এডিসি হারুনের সাথে বিয়ের পোশাক পরিহিত এই নারী এডিসি সানজিদা নন

সম্প্রতি, এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনের বিয়ের ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

পরবর্তীতে উক্ত ছবিকে এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনের বিয়ের ছবি দাবি করে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন আরটিভি, সময়ের আলো, ঢাকা মেইল, তৃতীয় মাত্রা, কারেন্ট নিউজ, ভোরের আকাশ। 

একই ছবিকে এডিটেড দাবি করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, কালবেলা, বিডি জার্নাল, সোনালী নিউজ, ফ্রিডম বাংলা নিউজ। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুলিশের সাময়িক বরখাস্তকৃত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ ও ডিএমপির ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিনের বিয়ের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড নয় এবং ছবিতে থাকা নারীটি (এডিসি) সানজিদা আফরিন নন। প্রকৃতপক্ষে এটি এডিসি হারুন অর রশীদের সাথে তার স্ত্রী ডা. ফারিয়া তাসনিমের ছবি।

দাবিটি নিয়ে সত্যতা যাচাইয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে এডিসি হারুন অর রশীদের ছোট ভাই শরীফুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

পরবর্তীতে শরীফুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সূত্রে এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনের বিয়ের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পর্কে জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ছবির নারীটি সানজিদা আফরিন নন। বরং ছবির নারীটি তার ভাবী ডাক্তার ফারিয়া তাসনীম।

শরীফুল ইসলামের প্রদত্ত তথ্যের সূত্রে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ১০ জুলাই ‘ভাই ও ভাবী। অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ ও ডাক্তার ফারিয়া তাসনিম। তোমাদের নতুন জীবনে শুরুতে রইল অভিনন্দন ও শুভ কামনা।’ শীর্ষক একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook Post

এছাড়া ফরহাদুল ইসলাম শান্ত নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও একইদিনে প্রায় একই ক্যাপশনে আলোচিত ছবিটিসহ আরও একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook Post

অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে ছবিটির বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে হারুনের সাথে বিয়ের পোশাক পরিহিত নারীটির সঙ্গে ইন্টারনেটে পাওয়া এডিসি সানজিদা আফরিনের ছবির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দুই নারীর মুখমণ্ডলের গঠনগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

Image Analysis: Rumor Scanner

পাশাপাশি অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর  ‘এডিসি হারুনের সঙ্গে সানজিদার বিয়ে হয়নি, তাই ছাড়াছাড়িরও প্রশ্ন নেই’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এডিসি সানজিদা আফরিনের বড় বোন হোসনে আরা কামনা জানান, রাষ্ট্রপতির এপিএস মামুনই সানজিদার স্বামী। এডিসি হারুন তাঁর কলিগ মাত্র। তাঁর সঙ্গে সানজিদার বিয়ে হয়নি। প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ মার্চ গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের সঙ্গে সানজিদা আফরিন নিপার বিয়ে হয়।

এছাড়াও সংবাদ মাধ্যমের কাছে সানজিদা আফরিন নিজেও দাবি করেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। অনেকে নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। একটি ছবি ছড়িয়ে দিয়ে হারুন স্যারের সঙ্গে আমার বিয়ের কল্পকাহিনি প্রচার করছে। ছবির ওই নারী আমি নই।’

মূলত, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে। এর আগে বারডেম হাসপাতালে ডিএমপির ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিনের চিকিৎসা নেওয়াকে কেন্দ্র করে এডিসি হারুনের সঙ্গে সানজিদা আফরিনের স্বামী রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনের বিয়ের ছবি দাবিতে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। এডিসি হারুনের সাথে বিয়ের পোশাক পরিহিত ঐ নারী তার স্ত্রী ডা. ফারিয়া তাসনিম। 

উল্লেখ্য, এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনের উল্লিখিত ঘটনাটির পর অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে প্রথমে বদলি এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে তাকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে যুক্ত করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, এডিসি সানজিদা আফরিনকেও রংপুরে বদলি করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে বিষয়টি মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয়।

এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেখুন 

সুতরাং, এডিসি হারুন ও এডিসি সানজিদা আফরিনের বিয়ের ছবি দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img