Home Blog Page 17

ইরানের হাইপারসনিক বোমা ছাড়ার দৃশ্য দাবিতে এআই নির্মিত ভিডিও প্রচার 

সাম্প্রতিক সময়ের ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের প্রেক্ষিতে “ইরান পুরো পৃথিবীকে বলছিলো লাইভ দেখার জন্য কি লাইভ দেখাইলো পুরো ইহুদিরা আতঙ্কে” শিরোনামসম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে। 

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি ইরানের হাইপারসনিক বোমা ছাড়ার দৃশ্যের নয় বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। 

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে উক্ত ভিডিওটির সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি ‘Miracle of nature’ নামের একটি ইন্সটাগ্রাম  অ্যাকাউন্টে গত ১২ জুনে প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে তৈরি একাধিক (এক, দুই, তিন) ভিডিও নানাসময়ে প্রচার হতে দেখা যায়। পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। 

এছাড়া, Miracle of nature এর ইউটিউব চ্যানেলে একই তারিখে অর্থাৎ গত ১২ জুনে প্রচারিত একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটির বিস্তারিত সেকশনে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলো নিয়ে এআই-নির্মিত কনটেন্ট তৈরি করে বলে জানা যায়। 

বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘Cantilux’ এ ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৩ শতাংশ।  

সুতরাং, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে তৈরি একটি ভিডিওকে ইরানের হাইপারসনিক বোমা ছাড়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

ইসরায়েলের হাইফা বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি দৃশ্য প্রচার

ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সময়ের সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলের হাইফা বিমানবন্দরের দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। ছবি ও ভিডিওতে রানওয়েতে অন্তত পাঁচটি বিমান দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে কিছুতে আগুন জ্বলছে এবং অন্যগুলোতেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ইসরায়েলের হাইফা বিমানবন্দরের ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্যের নয় বরং, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে তাতে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। ভিডিওতে একটি বিমানের একটি নির্দিষ্ট অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত দেখালেও, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানের জানালার ফ্রেম সারিবদ্ধভাবে দৃশ্যমান ছিল। 

Indicated by Rumor Scanner

আমাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ভিডিওটি এআই (AI) দ্বারা নির্মিত বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া, এটাও প্রতীয়মান হয় যে ছবিটি এআই দ্বারা তৈরি ভিডিও থেকে নেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে, বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে আলোচিত ছবিটি এআই (AI) কন্টেন্ট ডিটেকশন টুল ‘Cantilux’ দিয়ে যাচাই করলে তা এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানা যায়।

Screenshot From Cantilux

সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ইসরায়েলের হাইফা বিমানবন্দরের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

  • AI Content Detection Tool: Cantilux
  • Rumor Scanner’s Analysis

কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার ভুক্তভোগী নারীর আত্মহত্যার দাবিটি ভুয়া 

0

কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে গত ২৬ জুন বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৭ জুন দুপুরে মুরাদনগর থানায় এমন অভিযোগ এনে মামলা করেছেন এক নারী। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরের ধ”র্ষিত হিন্দু নারী এইমাত্র আ”ত্মহত্যা করেছে’ শীর্ষক দাবিতে কিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত দাবিতে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এর  নামে পরিচালিত ভুয়া ফেসবুক গ্রুপে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷ এই গ্রুপগুলোতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ১,৫০,০০০ জন সদস্য রয়েছে।

প্রচারিত পোস্টগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। দুইটি পোস্টই ‘আমার দেশ’ পত্রিকার নাম ও পত্রিকাটির লোগো প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহারকারী ভুয়া ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার ভুক্তভোগী হিন্দু নারী আত্মহত্যা করেননি বরং, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এই ভুয়া দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টে দুটি ওয়েবসাইটের লিংক (, )সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে ‘sadhinnews247.blogspot.com’ ও ‘fullmoviedownload76246.blogspot.com’ নামের সাইট দুটি ব্লগস্পট প্ল্যাটফর্মে তৈরি ও blogspot.com ডোমেইনে হোস্ট করা একটি ভূঁইফোড় ওয়েবসাইট বলে প্রতীয়মান হয়। 

