarter-Final 2025’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর দৃশ্যাবলির সাথে আলোচিত ভিডিওটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ভিডিওর ০০:০২ থেকে ০০:১৬ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশ আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই দৃশ্যে দেখা যায়, বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ২৭ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় করিম আদেয়েমি বার্সেলোনার ফরাসি ডিফেন্ডার জুল কুন্দের বিপক্ষে খেলছেন।

ভিডিওটির বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, এটি ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নসলিগ কোয়ার্টার ফাইনালের একটি মুহূর্ত, যেখানে বার্সেলোনা ডর্টমুন্ডকে ৪-০ গোলে পরাজিত করে। উক্ত দাবির ভিত্তিতে চ্যাম্পিয়নসলিগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া ম্যাচ রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই ম্যাচে করিম আদেয়েমি ও জুল কুন্দে উভয়ই অংশগ্রহণ করেছিলেন।

স্বাভাবিকভাবেই উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনা ও ডর্টমুন্ডের মধ্যকার ম্যাচে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের খেলোয়াড় হামজা চৌধুরীর হামজা চৌধুরীর খেলার সম্ভাবনা নেই। তাদের চেহারা এবং চুলের স্টাইলে কিছুটা সাদৃশ্য থাকায় এই দাবির সূত্রপাত ঘটেছে বলে অনুমেয়।

সুতরাং, হামজা চৌধুরীর পারফরম্যান্সের দৃশ্য দাবিতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে করিম আদেয়েমির পারফরম্যান্সের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ঘটনায় বাংলাদেশে ভুল তথ্য প্রচারে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ

0
  • ৭৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত
  • ধরণ অনুযায়ী ভিডিওর মাধ্যমে বেশি প্রচারণা (৮৫ শতাংশ)
  • আক্রমণকারী এবং পক্ষে প্রচারণা এমন ধরণে ৭৫ শতাংশই ইরানের বলে দাবি
  • অন্যদিকে ধ্বংসাত্মক দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভুয়া ফুটেজের ৭৩ শতাংশই ইসরায়েলের
  • ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস দাবির একাধিক ভিডিও প্রচার হলেও ইরানের সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখপূর্বক স্থাপনায় হামলার দাবি তুলনামূলক অনেক কম

পাহাড়ের মধ্যে শত শত নারী-পুরুষের দল ছোটাছুটি করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও অতি সম্প্রতি অন্তত এক কোটি বার দেখা হয়েছে। ভিডিওর ক্যাপশন এবং ফুটেজ বিশ্লেষণে যা বোঝা গেল, তা হল দাবিটি এমন যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত চলাকালে ইসরায়েলের নাগরিকরা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এটি। কিন্তু যাচাই করে দেখা গেল, আলোচিত সংঘাতটির সাথে এই ভিডিওর কোনো সম্পর্কই নেই। ভিডিওটি নেপালের। সেখানের পাহাড়ি অঞ্চলে ইয়ারসাগুম্বা নামক ছত্রাক সংগ্রহের দৃশ্য এটি। ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতে এমন অসংখ্য ভুয়া ভিডিও ও ছবির প্রচার ছিল লক্ষ্যণীয়।  

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের সূত্রপাত হয়। এরপর হামলা, পাল্টা জবাব ও হুমকির মধ্যে ১২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির খবর আসে। কিন্তু তার পূর্বেই এই সংঘাতে ইরানে সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা-সদস্য, পরমাণু বিজ্ঞানী, বেসামরিক নাগরিকসহ ছয় শতাধিক মানুষ নিহত হন। ইসরায়েলের হামলায় দেশটির বিভিন্ন পরমাণু স্থাপনা ও সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। অন্য দিকে ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কার্যালয়সহ দেশটির বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে তেহরান। অর্থাৎ, ১২ দিনের এই সংঘাতে ইরান ও ইসরায়েল উভয় দেশই যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু আপনি যদি বাংলাদেশের নেটিজেনদের দ্বারা এই সংঘাত কেন্দ্রিক প্রচার হওয়া ভুয়া তথ্যগুলোতে নজর দেন তাহলে আপনি শুধু ইরানের হামলায় ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়েই জানতে পারবেন। অপরপক্ষ অর্থাৎ, ইরানের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত ছবি বা ভিডিও আপনার নজরে পড়বে কদাচিৎ।

