সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেফতার এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন অনেকে।
এই ঘটনাচক্রে, “শ্যামলী পরিবহন ও স্বপ্ন সুপারশপ ইসকনকে নিয়মিত অর্থপ্রদানকারী দুটি প্রতিষ্ঠান” দাবি করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে, স্বপ্ন সুপারশপ ও শ্যামলী পরিবহন কর্তৃক এরূপ অর্থপ্রদানের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বরং কোনো ধরনের নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র বা প্রমাণ ছাড়াই এই তথ্যটি ছড়ানো হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, ‘𝐀𝐒 𝐒𝐨𝐜𝐢𝐚𝐥 𝐌𝐞𝐝𝐢𝐚’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২৮ নভেম্বর রাত ২টা ০৯ মিনিটে প্রকাশিত একটি পোস্টকে এই দাবির সূত্র হিসেবে বিভিন্ন পোস্টে উল্লেখ করা হচ্ছে।
পোস্টটির বর্তমান সংস্করণে স্বপ্ন সুপারশপের নাম উল্লেখ নেই। তবে পোস্টটির এডিট হিস্টোরি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি অন্তত তিনবার সম্পাদিত হয়েছে।
প্রথম প্রকাশিত পোস্টে দাবি করা হয়েছিল: “ইস্কনকে আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সহযোগিতা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কুলা/ঙ্গার, শ্যামলী পরিবহন এবং স্বপ্নের মতো নামীদামী ব্র্যান্ড রয়েছে।”
এরপর প্রথম সম্পাদনায় স্বপ্ন সুপারশপের নাম যুক্ত করা হয়। তবে আবার সম্পাদনার মাধ্যমে সেটি মুছে ফেলা হয়।
এছাড়া পোস্টটিতে “ইসকনকে সমর্থনকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব” শিরোনামের কিছু ছবি যুক্ত থাকতে দেখা যায়। তবে এই ছবিগুলোতেও শ্যামলী পরিবহন বা স্বপ্ন সুপারশপের নাম উল্লেখ নেই।
এই তালিকার সূত্র খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, গত ২৭ নভেম্বর থেকেই তালিকাটি ফেসবুকে “গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন” হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করার মতো কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রমাণ মেলেনি।
অর্থাৎ, শ্যামলী পরিবহন এবং স্বপ্ন সুপারশপের বিরুদ্ধে প্রচারিত আলোচিত দাবিটি যে সূত্রের বরাতে ছড়ানো হচ্ছে, সেই সূত্রেও প্রতিষ্ঠান দুইটির নামের উল্লেখই নেই।
দাবিকৃত কিছু পোস্ট পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শ্যামলী পরিবহন সংশ্লিষ্ট দাবির সাথে এক ব্যক্তির ভিডিও প্রচার করা হয় (১,২), যেখানে তিনি বলেন, “যতদিন ভারত-বাংলাদেশ এক না হবে, আমি আর বাংলাদেশে যাবো না।”
তবে, গত ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে রিউমর স্ক্যানার নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ নন বরং ব্যক্তিটি হিন্দু মহাজোটের পৃষ্ঠপোষক শ্রী জীবন গোস্বামী।
অর্থাৎ, শ্যামলী পরিবহনের মালিকের বক্তব্য দাবি করে এই ভিডিওটি দিয়ে বয়কটের প্রচারনা চালানো হলেও বক্তব্য দেওয়া ওই ব্যক্তি শ্যামলী পরিবহনের মালিকই নন।
এ বিষয়ে স্বপ্ন সুপারশপ জানিয়েছে, এ দাবি পুরোপুরি বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। তারা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ২৯ নভেম্বর একটি জিডি (নং ১৭৭৫) দায়ের করেছে এবং আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। বিষয়টি তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও জানানো হয়েছে।
ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইসকন তাদের কিছু প্রকল্প ও কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে দাতাদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের মায়াপুরে টেম্পল অব দ্য ভেদিক প্ল্যানেটারিয়ামের (TOVP) ওয়েবসাইটে দাতাদের একটি বিস্তারিত তালিকা রয়েছে। একইভাবে, ইসকন ডিজায়ার ট্রি এর ওয়েবসাইটেও মাসিক দাতা ও সাবস্ক্রাইবারদের তালিকা রয়েছে।
তবে, ইসকন বাংলাদেশের দাতাদের কোনো তালিকা ওপেন সোর্সে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, স্বপ্ন সুপারশপ ও শ্যামলী পরিবহন কর্তৃক ইসকনকে নিয়মিত অর্থপ্রদানের ভাইরাল দাবিটি ভিত্তিহীন।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s analysis.
- Statement from SHWAPNO.
- Temple of the Vedic Planetarium: General Donors List
- ISKCON Desire Tree: Donate