উভয় সাইটে ‘কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার হিন্দু নারীর আত্মহত্যা: তদন্ত দাবি জনমনে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ধর্ষণের শিকার এক হিন্দু নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী নারী তার বাড়ির পাশেই একটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হন। বিষয়টি মুরাদনগর থানা পুলিশ নিশ্চিত করেছে এবং মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার ভুক্তভোগী হিন্দু নারীর আত্মহত্যা করলে তা স্বাভাবিকভাবে গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার হবার কথা। তবে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচিত দাবির সপক্ষে গণমাধ্যমে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো বিশ্বস্ত সূত্রেও উক্ত দাবির সত্যতা মেলেনি।

এ ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলীকে ২৯ জুন ভোরে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া, ২৮ জুন রাতভর অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, উক্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের ঘটনার ভুক্তভোগী নারীর আত্মহত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া, কুমিল্লার সাংবাদিক Saifullah KhalidBahar Uddin Rihan নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল পৃথক দুইটি পোস্টের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার ভুক্তভোগী হিন্দু নারীর আত্মহত্যা দাবিটি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন।    

সুতরাং, কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার ভুক্তভোগী হিন্দু নারীর আত্মহত্যা দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

প্রথম পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু নয়, প্রচারিত ছবির মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল

0

সম্প্রতি, “প্রথম পিরিয়ডেই হারিয়ে গেল একটি জীবন — কে নেবে এই দায়?” শীর্ষক ক্যাপশন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবির মেয়েটি প্রথম পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ঝুমা আক্তার নামের এক ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে থাকা ছবিটি রিভার্স সার্চের মাধ্যমে আলোকিত প্রজন্ম নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর “শাড়ী পরতে না পারায় ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রীর আত্মহত্যা” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের ফিচারে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে থাকা ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Comparison by Rumor Scanner

প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, “২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে ঝুমা তার নানা আ. ছালামের বাড়ী থেকে নিজ বাড়িতে আসে। ঝুমা তার মার কাছে পড়ার জন্য একটি শাড়ি চায়। মা তাকে শাড়ি দিতে অপরগতা প্রকাশ করে। ঝুমা তার মার সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাগ অভিমান করে নিজের রুমে চলে যায়। পরে মেয়ের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ঝুমার রুমে চলে এসে মেয়েকে ঝুলান্ত অবস্থায় দেখতে পায় মা।” 

পাশাপাশি, খবর বাংলা নামক আরেকটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর  প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই ছবিটি  পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবির বিষয়ে একই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, ছবির মেয়েটির মৃত্যুর কারণ প্রথম পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ সংক্রান্ত কোনো ঘটনা নয়।

পরবর্তীতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে গত ২৫ জুন মুলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজের ওয়েবসাইটে “প্রথম পিরিয়ডেই হারিয়ে গেলো একটি জীবন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ‘খালিদ বিন মোজাহিদ’ নামক এক ব্যক্তির নাম উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় এবং প্রতিবেদনের লিখনির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে থাকার পোস্টের ক্যাপশন হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিতে থাকা ছবিটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাগোনিউজ তাদের প্রতিবেদনের সূত্র হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া উল্লেখ করেছে। তবে তথ্যটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সুতরাং, “প্রথম পিরিয়ডেই হারিয়ে গেল একটি জীবন — কে নেবে এই দায়?” শিরোনামে পুরোনো ও অপ্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করে একটি একটি তথ্য  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র 

সারোয়ার তুষার সম্পর্কে উমামা ফাতেমার মন্তব্য দাবিতে যুগান্তরের নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

0

গত ১৬ জুন দলের এক নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে। এরই প্রেক্ষিতে, “তাজনুভার আগে আমাকে বার বার লাগাতে চেয়েছিলো তুষার এনসিপি নেতা তুষারের ব্যাপারে অবাক করা তথ্য দিলেন সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা” শীর্ষক দাবিতে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সারোয়ার তুষার সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং যুগান্তরও কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে যুগান্তরের ডিজাইন নকল করে ভুয়া দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে যুগান্তরের লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ ১৮ জুন, ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।