রিউমর স্ক্যানার ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে ৭৫টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করেছে। এসব ভুয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব ভুয়া তথ্যে আক্রমণকারী হিসেবে এবং প্রচারণা পক্ষে ছিল এমন ধরণে প্রায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ইরানের নাম এসেছে। অন্যদিকে ধ্বংসাত্মক দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভুয়া ফুটেজের প্রায় ৭৩ শতাংশই ছিল ইসরায়েলের। ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস দাবির একাধিক ভিডিও এই সংঘাত চলাকালে প্রচার হলেও ইরানের সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখপূর্বক কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা সংক্রান্ত ফুটেজের দাবি পাওয়া যায়নি।

বিশ্লেষণ যা জানাচ্ছে

ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতে প্রচার হওয়া ভুয়া তথ্যগুলোর মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই ছিল ভিডিও। ধরণভেদে পুরোনো ভিডিওর প্রচার যেমন ছিল, তেমনি ছিল ভিন্ন ঘটনা বা প্রেক্ষাপটের ভিডিওর প্রচারও। তবে এবার আলোচনায় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কনটেন্টের ব্যবহার। ভুয়া তথ্য সম্বলিত ভিডিওগুলোর প্রায় ৩২ শতাংশই ছিল এআই দিয়ে তৈরি। যেমন, সংঘাত থামাতে ইসরায়েলি সৈন্য এবং সাধারণ নাগরিকের অনুরোধের দৃশ্য দাবিতে দুইটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিও দুইটি অন্তত দেড় কোটি বার দেখা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দুইটি ভিডিওর কোনোটিই বাস্তব কোনো দৃশ্যের নয়। গুগলের ভিইও-থ্রি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছে। এই Veo হলো গুগলের একটি পরিষেবা। এর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বাস্তব মনে হয় এমন ভিডিও তৈরি করা সম্ভব। এটি টেক্সট প্রম্পট থেকে বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে পারে। এই টুল দিয়ে তৈরি ভিডিওতে সাধারণত ‘Veo’ জলছাপ থাকে।

ইরান ও ইসরায়েল এবং শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্যে জড়িয়ে যাওয়ার এই সংঘাতে প্রচার হওয়া ভুয়া তথ্যের ভিডিওগুলোতে একাধিক দেশের পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে। এসব দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, মেক্সিকো, লেবানন, সিরিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন, নেপাল, রাশিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। যেমন, ২০২৪ সালের নভেম্বরে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে একটি বাসভবনে হামলার ঘটনার ভিডিওকে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার্স ধ্বংস হওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ভিডিওগুলো অন্তত দুই লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে।

বাংলাদেশে যে কোনো ইস্যুতেই গণমাধ্যমের নকল ও সম্পাদিত ফটোকার্ডের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রবণতা রয়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। এমন চারটি ভুয়া ফটোকার্ড শনাক্ত হয়েছে যেখানে জড়ানো হয়েছে শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, শিবির নেতা সাদিক কায়েম, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ভারতের প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। চারটি গণমাধ্যমের নকল ফটোকার্ডের মাধ্যমে তাদের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হয়েছে।  

