বাংলাদেশের পাঠ্যবইগুলোতে ভুলের প্রবণতার বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ের একটি প্যারা জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকা থেকে ‘হুবহু নকল’ এর প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
যে ভুল নিয়ে আলোচনা
মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ের “মানুষ ও সমাজ এলো কোথা থেকে?” শীর্ষক পাঠ্যে ২৪ নং পৃষ্ঠায় ‘বরফ যুগ‘ নামক একটি প্যারায় লেখা রয়েছে, “২৫ লাখ বছর আগে বিশালাকার বরফের পাহাড়ে ঢাকা ছিল পৃথিবী। বরফে ঢাকা শীতল এ সময়টিকে বরফ যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিজ্ঞানীরা জানান, অ্যান্টার্কটিকার বরফ ধীরে ধীরে বাড়ছে। অ্যান্টার্কটিকায় জমতে থাকা এ বরফ সমুদ্রের ওপর ঢাকনার মতো কাজ করছে। এতে সমুদ্র থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরিত হতে পারছে না। এ বরফই নতুন করে পৃথিবীতে বরফ যুগের সূচনা করতে পারে।”
একই দাবি দেখুন দাখিলের ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ের (২৪ নং পৃষ্ঠায়)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বরফ যুগ শীর্ষক শিরোনামের প্যারাটি হুবহু নকল করা হয়েছে যুগান্তর পত্রিকার ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন থেকে। তাছাড়া, নকলকৃত অংশটি যুগান্তর যে গবেষণার বরাতে করেছে সেই গবেষণায় এমন কোনো তথ্যই উল্লেখ নেই।
বরফ যুগ কী?
বরফ যুগ হলো শীতল বৈশ্বিক তাপমাত্রার একটি সময়কাল এবং ক্রমাগত হিমবাহ (glacier) সম্প্রসারণের একটি প্রক্রিয়া যা কয়েক মিলিয়ন বছর স্থায়ী হতে পারে।
অনুসন্ধান যেভাবে
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ের আলোচিত অংশটি কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০১৯ সালের ০২ নভেম্বর জাতীয় দৈনিক ‘যুগান্তর’ পত্রিকার ওয়েবসাইটে “পৃথিবীতে আসছে বরফ যুগ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনের প্রথম দুই প্যারার সাথে পাঠ্যবইয়ের আলোচিত অংশটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়
যুগান্তরের প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগের দিন অর্থাৎ ০১ নভেম্বর অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বাংলানিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটেও একই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
তবে উক্ত প্রতিবেদনে যুগান্তরের প্রতিবেদনের লাইনগুলো হুবহু উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
বাংলানিউজ২৪ লিখেছে, “আজ থেকে ২৫ লাখ বছর আগে ভয়াবহ শীতল ছিল পৃথিবীর আবহাওয়া। বিশালাকার বরফের পাহাড়ে ঢাকা ছিল তখনকার পৃথিবী। বরফে ঢাকা শীতল এ সময়টিকে চিহ্নিত করা হয় বরফ যুগ হিসেবে। নতুন করে পৃথিবী এমনই এক বরফ যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন একদল বিজ্ঞানী। তারা জানান, অ্যান্টার্কটিকার বরফ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ বরফই নতুন করে পৃথিবীতে বরফ যুগের সূচনা করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকায় জমতে থাকা এ বরফ সমুদ্রের উপর ঢাকনার মতো কাজ করছে। এতে সমুদ্র থেকে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরিত হতে পারছে না। নিঃসরিত না হওয়া এ কার্বন ডাই অক্সাইড পৃথিবীর পরিবেশকে দিন দিন শীতল করে তুলছে। ফলে পৃথিবী আবার বরফ যুগে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।”
অর্থাৎ, বাংলানিউজ২৪-এর প্রতিবেদনটিকেই যুগান্তরের প্রতিবেদনের কিছুটা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে একইদিন (০১ নভেম্বর) জাতীয় দৈনিক ইনকিলাব এর ওয়েবসাইটেও একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ইনকিলাবের প্রতিবেদনে একই তথ্যগুলো ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ইনকিলাব লিখেছে, “নতুন করে এক বরফ যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন একদল বিজ্ঞানী। তারা জানান, অ্যান্টার্কটিকার বরফ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ বরফই নতুন করে পৃথিবীতে বরফ যুগের সূচনা করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকায় জমতে থাকা এ বরফ সমুদ্রের উপর ঢাকনার মতো কাজ করছে। এতে সমুদ্র থেকে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরিত হতে পারছে না। নিঃসরিত না হওয়া এ কার্বন ডাই অক্সাইড পৃথিবীর পরিবেশকে দিন দিন শীতল করে তুলছে। ফলে পৃথিবী আবার বরফ যুগে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।”
অর্থাৎ, ২০১৯ সালে প্রকাশিত তিনটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পড়ে যুগান্তরের প্রতিবেদনের সাথে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের আলোচিত অংশটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তথ্যগুলোর সূত্রের খোঁজে
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ের আলোচিত অংশটিতে “কোন বিজ্ঞানীরা বরফ যুগ সূচনা হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন” সে বিষয়ে উল্লেখ ছিল না। উক্ত অংশটি যুগান্তরের প্রতিবেদন থেকে নকল করা হয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পর যুগান্তরের প্রতিবেদনের বাকি অংশটি পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