যুগান্তরের লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিসম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, যুগান্তরের ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে যুগান্তরের আসল ফটোকার্ড পর্যালোচনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্ট ও গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের সাথে এর অমিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, যুগান্তর এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি।

পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং “তাজনুভার আগে আমাকে বার বার লাগাতে চেয়েছিলো তুষার এনসিপি নেতা তুষারের ব্যাপারে অবাক করা তথ্য দিলেন সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা” শীর্ষক দাবিতে যুগান্তরের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র

জুলাই গ‍্যাং কালচার দাবিতে ভারতের শিক্ষার্থীদের মারামারির ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘জুলাই গ‍্যাং কালচার।’ শীর্ষক ক্যাপশনে কিশোরদের দুটি গ্রুপের মারামারির একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোশাক পরা দুদল মারামারিতে লিপ্ত হয়ে একে অপরকে চড় ও লাথি মারছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দুটি দলের মধ্যে মারামারির এই ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো স্থানের নয় বরং, ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, এটি কেরালায় শিক্ষার্থীদের দুটি দলের মধ্যে মারামারির ভিডিও।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘DBC HINDI’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘केरल में छात्रों के बीच जमकर मारपीट, वीडियो हुआ वायरल!’ প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

ভিডিওটির বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি কেরালার শিক্ষার্থীদের দুটি দলের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিও। এছাড়া ভিডিওটি নতুন নয়, ২০২৩ সালের একটি পুরোনো ভিডিও বলে জানানো হয়।

Comarison: Rumor scanner

ভারতীয় ইংরেজি ভাষার সংবাদ চ্যানেল Times Now এর ওয়েবসাইটে ‘Video of shocking student street fight from Kerala goes viral | WATCH’ শীর্ষক শিরোনমে শর্ট ভিডিও আকারে একই ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়।

এছাড়াও, গুজরাটি ভাষার ডিজিটাল সংবাদ প্ল্যাটফর্ম ‘Gujarati Jagran’ এর ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১০ প্রচারিত ‘Students Fight Video: કેરળમાં વિદ્યાર્થીઓના બે જૂથ વચ્ચે સર્જાયો ભારે સંઘર્ષ, થપ્પડોનો આવો વરસાદ ક્યારેય જોવા મળ્યો નહીં હોય, જુઓ વીડિયો’ শীর্ষক শিরেনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘কেরালায় শিক্ষার্থীদের দুটি দলের মধ্যে মারামারির একটি জোরালো ভিডিও সামনে এসেছে। এই সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী জড়িত ছিল বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। ভিডিওতে দেখা গেছে, মারামারির সময় শিক্ষার্থীরা একে অপরকে চড় ও লাথি মারছে। কেরালায় ঠিক কোন এলাকার ঘটনা এটি, সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।’ (অনূদিত)

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে মারামারির ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো জায়গার নয়।

সুতরাং, ইন্টারনেট থেকে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের দুটি দলের মধ্যে মারামারির ভিডিও সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশের কিশোরদের মারামারির দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

সম্প্রতি ঢাবির মল চত্বরে তরুণীর লাশ পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা

0

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে এক তরুণীর লাশ পাওয়া গেছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে সাম্প্রতিক সময়ে তরুণীর লাশ পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। তবে, ঢাবির মল চত্বরে সম্প্রতি একজন তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি তিনি বেঁচে আছেন।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে কোনো লাশ পাওয়া গেছে কি না তা যাচাই করতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’ নামক গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে শীর্ষক শিরোনামে গত ২৭ জুনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মল চত্বরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল নিয়ে যান। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত ১১টার পর এ ঘটনা ঘটে। তরুণীর গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলায়। একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, প্রেমঘটিত বিষয়ে টানাপোড়েনের কারণে ওই তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। 