ইরানের পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে সংঘটিত ১২ দিনের এই সংঘাতে ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত বাংলাদেশে ছড়ানো ভুয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শনাক্ত হওয়া ৭৫টি ভুয়া তথ্যের মধ্যে ৫৬টিতেই আক্রমণকারী হিসেবে ইরানের নাম এবং দেশটির পক্ষে প্রচারণা সংক্রান্ত কনটেন্ট ছিল। এর মধ্যে ৫১টি ভুয়া তথ্যের কনটেন্টেই ইরান কর্তৃক আক্রমণ করা হয়েছে এমন সরাসরি দাবি প্রচার হয়েছে। বাকিগুলোতে ইরানের পক্ষে বিভিন্ন দেশের প্রচার ও মন্তব্যের বিষয় ছিল। সে তুলনায় ইসরায়েল কর্তৃক আক্রমণ সংক্রান্ত ভুয়া তথ্যের কনটেন্টের হার ছিল খুবই নগণ্য (তিন শতাংশের কাছাকাছি)। এ সংক্রান্ত যে দুইটি ভুয়া তথ্য শনাক্ত হয়েছে সেগুলোর সাথে আবার ভারতকে জড়ানো হয়েছে। যেমন, ইসরায়েলের সৈন্যরা ভারতীয়দের টেনে হিঁচড়ে বের করে দিচ্ছে দাবিতে গাজা যুদ্ধবিরোধী ইসরায়েলিদের ছত্রভঙ্গ করার দৃশ্য এবং ইসরায়েলের পক্ষে সংহতি জানাতে গিয়ে ইসরায়েলিদের দ্বারা ভারতীয়দের অপমানিত হওয়ার দাবিতে জেরুজালেমে ধর্ম প্রচাররত খ্রিস্টান নারীর গায়ে এক ইসরায়েলির পানি ছিটানোর দৃশ্য প্রচার করা হয়েছে। সংঘাতের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র জড়ানোর ফলে দেশটিকে নিয়ে হামলা সংক্রান্ত ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল। তবে একই তালিকায় নাম এসেছে পাকিস্তানেরও। দেশটির হামলায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে এমন একটি ভুয়া দাবি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের পক্ষে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ডিপফেক ভিডিওর প্রচার দেখা গেছে।

অপরদিকে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এবং বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের দৃশ্য হিসেবে ইসরায়েলের নাম বেশি এসেছে অধিকাংশ (প্রায় ৭৩ শতাংশ) ভুয়া তথ্যের কনটেন্টে। এমন কনটেন্টও প্রচার হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। আবার একটি ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, ইরানের হামলায় নেতানিয়াহুর মাটির নিচে ২৩০ তলা সমপরিমাণ একটি বাংকারে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার দৃশ্য। অথচ, এটি ২০২১ সালে নির্বাচনে ভোটে অংশগ্রণের সময় নেতানিয়াহুর দৌড়ানোর ভিডিও।

রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ বলছে, সংঘাত চলাকালে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার ভুয়া ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এমন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার ঘটনার দাবি গণমাধ্যমে আসলেও এ সংক্রান্ত বেশ কিছু ভাইরাল ভিডিও রিউমর স্ক্যানারের নজরে আসে যা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন, ইসরায়েলের অস্ত্রাগারে ইরানের হামলার দৃশ্য দাবিতে চীনের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো দৃশ্য প্রচার করা হয়েছে। ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার ধ্বংস দাবিতে লেবাননের ভিডিও এবং প্রতিরক্ষা দপ্তর ভবন ধ্বংস দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। একইভাবে ইসরায়েলের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস দাবিতে প্রায় দশ বছরের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। অন্তত দুইটি বিমানবন্দরের ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট প্রচার করা হয়েছে।

কিন্তু ইরানের ক্ষেত্রে এমন কিছুর প্রচার তেমন দেখা যায়নি৷ ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর প্রেক্ষিতে ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফুটেজ দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তবে যাচাই করে দেখা যায়, এটি ২০২৪ সালে রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলার দৃশ্য। এই একটি বাদে দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত ভুয়া কনটেন্টের প্রচার দেখা যায়নি। ইরান এবং ইসরায়েল ছাড়াও আরো তিনটি দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ভারত) নাম এসেছে ভুয়া এসব তথ্যের প্রচারে, যেখানে এসব দেশে হামলা এবং বিপক্ষে প্রচারণার বিষয়টি তুলে ধরে কনটেন্টগুলোকে নেতিবাচককে উপস্থাপন করা হয়েছে।

দেশভেদে পক্ষপাতদুষ্ট প্রচারণা?