যুগান্তর তাদের প্রতিবেদনে আলোচিত অংশটির পরের প্যারায় লিখেছে, “শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী বৈশ্বিক পরিবেশের বিন্যাসের প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে বিষয়টি উদঘাটন করেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফি সেন্টারে কাজ করা মারজুকি বলেন, বায়ুমণ্ডলে কার্বনের নিঃসরণ কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে পৃথিবী ক্রমেই শীতলতর হচ্ছে।”
যুগান্তরের প্রতিবেদনে দুইটি সূত্র রয়েছে। প্রথমটি, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী বৈশ্বিক পরিবেশের বিন্যাসের প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা করেছেন।
দ্বিতীয়ত, বর্তমানে (সে সময়) যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফি সেন্টারে কাজ করা মারজুকির বক্তব্য।
এই সূত্রগুলো ধরে অনুসন্ধানের শুরুতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বিভাগের ওয়েবসাইটে কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বরফ যুগের বিষয়ে দুইটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার খবর উল্লেখ রয়েছে।
দুইটির মধ্যে সে বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধের গবেষক দলের বিশজন সদস্যের মধ্যে মারজুকির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে অক্টোবরে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রবন্ধে মারজুকির নাম খুঁজে পাওয়া যায়। মারজুকির পুরো নাম অ্যালিস মারজুকি (Alice Marzocchi)। তিনি সে সময় যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফি সেন্টারেই কাজ করতেন বলে উল্লেখ রয়েছে গবেষণা প্রবন্ধটিতে।
মারজুকির একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট খুঁজে পেয়েছি আমরা, যেখানে উল্লেখ আছে বর্তমানেও তিনি একই কর্মস্থলে কাজ করছেন।
গবেষণাটিতে মূলত দুইজন গবেষক কাজ করেছেন। মারজুকির সাথে ছিলেন মাল্টে এফ. জনসন (Malte F. Jansen), যিনি বর্তমানে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওফিজিক্যাল সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক।
মারজুকি এবং জনসনের উক্ত গবেষণাটির বিষয়েই যুগান্তর তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম বাকি দুই গণমাধ্যম অর্থাৎ ইনকিলাব এবং বাংলানিউজ২৪ এর প্রতিবেদন পড়ে দেখেছে।
দুইটি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুই প্রতিবেদনেই একইরকম দুইটি প্যারা ছিল যা যুগান্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
দুইটি প্যারার প্রথমটিতে মাল্টে এফ. জনসনের বক্তব্য এবং অপর প্যারায় মারজুকি এবং জনসনের কম্পিউটার গ্রাফিক্স বিশ্লেষণ দেখার বিষয়ে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ, পাঠ্যবইয়ের এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের আলোচিত অংশটি মারজুকি এবং জনসনের গবেষণার তথ্যের আলোকেই লেখা হয়েছে।
কিন্তু প্রতিবেদনে দুই গবেষকের কারো বক্তব্যেই পাঠ্যবইয়ের আলোচ্য অংশটুকুর উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
কী আছে গবেষণায়?
“Global cooling linked to increased glacial carbon storage via changes in Antarctic sea ice” শিরোনামের আলোচিত গবেষণা প্রবন্ধটি পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
গবেষণা প্রবন্ধের কোথাও বরফ যুগ ফিরে আসতে পারে এমন তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
গবেষণা প্রবন্ধে লেখা রয়েছে, আমাদের ফলাফলগুলো এটাই বুঝায় যে, বায়ুমণ্ডলীয় শীতলতা সরাসরি সমুদ্রের গভীর পানির ভরগুলোর পুনর্গঠনের কারণ হতে পারে এবং এইভাবে, হিমবাহ কার্বন ডাই-অক্সাইড ড্রডাউন (এটি বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সংগ্রহ করার এবং উদ্ভিদ, মাটি, মহাসাগর, শিলা, লবণাক্ত জলাশয়, ক্ষয়প্রাপ্ত তেলের কূপ বা সিমেন্টের মতো দীর্ঘজীবী পদার্থগুলোতে কয়েক দশক বা শতাব্দীর জন্য তা আটকে রাখার প্রক্রিয়া।) হতে পারে।
পরবর্তীতে সে মাসের (২০১৯ সালের অক্টোবর) শেষদিকে ‘University of Chicago Office of Communications’ এর ওয়েবসাইটে উক্ত গবেষণার বিষয়ে “Antarctic sea ice is key to triggering ice ages, study finds” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে মাল্টে এফ. জনসনের একটি বক্তব্য রয়েছে যার সাথে ইনকিলাব ও বাংলানিউজ২৪ এর প্রতিবেদনে উল্লিখিত জনসনের বক্তব্যটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
গবেষণার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন যে অতীতে জলবায়ুর প্রাথমিক পরিবর্তনগুলো কীভাবে একটি ঘটনা প্রবাহের শৃঙ্খল শুরু করার মাধ্যমে বরফ যুগের দিকে পরিচালিত হয়। গবেষকদের মডেল অতীতের পৃথিবীর অনুকরণ করে দেখায় যে কীভাবে শীতল অতীত জলবায়ুতে অ্যান্টার্কটিক সামুদ্রিক বরফের বৃদ্ধি পরিবর্তন জলপ্রপাতের সূত্রপাত করতে পারে যা বৈশ্বিক জলবায়ুকে হিমবাহে পরিণত করতে অবদান রাখতে পারে।
তবে প্রতিবেদনের কোথাও বরফ যুগ ফিরে আসতে পারে এমন তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
কী বলছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা?