সূত্র জানায়, তরুণী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের রহিম (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। এ জন্য‌ই তিনি এখানে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত রহিম অভিযোগ করে বলেন, ওই তরুণী দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং একাধিক ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। এ জন্য রহিম তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চান। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি তার পরিবার এলে মুচলেকা নিয়ে পরিবারের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়। ছেলেটিও হাসপাতালে উপস্থিত ছিল।‌”

এ বিষয়ে আরো একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়। তবে কোথাও তরুণীর মৃত্যু হয়েছে এরূপ তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও এ বিষয়ে প্রকাশিত সেসব প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত গাছের ডালে ওড়না পেঁচানোর ছবিটিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়াও, এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদের সাথে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করলে তিনিও নিশ্চিত করেন যে উক্ত তরুণীর মৃত্যু ঘটেনি এবং মেয়ের ভাষ্যমতে প্রেমঘটিত কারণ ছিল।

সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে এক তরুণীর লাশ পাওয়া গেছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

ইরানের হামলায় কাতার থেকে মার্কিন বিমান বাহিনীর সদস্যদের পালানোর ভিডিও দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন হামলার জবাবে গত ২৩ জুন কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদে হামলা চালায় ইরান। এর প্রেক্ষিতে হামলার সময় মার্কিন বিমান বাহিনীর সদস্যদের পালানোর ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি প্রায় ২ লাখ ৪ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়াও জানানো হয়েছে।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের হামলা চালানোর মুহুর্তে সেখান থেকে বিমান বাহিনীর সদস্যদের পালানোর ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন বিমান বাহিনীর এলার্ট ক্রুর সদস্যদের নিউক্লিয়ার অ্যালার্ট স্ক্র্যাম্বল এক্সারসাইজ নামক প্রশিক্ষণের পুরোনো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে USA Military Channel নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর Nuclear Alert Scramble – Alert Crews Rush to KC-135 শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর বেশকিছু ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে। উক্ত ভিডিওর  বিভিন্ন ফুটেজ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কাট করে আগে পেছনে যুক্ত করে আলোচিত দাবির ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটির শিরোনাম এবং বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি মার্কিন বিমান বাহিনীর এলার্ট ক্রুর সদস্যদের নিউক্লিয়ার অ্যালার্ট স্ক্র্যাম্বল এক্সারসাইজ নামক প্রশিক্ষণের ভিডিও। পাশাপাশি ভিডিওটি প্রচারের তারিখের দিকে লক্ষ্য করলেও স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, এর সাথে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Venderfeed News নামের আরেকটি ইউটিউব চ্যানেলেও একই ভিডিওর একটি শর্টস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতেও নিউক্লিয়ার অ্যালার্ট স্ক্র্যাম্বল এক্সারসাইজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সুতরাং, মার্কিন বিমান বাহিনীর নিউক্লিয়ার অ্যালার্ট স্ক্র্যাম্বল এক্সারসাইজ নামক প্রশিক্ষণের পুরোনো ভিডিওকে কাতারে ইরানের হামলার সময় সেখান থেকে মার্কিন বিমান বাহিনীর সদস্যদের পালানোর ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

দেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করা হয়নি

0

সম্প্রতি, ‘এইমাত্র পাওয়া: শনিবার থেকে ‘কমপ্লিট শা’টডাউন’ ঘোষণা! #বিস্তারিত_কমেন্টে’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সারা বাংলাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করা হয়নি বরং, কাস্টমস, ভ্যাট ও কর বিভাগের সব দপ্তরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণার ঘটনায়  zenewze.com নামক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ক্লিকবেইট শিরোনামে প্রেক্ষিতে আলোচিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টে একটি ওয়েবসাইটের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। উক্ত ‘zenewze.com’ নামের এই ওয়েবসাইটে “এইমাত্র পাওয়া: শনিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা!” শীর্ষক কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ গত ২৩ জুন ২০২৫ তারিখে প্রকাশ করা হয়েছে।  

কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে আগামী ২৮ জুন (শনিবার) থেকে কাস্টমস, ভ্যাট ও কর বিভাগের সব দপ্তরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাজস্ব সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ২৩ জুন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান চেয়ারম্যান সরকারের একটি নির্দিষ্ট ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে লিপ্ত থেকে রাজস্বব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করছেন। তাকে ‘আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আমলা’ এবং ‘প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন ও শৃঙ্খলাভঙ্গের উসকানিদাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঐক্য পরিষদ বরাতে বলা হয়, এ আদেশগুলো সোমবারের মধ্যে বাতিল না হলে ২৫ জুন এবং ২৬ জুন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং এনবিআর চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ চলবে। ২৭ জুনের মধ্যে দাবি না মানা হলে ২৮ জুন থেকে কাস্টমস, ভ্যাট ও কর বিভাগের সব দপ্তরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি কার্যক্রম এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

উক্ত ওয়েবসাইটের সংবাদে  কাস্টমস, ভ্যাট ও কর বিভাগের সব দপ্তরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে উল্লেখ থাকলেও ফেসবুক পোস্টগুলোর মন্তব্য ঘরে ব্যবহারকারীরা এটিকে সারা বাংলাদেশে কমপ্লিট শাট ডাউন হিসেবে ধরে নিয়েছেন।

Collage: Rumor Scanner 

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তাদের ‘নিপীড়নমূলক বদলির’ আদেশ প্রত্যাহার এবং চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে শনিবার (২৮ জুন) থেকে সব কর অঞ্চল, ভ্যাট অফিস এবং কাস্টমস স্টেশনে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

প্রসঙ্গত, দেশে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। ২০২০ সালে দেশে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে সারাদেশে কয়েক দফা লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার।

সুতরাং, কর অঞ্চল, ভ্যাট অফিস এবং কাস্টমস স্টেশনে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণার ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামে নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ না করে শনিবার থেকে কমপ্লিট শাটডাউন শীর্ষক তথ্য প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র 

পুলিশ হত্যার বিচারের দাবিতে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি টিকটকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, “পুলিশ হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা সরকারের কোনো কাজ করব না। হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার পর আমরা আবার কার্যক্রম শুরু করবো।” দাবি করা হচ্ছে, এটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের বক্তব্য।

টিকটকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখুন: এখানে

ভিডিওটি টিকটকে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩১ হাজারের বেশি বার দেখা হয়েছে, ১৬ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে এতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং ১ হাজারেরও বেশি মন্তব্য করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। বরং, এটি পুলিশের সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলামের ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা একটি ভুয়া ভিডিও।

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওতে বক্তব্য দেওয়া পুলিশের পোশাকধারী ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করতে গিয়ে জানা যায়, তিনি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে তার এমন কোনো বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ভিডিওটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির পোশাকে থাকা নেমপ্লেটে নামের বানানে বিকৃতি রয়েছে, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়। কারণ এ ধরনের প্রযুক্তি বাংলা লেখা নির্ভুলভাবে তৈরি করতে পারে না। একই সঙ্গে তার মুখের অভিব্যক্তি, ঠোঁটের নড়াচড়া, মাথা ও শরীরের গতিবিধিও বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার হাতের আঙুলেও কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়, যা সাধারণত এআই তৈরি কনটেন্টে দেখা যায়।

এসব বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরের সঙ্গে ময়নুল ইসলামের প্রকৃত কণ্ঠস্বর তুলনা করেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়া ভিডিওটির ওপর ‘viggle.ai’ লেখা একটি জলছাপ দেখা যায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক টুল, যার মাধ্যমে কোনো স্থির ছবির চরিত্রকে ভিডিওর মতো নড়াচড়া করানো সম্ভব।

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওর সঙ্গে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত ময়নুল ইসলামের একটি ছবির মিল পাওয়া যায়। বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়, ওই ছবিটিই ব্যবহার করে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি একটি ভিডিওকে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র