বাংলাদেশের বাইরে অন্য দেশে এই সংঘাত কেন্দ্রিক ভুয়া তথ্যের প্রচারণা কেমন ছিল তা জানতে রিউমর স্ক্যানার ভারতের দুইজন ফ্যাক্টচেকারের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতক বাংলা’র ফ্যাক্টচেক বিভাগের সদস্য ঋদ্ধীশ দত্তের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, দেশটিতেও এমন একপাক্ষিক প্রচার ছিল কিনা। তিনি বলছিলেন, “অন্যান্য ইস্যুতে যে ধরনের একপাক্ষিক প্রচার সাধারণত চোখে পড়ে, অদ্ভুতভাবে এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি একপাক্ষিক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্তত ধরা পড়েনি। তবে হ্যাঁ, ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির দাবিতে প্রচার বেশি ছিল, শতাংশের হারে বলতে গেলে ৬০-৪০।” একই মত দিয়েছেন ভারতীয় আরেক গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ফ্যাক্টচেকার অঙ্কিতা দেশকারও। “সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ধরণে একটি স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা গেছে, যেখানে ইসরায়েল সম্পর্কিত বিভ্রান্তিকর তথ্যের পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।”, বলছিলেন তিনি।

এমনটা হওয়ার কারণ হিসেবে ঋদ্ধীশ ইসরায়েলের প্রতি ভারতের তথাকথিত সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের একটা অংশের আনুগত্যের বিষয়কে সামনে এনেছেন। ঋদ্ধীশ বলছেন, “ইসরায়েলের কী সাংঘাতিক ক্ষতি হয়ে গেছে এটা সবার সামনে তুলে ধরার তাগিদ ছিল এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে। কারণ ইসরায়েলকে এমনভাবে আঘাত করার ক্ষমতা আগে কেউ দেখাতে পারেনি। তাই যারা ইসরায়েলের সমর্থনে কথা বলে তারা কিছুটা বিস্মিতও ছিল।”

অঙ্কিতা দেশকারের কাছে রিউমর স্ক্যানার জানতে চেয়েছিল, এর পেছনে গণমাধ্যমের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রভাব আছে কিনা। অঙ্কিতা মনে করেন, মূলধারার গণমাধ্যম এর জন্য দায়ী নয়। এর পেছনে অ্যালগরিদমকে দায়ী করে অঙ্কিতা বলছেন, “এটি (অ্যালগরিদম) আবেগপ্রবণ বা বিভাজনমূলক কনটেন্টকে আরও বেশি ছড়িয়ে দেয়। ফলে, একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় প্রাধান্য পায়।”

ঋদ্ধীশ দত্ত অবশ্য দায়ী করছেন ভারতের সাথে ইরান ও ইসরায়েল এই দুই দেশেরই স্বার্থ জড়িত থাকার বিষয়কে। তিনি বলছেন, “ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের সুসম্পর্ক যেমন বিশ্বে আলোচিত, সে রকমই ইরানের সঙ্গেও ভারতের কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে চাবাহার বন্দরের কারণে, যা ভারত পরিচালিত করে এবং এর মাধ্যমে আফগানিস্তান, রাশিয়ার সঙ্গে বিরাট আমদানি রপ্তানি করে। খুব সম্ভবত এই কারণেই ভারতের গণমাধ্যমও অন্যান্য সময়ের মতো এই সময় যে কোনও একটা দেশের পক্ষ নিয়ে আগ্রাসী ভঙ্গিতে খবর করতে পারেনি, যার একটা বড় প্রভাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও লক্ষ করা গেছে।”