গবেষণা প্রবন্ধটির বিষয়ে জানতে গবেষণা দলের সদস্য মাল্টে এফ. জনসনের সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
পাঠ্যবইয়ের আলোচিত অংশটুকু উক্ত গবেষণায় উল্লেখ আছে কিনা এমন প্রশ্নে জনসন রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “না, এটি অবশ্যই আমার কোনো গবেষণা (বা অন্য কোনো বৈধ গবেষণা) দ্বারা সমর্থিত নয়।”
রিউমর স্ক্যানারের সাথে আলাপকালে জনসন তাদের গবেষণার একটি সার-সংক্ষেপ তুলে ধরে বলেছেন, “আমাদের গবেষণা অতীতে পৃথিবীর হিমবাহ চক্রের প্রক্রিয়াগুলোকে দেখিয়েছে। আমরা বলছি যে অ্যান্টার্কটিকার চারপাশে সামুদ্রিক বরফ সম্ভবত সমুদ্র সঞ্চালন এবং মহাসাগরের কার্বন সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে হিমবাহ চক্রগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গবেষণাটি সম্পূর্ণরূপে অতীতের হিমবাহ চক্র সম্পর্কে। এটি কোন ভাবেই পরামর্শ দেয় না যে আমরা অদূর ভবিষ্যতে একটি হিমবাহ জলবায়ুর (বরফ যুগ) দিকে যাচ্ছি।”
অর্থাৎ, আলোচিত গবেষণায় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ে বিজ্ঞানীদের বরাতে লেখা তথ্যগুলো নেই।
পাঠ্যবইয়ে অ্যান্টার্কটিকার ছবিটি এডিটেড
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ের বরফযুগ নামক আলোচিত প্যারায় অ্যান্টার্কটিকার একটি ছবি যুক্ত রয়েছে।
এই ছবির বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইমেজ ও ভিডিও হোস্টিং পরিষেবা ‘Flickr’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালে প্রকাশিত আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যারন রেজনিকের (Baron Reznik) তোলা ছবিটির সাথে পাঠ্যবইয়ের ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও একটি বিষয়ে অসামঞ্জস্য নজরে আসে রিউমর স্ক্যানার টিমের।
মূল ছবিতে বরফের উপরে একটি পেঙ্গুইন দেখা যাচ্ছে কিন্তু পাঠ্যবইয়ের ছবিটিতে পেঙ্গুইন নেই।
ব্যারন রেজনিকের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটেও একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায় যেখানেও ছবিটিতে পেঙ্গুইন রয়েছে। (দেখুন এখানে।)
অর্থাৎ, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ের বরফ যুগ শীর্ষক প্যারায় অ্যান্টার্কটিকার যে ছবি যুক্ত করা হয়েছে সেটি এডিটেড।
মূলত, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) পাঠ্যবইয়ের ‘বরফ যুগ’ নামক একটি প্যারা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, উক্ত প্যারাটি ২০১৯ সালে যুগান্তর পত্রিকার একটি প্রতিবেদন থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে। তাছাড়া, যুগান্তরসহ একই বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে জানা যায়, আলোচিত অংশটি ২০১৯ সালের একটি গবেষণার তথ্যের আলোকে লেখা হয়েছে। তবে উক্ত গবেষণায় আলোচিত অংশে উল্লিখিত তথ্যগুলো ছিল না বলে নিশ্চিত করেছেন গবেষণা দলের সদস্য মাল্টে এফ. জনসন।
আরো পড়ুনঃ ২০২২ সালে পাঠ্যবইয়ে যত ভুল দেখেছে রিউমর স্ক্যানার
সুতরাং, গণমাধ্যম থেকে একটি প্যারা হুবহু নকল করে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে একটি গবেষণা নিয়ে কিছু তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- যুগান্তর: পৃথিবীতে আসছে নতুন বরফ যুগ
- Nature Geoscience: Global cooling linked to increased glacial carbon storage via changes in Antarctic sea ice
- University of Chicago Office of Communications: Antarctic sea ice is key to triggering ice ages, study finds
- Statement from Malte F. Jansen, Associate Professor, University of Chicago
- Flickr: A Bird On A Berg