ঈদের কেনাকাটা শেষে ফেরার পথে ছেলের সামনেই বাবাকে হত্যা করার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের 

সম্প্রতি, “ঈদের কেনাকাটা শেষে ফিরছিলেন ছেলের সামনেই বাবাকে কুপিয়ে হত্যা” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনের একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে এই ঘটনাটি বাংলাদেশের।

ঈদের

যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ড যুক্ত করে উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদের কেনাকাটা শেষে ফেরার পথে ছেলের সামনেই বাবাকে হত্যা করার এই ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ঘটনাটি ভারতের নদীয়ার নাকাশিপাড়া থানার হরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘুর্নি এলাকার। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ফটোকার্ডটিতে বেসরকারি ইলেকট্রনিক টেলিভিশন যমুনা টেলিভিশনের লোগো রয়েছে এবং প্রচারের তারিখ হিসেবে ৪ এপ্রিল ২০২৪ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে এসব তথ্যের সূত্র ধরে ফেসবুকে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানের মাধ্যমে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে আলোচিত ফটোকার্ডটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।  

Screenshot : Jamuna Television 

উক্ত ফটোকার্ড পোস্টের মন্তব্য ঘরে এসম্পর্কিত একটি  প্রতিবেদনের (আর্কাইভ) উল্লেখ পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের নদীয়ার নাকাশিপাড়া থানার হরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘুর্নি এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল শেখ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য সাগিরা বিবির স্বামী। গত ৩ এপ্রিল সাগিরা বিবি এবং তার স্বামী জাহিদুল শেখ তার পরিবার এবং কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। 

এছাড়া একই বিষয়ে শিরোনামে ভারতের কথা উল্লেখ না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশীয় গণমাধ্যম চ্যানেল ২৪(আর্কাইভ)।

প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করায় বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন না পড়েই তারা বিষয়টিকে বাংলাদেশের মনে করে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। 

Image Collage : Rumor Scanner 

পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Hindustan Times এর বাংলা সংস্করণে গত ৪ এপ্রিল “ইদের বাজার করে ফেরার পথে হামলা, ৮ বছরের ছেলের সামনেই TMC কর্মীকে কুপিয়ে খুন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, ঈদের কেনাকাটা করে ফেরার পথে ছেলের সামনেই বাবাকে হত্যার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। তবে এসম্পর্কিত খবরের শিরোনামে স্থানের নাম না উল্লেখ করায় ঘটনাটি বাংলাদেশের ভেবে নেটিজেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।

পাশাপাশি, মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঈদের কেনাকাটা করে ফোরার পথে বাবার সামনেই ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা সংক্রান্ত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, ভারতের নদীয়ার নাকাশিপাড়া থানার হরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘুর্নি এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল শেখ তার পরিবার সহ ঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার পথে তার ছেলের সামনেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফটোকার্ড ও গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ঘটনাটির স্থানের নাম উল্লেখ না করে সংবাদ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিষয়টিকে বাংলাদেশের ঘটনা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করেন।

উল্লেখ্য, পূর্বেও ভারতের একাধিক ঘটনা বাংলাদেশের দাবিতে প্রচারিত হলে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, ভারতে ঈদের কেনাকাটা করে ফোরার পথে ছেলের সামনেই বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনাটি বাংলাদেশে স্থানের নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img