একপাক্ষিক প্রচারণায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্যের প্রচারে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজীব নন্দী জানান, “এর পেছনে একধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পক্ষপাত, আবেগ, আর রাজনৈতিক আইডেন্টিটির জোরালো ভূমিকা আছে। অনেকেই নিরপেক্ষ তথ্য যাচাই না করে আবেগপ্রবণ হয়ে কনটেন্ট শেয়ার করেন। সেই সাথে ফেসবুকের অ্যালগরিদম একবার কোনো ধরণের কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়লে, সেটাকেই মানুষ সত্য বলে ধরে নেয়— যেটাকে আমরা বলি ‘ইকো চেম্বার’।”

এই ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও একইভাবে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করতে দেখা গেছে। রাজীব নন্দীর মতে, গণমাধ্যম অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবেই একই ন্যারেটিভ গ্রহণ করে নেয়, বিশেষ করে যখন সেটা ‘জনমত’ মনে হয়। ফলে, একপাক্ষিক প্রচারের এই ধারা অনেক সময় মিডিয়াকেও প্রভাবিত করে।

সাধারণ মানুষ গণমাধ্যমের এমন প্রচার থেকেও প্রভাবিত হতে পারে জানিয়ে তিনি বলছেন, “অনেকেই মনে করেন— “গণমাধ্যম বলছে মানে এটা সত্যি”— এমন ভাবনাও মানুষের মধ্যে আছে।”

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার প্রেক্ষিতে সংঘাত আপাতত আর ঘটছে না৷ কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে একটি ইস্যুতে এত ভুয়া তথ্যের প্রচার এবং তা নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ মানুষের মাঝে সূদরপ্রসারি কোনো প্রভাব রাখতে পারে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছিল এই নিউ মিডিয়া গবেষকের কাছে। তার পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর অন্তত চারটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রিক ফলাফল রয়েছে বলে জানালেন তিনি। প্রথমটি কগনিটিভ বায়াস ও তথ্য ককুনের বিস্তার। রাজীব নন্দী বলছেন, “একপাক্ষিক বা মনঃপূত তথ্য বারবার গ্রহণের ফলে মানুষের চিন্তা-প্রক্রিয়া ‘confirmation bias’ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তারা শুধু সেই তথ্যই গ্রহণ করে যেটা তাদের পূর্বধারণাকে সমর্থন করে এবং বিপরীত মত উপেক্ষা করে। এর ফলে একটি ‘information cocoon’ বা তথ্য-আবদ্ধতা তৈরি হয়, যা যুক্তিবোধ ও বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গিকে দুর্বল করে।”

দ্বিতীয়ত, পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য মানুষকে চরমপন্থার দিকে ঠেলে দেয়। রাজীবের মতো, এমন অবস্থায় মানুষ সহনশীলতা হারায়, বিপরীত মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায় এবং জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে। এটি সামাজিক অস্থিরতা, ঘৃণা-প্রচারণা এবং সহিংস মতাদর্শের উত্থান ঘটাতে পারে।

তৃতীয়ত, যুদ্ধ বা সংঘাত সংক্রান্ত বাস্তবতা অত্যন্ত জটিল এবং বহুস্তর বিশিষ্ট। কিন্তু একপাক্ষিক তথ্যের আধিপত্যের ফলে মানুষ সেসব ঘটনাকে সরলীকৃত ‘ভালো বনাম মন্দ’ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে কূটনৈতিক বাস্তবতা, ভূরাজনীতি, এবং মানবিক সংকটের জটিলতা গৌণ হয়ে যায় বলে অভিমত এই শিক্ষকের।

রাজীব নন্দী বলছেন, “যখন মানুষ বারবার অপতথ্যে প্রভাবিত হয় বা বুঝতে পারে যে প্রচারিত তথ্য বাস্তবতার সঙ্গে মিলছে না, তখন তারা সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠে। এর ফলে গণমাধ্যমের প্রতি আস্থা কমে যায় এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়— যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।”

ইরান কর্তৃক ইসরায়েলি গুপ্তচরকে মিসাইলে বেঁধে ইসরায়েলে পাঠানোর দাবিতে পুরোনো ছবি প্রচার

