বাংলাদেশের পাঠ্যবইগুলোতে ভুলের প্রবণতার বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাধ্যমিকের দুইটি পাঠ্যবইয়ে উপগ্রহ সংখ্যার বিষয়ে দুইটি তথ্যগত ভুল দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
যে ভুল নিয়ে আলোচনা
মাধ্যমিকের অষ্টম শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান’ পাঠ্যবইয়ের দ্বাদশ অধ্যায়ের (মহাকাশ ও উপগ্রহ) ১২২ পৃষ্ঠায় “প্রাকৃতিক গ্রহ ও উপগ্রহ” নামক প্যারায় আটটি গ্রহের উপগ্রহ সংখ্যার বিষয়ে জানাতে গিয়ে দাবি করা হয়েছে, “বৃহস্পতি গ্রহের ৬৭টি এবং শনি গ্রহের ৬২টি উপগ্রহ রয়েছে।”
একই দাবি দেখুন দাখিলের অষ্টম শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান’ পাঠ্যবইয়ের দ্বাদশ অধ্যায়ের (মহাকাশ ও উপগ্রহ) ১২২ পৃষ্ঠায়।
মাধ্যমিকের নবম দশম শ্রেণীর ‘ভূগোল ও পরিবেশ’ পাঠ্যবইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের (মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী) ১৪ পৃষ্ঠায় “সৌরজগৎ” নামক প্যারায় আটটি গ্রহের উপগ্রহ সংখ্যার বিষয়ে জানাতে গিয়ে দাবি করা হয়েছে, “বৃহস্পতি গ্রহের ৭৯টি এবং শনি গ্রহের ৮২টি উপগ্রহ রয়েছে।”
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাধ্যমিকের দুই পাঠ্যবইয়ে বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের উপগ্রহ সংখ্যার বিষয়ে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয় বরং শনির উপগ্রহ ৮৩টি এবং বৃহস্পতির উপগ্রহ ৮০টি।
সৌরজগতে বর্তমানে যে আটটি স্বীকৃত গ্রহ রয়েছে সেগুলোকে কেন্দ্র করে দুই শতাধিক উপগ্রহ (moon) ঘূর্ণায়মান। গ্রহগুলোর মধ্যে শুক্র এবং বুধ গ্রহের কোনো উপগ্রহ নেই। অন্য গ্রহগুলোর মধ্যে শনি ও বৃহস্পতির উপগ্রহ নিয়ে মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুসন্ধান যেভাবে
অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ে উপগ্রহ সংখ্যা নিয়ে যে পৃষ্ঠায় আলোচনা করা হয়েছে সেখানে উপগ্রহের সংখ্যা বিষয়ক তথ্যগুলোর সূত্র হিসেবে www.encyclopediabritannica.com নামক একটি ওয়েবসাইটের লিংক উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এই নামে কোনো ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া না গেলেও www.britannica.com নামে একটি ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। এই ওয়েবসাইটটি ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’ নামে পরিচিত। বিশ্বের বহুপ্রাচীন এই বিশ্বকোষে শনিগ্রহের উপগ্রহ সংখ্যা ষাটের অধিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং একটি টেবিলে ৬১টি উপগ্রহের বিষয়ে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে একই বিশ্বকোষে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ সংখ্যা ৭৯টি বলে একটি টেবিল ডাটায় উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক সরকারি সংস্থা ‘NASA’ এর ওয়েবসাইটের ‘Moons’ সেকশনে গ্রহগুলোর উপগ্রহ সংখ্যার বিষয়ে তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
নাসা বলছে, শনি গ্রহের উপগ্রহ সংখ্যা ৮৩টি এবং বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ সংখ্যা ৮০টি।
অর্থাৎ, মাধ্যমিকের দুই পাঠ্যবইয়েই শনি ও বৃহস্পতির উপগ্রহ সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
মূলত, মাধ্যমিকের অষ্টম শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান’ পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ রয়েছে, বৃহস্পতি গ্রহের ৬৭টি এবং শনি গ্রহের ৬২টি উপগ্রহ রয়েছে। অন্যদিকে নবম দশম শ্রেণীর ‘ভূগোল ও পরিবেশ’ পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ রয়েছে, বৃহস্পতি গ্রহের ৭৯টি এবং শনি গ্রহের ৮২টি উপগ্রহ রয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, মাধ্যমিকের দুই পাঠ্যবইয়েই শনি ও বৃহস্পতির উপগ্রহ সংখ্যার বিষয়ে উল্লেখিত তথ্যগুলো সঠিক নয়। নাসার তথ্য অনুযায়ী, শনির উপগ্রহ ৮৩টি এবং বৃহস্পতির উপগ্রহ ৮০টি।
উল্লেখ্য, অন্য গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবীর একটি, মঙ্গলের দুইটি, ইউরেনাসের ২৭টি এবং নেপচুনের ১৪টি উপগ্রহ রয়েছে। অন্যদিকে বামন গ্রহ হিসেবে পরিচিত প্লুটো’র উপগ্রহ রয়েছে ৫টি।
প্রসঙ্গত, পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে ইতোমধ্যে আরও পাঁচটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, শনি গ্রহের ৮৩টি এবং বৃহস্পতি গ্রহের ৮০টি উপগ্রহের সংখ্যার বিষয়ে অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান ও নবম-দশম শ্রেণীর ভূগোল ও পরিবেশ বইয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি উল্লেখ করা হয়েছে; যেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Britannica: Saturn’s rings and moons
- Britannica: Jupiter’s moons and ring
- NASA: Moons