মঙ্গলবার, এপ্রিল 30, 2024
spot_img

নতুন শিক্ষাক্রম থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি “নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুক প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানেএখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানেএখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়নি বরং নতুন শিক্ষাক্রমে চারটি ধর্মের জন্য আলাদা চারটি পাঠ্যপুস্তক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

গুজবের সূত্রপাত

নতুন শিক্ষাক্রম থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে দাবিটির সূত্রপাত যাচাই করতে গিয়ে গত ১৯ জুন দেশীয় গণমাধ্যম দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় “নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের একটি কলাম খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত কলামের বিস্তারিত অংশে দাবি করা হয়,

প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৩০ মে, ২০২২। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চার ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ রূপরেখার কোনো স্তরে ধর্মশিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। মূল্যবোধ ও নৈতিকতা দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাক্রমে রাখা হলেও তা হবে সেকুলার। কোনোক্রমে ধর্মশিক্ষা নয়। দেশের নানা জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ধর্মশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে না, এটা একটি স্বাধীন ও মর্যাদাবান জাতির জন্য কেবল বেদনাদায়ক নয়, লজ্জাকরও বটে।

অর্থাৎ সংবাদের বিস্তারিত অংশেও দেশের নতুন শিক্ষাক্রমের রুপলেখা থেকে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে দাবিটি তুলে ধরা হয়েছে।

নয়াদিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পরবর্তী সময়ে উক্ত তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম ইনকিলাবের অনলাইন সংস্করণে “শিক্ষানীতিতে ইসলাম শিক্ষা বাদ কেন?” শীর্ষক শিরোনামে বিষয়টি নিয়ে একটি কলাম প্রকাশিত হয়। কলামটি দেখুন এখানে

পরবর্তীতে উক্ত দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে অনুসন্ধানে গত ২৩ জুন জাতীয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ ফরহাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

(বিজ্ঞপ্তিটি ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত) 

উক্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিচে তুলে ধরা হলো-

‘সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে যে নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষাকে বাদ দেয়া হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলও এই বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটিবি এই বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য ঘোষণা করছে যে উল্লেখিত প্রচারণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এই নতুন রুপরেখার শিক্ষাক্রম গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের ৬২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পাইলটিং হচ্ছে। এ শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য ১০টি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই ১০টি বিষয় হচ্ছে, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্ম শিক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। 
ধর্মশিক্ষা বিষয়ে দেশের চারটি ধর্মের শিক্ষার্থীর জন্য পৃথক চারটি পাঠ্যপুস্তক রাখা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য হিন্দুধর্ম শিক্ষা, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা, খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য খ্রিষ্ট ধর্ম শিক্ষা এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলাম শিক্ষা নামে চারটি পৃথক পাঠ্যপুস্তক রয়েছে। ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকটি দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের বিশিষ্ট শিক্ষকগণ প্রণয়ন করেছেন। এই শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ধর্মীয় আচার, আচরণ ও মূল্যবোধ চর্চার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ধর্ম শিক্ষাকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ বা পরিকল্পনা এনসিটিবি বা সরকারের নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা নিয়ে যেকোনো প্রকার বিভ্রান্তি জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। তাই আমরা শিক্ষাক্রম নিয়ে যেকোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এছাড়াও এনসিটিবির উক্ত বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে দেশীয় একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ধর্মশিক্ষা

মূলত, গত ১৯ জুন দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম ‘দৈনিক নয়াদিগন্ত’ এর অনলাইন সংস্করণে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ” শীর্ষক শিরোনামে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের একটি কলাম প্রকাশ করা হয়। উক্ত কলামের সূত্র ধরে শিক্ষাক্রম থেকে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে উক্ত দাবিটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে গত ২৩ জুন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) যৌথ সভায় প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নামাজ বাধ্যতামূলক করার দাবিটি মিথ্যা

উক্ত বিষয়ে এনসিসিসির একজন সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, ‘এই অনুমোদন কেবল আনুষ্ঠানিকতা। কারণ, ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নও শুরু হয়ে গেছে। এমনকি প্রাথমিক স্তরে বিস্তারিত শিক্ষাক্রমও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে গত ২৮ জুন নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন

উল্লেখ্য, করোনা মহামারির কারণে ২০২২ সালের মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের অংশ হিসেবে ধর্ম পরীক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে।  ধর্ম পরীক্ষার পাশাপাশি সাধারণ বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়সমূহেও পরীক্ষা হবেনা বলে জানানো হয়। তবে ২০২৩ সালের পরীক্ষার্থীদের জন্য বিষয়সমূহ পুনর্বহাল রয়েছে।

সুতরাং, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আজকের পত্রিকা: বাদ নয়, নতুন শিক্ষাক্রমে চার ধর্মের জন্য রয়েছে চারটি বই: এনসিটিবি

যুগান্তর: নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই: এনসিটিবি

বনিক বার্তা: নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেয়ার পরিকল্পনা নেই: এনসিটিবি

প্রথমআলো: শিক্ষায় বড় পরিবর্তন, শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন

নয়াদিগন্ত: শিক্ষাক্রম থেকে ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়ায় শিক্ষক ফেডারেশনের প্রতিবাদ

নয়াদিগন্ত: নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়ার নিন্দা জামায়াতের

এসএসসি পরীক্ষা -২০২২ এর রুটিন: https://dhakaeducationboard.portal.gov.bd/site/page/29e035dc-0f98-4350-aac3-8265b8622dae

Bdjournal: ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার সিলেবাস

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img