0

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষিতে, মিসাইলে বেঁধে ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ইসরায়েলে পাঠিয়েছে ইরান – এই দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বা সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইরান কর্তৃক মিসাইলে বেঁধে ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ইসরায়েলে পাঠানোর কোনো দৃশ্যের নয়। বরং, সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কয়েক বছর আগে থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান একটি ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে তাইওয়ান থেকে পরিচালিত ‘狂人聚落軍規戶外 Madbackpacks’ নামক ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ১ আগস্ট প্রচারিত টেপের বিজ্ঞাপনমূলক একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে থাকা কয়েকটি ছবির মধ্যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটিও রয়েছে।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “এমনকি যদি এটি শুধু ডাক্ট টেপও হয়, তবুও এটিকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করুন!  এটি জলপাই সবুজ রঙের একটি সামরিক-গ্রেডের, বহুমুখী এবং জলরোধী আঠালো টেপ। এই সামরিক-মানের বুনে নেওয়া কাপড় এবং শক্তিশালী আঠা দিয়ে তৈরি টেপটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেন এটি সিল করার প্রয়োজন এমন যেকোনো জিনিসকে মজবুত ও সুরক্ষিত করতে পারে! এটি অধিকাংশ পৃষ্ঠে সহজেই লেগে থাকে, বাতাস ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে এবং এর আঠালো ক্ষমতা সর্বোচ্চ। এর জাতীয় স্টক নম্বর (NSN) হলো: 7510-00-074-5100। পরিমাণ খুব সীমিত, মাত্র চারটি আছে!” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)

এছাড়াও, ছবিটি ইন্টারনেটে ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন দাবি ও প্রেক্ষিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এমন পোস্ট দেখুন – এখানেএখানেএখানে

অর্থাৎ, ছবিটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের অনেক বছর আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। যা থেকে নিশ্চিত যে ছবিটি সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের নয়।

সুতরাং, ইন্টারনেটে বিদ্যমান পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষিতে মিসাইলে বেঁধে ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ইসরায়েলে পাঠিয়েছে ইরান শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।


তথ্যসূত্র

ইসরায়েলের সৈন্যরা ভারতীয়দের টেনে হিঁচড়ে বের করে দিচ্ছে দাবিতে গাজা যুদ্ধবিরোধী ইসরায়েলিদের ছত্রভঙ্গ করার দৃশ্য প্রচার

সাম্প্রতিক সময়ের ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের প্রেক্ষিতে “ভারতীয়দের টেনে হিঁচড়ে ব্যাংকার থেকে বের করে দিচ্ছে ইজরায়েলের সৈন্যরা” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানে এবং এখানে

একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি ইসরায়েলের সৈন্য কর্তৃক ভারতীয়দের টেনে হিঁচড়ে বের করে দেওয়ার দৃশ্যের নয়। বরং, এটি গত ২৯ মে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বের করে দেওয়ার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত ইমেজ রিভার্স সার্চের মাধ্যমে আরবি সংবাদমাধ্যম عربي21 (Arabi21) এর এক্স অ্যাকাউন্টে গত ২৯ মে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়েছে, “গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের দাবিতে তেল আবিবে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা।” (অনূদিত)

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Times Of India’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৯ মে তারিখে “Tel Aviv ‘Burns’: Israelis Storm Netanyahu’s Likud Party HQ | ‘600 Days Of War’ Protest Gets Ugly” শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, “গাজায় যুদ্ধ শুরুর ৬০০ দিন পূর্তিতে তেল আবিবে বিক্ষোভকারীরা লিকুদ পার্টি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানায়।”

এছাড়া, ভারতীয় আরেক সংবাদমাধ্যম ‘Oneindia News’ এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে একই তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি ইরান-ইসরায়েল সংঘাত চলাকালীন সময়ে ইসরায়েলের সৈন্য কর্তৃক ভারতীয়দের টেনে হিঁচড়ে বের করে দেওয়ার কোনো দৃশ্য নয়।

সুতরাং, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বের করে দেওয়ার ভিডিওকে ইসরায়েলের সৈন্য কর্তৃক ভারতীয়দের টেনে হিঁচড়ে বের করে দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

  • عربي21: X Post
  • Times Of India: YouTube Video
  • Oneindia News: YouTube Video

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দপ্তর ভবন ইরানের গুঁড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও দাবিতে এআই ভিডিও প্রচার

সাম্প্রতিক সময়ের ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে ইরান হামলা চালায়। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটিতে “ইহুদিদের প্রতিরক্ষা দপ্তর ভবন গুঁড়িয়ে দিল ইরান”।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টটি ১৬ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ২০ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দপ্তর ভবন ইরানের গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটির সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি “ai.inlife” ইউজারনেমের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১৪ জুনে প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওটিতে এআই লেবেলেরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও, উক্ত ভিডিওটিতে “Invideo AI” নামের এআই দিয়ে ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম একটি টুলের জলছাপ দেখা যায়।

উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে এআই দিয়ে তৈরি নানা ভিডিও নানাসময়ে প্রচার হতে দেখা যায়। এছাড়াও উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটির বায়ো থেকেও জানা যায় যে উক্ত অ্যাকাউন্ট মূলত এআই দিয়ে তৈরি নানা ভিডিও প্রচার করে থাকে।

বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম “হাইভ মডারেশন” এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দপ্তর ভবন ইরানের গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Ai in Life – Instagram Post 
  • Hive Moderation
  • Rumor Scanners’ analysis

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ভিডিওকে কাতারে ইরানের মিসাইল হামলা দাবিতে প্রচার

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রেক্ষিতে “কাতারে আমেরিকান ঘাটি লক্ষ করে মিজাইল হামলা!” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি কাতারে ইরানের মিসাইল হামলার নয় বরং, ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে রাশিয়ার ড্রোন হামলার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘viralhog’ নামক ভিডিও কন্টেন্ট বিক্রয়কারী ওয়েবসাইটে ‘Shahed Drone Hits Apartment Block in Kyiv’ শীর্ষক  শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “ঘটনাটি ঘটেছে ৯ জুন, ২০২৫ / কিয়েভ, ইউক্রেন লাইসেন্সদাতার তথ্য অনুযায়ী: রুশ বাহিনীর দ্বারা নিক্ষিপ্ত একটি শাহেদ ড্রোন ইউক্রেনের কিয়েভে একটি আবাসিক উচ্চ ভবনে আঘাত হানে। ভিডিওটিতে বিস্ফোরণের সঠিক মুহূর্তটি ধরা পড়েছে।”

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একই ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম “BBC” এর ওয়েবসাইটে গত ১০ জুন “Record number of drone attacks signals dangerous shift in war” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ইউক্রেনের শহরগুলোর ওপর রাশিয়ার ড্রোন হামলা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ৯ জুন (সোমবার) রাতের বোমাবর্ষণটি রেকর্ড গড়েনি, তবে এটি এখনকার নতুন বাস্তবতার একটি সাধারণ উদাহরণ। মধ্যরাতের পর কয়েক ঘণ্টা ধরে কিয়েভের আকাশে নিরবচ্ছিন্নভাবে ড্রোন গুঞ্জন শোনা যায়।”

সুতরাং, ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে রাশিয়ার ড্রোন হামলার ভিডিওকে ঘটনাকে কাতারে ইরানের মিসাইল হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

অ্যান্টি-ড্রোন খাঁচা দিয়ে সজ্জিত রাশিয়ান ট্যাংককে ইসরায়েলের মারকাভা ট্যাংকের দৃশ্য দাবিতে প্রচার

0

সম্প্রতি, হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডস গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে সাত সেনাকে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। হামাসের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, খান ইউনিসের মা’আন এলাকায় ইসরায়েলি সাঁজোয়া যানের (এপিসি) কাছাকাছি দূরত্বে পুঁতে রাখা বিস্ফোরক (আইইডি) ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়। এই প্রেক্ষাপটে, হামাসের হামলা থেকে রক্ষা পেতে ইসরায়েলের নিজস্ব তৈরি মারকাভা ট্যাংকগুলোকে খাঁচা জাতীয় কাঠামো দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ক্যাপশনে বলা হয়, “কাসেমের ছেলেদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইজ্রাইলের মারকাভা ট্যাংকও হিজাব পরে ফেললো।” (বানান অপরিবর্তিত)। ধরে নিচ্ছি এখানে ‘কাসেম’ বলতে হামাসের আল-কাসসাম ব্রিগেডের কথা বলা হয়েছে।

কেউ কেউ ‘أدهم شرقاوي’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে এবং আর কেউ শুধু মাত্র ছবিটি দিয়েই আলোচিত ক্যাপশনে দাবিটি প্রচার করছেন। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

‘أدهم شرقاوي’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই পোস্টে বলা হয়, ‘বোন: মারকাভা (ইসরায়েলি ট্যাংক) যদি আবৃত/পর্দা করে, তাহলে তোমার অজুহাত কী?’ (অনূদিত)

অর্থাৎ, এই পোস্টের উদ্দেশ্যে ভিন্ন হলেও ট্যাংকটি মারকাভা (ইসরায়েলের নিজস্ব তৈরি ট্যাংক) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে ইসরায়েলি মারকাভা ট্যাংক খাঁচা দিয়ে সজ্জিত করার নয়। বরং এটি অন্তত ২০২৩ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান একটি ছবি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি রুশ ট্যাংক বা যুদ্ধযানকে ড্রোনের হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত এক ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। 

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ইয়াহু তাইওয়ানের অধীনে পরিচালিত সংবাদ ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর ‘(影) 俄國坦克披婚紗? 防無人機攻擊 鐵籠覆蓋車頂 烏軍 : 這樣更難摧毀’ শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল রয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner

ফিচার ইমেজের ক্যাপশনে বলা হয়, রুশ সাঁজোয়া যানগুলো চারপাশে একটি “খাঁচার মতো” কাঠামো দিয়ে ঢাকা, যা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছবি: এক্স (X) @bayraktar_1love থেকে নেওয়া। (অনূদিত)

উক্ত প্রতিবেদনে থাকা @bayraktar_1love নামক এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত ভিডিও লিংকে গিয়ে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর প্রচারিত ‘A column of Russian T-62 and one BTS-4 equipped with king size anti-drone cages.’ ক্যাপশনের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির নির্দিষ্ট ফ্রেমের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।

ক্যাপশনে বলা হয়, রুশ T-62 ট্যাংকের একটি বহর এবং একটি BTS-4 যান, যেগুলো বিশাল আকৃতির অ্যান্টি-ড্রোন খাঁচা দিয়ে সজ্জিত।

এছাড়াও, সেই সময় আমেরিকান মিডিয়া কোম্পানি ফোর্বস এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাথে সাদৃশ্য আছে এমন ছবি ফিচার হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

প্রতিবেদনটিতেও জানা যায়, রুশরা তাদের পুরোনো টি-৬২ ট্যাংক গুলোকে বা যুদ্ধযানকে ড্রোন প্রতিরোধী আবরণী দিয়ে সজ্জিত করেছে।

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের নয়। তাছাড়া, এটি মারকাভা (ইসরায়েলি ট্যাংক) নয়। এটি একটি রুশ ট্যাংক বা সাজোয়ান যান, যা অ্যান্টি-ড্রোন খাঁচা দিয়ে সজ্জিত।

সুতরাং, অন্তত ২০২৩ সাল থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যামান রুশ ট্যাংক বা যুদ্ধ যানের ছবিকে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে ইসরায়েলি ট্যাংক মারকাভা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র